মোদীর সঙ্গে কেরলের বিজয়নের পার্থক্য রইলো কোথায় ?
প্রসূন আচার্য
কেরলের এশিয়া নেট টিভি চ্যানেল অফিসে রবিবার কেরল পুলিশ অভিযান চালায়। এশিয়া নেট টিভি চ্যানেলের মালিক রাজীব চন্দ্রশেখর বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি কেরলের NDA এর আহ্বায়ক। টাকার জোরে কর্ণাটক থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ। এবং তাঁর সংস্থা সংস্থা ( জুপিটার ক্যাপিটাল প্রাইভেট লিমিটেড ) অর্ণব গোস্বামী পরিচালিত রিপাবলিক টিভিরও বড় অংশের শেয়ার হোল্ডার বা মালিক। বাংলা রিপাবলিক টিভিও মালিক। চ্যানেলটি ঘোরতর বাম বিরোধী, মোদীর প্রতি অনুগত বলেই কেরলে পরিচিত। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রবল কংগ্রস বিরোধী এবং ফ্যাসিস্ট সমর্থক!
চ্যানেলের নীতি যাই হোক, যে ভাবে বিনা নোটিশে, অকারণে সিপিএমের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের পুলিশ বাহিনী রবিবার এশিয়া নেট টিভি চ্যানেলের অফিসে হানা দিয়েছে তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমি ব্যক্তিগত ভাবে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।
কেরল কংগ্রেস এর পক্ষ থেকেও পুলিশি হানার নিন্দা করে বলা হয়েছে, “সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে চায় কেরলের সিপিএম পরিচালিত সরকার।” নিন্দায় সরব হয়েছে কেরলের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনও। সকলেরই মনে পড়ে যাচ্ছে, ঠিক এই ভাবে এক সপ্তাহ আগে মোদী সরকার BBC অফিসে চার দিন ধরে আয়কর হানা দিয়েছিল। কারণ ছিল, গুজরাট দাঙ্গার উপরে মোদীর ভূমিকার সমালোচনা করে BBC এর ডকুমেন্টরি।
অথচ, তখন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি সহ তামাম বাম নেতারা BBC অফিসে আয়কর হানার তীব্র নিন্দা করে সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার উপরে সরাসরি হস্তক্ষেপ বলে মোদী সরকারকে আসামীর কাঠ গড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন! আজ কিন্তু তাঁদের বিবেক চুপ করে আছে। কারণ তাদের সবেধন একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী এই কাজের নির্দেশ দিয়েছেন!
এক নাবালিকাকে জোর করে ড্রাগ দেওয়া হয়েছে এবং তাকে যৌন নির্যাতন করা হয়েছে, এশিয়া নেট টিভিতে এই খবর দেখানোকে কেন্দ্র করে ঘটনার সূত্রপাত। সিপিএমের অভিযোগ, বিজয়ন সরকারকে বদনাম করতেই বালিকার মুখ ঢেকে তার বাইট নিয়ে মিথ্যে খবর করেছে এশিয়া নেট। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, বালিকা ড্রাগ নিয়েছিল কিনা সেটা প্রমাণিত না হলেও বালিকা সত্যি যৌন নির্যাতনের শিকার। একাধিক কিশোর তাকে যৌন নির্যাতন করেছে।
এই খবর দেখানোর বিরুদ্ধে একদল SFI কর্মী কোজিকোড এর এশিয়া নেট টিভি চ্যানেলের অফিসে ঢুকে ভাঙচুর করে। টিভি চ্যানেল সংস্থা তাদের বিরুদ্ধে FIR করেছে। ফলে বাধ্য হয়ে পুলিশও কিছু SFI কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা শুরু করেছে।
কিন্তু কেরলের সিপিএম সরকার যে কার্যত SFI এর কর্মীদের পাশে এবং ভয় দেখিয়ে এই চ্যানেলের মুখ বন্ধ করতে চায় সেটা স্পষ্ট হয় রবিবার। তদন্তের নামে রবিবার টিভি চ্যানেল অফিসে পুলিশ হানা দেয়। সাংবাদিক ও অন্য কর্মীদের অফিসে আটকে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিভিন্ন নথি তল্লাশি করা হয়। যদিও প্রায় কিছুই পাওয়া যায় নি।
এই প্রবনতা কিন্তু ভয়ঙ্কর।
এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সংবাদ মাধ্যমের সমালোচনা কোনও শাসকই মেনে নিতে পারে না। সেটা নরেন্দ্র মোদী হোক বা পিনারাই বিজয়ন। C@ Prasun Acharya হোয়াইটসঅ্যাপ থেকে সংগৃহীত