Sambad Matamat

ভারতের তুলনায় বাংলাদশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগুচ্ছে: অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়

২০১৯ অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন ৩জন, এদের মধ্যে একজন বাঙ্গালী। পশ্চিমবঙ্গে জন্ম নেয়া এবং বোস্টনের এমআইটি প্রফেসর অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়,৫৮। তিনি বাঙ্গালীর মুখোজ্জ্বল করেছেন। তাঁকে অভিনন্দন। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এপর্যন্ত ৪জন বাঙ্গালী নোবেল পেয়েছেন। এরা হলেন, সাহিত্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অর্থনীতিতে অমর্ত্য সেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, এবং শান্তিতে : মুহম্মদ ইউনুস। সময়ে ৩জন নোবেল বিজয়ী জীবিত আছেন। : অমর্ত্য সেন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব, তবে রাজনৌতিক মন্তব্য করে ভারতে বিতর্কিত। : ইউনুসকে নিয়ে বাংলাদেশ তোলপাড়। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হয়েছিলো, আপাতত: তিনি জামিনে আছেন। সেদিক থেকে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এখনো বিতর্কের ঊর্ধে আছেন, কতকাল থাকবেন বলা মুশকিল।  : অমর্ত্য সেন এবং অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়এর শিকড়, শিক্ষাদীক্ষা কলকাতায়, পরে বিদেশে পাড়ি জমান। : ইউনূসের পুরস্কারটি শান্তি জন্যে। নোবেল শান্তি পুরস্কারটি মোটামুটিভাবে রাজনৈতিক বিবেচনায় দেয়া হয়ে থাকে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হোয়াইট হাউসে যাওয়ার প্রায় সাথে সাথে শান্তিতে নোবেল পান! কানাঘুষা আছে, ওবামা নিজেও অবাক হয়ে গেছেন, কেন তিনি নোবেল পেলেন? অশান্তি সৃষ্টিকারী অনেকে নোবেল শান্তি পুরুস্কার পেয়েছেন। : ইউনুস অনেকের অশান্তির কারণ। মিয়ানমারের অং সূচি শান্তিতে নোবেল ছিনিয়ে নেয়ার দাবি আছে। অহিংসার জনক মহাত্মা গান্ধী নোবেল পুরুস্কার পাননি। ওবামা, শ্যারন, মালালা, কিসিঞ্জার, ইউনুস পেয়েছেন। গান্ধীর নাম বেশ বার সুপারিশ এসেছে, তবু পাননি। মেঘনাথ সাহা নাম এসেছিলো পাঁচবার, তাও পাননিমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিন আগে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন যে, তাঁর নোবেল পাওয়া উচিত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মনে করেন, তার নোবেল পাওয়া উচিত। উত্তর কোরিয়ায় শান্তি এলে আগামী বছর ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পেতে পারেন। রোহিঙ্গা সমস্যা মিটলে শেখ হাসিনার সম্ভবনা আছে। কাশ্মীরে সন্ত্রাস বন্ধ হলে শান্তি এলে ভারতের নরেন্দ্র মোদি প্রার্থিতা উড়িয়ে দেয়া যাবেনা। আচ্ছা, ২০২০তে শেখ হাসিনামোদীট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পেলে কেমন হয়? বিশ্বে এপর্যন্ত ৯৫০টি মত নোবেল পুরস্কার বিতরণ হয়েছে। অনেকের ধারণা ইসরাইল সবচেয়ে বেশি নোবেল পায়? ঘটনা তা নয়, নোবেল প্রাপ্তির শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র, এর ঘরে ৩৩৬টি নোবেল আছে। এরপর তালিকায় আছে, ব্রিটেন, জার্মানি, ফ্রান্সসুইডেন, রাশিয়া, জাপান, সুইজারল্যান্ড, কানাডা ইতালি। বিষ্যতে বাঙ্গালীর নোবেল বিজয়ের সম্ভবনা কেমন? ঢাকা এবং কলকাতার শিক্ষার মান এখন নিন্মগামী। বলা হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি বড় মাদ্রাসা। লজ্জার কথা হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে শিক্ষার মান নীচু হয়ে গেছে। শিক্ষার ভীতটা যদি শক্ত না হয়, তাহলে খুব বেশি এগুনো যায়না। একদা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যেরঅক্সফোর্ডবলা হতো, এখন সেই সন্মান নেই! এই ভার্সিটি থেকে আমার একটি সর্বোচ্চ ডিগ্রী রয়েছে। মার্কিন মুলুকে  আসার পর এরা মূল্যায়ন (ইভাল্যুয়েশন) করেবিএস’? তাই, নিউইয়র্ক সিটি কলেজে আবার নুতন করে এমএস কোর্স ভর্তি হতে গেলে প্রফেসর বাংলাদেশ শুনে আমায় বলেছিলেন, ‘তোমাদের প্রতি আমাদের তেমন আস্থা নেই’? আমি তার ধারণা মিথ্যা প্রমান করতে পারিনি। আমার সাথে চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটি ফার্ষ্ট ক্লাশ ফার্ষ্ট হওয়া একজন ছিলেন, তিনিও না?  আমি বলছি না যে, আমাদের ছেলেমেয়েরা ভালো করছে না, অনেকেই করছে, কিন্তু যতটা ভালো করলে বিশ্বে মর্যাদায় আসীন হওয়া যায়, তা হচ্ছেনা। এখন শিক্ষা পদ্ধতি পাল্টেছে। আমরা ১৬ বছরে এমএসসি পাশ করেছি, এখন ১৭ বছর, সারা বিশ্বে তাই। পদ্ধতি পাল্টালেও শিক্ষার মান বেড়েছে বলে শুনছি না? এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষায় . জিপিএ শিক্ষার্থীদের যে অবস্থা দেখছি, তাতে হতাশ হতে হয় বৈকি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা তেমন জানিনা, তাই বলছি না? তবে মনে রাখতে হবে বিশ্বের চারশভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশের একটিও নেই? শিক্ষার মান বলতে যা বুঝায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন তা নেই? পাশ করে,ডিগ্ৰী নিয়ে ছেলেমেয়েরা বের হচ্ছে বটে, কিন্তু বিশ্ব পরিমণ্ডলে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সদ্য বলেছেন, যুবলীগের দায়িত্ব পেলে তিনি উপাচার্য্যের পদ ছেড়ে দেবেন। এই যদি হয় একজন ভিসি অবস্থা, তাহলে শিক্ষার উন্নতি আশা করা বোকামি!  বঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রথমে নোবেল পুরুস্কার পান। ১৯১৩ সালে প্রথম ইউরোপীয়, শ্বেতাঙ্গ রবীন্দ্রনাথ নোবেল পান। ঐসময় নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকা হেডিং করেছিলো, ‘এসব পুরুস্কারগুলো শ্বেতাঙ্গদের জন্যে রেখে দেয়া উচিত তারপর ১৯৩০ সি.ভি. রমন বা চন্দ্রশেখর ভেঙ্কট রমন বিজ্ঞানে নোবেল পান, তিনি ১৯০৭১৯৩৩ কলকাতায় রিসার্স করেন। মাদার তেরেসা ১৯৭৯তে শান্তিতে নোবেল পান। ১৯৮৮ সালে অমর্ত্য সেন। সত্যজিৎ রায় অস্কার পান ১৯৯২ সালে। এরও আগে ১৯০২ সালে রোনাল্ড রস ম্যালেরিয়া নির্মূলের ওষুধ আবিষ্কারের জন্যে মেডিসিনে নোবেল পেয়েছিলেন। তার রিসার্স কলকাতায়। তাই, কলকাতার দাবি তাদের ঘরে ৬টি নোবেল?   

অমর্ত্য সেন এবং অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে মিল তাঁরা দুজনে অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। আরো একটি মিল আছে যে, তাঁরা দুজনেই প্রথম স্ত্রী বাঙ্গালী বঁধুয়া ছেড়ে শ্বেতাঙ্গিনীর হাত ধরেছিলেন। বাঙ্গালী বউ হলে নোবেল মিলে না অথবা নোবেলের জন্যে শ্বেতাঙ্গিনী বউ চাই, কোনটা বেশি প্রযোজ্য বলা মুশকিল! রবিঠাকুর ইউনূসের বউ কিন্তু বাঙ্গালী! অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় বউ গুণী, তিনিও নোবেল পেয়েছেন। দুই বাঙ্গালী অর্থনীতিতে নোবেল পেয়েছেন। আবেগে ভেসে যাচ্ছে বাংলা। ২০১৩ সালে অভিজিৎ তাঁর স্ত্রী এস্থার ডাফলো যুগ্মভাবেআব্দুল লতিফ জামিল পভার্টি অ্যাকশান ল্যাবগড়ে তুলেছিলেন। এজন্যেই নোবেল। ইকোনমিক্সের থিওরি আমরা বুঝিনা, তবে সাধারণ মানুষ এটুকু জেনেছে যে, অভিজিত দম্পতি মূল থিসিস ছিলো, ‘উন্নয়নের স্বার্থে গরীবদের হাতে টাকা দিতে হবে 

বাংলাদেশ ভারতে ধনীদরিদ্রের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্য বাডছে। উভয় দেশ এই নোবেল বিজয়ীদেরপ্রেস্ক্রিপশনমেনে কাজ করলে হয়তো ভালোই হবে1 অভিজিৎ ব্যানার্জি নোবেল পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে উৎসাহ থাকলেও বাংলাদেশে তেমন আনন্দধারা বইছে না, যদিও মার্জিত শিক্ষিত মহল খুশি। তবে শান্তিতে নোবেল নিয়ে মজার(?) কথা বলেছেন চট্টগ্রামের মেয়র নাসিরউদ্দিন। তিনি বলেছেন, ‘শেখ হাসিনার নোবেল প্রাপ্তিটাফ্রাস্ট্রেটেডকরার জন্যআবরার হত্যাকান্ডঘটানো হয়! উল্লেখ্য যে, আবরার নামে প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছাত্রলীগের ছেলেরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। ঘটনায় বাংলাদেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি উঠেছে। অথচ অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ছাত্র রাজনীতি করেছেন। তার কথায়, ‘জেএনইউ আমাকে রাজনীতি বুঝিয়েছে। তিনি বলেন, ‘কলকাতার লাল রাজনীতি সম্পর্কে আমার ধারণা ছিল। পরবর্তী সময়ে গান্ধীদের সঙ্গে পরিচয় ঘটে, আরএসএস সম্পর্কে জানি। সাউথপয়েন্ট স্কুলের পর প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়াশুনা করেন অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর দিল্লির জেএনইউ।  নিজের জন্মস্থান কলকাতা সম্পর্কে অভিজিৎ বলেন, ‘আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার ছিলাম আমার দাদু কলকাতার সবচেয়ে বড় বস্তির পাশেই বড় বাড়ি তৈরি করেছিলেন বস্তির ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলেই বড় হয়েছি আমি তখনই আমি দরিদ্র সম্পর্কে বুঝতে পারি দারিদ্র্য কী জিনিস তা আমাকে বোঝায় কলকাতাঅভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় বাম ঘরানার মানুষ ছিলেনতিহার জেলে ১০দিন ছিলেনছাত্র রাজনীতি করে জেল  খেঁটেও যে নোবেল পাওয়া যায়, এর দৃষ্টান্ত অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়দুই অর্থনীতিবিদ গরিবের কথা ভেবেছেনকিন্তু দারিদ্র ঘোচেনি বাঙ্গালীরএতকাল অর্মত্য  সেনের একক দাপট ছিলোঅভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় নোবেল জয়ে অমর্ত্য সেনের কদর কমলো কি? আবারো প্রশ্ন, নোবেল পেলেই কি সন্মান বাড়ে? জানিনা, তবে শুনছি, হিটলারও নাকি একবার নোবেলের জন্যে মনোনীত হয়েছিলেন? অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে কটু কথাও শোনা যাচ্ছেতিনি তাঁর চেয়ে এগার বছরের ছোট ছাত্রীকে

 বিয়ে করেছেনছাত্রীকে এমআইটি মত বিশ্বখ্যাত ইউনিভার্সিটিতে চাকুরী পাইয়ে দিয়েছেনঅভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিদুষী প্রথমা স্ত্রী

অরুন্ধতী তুলি কলকাতায় একটি কলেজে পড়ানতিনি বিবাহবিচ্ছেদ মেনে নিলেও তাদের পুত্র কবির বন্দ্যোপাধ্যায়

 তা মেনে নিতে পারেনিঅভিযোগ আছে, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ছেলের প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন ।  অভিমানে পুত্র ড্রাগ আসক্ত হয়ে পরে এবং ২০১৬তে মাত্র ১৬ বছর বয়সে মারা যায়তুলি আর বিয়ে করেননি, অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নুতন সংসার, সন্তান নিয়ে ব্যস্ততিনি মোদির সাথে দেখা  করবেনহয়তো ভারতীয় রাজনীতি নিয়েও কথা বলবেন? সদ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া পত্রিকার সাথে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘ভারতের তুলনায় বাংলাদশের অর্থনীতি সঠিক পথে এগুচ্ছে’।(The opinion/view expressed in the  article is  writer’s own)

Leave a Reply

Your email address will not be published.