যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে এত টালবাহানা কেন?

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।
এত মৃত্যু, এত শোক। আমি নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা করি, আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি, হতাহতদের প্রতি সমবেদনা ও সহমর্মিতা কামনা করি। যারা নিহত হয়েছেন তাঁরা হয়তো মরে বেঁচেছেন। কিন্তু অগ্নিদগ্ধ হয়ে যাঁরা হাসপাতালে যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে তাঁদের বেদনার কথা ভাবলে এবং আপনি মানুষ হলে ঠিক থাকতে পারবেন না। যাদের সন্তান মারা গেছে সেইসব পিতামাতার মানসিক অবস্থা ভাবতে পারেন? পিতামাতার কাঁধে সন্তানের লাশের চেয়ে বড় শোক হয়না।
এটি কি দুর্ঘটনা, না দায়িত্বহীনতা? ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন-এনিয়ে টালবাহানা কেন? ঘটনা ২১শে জুলাই’র, পরদিন ২২জুলাই সকালে প্রধান উপদেষ্টা ঐক্যমতের ৪-দলের সাথে বৈঠকে বেমানান-ভাবে বেশ ‘হাস্যোজ্জল’ ছিলেন! চারদল হচ্ছে, বিএনপি, জামাত, এনসিপি, ও ইসলামী আন্দোলন (হাতপাখা)-এঁরা যে খুব একটা শোকাহত ছিলো তা মনে হয়নি। শিশু মৃত্যুর কথা ভুলে তারা কিভাবে আওয়ামী লীগ ঠেকানো যায় তা নিয়ে ব্যস্ত ছিলো।
সব দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনা নয়। একসাথে এত শিশুর মৃত্যুতে জাতি স্তম্বিত, পুরো জাতি ক্রোধান্বিত। সরকার যে খুব একটা উদ্বিগ্ন তা মনে হয়না। সরকারি তরফে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা সংক্রান্ত পরিবেশনা নেই, থাকা উচিত ছিলো। প্রধান উপদেষ্টার অফিসে একটি অস্থায়ী সেল খোলা যেতে পারতো। হয়নি, কারণ জনগণের সাথে সরকারের কোন সংযোগ নেই? মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে বিক্ষোভ করে, এদের ওপর সরকারি বাহিনীর হামলা দু:খজনক।
শুধুমাত্র ঢাকা মেডিক্যালে নাকি ৮০জন আহত শিক্ষার্থী ভর্তি রয়েছে। গুজব রয়েছে ২/১জন মারা গেছে। প্রকৃত নিউজ না থাকলে গুজব স্বাভাবিক হয়ে যায়। যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় সরকারি ভাষ্যমতে ৩১জন নিহত হয়েছেন। লোকে বলছে, ২/৩শ’ মারা গেছে। কোনটা সত্য। দুই উপদেষ্টা ও প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবকে ছাত্ররা ৮ঘন্টা আটক করে রেখেছিলো। যুদ্ধবিমান নিয়ে ঢাকা শহরের ওপর প্রশিক্ষণ কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন উঠছে।
মাঝরাতে হটাৎ মাইলষ্টোন স্কুল-কলেজে এম্বুলেন্স কেন, শিক্ষার্থীদের এ প্রশ্ন উঠেছে। ভিডিওতে ছাত্ররা বলছে, লাশ চুরি করতে আসছে। অনেক মানবিক ঘটনা ঘটেছে। এক শিক্ষিকা ২০জন ছাত্রছাত্রীকে বাঁচিয়ে নিজে মারা গেছেন। তাঁকে স্যালুট। এক বন্ধু মৃত্যু পথযাত্রী বন্ধুর সাথে শেষ দেখা করতে গেলে বন্ধু বলেন, ‘আমি জানতাম তুমি আসবে’। একথা বলে বলে বন্ধু মৃত্যু’র কোলে ঢলে পড়ে। আর এক ভিডিওতে দেখা যায়, এক পিতা বলছে, পুত্রকে জল খাওয়াতে তিনি পানির কিনতে চাইলে এক বোতল পানির দাম চাওয়া হয় ৬শ’ টাকা।
উত্তরার দয়াবাড়ী মাইলষ্টোন স্কুল-কলেজে প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ধ্বংসের জন্যে দায়ী কে? নিশ্চয় প্রধান উপদেষ্টা। বিমান বাহিনীর প্রধান কি বলবেন? এই বিমানের সম্প্রতি আরো দুইটি দুর্ঘটনা ঘটে, এরপর কেন এই বিমান এখনো আকাশে? নিউজ দেখলাম, বিমানটি ভারত থেকে কেনা? পরে জানা গেলো, এরকম ৩৬টি বিমান চীন থেকে কেনা। শেখ হাসিনা’র আমলে এই স্কুলের অনুমোদন দেয়া হয়নি, পরে ক্ষমতাসীন মানুষজন এটি যেভাবেই হোক করে নেয়? প্রশ্ন হলো, বিমান বন্দরের পাশে এত উঁচু ভবন ওঠে কিভাবে?
ভারত থেকে ডাক্তার-নার্স আসছে। প্রশ্ন উঠেছে বার্ন ইউনিটের ডাঃ সামন্ত লাল সেনকে ডেকে আনা হচ্ছেনা কেন? ঘটনার পর মানুষের ঢল নামে। সেনাবাহিনীকে কিছুটা কঠোর আচরণ করতে হয়? অন্যরা বলছে, মানুষ জড়ো না হলে সরকার হয়তো নাক তেল দিয়ে ঘুমাতে। রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাস্থলে গেছেন, এর পক্ষে-বিপক্ষে মতামত আছে। এটি আদৌ দুর্ঘটনা কিনা তা নিয়েও সংশয় ছড়ানো হচ্ছে। পাইলটকে নিয়েও অনেক প্রশ্ন উঠছে। তিনি কি হিরো নাকি অন্য কিছু? শিক্ষকদের সত্য কথা বলতে দেয়া হয়নি। এ দুর্ঘটনা নিয়ে অযথা ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে কেন? এতে কি কোন ক্রিমিনাল অফেন্স আছে? সরকার যখন অকর্মন্য, তখন সেনাবাহিনী, হাসপাতাল-স্কুল কর্তৃপক্ষ ঘন্টায় ঘন্টায় ঘটনার ব্রিফিং দেয়া দরকার। সরকারের উচিত ছিলো যুদ্ধকালীন সময়ের মত পরিস্থিতির মোকাবেলা করার উচিত ছিলো, সরকার তা করেনি। শিক্ষা উপদেষ্টা কি পদত্যাগ করবেন? অন্য কেউ? Pic courtesy: Bloomberg