বহরমপুর কাঁটা তুলে ফেলল মমতা
দেবারুণ রায়
বুথ ফেরত সমীক্ষার নামে এবারে যা হল তা বিজেপি পক্ষ ছাড়া সবাই জালিয়াতি বলেই মনে করছে। ভোটের হাওয়া সম্পর্কে গণনার আগে পর্যন্ত দেশবাসীকে বিভ্রান্ত রাখা। যাতে গণনায় গোঁজামিল দিয়ে হয়কে নয় করা যায়। এটাই বিরোধী নেতাদের দাবি। যারা এই আজগুবি এক্সিট পোলের হোতা সেই টিভি চ্যানেলগুলো রাতারাতি ভোল পালটালো চার তারিখ বিকেলে। এক্সিট পোলে গোঁজামিল বলেও চ্যানেলে চ্যানেলে ফাঁদা হল বিতর্ক। মানে যারা গুজব ছড়ালো, তারাই আবার গুজবের বিরুদ্ধে নাটকীয় আলোচনা ফেঁদে টিআরপির জাল ফেলল। এই বিচিত্র পর্বে ইন্ডিয়া টুডের পর্দায় রাজদীপ সরদেশাইয়ের জেরার মুখে ভুল স্বীকার করলেন অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়ার প্রদীপ গুপ্তা। তিনি নাকি বিরাট পাণ্ডিত্য নিয়ে ভোটের ভবিষ্যৎ বাতলে থাকেন প্রতিবার। এহেন মুনিরও মতিভ্রম কেন হল ? সব মঞ্চেই ব্যাখ্যা দিতে হল তাঁকে। বললেন, তমুকটা ভুল হয়েছে অমুক কারণে। কিন্তু মূল কথায় তো ভুল করিনি। মানে, মোদীকে যারা চারশ’ পার করালো তারা বলতে চাইছে, টায় টোয় ২৭২ এর নম্বরও ছোঁয়নি বিজেপি এটা তো ঠিকই। কিন্তু সরকার তো থাকছে। তাহলে ভুলটা কী হয়েছে ? ভুল স্বীকারের নামে ভোল পাল্টে চোখ ঢেকে মাথায় হাত দিয়ে কাঁদলেন প্রদীপ। সেই ভিডিও ভাইরাল হল। এমনই যত উদ্ভট যত কান্ড ভোটের ভারতে।
স্বনামধন্য শায়র রাহত ইন্দৌরির মনমাতানো শের এখন সবার মুখে মুখে। “হিন্দুস্তান কিসিকা বাপ কা থোড়ি হ্যায়।” কবি রাহত আহত হয়ে লিখেছিলেন এই কবিতা। এই তো এই জমানার দাপটের মধ্যেই। কিন্তু এদিনটা তাঁর দেখা হল না। যেদিন তাঁর শের সবার জবানে লব্জ হয়ে ফিরছে। ওঁর স্মৃতিকে সালাম।
যে মোদীজিকে অবতারের অবয়বে দেখা গেছে সংহার মুদ্রায়, তাঁর শরীরী ভূগোল বদলে গিয়েছে একরাতে। ওঁর দল পাস নম্বরের চেয়ে বত্রিশ কম পেয়েছে। মানে ওঁরা গতবার ৩০৩ পেয়েছিলেন। এবার ২৪০। অযোধ্যার রাম আর কালীঘাটের মাকালী মিলিজুলি করে ৬৩ টি আসন কমিয়ে দিলেন। অযোধ্যায় রাম থুড়ি আম জনতা জেতাল সমাজবাদী পার্টিকে। বিজেপি বহু পুরনো অযোধ্যার লালু সিংয়ের ঘুড়ি ভোঁকাট্টা। এখন কী হবে ? জয় শ্রী রাম বলবে বিজেপি , না হায় রাম। শুধু কি তাই ? শিশুরামের বিগ্রহ বানানো হল কর্তার আদেশে দক্ষিণী আদলে। যাতে দক্ষিণ ভারতে একটু আসন দক্ষিণা জোটে। কিন্তু কোথায় আসন ? অতক্ষণ ধরে শুটিং, তার আগে গোদি থেকে যাবতীয় সতী মিডিয়ায় সেটিং, কাগজ টিভিকে গেটিংয়ের বন্দোবস্ত সব করেও সেই শূন্যই পূণ্যফল। কিন্তু শরীরী অশরীরী বাণীতে বিজেপির বাঘা বাঘা বাঘবাহাদুর কারিয়াকর্তা কইছেন এমন করে, আরে বাবা সরকার তো মোদীজিই করছেন। তিনি বলেছেন, এনডিএ সরকার চায় জনগণ। এটাই ভোটের বার্তা। যেন সেই উপকথা। “নাকের বদলে নরুন পেলাম টাক ডুমাডুম ডুম।” চেলা ফ্যান সবাই এক রা।
অবশেষে দেখা দিলেন সরকারের দুই মেকার। কে কার চেয়ে কম বা কম নন তা বিচারের সময় পড়ে আছে। এখন ধরা করার সময়। বিজেপি দপ্তরে চন্দ্রবাবু যেতেই যৌবনের ক্ষিপ্রতায় মোদী চেপে ধরলেন তাঁর হাতে। টেনে নিয়ে নিজের চেয়ারে বসাতে ছেঁড়াছিঁড়ি প্রায়। চন্দ্রবাবু কঠিন ঠাঁই। অনেক সরকার ভাঙা আর গড়ায় কর্মবীর। এবং অনেক মসনদি রণনীতির মুরুব্বিদের সঙ্গে তাঁর উঠবোস বিগত তিরিশ চল্লিশ বছর। নীতীশ সেই তুলনায় কাছের কিছুটা। ভালবেসে হেসে হেসে কতবার এসেছেন। আবার কাঁদিয়ে পিঠ ফিরিয়েছেন। আবার যখন এসেছেন তখন আর এসব ভাবা কেন ?
এই দুজন থাকলেই চলবে। তেঁতুল পাতা ছিল অটলজির এনডিএ। ন’জনের কথা হলে আঠারোজন বা আরও বেশি এসেছেন। কোয়ালিশন এরা (যুগ)র এরাই মক্কেল। তবে কোথায় আজ সেই সুজন ? যারা তেঁতুলপাতায় ন’জন ? এবার ৬৩ টা আসন কমেছে। উত্তরপ্রদেশের স্মৃতি দুঃসহ বেদনা। ইরান সফর তো অন্য কষ্টের স্মৃতি। এতো স্মৃতি ইরানি। কংগ্রেসমুক্ত ভারত বলে বিরোধীরা ভেঙাচ্ছে। অমেঠিতে প্রিয়াঙ্কার তেজ যেন ফেটে পড়ছে। ইস। স্মৃতিকে মুছে দিল কিশোরীর মতো একটা পরিবারতন্ত্রের পূজারী ! আমাদের স্লোগান আর গান (বন্দুক) দুটোই মাটি। যা রাহুলকে ইউপি থেকে কেরলে দৌড় করিয়েছিল। এবার এই কলঙ্ক মুছতে ইউপির মন্ত্রী কমবে। উপ প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রসহ, প্রতিরক্ষা, অর্থ, বিদেশ আর রেল নিয়ে দুশ্চিন্তা। কোন শরিক কী খেল করে কে জানে। চন্দ্র যদি পুরনো স্টাইলে স্পিকার চেয়ে বসেন ? তবে ওম বাবুর মতো স্পিকার কোথায় পাবো ? নীতীশবাবু থাকবেন ঠিকই। কিন্তু উনি কূটনীতিতে অনেক সরেস। কিছুই চান না আবার সবকিছুই চান। দলের বাইরে ঝড় যেমন, ভেতরেও তেমন। ভেতরে সংঘের পসন্দদের তো নীচে নামানো যাবে না। ওপরে ওঠালে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া আর কিছু হওয়ার নেই। প্রধানমন্ত্রীর বয়স মার্গদর্শক হওয়ার বয়স পূরায় ছুঁই ছুঁই। একবছর পেরলেই ৭৫ এর সীমারেখা ! অনেকেই অপেক্ষায় আছেন।
রাজ্যে রাজ্যে ভারসাম্য চাই। গুজরাত ফ্যাক্টর, দিল্লি ফ্যাক্টর, ইউপির পশ্চিম, পূর্ব ফ্যাক্টর। মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, বিহার, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, নল্থ ইস্ট কোনটা ফ্যাক্টর না। এত মন্ত্রী ? কেন ? ৬৩ টা আসন কমানোর পুরষ্কার ? সেঙ্গল দিয়ে হল না তামিলস্বপ্ন পূরণ। ব্যাড ড্রিম হল। কেরলের কী রোল বিজেপির মানে দেশের বিকাশে ? অসমকে পুরষ্কার দেওয়ার প্রশ্ন নেই। অরুণাচল ভরসা। মণিপুরটা ভাবার বাইরে। এবার বেঙ্গল। গতবার ১৮জন ছিলেন। তাতেই ক্যবিনেট দেওয়া মুমকিন হয়নি। এবার তো প্রতিমন্ত্রী নিশীথবধ দিয়েই উত্তরবঙ্গের উত্তর পাওয়া গেল । বারোটা আসনে শুভেন্দুর দুটো। মন্ত্রীর উপযুক্ত অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। প্রাক্তন জজের পরিচয় থেকে কি সদ্য সদ্য প্রতিমন্ত্রী হওয়া সমীচিন ? না করলে কেলেঙ্কারি !
কোর ইস্যু মুলতুবী রাখার ফ্যাকড়া কেউ তুলবে নাকি ? রামমন্দির তো কাম সারা। জ্ঞানবাপী নিয়ে ঘ্যানঘ্যান করে লাভ ? রইলো পড়ে কমন সিভিল কোড। থেমে থাকবে কেন ? নেড়ে তো দেখাই যায়। তারপরের যে ইচ্ছাসূচি, যাতে আডানি টু গুজরাত , রিফর্মস্ কতকিছু পাইপলাইনে আছে ! সব করতে হবে, এক এক ঢিলে দুই দুই পাখি মারতে হবে। এইভাবে যতটা বাড়ে। এতে আটকে থাকলে বিকাশ হবে না। বিরোধীপক্ষে পূর্বভারতে কমেছে, বলার মতো গলার জোর তো বাঙলায় একজনেরই ছিল। অধীরবাবু। তাকে কাবু করে কামাল করেছে গুজরাতের লাল। গুজরাতে একটা কমেছে। কংগ্রেস খেয়েছে। অধীর চৌধুরীকে হারিয়ে কংগ্রেসের বদলা নেওয়া গেল। বাহাদুরি ইউসুফের। এটাই জমিনি সচ্চাই। টিট ফর ট্যাট। রাজনীতির এটাই নীতি। কিছুদিন লোকে বলবে। তারপর ভুলবে। ‘২৬ য়ের বিধানসভায় ফের বঙ্গালমে বাইনারি। কে কাকে ফেলবে ? Pic courtesy: OneIndia