FEATURED

সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিচার শুরু মঙ্গলবার?

শিতাংশু গুহ

C:\Users\Smita\Downloads\download (61).jpg

সিনেটে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হচ্ছে, আগামী মঙ্গলবার ২১জানুয়ারি ২০২০। কংগ্রেসের সাতজন হাউস ম্যানেজার আজ বুধবার ১৪জানুয়ারী ২০২০ ইম্পিচমেন্ট আর্টিক্যাল দু’টো সিনেটে পৌঁছে দেন। কাল বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি শপথ নেবেন। তারপর ইম্পিচমেন্ট ধারাগুলো গৃহীত হবে। এরআগে কংগ্রেস বুধবার ভোটাভুটির মধ্যে দিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে গৃহীত দু’টি ইম্পিচমেন্ট ধারা সিনেটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর স্পিকার নেন্সি পেলোসি ৭জন হাউস ম্যানেজারের নাম ঘোষণা করেন। এরা হচ্ছেন: হাউস ইন্টিলিজেন্স কমিটি’র চেয়ারম্যান ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমক্রেট কংগ্রেসম্যন এডাম শিফ, তিনি নেতৃত্ব দেবেন। হাউস জুডিশিয়ারি কমিটি’র চেয়ারম্যান নিউইয়র্কের জেরি ন্যাডলার। হাউস এডমিনিস্ট্রেশন কমিটি’র চেয়ারওমেন ক্যালিফোর্নিয়ার জো লফগ্রেন। ফ্লোরিদা ডেমক্রেট কংগ্রেসম্যান ভ্যাল ডেমিংস। কলোরাডোর নবাগত কংগ্রেসম্যন জেসন ক্রো এবং টেক্সাসের ডেমক্রেট সিলভিয়া গার্সিয়া। সিনেটে এরা কৌসুঁলি হিসাবে প্রেসিডেন্টকে অপসারণের পক্ষে ওকালতি করবেন। মার্কিন কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘অভিশংসিত’ করেছে ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি সেই অভিযোগপত্র আনুষ্ঠানিকভাবে সিনেটে পাঠাননি। নুতন বছরে এ নিয়ে আলোচনা উঠলে ন্যান্সি পেলোসি তখন জানান, বিচারটি কিভাবে হচ্ছে, তা জানার পর তিনি অভিযোগপত্র সিনেটে পাঠাবেন। এরমধ্যে সিনেট ও কংগ্রেস নেতার মধ্যে কিছু একটা সমঝোতা হয়েছে, তাই স্পিকার পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্র পাঠাতে সম্মত হ’ন। আজ তা কংগ্রেসে পাশ হয়।  এর পরপরই হাউস ম্যানেজাররা ইম্পিচমেন্টের কাগজপত্র নিয়ে হেঁটে সিনেট ভবনে যান। সিনেট নেতা মিচ ম্যাককনেল তাদের অভ্যর্থনা জানান। তিনি ম্যানেজারদের বৃহস্পতিবার দুপুরে সিনেট ভবনে যাওয়ার নিমন্ত্রণ জানান। বেলা দু’টায় প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ইম্পিচমেন্ট ট্রায়ালে পৌরোহিত্য করার নিমিত্ত শপথ গ্রহণ করবেন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দুইটি অভিযোগ রয়েছে: এক, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং, দুই, কংগ্রেসের অবমাননা বা কাজে বিঘ্নসৃষ্টি।  সিনেটে কি হতে পারে এর একটি চিত্র দিয়েছেন টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ। তারমতে

 প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সরাসরি ‘বাতিলের’ চাইতে ‘বেকসুর খালাস’ ট্রাম্পের জন্যে অধিকতর ভালো হবে। ফক্স নিউজকে ক্রুজ বলেন, বিচারে ‘খালাস’ পাওয়াটা খুব স্বাভাবিক। কারণ, তাঁরা সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে তেমন কোন অভিযোগ আনতে পারেনি। সংবিধানে

 ঘুষ গ্রহণ, রাষ্ট্রদ্রোহিতা, বড় ধরণের অপরাধ বা ফৌজদারি মামলার কথা বলা হয়েছে, তাঁরা এমনকি প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ‘স্পীডে গাড়ি চালানো’র মত অভিযোগও আনতে পারেনি।  ক্রুজ বলেন, আমার ধারণা, ক্লিনটনের সময় যা হয়েছিলো, অর্থাৎ উভয় পক্ষের শুনানীর মধ্যে দিয়ে  বিচার কার্যটি শুরু হবে। সিনেট প্রথমে হাউজ ম্যানেজারদের কথা শুনবে। তারপর প্রেসিডেন্টের ডিফেন্স কথা বলবে। অর্থাৎ উভয় পক্ষ ‘ওপেনিং ষ্টেটমেন্ট’ দেবে। কেস এরপর সিনেটরদের কাছে যাবে। সিনেটররা লিখিত প্রশ্ন করতে পারবেন এবং প্রধান বিচারপতি সিনেটরদের পক্ষে প্রশ্ন উত্থাপন  করবেন, আইনের ব্যাখ্যা দেবেন। এ সময়ে বিতর্ক চলবে এবং তা দুই সপ্তাহ চলতে পারে। প্রেসিডেন্টের ডিফেন্স টীম এই পর্যায়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ দু’টি বাতিলের আবেদন করতে পারে। সেই আবেদন উপেক্ষিত হলে বিচার চলবে। সিনেট প্রেসিডেন্টকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেবে। প্রেসিডেন্টের  লিগ্যাল টীম বা হাউস ম্যানেজাররা অনুমতি সাপেক্ষে সাক্ষী ডাকতে বা তথ্য-প্রমান হাজির করতে পারবেন। সিনেটর ক্রুজ বলেন, সিনেটররা সাক্ষী ডাকে না, সাক্ষী ডাকে হাউস ম্যানেজার বা ডিফেন্স টীম। সিনেটর ক্রুজ’র কথায় সুর মিলিয়ে সিনেটর রয় ব্ল্যান্ট বলেছেন, রিপাবলিকান দলের  আরো ক’জন সিনেটর ইম্পিচমেন্ট আর্টিক্যাল বাতিলের ধারণাটি পছন্দ করছেন না, তারা চাচ্ছেন বিচারটি হোক, উভয় পক্ষের কথা শোনা যাক।  নিউইয়র্ক সিটি’র সাবেক মেয়র, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এটর্নি রুডি জুলিয়ানি যুক্তি দেন যে, সুপ্রিম কোর্টের উচিত সিনেটে বিচার শুরুর আগেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনীত ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবাবলী বাতিল করা। শনিবার (১১জানুয়ারি ২০২০) ফক্স নিউজকে তিনি বলেন, তবে সিনেটে বিচার চললে তা ট্রাম্পের জন্যে ভালো হবে। জুলিয়ানি বলেন, সুপ্রিমকোর্টে  ইম্পিচমেন্টের বিচার হবার কোন বিধান নেই, সংবিধান বলেছে, বিচারটি হবে সিনেটে এবং প্রধান বিচারপতি পৌরোহিত্য করবেন। বিচারের শুরুতে কি হতে পারে? ট্রাম্পের এই আইনজীবী বলেন, আমরা অভিযোগ বাতিলের পক্ষে যুক্তি দেখাতে পারি।লিয়ানি বলেন, বিচারের নিয়মাবলী সিনেট ঠিক করে, প্রধান বিচারপতি

 আইনের ব্যাখ্যা দেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন, প্রধান বিচারপতি অভিযোগ বাতিলের ক্ষমতা রাখেন। জুলিয়ানি মনে করেন সিনেটে ট্রাম্প বেকসুর খালাস পাবেন, ওঁরা বোকা বনে যাবেন। তিনি যোগ করেন, বিচারে বেরিয়ে আসবে জো বাইডেন শুধু ইরান থেকে টাকা কামিয়েছেন তা নয়, বরং চীন, ইরাক  থেকেও তিনি প্রচুর অর্থ কামিয়েছেন। জুলিয়ানি বলেন, ট্রাম্প নিজেই বলেছেন, ইম্পিচমেন্ট নয় তিনি হাইকোর্টে যেতে চান। এই সাক্ষাৎকারের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক টুইটে জুলিয়ানিকে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়েছেন। এদিকে আইওয়া ককাসের আগে মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি ২০২০ ডেমক্রেট প্রার্থীদের শেষ বা সপ্তম বিতর্ক  অনুষ্ঠিত হয়। ড্রেক ইউনিভার্সিটিতে অনুষ্ঠিত এই বিতর্ক ৬জন প্রার্থী অংশ নেন, এরা হলেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন; ইন্ডিয়ানার সাবেক মেয়র পিট্ বুটিগিগ; মিনেসোটার সিনেটর এমি ক্লোরচার; ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স; বিলোনিয়ার এক্সিকিটিভ টম স্টিয়ার  এবং ম্যাসাচুটসের সিনেটর এলজাবেথ ওয়ারেন। বিতর্কে ওয়ারেন ও স্যান্ডার্স ‘মহিলা প্রার্থী কেন জিততে পারবে না তা নিয়ে কথা কাটাকাটি করেন।  

বার্নি স্যান্ডার্স’র বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তিনি বলেছেন, মহিলা প্রার্থী হলে জিততে পারবে না?

 সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন নিজে এই অভিযোগ তুলে জানান, ২০১৮’র ডিসেম্বরে তাঁরা দু’জন ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে দু’ঘন্টা কথা বলেন। ওই সময় ওয়ারেন প্রস্তাব করেন যে, ডেমক্রেট পার্টি একজন মহিলাকে মনোনয়ন দিলে কেমন হয়? বার্নি স্যান্ডার্স ওই যুক্তি দেখিয়ে তাতে সম্মত

 হ’ননি। সিনেটর ওয়ারেন বিশদ ব্যাখ্যা দেননি, এবং বলেছেন, আমাদের দু’জনের মধ্যে ‘অমিলের’ চেয়ে ‘মিল’ অনেক বেশি। বছরের শুরুতে স্পিকার পেলোসি ইঙ্গিত দেন যে, আর্টিক্যাল অফ ইম্পিচমেন্ট  দু’টি তিনি সিনেটে পাঠাবেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার পর দীর্ঘ তিন সপ্তাহ তিনি এটি ঝুলিয়ে রাখেন। পেলোসি বলেছেন, বিচারটি স্বচ্ছ হচ্ছে কিনা তা না দেখে তিনি ইম্পিচমেন্ট আর্টক্যাল দু’টি সিনেটে পাঠাচ্ছেন না। সিনেট নেতা মিচ ম্যাককোনেল বলেছেন, কোন সাক্ষী  ছাড়া বিচার শুরু করতে তিনি প্রস্তুত। সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা বল্টন বলেছেন, সিনেট সপিনা দিলে তিনি সাক্ষ্য দেবেন। আগে তিনি বলেছিলেন যে, আদালতের নির্দেশ পেলে তিনি সাক্ষ্য দেবেন। এখন বলছেন, আদালত অনেক সময় নেবে, তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, সিনেট ডাকলে যাবো। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও ডেমক্রেটরা উভয়ই ভাবছেন ইরান পরিস্থিতি

 থেকে ফায়দা নেয়ার। ট্রাম্প ভাবছেন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভোটাররা তাকে সমর্থন করবেন। ডেমোক্রেটরা ভাবছেন, দোদুল্যমান ভোটাররা যুদ্ধের ভয়ে তাদের ভোট দেবেন। বৃটবার্ট নিউজ  জানায়, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী বলেছেন, ট্রাম্প ইরান চুক্তি ধ্বংস করে দিয়েছেন। ওয়াশিন্টন পোষ্ট জরীপ জানাচ্ছে, কালো ভোটারদের মধ্যে জো বাইডেন অন্য ডেমক্রেটদের থেকে এগিয়ে আছেন। বার্নি স্যান্ডার্স দ্বিতীয়, এবং এলজাবেথ ওয়ারেন তৃতীয় অবস্থানে আছেন। নিউজার্সির সিনেটর কোরি বুকার ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট রেস্ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। প্রথম ল্যাটিনো প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী, সাবেক ‘হাড’ সেক্রেটারি  ও সান এন্টিনিও’র মেয়র জুলিয়ান ক্যাস্ট্রোও সরে দাঁড়িয়েছেন এবং সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেনের প্রতি তাঁর সমর্থন ঘোষণা করেছেন। ম্যারিয়ান উইলিয়ামসন প্রেসিডেন্ট রেস্ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। তার বক্তব্য ছিলো, যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক ও অধ্যাত্বিক জাগরণ দরকার। পররাষ্ট্রমন্ত্রী  মাইক পম্পিও কানসাসের সিনেটর পদে লড়বেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। রিপাবলিকান সিনেটর প্যাট রবার্টস রিটায়ার করছেন, তাই ওই আসন শূন্য হচ্ছে। সেই অর্থে সামনের নির্বাচনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published.