ঢাকায় নিষিদ্ধ গণশ্রাদ্ধ নিউইয়র্কে
বাংলাদেশ হিন্দু কোয়ালিশন’ নিউইয়র্কে গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করছে রবিবার ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯। জ্যাকসন হাইটসের ‘ওম শক্তি’ মন্দিরে দুপুর ২টায় এ অনুষ্ঠান হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার ঢাকায় ‘গণশ্রাদ্ধ’ ৭১ অনুষ্ঠান হতে দেয়নি। কোন কারণ না দেখিয়ে এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। ঢাকার দৈনিক যুগান্তরে ২১শে জুলাই ২০১৩-র একটি রিপোর্টে বলা হয়: মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দু শহীদের উদ্দেশ্যে গণশ্রাদ্ধ/ মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দু শহীদের উদ্দেশ্যে হিন্দু ধর্মীয় রীতিমতে পারলৌকিক কার্য সম্পন্ন করা ও মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে গণশ্রাদ্ধ’৭১ সংক্রান্ত একটি সভা ১৯শে জুলাই ২০১৩ তারিখ শুক্রবার, বাড়ী ১০, সড়ক নং ৯৬, গুলশান-২, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শ্রীযুক্তবাবু কানুতোষ মজুমদার। সভায় ব্রিগেডিয়ার জয়ন্ত কুমার সেন (অবঃ), লেঃ কর্ণেল রাখাল চন্দ্র সাহা (অবঃ) সহ বিশিষ্ট হিন্দু নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। গনশ্রাদ্ধ’৭১ অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৪ঠা অক্টোবর ২০১৩, শুক্রবার, শুভ মহালয়ার দিন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক রমনা কালী মন্দির অনুষ্ঠানের সম্ভাব্য স্থান হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে।
বাংলামেইল২৪ডটকম’র আর একটি রিপোর্টে বলেছে, (বৃহস্পতিবার ৩রা অক্টবর ২০১৩ স্মরণ রায়, ষ্টাফ করোসপন্ডেন্ট): সরকারি হস্তক্ষেপে গণশ্রাদ্ধ বন্ধ, হতাশ হিন্দু নেতারা/ ঢাকা: সরকারি হস্তক্ষেপে রমনা কালীমন্দিরের গণশ্রাদ্ধ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। একাত্তরে শহীদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মুক্তির লক্ষ্যে আগামীকাল শুক্রবার সপিণ্ডকরণ ও অর্পণ (গণশ্রাদ্ধ) আয়োজন করার কথা ছিল। এর আগে আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশ অনুষ্ঠানটি বন্ধে আদালতে যায়। তবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণশ্রাদ্ধ বন্ধ করে দেয়ায় হিন্দু নেতারা ক্ষুব্ধ ও হতাশ হয়েছেন। গণশ্রাদ্ধ ৭১ এর আয়োজকদের পক্ষ থেকে এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বৃহস্পতিবার সকালে জানানো হয়, প্রশাসন মৌখিকভাবে শুক্রবারের গণশ্রাদ্ধ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। জানা গেছে, আওয়ামী ওলামা লীগের একাংশের প্রতিষ্ঠাতা মুজিবুর রহমান চিশতী একাত্তরের শহীদ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সপিণ্ডকরণ ও অর্পণ (গণশ্রাদ্ধ) আয়োজকদের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে। মামলায় অভিযুক্ত ছয়জন হলেন: জয়ন্ত সেন, সঞ্জীব চৌধুরী, গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, অরুণ মজুমদার, রিপন দে ও দয়াময় বিশ্বাস। মুজিবুর রহমান চিশতী মামলার আর্জিতে বলেছেন, ‘শহীদ’ শব্দটি শুধু ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। এছাড়া সব ধর্মের শহীদদের জন্য ‘গণপ্রার্থনা’ কর্মসূচিরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। এ ব্যাপারে রমনা থানা ডিউটি অফিসার মো. আলম আজম তালুকদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’ গণশ্রাদ্ধ ৭১ এর আয়োজক কমিটির সভাপতি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জয়ন্ত কুমার সেন এনডিসি (অব.) বলেন, ‘একাত্তরে তো বহু হিন্দু ধর্মাবলম্বী প্রাণ হারিয়েছেন। তাদের শহীদ না বললে কী বলবো? ভগত সিং, ক্ষুদিরাম, সূর্য সেন কি শহীদ নন? বাংলা অভিধানে শহীদ শব্দটি আছে। আরবি-ফারসি-হিন্দি-বাংলা সব ভাষার সম্পদ ‘শহীদ’ শব্দটি। এই শহীদদের মুক্তির লক্ষ্যে গণশ্রাদ্ধের পর সব ধর্মের শহীদদের জন্য রমনা কালীমন্দিরে প্রার্থনা করার কথা ছিল। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ করায় গণশ্রাদ্ধ স্থগিত করা হয়েছে। যা আমাদের হিন্দু কমিউনিটির জন্য দুঃখজনক।’ এ ব্যাপারে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্যপরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, ‘১৯৭১ক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু ধর্মালম্বী যারা শহীদ হয়েছেন তাদের উদ্দেশে শ্রাদ্ধ আয়োজন একটি ভালো কাজ যদি এর পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা অন্য কোনো কারণ না থাকে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে যে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে সরকারি হস্তক্ষেপ কারো কাম্য নয়। ধর্মীয় অনুষ্ঠানে রজনৈতিকভাবে বাধা দেয়ার কোনো বিধান নেই। গণশ্রাদ্ধ বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হস্তক্ষেপ হিন্দু ধর্মালস্বীদের জন্য হোঁচট খাওয়ার মতো।’ গণশ্রাদ্ধ ৭১ এর আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য অরুণ চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘গণশ্রাদ্ধ করার পেছনে কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু ধর্মালম্বীদের মধ্যে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের মুক্তির উদ্দেশে এই গণশ্রাদ্ধ আয়োজন করা হয়েছিল। গণশ্রাদ্ধের বিরোধিতা করে আওয়ামী ওলামা লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল হাসান শেখ বলেন, ‘আয়োজকেরা সবাই বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখেন। স্বাধীনতার ৪২ বছর পর সরকারের শেষ সময়ে এই শ্রাদ্ধ করার উদ্দেশ্য কী? এতে মৌলবাদীরা সরকার সম্পর্কে মানুষকে ভুল বোঝানোর সুযোগ পাবে। মতামত
১ সেপ্টেম্বর ২০১৩ গণশ্রাদ্ধ ৭১ আয়োজক কমিটি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে। এ সময় বলা হয়, অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে মহান মুক্তিযুদ্ধে নিহত ও নিখোঁজ হিন্দুদের আত্মার শান্তি ও পারলৌকিক মুক্তির লক্ষ্যে হিন্দু শাস্ত্রমতে গণশ্রাদ্ধ অনুষ্ঠিত হবে। দ্বিতীয় পর্বে, ১৯৭১ সালে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সব সম্প্রদায়ের শহীদদের জন্য সর্বধর্ম গণপ্রার্থনা ও স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে। এ অনুষ্ঠানটি রমনা কালীমন্দিরে হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এদিকে জাতীয় হিন্দু মহাজোট গত বুধবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করে, গণশ্রাদ্ধ ৭১ অনুষ্ঠানের সঙ্গে তারা জড়িত নয়। এতে মহাজোটের মুখপাত্র পলাশ কান্তি দে বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় এ কথা ‘চরমভাবে’ সত্য। তিনি বলেন, ‘শ্রাদ্ধ মানে শ্রদ্ধার সঙ্গে অর্পণ। নিকটাত্মীয় না থাকলে বা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান না করলে যেকোনো ব্রাহ্মণ বা গ্রামবাসী বা যেকোনো স্বজাতীয় করতে পারে। অন্যদের করাটা শাস্ত্রবিরোধী।’ (মতামত লেখকের নিজস্ব)