আমাদের লক্ষ্য হোক জঙ্গিবাদ নির্মূল করা

অরুণ কুমার
বলেছিলাম অপেক্ষা করুন একসময় সত্য সামনে আসবে। একটার পর একটা নাশকতা ঘটনা হয়ে চলেছে। এবার আমাদের মন্ত্র হোক জঙ্গিবাদ নির্মূল করার। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বিগত দুই তিন দশকে আমরা দেখতে পাচ্ছি সন্ত্রাস, রাজনীতির হাতিয়ার এবং রুজি-রুটির মাধ্যম হয়ে উঠেছে।
২০২৬ এর লোকসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে ততই এই ধরনের সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ ঘটনাবলী পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। ২০২১ নির্বাচনের আগে পুলওয়ামা হয়েছিলো, এখনো নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে এই ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকবে নাহলে এত বড় সিকিউরিটি ল্যাপ্স কি করে হলো বা নিরাপত্তার বিশ্বাসযোগ্যতা কোথায় ? এই প্রশ্ন বড় রূপে দেখা দিয়েছে।
নির্বাচনে প্রতিশ্রুতির পূরণ না করে, লোকের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য এই সমস্ত স্পর্শকাতর ঘটনার ওপর নির্ভর করতে হয় । কারণ মানুষ ধর্মভীরু এবং মানুষই ধর্ম তৈরী করেছে, অথচ এই মানুষই ধর্মের কুফল বুঝতে পারলেও বলতে ভয় পায় ফলে কিছু রাজনীতিবিদ ও ধর্ম ব্যবসায়ীরা সেটার ফায়দা নেয় আর আমরা সেই ফাঁদে পড়ি । কেন্দ্রীয় সরকার স্বীকার করেছে নিরাপত্তায় গাফিলতি ছিলো, তাহলে এই ২৬ জনের হত্যার জন্য কার পদত্যাগ করা উচিত ?? এটা আজকে ঘটনার পর সবথেকে বড় প্রশ্ন তাই নয় কি ?
সম্প্রতি কাশ্মীর উপত্যকায় নারকীয় সন্ত্রাসী হামলার পর বিরাজ করছে গভীর শোকের ছায়া। প্রতিবাদে পালিত হয়েছে বন্ধ। উপত্যকা বাসী মোমবাতি নিয়ে করেছে শোক মিছিল, সোচ্চারে জানিয়ে দেন যে এই সন্ত্রাসী হামলার তাঁরা ঘোর বিরোধী। শ্লোগান দেন, ‘হিন্দু, মুসলমান, শিখ, ইসাই, আপস মে সব ভাই ভাই’।
অপরদিকে আমরা দেখেছি হায়দ্রাবাদে সূচী মেনেই অনুষ্ঠিত হয়েছে আইপিএল-এর সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ বনাম মুম্বাই ইণ্ডিয়ান্সের ক্রিকেট তামাশা। রাজীব গান্ধী ইন্টার্ন্যাশনাল স্টেডিয়াম ছিল পূর্ণ। পাটনার আকাশে বায়ুসেনা তাদের যুদ্ধবিমান নিয়ে নানান কসরত দেখায় আর তা উপভোগ করে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার সহ তাঁর ক্যাবিনেটের সদস্যরা এবং কয়েক হাজার জনতা। হ্যাঁ, আমরাও শোকাহত আর আমাদের শখের শোকের প্রকাশ হয় ‘জ্যায় শ্রীরাম’ মার্কা রণহুংকারে আর টিভির পর্দায় অনুষ্ঠিত সান্ধ্য খেউড়ের আসরের যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলায়। এত মানুষের অন্যায় অকাল মৃত্যু আমাদের কাছে এক অশ্লীল বিনোদন এবং কোন এক ‘অপর’-এর প্রতি ঘৃণা উগরে দেওয়ার অনুশীলিত চর্চা।
যাই হোক এরপর এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ভার পড়েছে NIA -এর ওপর। খুব ভালো কথা। কারা এই NIA? এরা তারাই যারা পুলওয়ামায় ব্যবহৃত RDX কোত্থেকে এসেছিলো তার কিনারা করতে পারে নি, কিন্তু ভীমা করেগাঁও মামলায় এক পার্কিন্সন্স রোগে আক্রান্ত অশীতিপর অশক্ত বৃদ্ধের কাস্টোডিয়াল মার্ডারে সহায়তা করে, যারা বাজির কারখানায় বিস্ফোরণের মামলায় বীরবিক্রমে ঝাঁপায়, সন্দেশখালিতে রোবট নিয়ে এসে হাস্যকর কেরামতি দেখায়।
সরকার বাহাদুর কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ইজরায়েল থেকে কেনে নজরদারির বিভিন্ন অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন সরঞ্জাম ও পেগাসাসের মত শত্রুর মনের আঙিনায় উঁকি মারার সফটওয়্যার। কিন্তু দেখা যায় যে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বেশ সফল হলেও সীমান্তপারের কোন গল্পই এরা শুনতে পায় না। প্রশ্ন জাগে মনে কেন??
আপনাদের হয়তো মনে আছে বিগত দশকে কমল হাসান প্রযোজিত অভিনীত মুভি ‘দশাবতারের ‘কথা? মুভিটি অন্যান্য ভাষাতেও ডাবিং হয়েছিল। যেখানে দেখানো হয়েছে গোয়েন্দা প্রধান তদন্ত করতে গিয়ে একজন বিজ্ঞানীকে বলছেন, কেয়া হে আপ? সাইন্টিফিক টেররিস্ট নাকি টেররিস্ট সাইন্টিস্ট? তারপর জিজ্ঞাসাবাদ এর নামে সময় নষ্ট আর ইস্যু যাতে অন্য কারো হাতে না যায় সেই চেষ্টা।
যিনি গোয়েন্দা পুলিশ কর্তা তিনি সব জেনে বসে আছেন কেবল স্বীকারোক্তি হলেই তদন্তে সাফল্য এসে যাবে। বিষয়টি আমাদের এ দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একশ্রেণীর মাথা ভারী কর্তা ব্যক্তিদের হম্বি তম্বি সার। আমরা এসব দেখে থাকি। আগেই উল্লেখ করেছি পাহেলগাও কাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে নিয়া NIA। পহেলগামের প্রাণঘাতী হামলার প্রাথমিক তদন্তে এটাই উঠে এসেছে এই হামলার নেতৃত্বে ছিল জঙ্গি হাশিম মুশা ওরফে সুলেমান। যে পাকিস্তানের এক বহিষ্কৃত সেনা পরে লস্করি তৈবা তে যোগ দেয়। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শা জি রোজ হুমকি দিচ্ছেন যেসব জঙ্গি এই ঘটনায় জড়িত তাদের কাউকে রেয়াত করা হবে না। খুব ভালো কথা। কিন্তু এই মুশা ২০২৪ এর অক্টোবরে গান্ডেরবাল জঙ্গি হামলা তেও জড়িত ছিল বলে গোয়েন্দাদের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
২০২৪ এর অক্টোবরে ২ জন জঙ্গি একটা কনস্ট্রাকশন প্রোজেক্টের ৬ জন পরিযায়ী শ্রমিক ও ১ জন স্থানীয় ডাক্তার কে হত্যা করে। ওই বছরেই বারামুলা জঙ্গি হামলায় ৪ জন সেনার মৃত্যু হয়। ওই হামলাতেও নাকি এই মুশা জড়িত ছিল বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এমনটাই সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে। অর্থাৎ ৬ মাস আগের জঙ্গি হামলায় যুক্ত মূল কান্ডারি কে এখনো ধরতে পারে নি, উল্টে সে ৬ মাসের মধ্যেই আরো বড় আকারের জঙ্গি হামলা করে বেরিয়ে গেল, আর অমিতশাহর মুখে গর্জনের বর্ষণ থামছে না। এই ব্যর্থতা কার? এতগুলো একটা দিক।
অন্যদিকে একবার চোখ বুলানো যাক, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার কোনো বয়ান নেই তখনই সন্দেহ হয়েছিল। তৃণমূল এবং সিপিএম এর যারা বাপ মা তুলে খিস্তি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় জানতে চেয়েছেন সেনা কেনো ছিল না পুলিশ কেনো ছিল না তার উত্তর ।
একটু গভীরে গিয়ে যেটা জানা গিয়েছে সেটা হলো, .”স্থানীয় প্রশাসন বাইসরণে ট্যুরিস্ট স্পট পর্যটকদের জন্যে খুলে দিয়েছে সেটা পুলিশ এবং সেনাকে জানানো হয়নি এই বছর । এই ট্যুরিস্ট স্পট অমরনাথ যাত্রা শেষ হবার আগে অর্থাৎ জুনের আগে ট্যুরিস্টদের জন্যে কখনোই খোলা হয়না। এবারই কাউকে না জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের 45 মিনিট ট্রেক করিয়ে এবং ঘোড়ায় চড়িয়ে সেখানে নিয়ে যেতে শুরু করেছিল। এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বাইসরণ ট্যুরিস্ট স্পট ইমার্জেন্সী সময়ে SOP চালানো বা স্পেশাল অপারেশন প্রসিডিওর চালানোর উপযোগী নয় (গাড়ি চলবার উপযোগী রাস্তাও নেই) বলেই সেটা জুন থেকে অক্টোবর এই পাঁচ মাস কেবল সেনা ও পুলিশ প্রহরায় খোলা থাকে। এবারই হঠাৎ স্থানীয় প্রশাসন এপ্রিল মাসে হঠাৎ ট্যুরিস্ট স্পষ্টটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেয়। এমনটা জানা যায় বিভিন্ন সূত্রে।
তাহলে এর দায়িত্ব কার জানানোর দায়িত্ব কার? জেনে নেওয়ার দায়িত্ব কার? পরিস্থিতির উপর নজরদারি বিশ্লেষণ সব মিলিয়ে নিরাপত্তার দায়িত্ব কার?এর কিছুটা দায় কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূলের ইন্ডি জোটের সঙ্গী ন্যাশনাল কনফারেন্স পার্টির জানাব ওমর আবদুল্লার। কিন্তু এ বিষয়ে
তিনি মুখ খুলেননি ।অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমও সেটাকে চেপে গেছে। অথচ অপরদিকে সন্ত্রাসবাদিরা এল। সেনাবাহিনীর পোশাকে খুবই সুকৌশলে নিরীহ মানুষদের মেরে দিয়ে গেল।শুধু মেরে দিয়েই যায়নি। সুকৌশলে যে কূট চাল খেলে গেল তা জাতীয় ঐক্যকে ভাঙার জন্য মারাত্মক অপচেষ্টাও বলা যায় । এটাও কিন্তু একটা মারাত্মক ভেবে দেখার বিষয়। কারন, বেছে বেছে হিন্দুদের মেরেছে। অপরদিকে সুকৌশলী মুসলিম জঙ্গি নেতারা ভালো করেই জানে মুসলিমদের হাতে শুধু হিন্দু মরেছে বিষয়টা খুব তাড়াতাড়ি চাওড় হবে ও পরবর্তীতে ধর্মীয় মেরুকরণের পথ হবে প্রশস্ত। সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু সমাজের ক্ষোভ গিয়ে পড়বে সংখ্যালঘু মুসলিমদের উপর। ভারতীয় মুসলিমরা নিরাপত্তা হীনতায় ভুগতে শুরু করবে। তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে এগিয়ে আসবে মৌলবাদি মুসলিম নেতারা।আর কট্টোর হিন্দু নেতারাও থাকবে না পিছিয়ে।বাড়বে বিষোদগার।তৈরি হবে যুযুধান দুটি পক্ষ।যা জাতীয় ঐক্যের পক্ষে বিপদজ্জনক।এতে না জিতবে হিন্দু,না জিতবে মুসলিম।জাতীয় সংহতিতে ফাটল ধরিয়ে শেষ হাসি হাসবে জঙ্গিবাদের নেতারাই।তারা তো সেটাই চায়।
এ এক অতি জঘন্য মারাত্মক নোংরা খেলা। এর আগে এতো গুলো জঙ্গি হানা হল কখনো এমন চিত্র দেখা যায়নি এবারের হামলায় যেমনটা হল। এর সঠিক তদন্ত আদৌ হবে কি না তা অজানা থাকলেও এতো সহজে জাতীয় ঐক্য নষ্ট করতে কোনো সন্ত্রাসবাদীর ঘৃণ্য চক্রান্ত কামিয়াব হবেনা বলেই আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। পহেলগাম সন্ত্রাসী ঘটনার পর, ঘোড়সওয়ার টাকা নেয়নি, ট্যাক্সি ড্রাইভার টাকা নেয়নি, হোটেল মালিক টাকা নেয়নি, সাহেবের বিমান সংস্থাগুলি দুগুন তিন গুণ বেশি ভাড়া নিয়েছে। খুব ভালো কথা। বিষয়টি কিভাবে দেখা হবে?
অপরদিকে যে প্রশ্নটা থেকে যায় সেটা হল জঙ্গিরা ট্রেকিং করে এলো। বেছে বেছে হত্যালীলা চালালো অতখানি সময় ধরে, অথচ মিলিটারি, এয়ারফোর্স জানতেই পারলো না? এমনটা সম্ভব?? এর উত্তর খুঁজতে গিয়ে এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন রুপে দেখা দিয়েছে যে এই জায়গাটা একটা সেনসিটিভ জায়গা সেখানে কোন নজরদারি নিরাপত্তা রক্ষী ছিল না। সাধারন জায়গা তো ছিল না যে কোন রকম নজরদারি থাকবে না ছিল তো সেটা সেনসিটিভ জায়গা তাহলে কেন এমনটা হল এইখান থেকে প্রশ্নটা শুরু হয়েছে এবং এটা চলতেই থাকবে উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত।
আরো একটা ছোট্ট প্রশ্ন, মুর্শিদাবাদে হিন্দু নিধনে মমতার পদত্যাগ দাবী করেছিল বিজেপি। এখন কার পদত্যাগ চাইবে বিজেপি ? এর অর্থ হলো আমাদের দেশের নেতাদের নোংরামো চিন্তার জন্য সন্ত্রাসীরা তার সুযোগ নেয়। সব দলের অধিকাংশ নেতারাই হলো ক্ষমতা লোভী। যার ফল স্বরূপ এই হত্যা কান্ড। তারা জানে একদল সেকুলারবাদী আর একদল হিন্দুত্ব বাদী এবার সামনা সামনি লড়াই করবে। এর স্থায়ী সমাধান হলো পুরো কাশ্মীর দখলে নেওয়া। হ্যাঁ এতে কিছু লোক মরবে, কিন্তু সমাধান হয়ে যাবে।
অবশেষে যে কথাটা বলতে হয় তাহলো, এই ঘটনা কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদের কফিনে শেষ পেরেক সেই কারণটাও পুরোপুরি অর্থনৈতিক এখানে কোন ভালো মানুষ খারাপ মানুষের ব্যাপার নেই। দেখা গিয়েছে ঠিক রাষ্ট্রপতি শাসনের পর গাড়ির ড্রাইভার এবং ওই অঞ্চলের পোর্টারদের মানসিকতা যে রাজনৈতিক নেতাদের রমরমা ও কামাই এবার কমবে। ইনফ্যাক্ট একটি ছেলে আমাদের গাড়ির সাথে গাইড হিসেবে ছিল। তখন আমরা দুধপাথরি যাচ্ছি ছেলেটি ৫০০ টাকার বিনিময়ে পাথর ছুঁড়তো,মাঝেমধ্যে আর্মি গ্রেপ্তার করে,নিয়মানুযায়ী পুলিশের হাতে ট্রান্সফার করলে থানা থেকে রাত্রিবেলায় লোকাল নেতা ছাড়িয়ে আনতো, পরের দিন যথারীতি আবার পাথর ছুঁড়তে বেরিয়ে পড়তো কিন্তু সব সময় আহত হওয়ার ভয় থাকত। তাই সে তখন খুশি টেনশন ছাড়াই টাকা কামাচ্ছে বলে তার মানে এই নয়, সে ভারতকে ভালবাসে তার ইচ্ছা টাকা জমিয়ে এরপর একটা গাড়ি কিনবে। কাফের মারলে আজকের ডেটেও সে খুশিই হবে হয়তো, কিন্তু সেটা করতে গিয়ে তার রুজি রুটিতে হাত পড়লে তার আপত্তি আছে। কাশ্মীর রিয়াক্ট করছে একটাই কারণে টুরিস্ট মারল বলে তাদের আয়টা কমবে, আর সব শেষ হয়ে যাবে যদি টুরিস্ট না আসে। কারণ উগ্রপন্থার চরম সময়েও টুরিস্টের গায়ে হাত পড়েনি। কাফের মারার জন্য কোন গর্মেন্ট অফিসিয়াল অথবা সেনাবাহিনীর মানুষকে মারলে তাদের মোমবাতি মিছিল করার দরকার পড়তো না। এবার ওই ৫০০ টাকা যে পেতো সে পাঁচ হাজার কামাবার মজা পেয়েছে বলেই সে পাকিস্তান মুর্দাবাদ বলছে। এটাই বেসিক সত্য ভাষণ।
কেউ বোকা নয় বৈবাহিক সূত্রে এবং আত্মীয়তার জন্য তারা ওপারের কাশ্মীরের সঙ্গে যুক্ত তারা জানে ওপারের লোকেরা কিভাবে আছে আর পাকিস্তানের কাছে এই মুহূর্তে একটা ছোটখাটো যুদ্ধ ছাড়া বালুচিস্তান আর নর্থ ওয়েস্ট ফ্রন্টিয়ার কে ধরে রাখা অসম্ভব। তাই তারা তাদের হাতের শেষ তাসটা ফেলেছে যাতে দেশটা এক থাকে। কাশ্মীরিরা এটা বোঝে আর সে কারণেই তাদের ক্ষোভ। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে কেউ আর ভুলভাল বোঝাতে পারছে না এটাও তারা জানে তাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই তারা চাইছে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে সবটাই অর্থনৈতিক।
যেমন কোন ধর্মনিরপেক্ষ আর মানবিক মানুষ সারা জীবন বাতেলা মেরে পাশের লোকটাকে ধর্মপরিচয় নিহত হতে দেখে কলমা পড়ে নিজের জীবন বাঁচিয়ে নিল। কাশ্মিরীদের হাতে মোমবাতির মিছিল ঠিক সেরকম, যে কারণে তারা কাশ্মীরি পন্ডিতদের দেশে ফিরতে বলবে না আপনি ট্যুরিজমের ব্যবসা করলেও আপনাকে কোন কিছু কিনতে দেবেনা লিজ নিতে দেবে কিন্তু বিক্রি করবে না এদিকে কিন্তু তারা টুরিস্টদের চাইবে ঠিক যেমন বাংলাদেশের মৌলবাদীরা হিন্দুদের উচ্ছেদ করবে কিন্তু ছিন্নমূল উদ্বাস্তুকে ও তার বংশধরদের ও দেশে ঘুরতে যেতে বলবে।
এ ধরনের সংঘর্ষের লাভ বা পরিণতি বা বলা যায় Conflict of interest এর জন্য তারা মোমবাতি হাতে, শুধু ধর্মীয় উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলে কোন আপত্তি নেই। মাঝে টাকা পয়সা টা পড়ে গেছে। এটাই সমস্যা। আরো যে কথা উল্লেখ করতে হয় সেটা হল, এতো বছর ধরে পাকিস্তানী জঙ্গিরা সবচেয়ে বেশি খুন করেছে কাশ্মীরি মুসলিমদের, তখন তো ধর্ম নিয়ে ভাবে নি, হঠাৎ এখন ধর্ম নিয়ে ভাবা কেনো শুরু করলো? এটাও একটা বড় প্রশ্ন?
পাকিস্তান ভালোভাবে জানে, ভারতবর্ষের একটা ছোট্ট রাজ্যে কয়েকজন কে হত্যা করে ভারতবর্ষের ক্ষতি করা সম্ভব নয়। ফলে নিয়েছে অন্য পন্থা, যেমন বিপুল পরিমাণ মাদক সাপ্লাই, যার প্রভাবে পঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীরের মতো পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী রাজ্য গুলোর যুবসমাজ এখন মাদকাসক্ত। গুজরাটের আদানির বন্দর দিয়ে ঢোকা মাদকের টাকা পহেলগাঁও এর হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বলে NIA দাবি করেছে।
এবার আবার নতুন পলিসি, দেশবাসীর মধ্যে ধর্মীয় বিভেদে উস্কানি। বেশকিছুদিন ধরেই দেশে ধর্মীয় মেরুকরণ তৈরির চেষ্টা চলছে, এবারের পহেলগাঁও হামলা সেটাকে আরও ত্বরাণ্বিত করেছে। জঙ্গিদের উদ্দেশ্য সেটাই ছিল, একশ্রেণীর মিডিয়া ও হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি জঙ্গিদের সেই উদ্দেশ্য কে সফল করার দ্বায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে।
পাকিস্তান ভালো জানে, মাদকাসক্ত যুবসমাজ ও দেশবাসীর মধ্যে বিভেদ, দেশের কতোটা ক্ষতি করতে পারে। পাকিস্তানের বর্তমান অবস্থার জন্য অন্যতম দায়ী শিয়া ও সুন্নির বিভাজন। তাই ভারত কে দুর্বল করতে ধর্মীয় বিভাজনের সাহায্য নিচ্ছে, আমাদের মধ্যে কিছু মানুষ নিজেদের রাজনৈতিক লাভের জন্য পাকিস্তান কে সাহায্য করছে।
এরাই ঘরের শত্রু বিভীষণ। বছরের পর বছর জঙ্গি হানা দেশের যতটা না ক্ষতি করতে পেরেছে, এরা তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি করে দিচ্ছে।
বিদেশে বা সীমান্তের ওপারের শত্রু বা আততায়ীদের সাথে যুদ্ধ পরে হবে। সবার আগে দরকার বিদেশি শক্তির অর্থে প্রতিপালিত দেশের ভিতরের এই সকল মিডিয়া হাউসের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণ! কোনও দেশ বিরোধী জঙ্গির বাড়ি ভাঙার আগে সাবেক কলকাতার বুকে সগর্বে দণ্ডায়মান দেশের সর্বাধিক বিকৃত এই মিডিয়া হাউসগুলোকে বুলডোজার চালিয়ে গুঁড়িয়ে না দিলে এই বদমাইশি বন্ধ হবার নয়। কঠোর ও নজীরবিহীন, দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে আত্মঘাতিবাহিনীর এই মিছিল কিছুতেই থামার নয়। কারণ, গরমাগরম সহানুভূতিটা রোজ সকালে একটু একটু করে চায়ের সাথে খাওয়ানো হচ্ছে। খুব সুকৌশলে।
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আরো যে কথা বলতে হয়, পেহেলগাঁও এর যে স্থানে জঙ্গি আক্রমণ হলো সেখানে কোনো নেট ওয়ার্ক নেই,বিদ্যুৎ নেই,বসতি নেই।এই মাঠে শীতের সময় বরফ পরে।জায়গাটি যেমন অপূর্ব সুন্দর ঠিক তেমন নির্জন।সাধারণত পেহেলগাঁও এ পর্যটক ঘুরতে এলে এই মাঠে অনেকেই আসেন আবার অনেকেই আসেন না।এই মাঠে পৌঁছতে হলে সকাল বেলায় আপনাকে ঘোড়ার পিঠে চড়ে আসতে হবে।বিকল্প কোনো রাস্তা নেই।পাহাড়ের উচু নিচু,জল, ঝর্ণা, বড় বড় পাইন গাছের মধ্যে দিয়ে আপনাকে পৌঁছতে হবে।অর্থাৎ গতকালের জঙ্গি হামলার পর সেনা কেউ হয় হ্যালিকম্পটার নয়তো ঘোড়া করে পৌঁছতে হয়েছে।কোনো কাঁচা বা পাকা রাস্তা নেই।পাহাড়ের খাড়া ঢাল বেয়ে উপরে উঠতে হয় এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড় তারপর পৌঁছতে হয় এই সুন্দর মাঠে।মুহত এই স্থানে নেই কোনো ঘর, বাড়ি,বাজার।সম্পূর্ণ নিরিবিলি পরিবেশ।স্থানীয় কিছু বাসিন্দা ঘোড়ার পিঠে করে কিছু খাদ্য সামগ্রী নিয়ে এই স্থানে দোকান দিয়েছে।তাও হাতে গোনা দশ বারোটি
যার মধ্যে চার পাঁচটি ছাড়া বাকি দোকান বন্ধ থাকে।এই সব দোকানে আপনি চা,বিস্কুট, মোমো,চাউমিন,জল,কোল্ড ড্রিঙ্কস থেকে ছোটো খাটো কিছু খাবার জিনিস পাবেন।দোকানদার সকালে দোকান খুলে আবার বিবেক বিকেল দোকান বন্ধ করে পেহেলগাঁও এ নিচে নেমে আসে।
আমি আগেই বলেছি এই স্থানে ফোনে নেট ওয়ার্ক নেই, বিদ্যুৎ নেই,বসতি নেই।সুতরাং রাতে এই স্থান বা এই মাঠটি সম্পূর্ণ নির্জন বা অন্ধকার থাকে । এতো কিছু বলার একটাই কারণ এই স্থানটি শুধুমাত্র পর্যটকদের জন্য।জঙ্গিরা ধরে নিন পাকিস্থান থেকে এসেছে,ওদের পক্ষে এই স্থান, রাস্তা ঘাট চিনিয়ে দিতে হলে লোকাল লোক এর সাপোর্ট লাগবেই।গোটা জম্মু কাশ্মীরে সারা বছর রাস্তাঘাট থেকে গুরুত্বপুর্ন স্থানে সেনা বাহিনী, পুলিশ পাহারা দেয়।কাশ্মিরের অলিগলিতে সেনা বাহিনী থাকে।স্থানীয় পুলিশ সিভিল ড্রেসে পাবলিকপ্লেসে মিশে থাকে।ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনীর একটা বিশাল ফাঁক হয়ে গেলো গত কালের জঙ্গি হামলার।জঙ্গিরা তো ধরা পরবেই আজ হোক বা কাল।শুধু জঙ্গিরা কেন তাদের যারা সাহায্য করেছে তারাও ধরা পরবে।স্থানীয় লোক ছাড়া এই ফাঁকা স্থানে জঙ্গি হামলা হলো কারণ তারা তাদের নোংরা বর্বরোচিত হামলা করে পালিয়ে যেতে অনেকটাই সময় পাবে।কাশ্মীরের অন্য স্থানে আক্রমণ করলে ওরা বেছে বেছে হিন্দুদের মারতে পারতো না।ওদের উদ্দেশ্য একটাই ছিল হিন্দুদের হত্যা করা।ওদের উদ্দেশ্য যদি অন্য কিছু থাকতো তাহলে ওরা ধরনের আক্রমণ করত,এতে সাধারণ কাশ্মীরি থেকে হিন্দু মুসলিম অনেকেই মারা যেতো কিন্তু ওরা তা করেনি।এবার আসি জঙ্গিদের কে সাহায্য করলো সেই প্রসঙ্গে,আমার ধারণা স্থানীয় ঘোড়া ছুটিয়ে যারা নিয়ে যায় টুরিস্টদের তাদের মধ্যে কেউ জড়িত থাকতে পারে।কারণ তারা বন্দুক সঙ্গে নিয়ে গেছে।যাত্রীদের ব্যাগ থেকে সারা বডি যেখানে চেকিং হয় সেখানে বন্দুক নিয়ে যাওয়া সম্ভব না।হাজার হাজার ঘোড়া গোটা এলাকায়।জঙ্গিরা আগে থেকেই কোনো কোনো ঘোড়ার পিঠে বন্ধুক লুকিয়ে গেছে এবং ওদের সাহায্য করেছে স্থানীয় লোক অথবা ঘোড়ার চালক (এটা আমার ধারণা মাত্র) স্থানীয় কিছু বড়লোক ঘোড়া কিনে আর কিছু স্থানীয় গরীব মানুষ 300/400 টাকার বিনিময়ে ঘোড়ার মালিকদের থেকে ঘোড়া সারা দিনের জন্য ভাড়া নেয়।সব খুঁজে বের হবে আগামীদিনে।
বর্তমানে জঙ্গিরা ভারতকে আক্রমণ করেছে।ওরা যে উদ্দেশ্য নিয়ে আক্রমণ করেছে সেটা সফল।ওরা হিন্দুদের মেরে গোটা দেশে বুঝিয়ে দিলো।ওরা জানে হিন্দুদের মারলে গোটা দেশে হিন্দু মুসলিম ডাঙ্গা লেগে যাবে।হিন্দু মুসলিম ভুলে সবাইকে একটাই কথা বলবো সবাই শান্ত থাকুন।গুজবে কান না
দিয়ে ,অল্প জেনে বা সত্যি মিথ্যে না জেনে ভুলভাল মন্তব্য বা বিভ্রান্তি তৈরি করবেন না। একটি দেশের অভ্যন্তরীন বিপর্যয় । এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাই কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রশ্ন,এত হাজার কোটি টাকা দেশের সুরক্ষা খাতে বাজেটে থাকে তবে এটা ঘটলো কেন ? দায়টা কিন্তু নিতে হবে। Pic courtesy: Daily Excelsior