BusinessFEATUREDFoodHealthIndiaSambad Matamat

আমকে কেন্দ্র করে এক ভিন্নমাত্রায় আম উৎসবের আয়োজন জলপাইগুড়িতে

অরুন কুমার:

বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণের মাঝে যুক্ত হয়েছে সুস্বাদু ফলের রাজা আমকে কেন্দ্র করে এক উৎসব।প্রতিবছরের মতো এ বছরও রাজ্যের প্রান্তিক জেলা শহর জলপাইগুড়িতে আয়োজিত হয়ে গেল এই আম উৎসব। দুদিনব্যেপি মহাসমারোহে অনুষ্ঠিত ম্যাংগো ফেস্টিভ্যাল বা আম উৎসব যেখানে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ৭০ এর ও বেশি প্রজাতির আম প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছিল।

রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে হিমসাগর, মোহন ভোগ, মাদ্রাসী, আম্রপলি, রাজ ভোগ,অমৃত ভোগ ও বিভিন্ন ধরনের আম ও আমের তৈরি সামগ্রী ছিল এই আম উৎসবে।গরম পড়ার সাথে সাথেই সব ফলকে ব্যাকফুটে ফেলে আমের মরসুম শুরু হওয়ার। কাঁচা-পাকা আমের বিভিন্ন পদ নিয়ে মেতে উঠেছিল আম-জনতা। প্রতিবছর রাজ্যে বিভিন্ন জায়গায় আম উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে। উত্তরবঙ্গের প্রাচীন ঐতিহাসিক শহরে এবার আয়োজিত হয়ে গেল আম উৎসবের,এর উদ্যোক্তা ছিল একটি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এলিম কলকাতার জলপাইগুড়ি ক্যাম্পাসের ছাত্র-ছাত্রীরা। সহযোগিতার ছিল উত্তরবঙ্গ বাণিজ্য বণিক সংস্থা। জলপাইগুড়ি শহরে প্রথম আম উৎসবের উদ্যোক্তা তারাই। এবার ছিল দ্বিতীয় বর্ষ।
এই আম উৎসবে ছিল আম নিয়ে প্রদর্শনের পাশাপাশি ছিল বিভিন্ন ভ্যারিটির আম সম্পর্কে তথ্য টিপস,আম খাওয়া নিয়ে প্রতিযোগিতা। আর ছিল সেল্ফ ডিফেন্স, সাইবার ক্রাইম ও ট্রাফিক রুলস, ক্রস বর্ডার ক্রাইম বর্ডার ট্রাফিকিং , খাদ্য সুরক্ষা সহ পর্যটন ও প্রকৃতি বিষয় নিয়ে সচেতনতামূলক আলোচনা। যেখানে নতুন প্রজন্মের ছাত্রছাত্রীরা আগ্রহের সঙ্গে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করার সুযোগ পেয়েছিল।

অপরদিকে কি ছিল না এই আম উৎসবের আয়োজনে। বিভিন্ন ধরনের আম যেমন এই আম উৎসবে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন প্রজাতির আম যেমন মিয়াজাকি, আলফানসো,আম্রপালি, সূর্যাপুরী, তোতাপুরি, বাড়িফরা, হাড়িভাঙ্গা, অরুণা, গুটলি, গোপালভোগ, গোলাপখাস,নীলাম্বরী, রেড আইভরি, আপেল ম্যাঙ্গো,হিমসাগর, ল্যাংড়া, ফজলি ইত্যাদি প্রায় ৭০ টি প্রজাতির আম।
এই আমের বিপুল সম্ভার নিয়ে হাজির উদ্যোক্তারা, সঙ্গে ছিল ম্যাঙ্গো ল্যসি, ম্যাঙ্গো সেক, ম্যাঙ্গো স্কোয়াশ ইত্যাদি। ছিল টক ঝাল মিষ্টি আমের আচারের পাশাপাশি আম পাঁপড়, আম মোরব্বা, ঘরোয়া পদ্ধতিতে আম পান্না শরবত পোড়া আমের শরবত, আর ছিল আমের পাঁপড় আমের মোরব্বা সহ অনেক কিছু আম বাঙালির রসনা তৃপ্তির উদ্দেশ্যে। সেই সঙ্গে ছিল আম খাওয়ার প্রতিযোগিতাও। যারা আম ফলান, যারা আম খান আবার যারা আম বিক্রি করে আবার যারা আম উৎসবে দর্শক হিসেবে এসেছিলেন প্রায় শতাধিক মানুষ অংশ নিয়েছিলেন এই আম খাওয়ার প্রতিযোগিতায়। আমের সুগন্ধে মুখরিত হয়ে উঠেছিল আম উৎসব প্রাঙ্গণ।

এবছর আমের ফলন কম পাওয়ার ফলে বাজারে আসেনি সেভাবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমকে নিয়ে বৈচিত্রের আয়োজনের অভাব ছিল না উদ্যোক্তাদের‌ আম উৎসব আয়োজক সংগঠনের তরফে ভাস্কর চক্রবর্তী জানিয়েছেন,দুইদিন ব্যপি এই উৎসবে বিভিন্ন অনুষ্ঠান, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ম্যাংগো ইটিং কম্পেটিশন, কুইজ কম্পেটিশন আয়োজিত হয়েছিল। ভাস্কর বাবু আরো বলেন,আম আদমি থেকে এক অসাধারণ মানুষ হয়ে সাফল্য অর্জন করবে। সেলিম কলেজের প্রিন্সিপাল ড:সঞ্চিতা সোম জানান ,এটি শুধু বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি
শিক্ষা বিনোদন মূলক উৎসব অনুষ্ঠান কারণ এর মাধ্যমে ছাত্র ছাত্রী শিক্ষামূলক অনেক জ্ঞান অর্জন করবে। বিগত বছর এই উৎসব বিপুল পরিমানে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। এ বছর এই উৎসব তাই আরো বৃহৎভাবে পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আম উৎসবের মূল উদ্দেশ্যে হচ্ছে আম এবং আমজাতো বিভিন্ন দ্রব্যের সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং কলেজ এর ছাত্র ছাত্রী রা আম উৎসবকে কেন্দ্র করে হাতে কলমে যাতে থিওরিটিকাল এর পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল এক্সপোজার পায় সেজন্য। ছাত্র-ছাত্রীদের জ্ঞান সমৃদ্ধ হয় তার উপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।আগামী দিনে আরও বিভিন্ন প্রজাতির আম সহ আম ফুচকা, আমের শরবত, আমের চপ, আম-দই, আম মিষ্টি ও আমের ফিরনি এসব রাখার প্রয়াস থাকবে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তাদের তরফে ভাস্কর চক্রবর্তী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.