BusinessGeneralIndiaSambad Matamat

রাজ্যের চা শিল্প উপেক্ষিত কেন্দ্রীয় বাজেটে 

অরুণ কুমার:

আশা করা গিয়েছিল নতুন কিছু ঘোষণা থাকবে এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে। বাংলার ঐতিহ্যবাহী চা শিল্প আবার ঘুরে দাঁড়াবে এই আশায় ছিল চা শিল্প মহল। কিন্তু হতাশ হতে হয়েছে চা শিল্পমহলকে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন সংসদে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরের পেশ করা বাজেটে চা শিল্পের জন্য পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বড় কোনও ঘোষণা না থাকায় চা শিল্পের প্রতিনিধিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সহ হতাশ হতে হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে, চা শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের জন্য এক হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ গত কয়েকটি বাজেটে ঘোষণা করা হলেও এবার সেটির নাম পরিবর্তন করে পুনরায় ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন অনেকে। তবুও, গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা চা গবেষণা কেন্দ্রগুলির জন্য একটি ইতিবাচক দিক হতে পারে আগামী দিনে।

চা শিল্পের প্রতিনিধিরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। দেখা যাচ্ছে যেখানে চা শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে হতাশা এবং আশার আলো দুইই প্রতিফলিত হয়েছে। এই বিষয়ে আলোকপাত করার আগে চলুন একবার চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক এই রাজ্যের চাষ শিল্পের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। উত্তরবঙ্গের চা শিল্পের মূল সমস্যাটা কোথায়? সে বিষয়ে চলুন একটু দেখে নেওয়া যাক। সবচেয়ে উল্লেখ করার বিষয় হলো চা শিল্পের সঙ্গে উৎপাদিত পণ্য অর্থাৎ তৈরি চা বা মেড টির দাম একেক সময় একেক রকম হয়। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত উভয় পক্ষেরই দাবি চায়ের একটা নূন্যতম দাম বা মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস ঘোষণা করা জরুরী প্রতিবছর কিন্তু বাস্তবে এটা না করে চা শিল্প বর্তমান একটা বড় ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে। আমাদের দেশে টি বোর্ড নামে একটি সংস্থা থাকলেও এর যারা চেয়ারম্যান হয় তারা অধিকাংশই প্রতিবেশী রাজ্য থেকে হয় ফলে অসমের চা যেভাবে গুরুত্ব পায় সেভাবে কিন্তু এই রাজ্যের চা শিল্প সেভাবে গুরুত্ব পায় না বলে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ।

এর পাশাপাশি আরও কিছু সমস্যা রয়েছে সেগুলি হল সবুজ পাতার দাম কম, সবুজ পাতার ন্যায্য দাম পশ্চিমবঙ্গে অনুপস্থিত। ছিঁড়ে ফেলার ২৪ ঘন্টার মধ্যে সবুজ পাতা প্রক্রিয়া করা যেমন উচিৎ অথচ তা হয় না। জমির মালিকানা ও অবৈধ চা বাগানের সংখ্যা বৃদ্ধি ও নতুন গজিয়ে ওঠা চা উৎপাদনের সঙ্গে যুক্ত চা চাষীদের প্রযুক্তিগত ও বিপণন জ্ঞানের অভাব।এটা যেমন একটা দিক তেমন অপরদিকে অতি মুনাফা লোভী চা বাগান মালিকদের দ্বারা নতুন চা গাছ রোপন না হওয়া ও সংরক্ষণের অভাবে ধুঁকছে।  চা বাগানগুলির অর্ধেকের বেশি চা-গাছ ৫০-৬০ বছর বা তার বেশি পুরোনো। পুরোনো চা গাছের পাতা থেকে উৎপাদিত চায়ের গুণগত মান যেমন নিকৃষ্ট, তেমনি মোট উৎপাদনের পরিমাণও কম হয়। এই জায়গায় ঘাটতি পূরণ করে ক্ষুদ্র চা বাগানের উৎপাদিত চা পাতা। তাছাড়াও এই রাজ্যের উৎপাদিত চায়ের উৎপাদন ব্যয় বেশি হওয়ায় আন্তর্জাতিক বাজারে বিক্রি করার ক্ষেত্রে অসুবিধা দেখা দেয়। দার্জিলিং চা-বাগিচাগুলির উৎপাদন ব্যয় সাধারণভাবে সবচেয়ে বেশি বলে লাভের পরিমাণ কম হয়। তুলনামূলকভাবে দার্জিলিং এর পরে তরাই ও ডুয়ার্সের চা বাগানগুলির অবস্থা ও পরিকাঠামোর মান অত্যন্ত দুর্বল। কোভিদ অতি মারির পর চা বাগানের একটা বড় অংশের শ্রমিক কর্মহীন ছিলেন এবং পরবর্তীতে তারা কেরালা পাঞ্জাব সহ দুবাই প্রভৃতি জায়গায় চলে যাওয়ার ফলে শ্রমিক ঘাটতি সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া শ্রমিক ইউনিয়নের একটা বড় অংশ শ্রমিকদের পরিশ্রম বিমুখে সাহায্য করেছে। যার ফলে উৎপাদিত চা পাতার মানের গুণগত ঘাটতি একটা বড় সমস্যা রুপে দেখা দিয়েছে। রাজ্যের অধিকাংশ চা-বাগান সুষ্ঠু পরিচালনার অভাবে ক্রমশ রুগ্ন হয়ে পড়ছে এবং চা-বাগানে উৎপাদানের পরিমাণ ক্রমশ হ্রাসমান। এই রাজ্যের দার্জিলিং অঞ্চলে ১৮৫০-৬০ খ্রিস্টাব্দে অসংখ্য চা বাগান গড়ে ওঠে। এখানকার অনেক চা বাগানই ১০০ বছরের বেশী পুরোনো এবং চা-বাগানে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অত্যন্ত পুরোনো।ফলে এর উৎপাদন-ব্যয় বেশি ও মোট উৎপাদনের পরিমাণ কমে গিয়েছে। রাজ্যের  বিশেষত দার্জিলিং, তরাই ও ডুয়ার্স অঞ্চলে চা-বাগানে কাজে নিযুক্ত শ্রমিকদের মজুরির হার বেশি হওয়ার কারণে উৎপন্ন চায়ের দাম ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। আরো যে কথাটি উল্লেখ করতে হয় যে অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এবং এখানে নতুন চা-বাগিচা গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় জমির অসুবিধা রয়েছে ।এই অবস্থার মধ্যে গিয়ে রয়েছে রাজ্যের চা শিল্পের পরিবেশ।

চা বণিকসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, উত্তরের পাহাড়-সমতলে বড় চা বাগান রয়েছে ৩১১টি। তার মধ্যে দার্জিলিং পাহাড়ে ৮৭টি ডুয়ার্সে ১৭৮টি, তরাইয়ে ৪৬টি ।এর বাইরে উত্তরের ইসলামপুর থেকে মেখলিগঞ্জ পর্যন্ত এলাকায় রয়েছে ৫০ হাজার ছোট চা বাগান। অন্তত ১৫ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চা শিল্পের উপর নির্ভরশীল। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চা উৎপাদনকারী রাজ্যও, যা 2022-23 সালে 414.08 মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করে, যা দেশের মোট চা উৎপাদনের 30.3%। অর্থাৎ এই প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আছে রাজ্যের চা শিল্প। তার উপর আশায় আশায় থাকা চা শিল্পমহল এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে কোনো আশার কিরণ দেখতে না পেয়ে তাদের হতাশা প্রকাশ করেছে। আবার কোন কোন মহল এই বাজেটকে ইতিবাচক বলে অভিহিত করেছেন। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র মহাসচিব প্রবীরকুমার ভট্টাচার্য বলেন, ‘দক্ষতা বৃদ্ধি, পর্যটন, ডিজিটাল পরিষেবা, ব্যাংক ব্যবস্থা নিয়ে বাজেটে ঘোষণার সুফল চা শিল্প পাবে। শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের কথাও বলা আছে বাজেটে।’ অপরদিকে চা শ্রমিক নেতা তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশ চিক বরাইক বলেন, ‘‘চা বলয়ের উন্নয়নে এক টাকাও বরাদ্দ হল না। আসলে কেন্দ্র চা শ্রমিকদের কথা একেবারেই চিন্তা করে না।” এবছর অর্থাৎ ২০২৪ -২৫ বছরের কেন্দ্রীয় বাজেটে চা শিল্পের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বড় কোনও ঘোষণা না থাকলেও গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে বলে সাফাই গিয়েছেন চা বলয় থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ ডা: জয়ন্ত কুমার রায় ।

এবারের বাজেটে চা শিল্পের বিভিন্ন দিক নিয়ে যেমন হতাশা রয়েছে, তেমনই গবেষণা খাতে বরাদ্দের আশাও রয়েছে। তবে, চা শিল্পের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রের কাছ থেকে আরও নির্দিষ্ট এবং কার্যকর উদ্যোগের প্রত্যাশা করছেন। চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) চেয়ারম্যান নয়নতারা পালচৌধুরীর মতে, ‘গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এতে চা গবেষণা কেন্দ্রগুলিও বরাদ্দ পাবে বলে আশা করছি।’ রাজ্যের চা শিল্প আরও একটি সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলেছে তা হল, কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রক বিভিন্ন কীটনাশক নিষিদ্ধ তালিকায় ফেলে দিয়েছে এবং তৈরি চা পাতার নমুনা পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, আবহাওয়ার খামখেয়ালে উৎপাদনও কম হয়েছে, যা চা শিল্পের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
এই সমস্ত কারনে বর্তমান চা শিল্প সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে চলেছে।একদিকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ মুখোমুখি চা শিল্প ।তাই ভাবা গিয়েছিল এবারের বাজেটে ফিল্ড এন্ড ফ্যাক্টরি লেভেলে কিছু কথা বলা হবে এক্সপোর্ট একটিভিটি ডেভেলপমেন্ট, মার্কেটিং ডেভেলপমেন্ট, কথা বলা হবে সাবসিডি রিলেটেড কিছু কথা থাকবে কিন্তু সে রকম কিছু না থাকার ফলে হতাশ হতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন, ইন্ডিয়ান টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান রাম অবতার শর্মা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের বাজেট পেশের পর উত্তরের চা উৎপাদক, চা শিল্পপতি এবং শ্রমিক নেতৃত্বের মধ্যে ওই প্রশ্ন উঠেছে। বিরোধী চা শ্রমিক সংগঠন গুলি সরাসরি বাজেটকে চা শ্রমিক বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেছে।

এ প্রসঙ্গে আরো যে কথা বলতে হয় কয়েক মাস আগে থেকে বিপন্ন চা শিল্পকে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিতে কেন্দ্রীয় অর্থ ও বাণিজ্যমন্ত্রকে গুচ্ছধরা প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল বিভিন্ন যাওয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে ‌।অথচ পেশ করা বাজেটে সে সব তো নেই, বিপন্ন চা শিল্পেরই নামগন্ধ নেই। অথচ এই শিল্পে জড়িয়ে কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন জীবিকা। উত্তরের অর্থনীতির অনেকটা চা শিল্পের অবদান অনেকটা,স্বভাবতই বেড়েছে হতাশা। অভিযোগ উঠেছে বঞ্চনার। কেন উঠবে না? চা বণিকসভাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েক বছর থেকে একদিকে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। অন্যদিকে বাজারে দামের ওঠানামার ধাক্কায় বিপর্যস্ত উত্তরের চা শিল্প।
২০২৩ সালে অক্টোবর থেকে চলতি বছরের এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় সাত মাস বৃষ্টি ছিল না। তীব্র তাপদহের জেরে মার্চ মাস পর্যন্ত রাজ্যে চা উৎপাদনে প্রায় ছয় মিলিয়ন কেজি ঘাটতি হয়েছে। মে মাস থেকে ঘাটতি বেড়েছে শুধু নয়। চা বাগান রক্ষাই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সেচ দিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি। ৮০ শতাংশ ছোট চা বাগান তাপদাহে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গাছ শুকিয়ে মরেছে বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি। এর পর প্রবল বৃষ্টির জন্য উৎপাদন কমে। লোকসান বাড়ে। জানা গিয়েছে, আবহাওয়ার খামখেয়ালির জন্য এবার মে মাস পর্যন্ত ২০ মিলিয়ন কেজি কম চা পাতা উৎপাদন হয়েছে। জুন, জুলাই মাসেও উৎপাদন মার খেয়েছে বলে চা বণিক মহল সূত্রে জানা গিয়েছে।

জলপাইগুড়ির চা শিল্পপতি বিশ্বজিৎ গুহ মতে, “উদ্বেগজনক এক কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে চা শিল্প ক্ষেত্রে। কিছুতেই সামলে ওঠা সম্ভব হচ্ছে না। সরকারকে এ ব্যাপারে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে’। নর্থ বেঙ্গল টি প্রোডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয়কুমার আগরওয়ালের মতে, বছরে ২২ মিলিয়ন কেজি প্রতিবেশী নেপালের নিম্নমানের চা বাণিজ্য শুল্ক ছাড়াই উত্তরবঙ্গ তথা রাজ্যের বাজারে ঢুকে দার্জিলিং চায়ের সুনাম নষ্ট করছে। সেকথা কেন্দ্রীয় সরকারকে বার বার জানানোর পরও ব্যবস্থা নেয়নি। বাজেটেও দিশা নেই। এক দিশাহীন পরিস্থিতি।’ চা শিল্পপতি পুরোজিৎ বক্সি গুপ্তর মতে, “আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে কয়েক বছর থেকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তরের চা শিল্প। আমরা আশা করেছিলাম কেন্দ্রীয় বাজেটে পরিস্থিতি মোকাবিলার পথ দেখাতে চা উৎপাদন পরিকাঠামো গুলিকে উৎসাহিত করা হবে। চা নীতি ঘোষণা হবে। তা কিন্তু কিছুই নেই।” শ্রমিক নেতা স্বপন সরকারের অভিমত হলো, চা শ্রমিকদের জন্য কোনরকম ভাবনাচিন্তা প্রতিফলিত হয়নি এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে। শ্রমিক কল্যাণের বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে গেছে।অনেকেই নিরুপায় হয়ে চা বাগান বিক্রি করার কথা ভাবছেন। বাগান বন্ধ করে পালাচ্ছেন,বুঝতে পারছি না এই সরকারের চা নীতি কী।” ডুয়ার্সের প্রবীণ চা শ্রমিক নেতা মণি কুমার ডার্নালের অভিযোগ , কেন্দ্রে বিজেপি সরকার যেদিন থেকে এসেছে চা শিল্পের দফারফা হয়েছে। ওরা চা পর্ষদকে দুর্বল করে রেখেছে। অতিবৃষ্টি-অনাবৃষ্টিতে ধারাবাহিকভাবে এতো বড় বিপর্যয় চলছে ফিরেও তাকাচ্ছে না।

দার্জিলিং টি প্লান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সতীশ মিত্রুকার মতে, পরিস্থিতি মোকাবিলার একমাস আগে থেকে কেন্দ্রীয় বানিজ্য ও অর্থমন্ত্রকে প্রচুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বাজেটে চা শিল্প নিয়ে একটি শব্দ না থাকায় তারা হতাশ। সতীশবাবুর অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার যে চা শিল্প নিয়ে উদাসীন সেটা বাজেট থেকেই স্পষ্ট।ছোট চা উৎপাদকদের সর্বভারতীয় সংগঠন, কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, এবারের কেন্দ্রীয় বাজেট ঘিরে অনেক আশা ছিল। কিন্তু চা শিল্পের জন্য কিছুই নেই। আমরা হতাশ। ভয়ঙ্কর এক সংকটের মুখে চা শিল্প দাঁড়িয়ে। ফার্স্ট এবং সেকেন্ড ফ্ল্যাশ মার খেয়েছে। অতিবর্ষণের জন্য বর্ষাকালীন উৎপাদন উদ্বেগজনক ভাবে কমেছে। এই শিল্প টিকবে কিনা সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।” তিনি জানান, দেশের মোট উৎপাদিত চায়ের ৩৪ শতাংশ উত্তরবঙ্গে উৎপাদন হয়। রাজ্যে বছরে চারশো মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন হয়ে থাকে। তার ৬২ শতাংশ ছোট চা বাগানের পাতা থেকে হয়। ছোট চা বাগানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ। দীর্ঘদিন থেকে ছোট চা বাগানকে কৃষির মর্যাদা দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। এবারও বাজেটে সেই বিষয়ে উচ্চবাচ্য নেই।‘এক কথায় আমরা হতাশ এই বাজেটে, চা শিল্পের উন্নয়নের জন্য আরও নির্দিষ্ট ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।

অপরদিকে,চা গবেষণা সংস্থার (টিআরএ) চেয়ারম্যান নয়নতারা পালচৌধুরী বলেন, “গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এতে চা গবেষণা কেন্দ্রগুলিও বরাদ্দ পাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। যদিও এ বছর ভারতীয় চা একাধিক পরীক্ষার মুখোমুখি বলে দাবি চা বিপণনকারীদের। বিশেষত, একাধিক কীটনাশক নিষিদ্ধ তালিকায় ফেলেছে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রক। তৈরি চা পাতার নমুনা পরীক্ষারও নির্দেশ এসেছে। গত কয়েক বছরের পরে চলতি বছরে আবহাওয়ার খামখেয়ালে উৎপাদন সবচেয়ে কম। কেন্দ্রীয় বাজেট থেকে কোনও সুবিধা মিলবে কি না বুঝতে মুদ্রা যোজনা, বেসরকারি ক্ষেত্রে গবেষণা খাতে অর্থ বরাদ্দের মতো ঘোষণায় উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে চা শিল্প। সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের পেশ করা বাজেটে চা শিল্পের পরিকাঠামো সংক্রান্ত নিয়ে তেমন কোনও ঘোষণা শোনা যায়নি বলে দাবি বিরোধীদের। চা শ্রমিক এবং তাঁদের পরিবারের জন্য এক হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ বেশ কয়েকটি বাজেটে ঘোষণা করা হয়ে আসছে। সেটিকেই এ বার নাম বদলে ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের। অর্থাৎ এই অবস্থায় রাজ্যের চা শিল্প এক ভয়াবহ সংকটের মধ্যে দিয়ে চলেছে, কেন্দ্রীয় সরকার যদি এ বিষয়ে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে চা শিল্পের দুর্গতি আরো কঠিন অবস্থা ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করছেন চা শিল্প মহল।

Leave a Reply

Your email address will not be published.