FemaleGeneralIndiaNewsSambad Matamat

শ্রদ্ধানুষ্ঠানে ভোজের আড়ম্বর না করে প্রয়াতা স্ত্রী শর্মিষ্ঠার স্মরণে অর্থ দান

সুকন্যা পাল, দুর্গাপুর

যখন পড়বে না মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে। সত্যি যেখানে আর পায়ের নম্রপাতার পদচারণ শোনা যাবে না কোনও দিনই। শোনা যাবে না সুরেলা গলার সেই সনাতনী অতি পরিচিত গানগুলি। সেইখানে গো সেইখানে, সেই নিজস্ব চেনা চেনা ভূমের থেকে চিরতরে চলে গেলেন রাগরাগিনীর পরমতমা সখী বঁধূয়ারে। বড্ড অসময়েই।

যে ভূমে রচিত হয় প্রিয় সখার বিদায়বেলার মুর্চ্ছনা সেখানেই উপাচারের নামে কি শ্রাদ্ধের মোরকে চড়ুইভাতির বাস্তবায়ন ? বিতর্কের উষ্কানির আড়ালে কেউ কেউ তা যে মেনে নিতে পারে না। অনেকেই অসহ্যের প্রলেপে এসব সহ্যও করে উঠতে পারেন না। তাই হয়তো মহানগরের কোলাহল এড়িয়ে গতকাল দুর্গাপুরের এজোনে প্রান্তিক বৃদ্ধাবাস ‘বাদশা’তে পৌঁছে গিয়েছিলেন সাংবাদিক দেবারুণ রায় ও তাঁর দাদা নবারুণ রায় সহ জনা কয়েক পরিজন।

দেবারুণবাবুর পরিচয় দেওয়া নিতান্তই বাতুলতা সমান। একদা আজকাল পত্রিকার দিল্লির ব্যুরো প্রধান দেবারুণবাবুর স্ত্রী শর্মিষ্ঠাদেবী প্রয়াত হয়েছেন গত ২১ জুলাই। শর্মিষ্ঠাদেবী ছিলেন স্বামীর মতোই সাংবাদিক। দেশের ও বাংলাদেশের নানা পত্রিকায় তাঁর লেখা খবর প্রকাশিত হতো । অন্যদিকে সঙ্গীত চর্চা ছিল তাঁর হৃদয়ের পরমতম ভালোবাসা। দেশের বহু নামী সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গে ছিল তাঁর অবাধ সুর-সখ্যতা।

দেবারুণবাবুর আগমনে বাদশাতে অনুষ্ঠিত হয় একটি ছোট মাপের স্মরণসভা। টেবিলে পরিপাটি করে পাতা সাদা চাদরের উপর ফুলের মালা পরিবৃত একখানি ফ্রেমে বাঁধানো ছবি। ছবিটি শর্মিষ্ঠাদেবীর। তাঁকে স্মরণ করে আবাসিক মহিলারা গাইলেন উদ্বোধনী সঙ্গীত। সেই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেবারুণবাবু বলেন, “স্ত্রী মারা গেছেন। এমন শোক আবহে শ্রাদ্ধের নামে লোক খাওয়ানো আমি মেনে নিতে পারছিলাম না এবং আমার প্রয়াতা স্ত্রীও পছন্দ করতেন না । যুগ পাল্টে যাচ্ছে। তাই মানুষের ধারণাও পরিবর্তিত হচ্ছে। আমিও তাই বাদশাতে এসেছি একেবারে স্বেচ্ছায়।” তিনি আরও মন্তব্য করেন, “আমি এখানে এসে এক প্রশান্তির আবাসে প্রবেশ করেছি। আমি খুব সাধারণ মানুষ। তাই সাধ্যের মধ্যে যৎসামান্য অর্থ আবাসিকদের উন্নতিকল্পে দিতে পেরেছি। আমার স্ত্রীর প্রতি এটাই হলো আমার শ্রদ্ধার্ঘ।”

দেবারুণবাবুর এহেন উদ্যোগের প্রসঙ্গে বাদশার কর্ণধার সুকুমার রায় আমেরিকা থেকে জানান, দেবারুণবাবু তাঁর দীর্ঘকালের পরিচিত। অসাধারণ মানুষ। তুখোড় সাংবাদিকও। স্ত্রীর অকাল বিয়োগে উনার সমব্যথী। তবে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের ভোজের উপাচারের উর্দ্ধে উঠে উনি যেভাবে আবাসিকদের সাহাযার্থ্যে এগিয়ে এসেছেন তা এক অভিনব মানবিক দৃষ্টান্তের পরিচয় দেয় বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেছেন।

বাদশায় শোকসভা শেষ। তবু রেশ থেকে গেল সমাপ্তি পর্বের সেই গানটায়, আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে। তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে ।

2 thoughts on “শ্রদ্ধানুষ্ঠানে ভোজের আড়ম্বর না করে প্রয়াতা স্ত্রী শর্মিষ্ঠার স্মরণে অর্থ দান

Leave a Reply

Your email address will not be published.