GeneralIndiaNewsPoliticsSambad MatamatWorld

ট্রাম্পের বিজয় মোদীর জন্যে সুখবর 

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।

ডোনাল্ড জে ট্রাম্প ঐতিহাসিক বিজয় পেয়েছেন। ট্রাম্প দু’বার অভিশংসিত হয়েছেন। তিনি ফৌজদারি আইনে দণ্ডিত। একবার জিতে, একবার হারার পরও লড়েছেন এবং জিতেছেন। তার ওপর দু’বার আক্রমন হয়েছে, একবার কানে গুলি লেগেছে, তিনি পিছু হটেননি। মিডিয়া পুরোটাই প্রায় বিপক্ষে এবং দলের অনেক বড় নেতারা তাঁকে সমর্থন করেননি। ডেমক্রেটরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছেন তাকে হারাতে, সবই ব্যর্থ হয়েছে। হোয়াইট হাউস, সিনেট এবং কংগ্রেস রিপাবলিকানদের (জিওপি) দখলে যাচ্ছে। এমনকি গভর্নর রেসেও জিওপি এগিয়ে। ১৮০০শতকের পর এই প্রথম একজন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী পরাজয়ের পর আবার জয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হলেন। ট্রাম্পের জয় বিশ্বব্যাপী বিশেষত: ভারতীয় উপমহাদেশে আনন্দের বার্তা বয়ে এনেছে, কারণ জোসেফ বাইডেন-কমলা হ্যারিস-র প্রশাসন ওই অঞ্চলে, প্রধানত: বাংলাদেশে সমস্যা সৃষ্টি করছে বলে অনেকের ধারণা।      

ভারতীয় হিন্দুরা আগের চাইতে এবার দ্বিগুন উৎসাহে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। বিশেষত: বিজেপি সমর্থকরা একচেটিয়া ট্রাম্পকে সমর্থন জুগিয়েছেন। নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের একটি টুইট ভারতীয়দের পক্ষে আনতে ব্যাপক সহায়তা করে। টুইটে তিনি ভারত ও মোদির প্রশংসা করেন। একই টুইটে তিনি বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতনের কথা বলেন এবং সেখানে ‘অরাজক’ পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে মন্তব্য করেন। স্বভাবত:ই ট্রাম্পের বিজয়ে হিন্দুরা খুশি। নির্বাচনের আগে নিউইয়র্কে বাংলাদেশী ট্রাম্প সমর্থকরা একটি ‘মোটর শোভাযাত্রা’ করেছিলো, জয়ের পরদিন বুধবার তারাই আবার সমাবেশ করে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছে। ট্রাম্প জেতায় কুইন্সে মিষ্টি বিতরণ হয়েছে। বিজেপি সমর্থকরা একটি সমাবেশ করে আনন্দ-উৎসব করেছে। বাংলাদেশী হিন্দুরা ট্রাম্পের সমর্থক, ট্রাম্পের জয়ে তাঁরা খুশি। এ সপ্তাহান্তে ট্রাম্পের জয়ের প্রেক্ষিতে আরো অনুষ্ঠানের কথা শোনা যাচ্ছে।  

এবার ভোটে আমেরিকায় মুসলমান, বিশেষত: ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানরা বেশ ‘বেকায়দায়’ ছিলেন, কাকে ভোট দেবেন? ট্রাম্পকে তারা ‘এন্টি মুসলিম’ ভাবেন, এবং কমলা হ্যারিস ‘ভারতীয় হিন্দু’, তদুপরি মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থতায় তাঁকেও অপছন্দ। যদিও মুসলিম ভোট মার্কিন জাতীয় নির্বাচনে কোন ফ্যাক্টর নয়, তবু ট্রাম্প এবার আগের চেয়ে বেশি মুসলিম ভোট পেয়েছেন। মিশিগানে আরব মুসলমানরা হামাস-ইসরাইল যুদ্ধের কারণে হ্যারিসের বিপক্ষে ছিলেন, ট্রাম্প তো তাদের অপছন্দ বটেই। তবু ট্রাম্প কিছু ভোট পেয়েছেন, কমলা পেয়েছেন সিংহভাগ, অনেকে কাউকেই ভোট দেননি।  বাংলাদেশী হিন্দুরা একচেটিয়া ট্রাম্পকে ভোট দেয়, এবার আওয়ামীপন্থী মুসলমানরা ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন, এই  আশায় যে, ট্রাম্প জিতলে হয়তো শেখ হাসিনা’র ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন সম্ভব হতে পারে। এক ‘টকশো’-তে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি জানান, তার দল অনুষ্ঠানভাবে ট্রাম্পকে ভোট দেয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমি সেই টকশো-তে ছিলাম।  

ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হবেন ২০শে জানুয়ারি ২০২৫। কিন্তু ট্রাম্পের জয়ের পরদিন ষ্টক-একচেঞ্জ ফুলেফেঁপে উঠে। ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি জিতলে দু’টি যুদ্ধই থেমে যাবে। ট্রাম্পের জয়ের পর বাংলাদেশ ও কলকাতার প্রায় সকল ফোনালাপে বুঝলাম, সবাই ভাবছেন, শেখ হাসিনা পুনরায় ঢাকায় গিয়ে ক্ষমতাসীন হচ্ছেন? আসলে কি সেটা সম্ভব? তাদের পরামর্শ দিয়েছি, এতো উৎসাহের কোন কারণ নেই, আগে ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে যান, এরপর ট্রাম্প-মোদী সম্পর্ক জোরদার হোক, অত:পর বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। বাংলাদেশের হিন্দুরা জানতে চেয়েছেন, ট্রাম্প টুইটে যা লিখেছেন তা কি তিনি করবেন, হিন্দুদের উদ্ধার করবেন? ট্রাম্পের বিজয় ভারতের জন্যে সুসংবাদ, ঢাকায় ড: ইউনুস-র জন্যে দু:সংবাদ বয়ে এনেছে। খবরে প্রকাশ, ট্রাম্প নাকি জানতে চেয়েছেন, হিলারি ক্লিন্টনের ফান্ডে অর্থ দেয়া ঐ বাংলাদেশী অর্থনীতিবিদ-টা কে? ইতিমধ্যে তিনি নিশ্চয় তা জেনেছেন যে, সেই ব্যক্তি হচ্ছেন, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ঢাকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড: মোহাম্মদ ইউনুস। ট্রাম্পের সাথে হাওয়াই-র সাবেক কংগ্রেসওমেন তুলসী গ্যাবার্ড- র সম্পর্ক চমৎকার। তিনি এবার রিপাবলিকান প্রাইমারীতে ট্রাম্পের প্রতিদ্ধন্ধী ছিলেন, যদিও দ্রুত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে ট্রাম্পকে সমর্থন জানান এবং ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত থাকেন। তিনি ট্রাম্পের ক্যাবিনেটে স্থান পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এমনকি ফরেন সেক্রেটারি হিসাবে তার নাম আসছে। সুন্দরী তুলসী গ্যাবার্ড, ৪২ ইস্কন সমর্থক চমৎকার হিন্দু, এবং তাঁর ভারতীয় রুট রয়েছে। আর একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বিবেক রামস্বামী প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট ট্রাম্পের সুনজরে আছেন। নির্বাচিত ভাইস-প্রেসিডেন্টের বউ উষা চুলুকুড়ি ভ্যান্স একজন ভারতীয়, তিনি আমেরিকার ‘সেকেন্ড লেডি’ হচ্ছেন। ট্রাম্প তাঁর ‘বিজয়ী’ ভাষণে ঊষার প্রশংসা করেছেন। উষা, ভ্যান্স ও রামস্বামী ইয়েল আইন স্কুলে পড়তেন এবং তারা বন্ধু। এবার আরো একজন ভারতীয় ডেমক্রেট ভার্জিনিয়ার সুভাষ শুভ্ৰমনিয়াম কংগ্রেসে জয় পেয়েছেন, এছাড়া কংগ্রেসে আরো ৫জন তো আছেনই। মার্কিন রাজনীতিতে ভারতীয়দের প্রভাব বাড়ছে। এ মুহূর্তে ভারত-কানাডা সম্পর্কের টানাপোড়ন চলছে, ট্রাম্পের জয় তাতে প্রভাব ফেলতে পারে। চীনের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এক সমাবেশে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তবে ট্রাম্পের বিজয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত্র ‘ইসলামী জঙ্গীবাদ’, যদিও ট্রাম্পের আগের আমলে কোন যুদ্ধ হয়নি। ইতোপূর্বে ট্রাম্পের ভাষণের সময় সমাবেশে ‘মোদী মোদী’ উল্লাস, নিশ্চিয় ড: ইউনূস ও বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের জন্যে  সুখকর নয় ? Pic courtesy: BW Business World

Leave a Reply

Your email address will not be published.