জলবায়ু পরিবর্তনে ব্যাপক প্রভাব, বিশ্বের অসুরক্ষিত তালিকায় দেশের নয়টি রাজ্য
শুভাশিস ব্যানার্জী, নয়া দিল্লি
চরম অসুরক্ষার মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের নয়টি রাজ্য। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে অবস্থা আয়ত্বে আনতে সত্ত্বর ব্যবস্থা না নেওয়া হলে অদূর ভবিষ্যতে এই রাজ্যগুলি হারাতে পারে তাদের এসজিডিপি বা রাজ্যের গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের ১০ শতাংশ পর্যন্ত। এই চিন্তাজনক প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে। বিশ্বে জলবায়ুর চেহারা বদলের জন্য ধীরে ধীরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যে ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তা বিশ্লেষন করার কাজে আন্তর্জাতিক স্তরে সুপরিচিত বিশেষজ্ঞ সংস্থা এক্সডিআই বা ক্রস ডিপেন্ডেন্সি ইনিশিয়েটিভ তার সদ্য প্রকাশিত রিপোর্টে এই গুরুতর আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
বাস্তবে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে ভারতের যে নয়টি রাজ্য বিপজ্জনক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হতে চলেছে বলে এক্সডিআইয়ের গ্রস ডোমেস্টিক ক্লাইমেট রিস্ক রিপোর্টে জানানো হয়েছে, তাদের মধ্যে আছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান, অসম এবং গুজরাতের মত রাজ্য। ক্ষয়ক্ষতির মোট অনুপাতের হিসাবে দেশে বিহারের স্থানই সবার ওপরে। বিশ্বে ঝুঁকি তালিকার ২২ নম্বরে রয়েছে বিহার, ২৫ নম্বরে উত্তরপ্রদেশ এবং অসমের ক্রমাঙ্ক ২৮। ১৯৯০ থেকে ২০৫০ সালের ড্যামেজ রেশিও বা লোকসানের আনুমানিক অনুপাতে বিশ্বের অসুরক্ষিত রাজ্যগুলির মধ্যে এই রাজ্যগুলির র্যাংক উদ্বেগজনকভাবে আরও ওপরে।
চরম আবহাওয়া এবং বন্যা, জঙ্গলে আগুন বা সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসা ইত্যাদির মত বিভিন্ন কারন আর জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানবসৃষ্ট সম্পদের এবং ভৌগোলিক পারিপার্শ্বিকের ক্ষয়ক্ষতি নিরন্তর বেড়ে চলেছে। নির্দিষ্ট মাপকাঠি দিয়ে এই লোকসানের বহর এবং আগামী দিনে কোন এলাকা বেশি ক্ষতিগস্ত হতে চলেছে, সেই তথ্য বিশ্লেষন করেছে এক্সডিআই। সোমবারে প্রকাশিত রিপোর্টে ক্রস ডিপেন্ডেন্সি ইনিশিয়েটিভ জানিয়েছে, নদীবহুল এলাকা, অত্যধিক বর্ষনপ্রবন অঞ্চল আর বন্যাপ্রভাবিত জায়গাগুলিতেই ১৯৯০ থেকে ২০৫০ সালের ড্যামেজ রেশিও সবথেকে বেশি। বিভিন্ন দেশের যেসব রাজ্যে জলবায়ুর কায়াবদলের সবথেকে বেশি মার পড়েছে সেরকম ৫০টি এলাকার মধ্যে ভারতের নয়টি রাজ্য রয়েছে। চীনের ২৬টি এবং আমেরিকার পাঁচটি প্রভিন্সও রয়েছে সর্বাপেক্ষা উদ্বেগজনক এই পঞ্চাশের তালিকায়। মার্কিন যুক্তরাজ্যে ব্যাপক সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া, ফ্লোরিডা এবং টেক্সাস।
ভবিষ্যতের আশঙ্কার কথা জানিয়ে এক্সডিআই বলছে, গ্রস ডোমেস্টিক ক্লাইমেট রিস্ক রিপোর্টটি কার্যত জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে উন্নয়নমুখী উদ্যোগের ক্ষেত্রে থমকে যাওয়ার ব্যাপারে নীতি নির্ধারকদের জন্য এক আগাম সতর্কবার্তা। চীন ও আমেরিকার ঝুঁকিবহুল প্রদেশগুলির মত ভারতের নয়টি রাজ্যও এর কারনে আরও বড় ক্ষতির সামনে পড়বে। বিশ্ব উষ্ণায়ন এমনিতেই বিপদ ঘনিয়ে আনছে, তার ওপরে শঙ্কা বাড়ছে জলবায়ুর অভিঘাতে আর্থ-সামাজিক জীবনে বড় প্রভাব পড়ার। পরিণামে ভারতের ভালনারেবল বা অসুরক্ষিত রাজ্যগুলি হারাতে পারে তাদের নিজস্ব গ্রস ডোমেস্টিক প্রডাক্টের ১০ শতাংশ অবধি। এর কারনে প্রভাব পড়তে পারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও। যে নির্দিষ্ট কারনের জন্য শঙ্কা বেশি, সেই দিকগুলির দিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখে দ্রুত নীতি নির্ধারন এবং পরিকল্পনা রূপায়নের আশু প্রয়োজন আছে বলে জানিয়েছে এক্সডিআই। Pic courtesy The Times of India
ভারতবর্ষের বিপজ্জনক নয়টি রাজ্যের নাম জানালে ভালো হতো। পাঁচটি রাজ্যের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।