নবীর বিবাহ আর শিব লিঙ্গ নিয়ে মেতে থাকুন। ওদিকে বছরের বৃহত্তম দুর্নীতি করে আদানিকে ১৮০০০ কোটি টাকার কয়লা আমদানির বরাত পাইয়ে দিল মোদি সরকার। বাড়ছে বিদ্যুতের দাম —
প্রসূন আচার্য
নবী কি স্বপ্নাদেশ পেয়ে ৬ বছরের কন্যাকে বিবাহ করেছিলেন ? কেন নবীকে অসন্মান করা হবে? প্রতিবাদের কি অধিকার নেই ? শিবলিঙ্গ ঠিক আসলে কী? কৃষ্ণ লীলা বলতে কী বোঝায়? হিন্দুরা কি চুপ করে সব মেনে নেবে ? উত্তর প্রদেশের মত হাওড়াতে কি বুলডজার চালানো উচিত? আবার কি দেশ ভাগ হবে ? আপনি সারা দিন এই সব নিয়েই মেতে থাকুন। কারণ টিভি আর WhatsApp আপনাকে ক্রমাগত এটাই ভাবতে শেখাচ্ছে। হিন্দু মুসলিম, হিন্দু মুসলিম, হিন্দু মুসলিম …. একটাই ভাবনা আপনার মাথার মধ্যে সারা দিন ঘুরপাক খাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদী এবং তাঁর শিল্পপতি বন্ধু গৌতম আদানি দুই জনেই চান, আপনি এই সব নিয়েই সারা দিন ব্যস্ত থাকুন। আর এই সুযোগে দেশের মানুষকে কাঙাল বানিয়ে আদানির মুনাফা কি করে আরও বাড়িয়ে তোলা যায়, তারজন্য বিজেপি সব রকম চেষ্টা চালাচ্ছে। কারণটা স্পষ্ট। আদানির টাকায় বিজেপি ভোটে লড়ে। মাথায় রাখুন সর্ষের তেলের সব থেকে থেকে বড় ব্যবসায়ী গৌতম আদানি। তেলের দাম কিন্তু ২০০ টাকার নিচে নামছে না!ধর্মীয় উন্মাদনার মধ্যে দেশে কয়লা আমদানি করা নিয়ে যে পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতিটা হল, এখনও পর্যন্ত কোনো বড় কাগজ সামগ্রিক ভাবে লেখেনি। কোনও চ্যানেলে বলেনি। বিজনেস কাগজগুলি বিক্ষিপ্ত ভাবে লিখেছে ঠিকই। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে লেখেনি।বেশি দিন নয় তিন মাস অপেক্ষা করুন। বিদ্যুতের দাম ইউনিট পিছু ৫০ পয়সা করে বাড়ছে। এটা আমার হিসেব নয়, সরকারের যাঁরা বিদ্যুৎ এর দাম নিয়ে মাথা ঘামান তাঁরাই বলছেন। কারণ, আমদানি করা কয়লার জন্য বেশি দাম দিতে হবে।বিজেপি বিরোধী মমতা ব্যানার্জি বা দুবাইয়ে চোখ দেখাতে যাওয়া তাঁর ভাইপো এই নিয়ে রা টি করছেন না। কারণ, তাঁরাও আদানি পরিবারকে পছন্দ করেন। তাঁদের হাতে তুলে দিতে চান বন্দর থেকে কয়লা খনি বা নিউ টাউনের ডেটা সেন্টার। কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে আদানি আশ্বস্ত করেছেন ওই রাজ্যে বিনিযোগের ব্যাপারে। তাই সিপিএমের আওয়াজও এই ব্যাপারে তেমন শোনা যাচ্ছে না। আর কংগ্রেস ব্যস্ত রাহুল কে ED ডেকেছে, তাই নিয়ে প্রতিবাদ করতে।কয়লা আমদানি দুর্নীতির ছয় ধাপ।(১)আদানি গ্রুপ অস্ট্রেলিয়ার নর্থ কুইন্সল্যান্ডের কারমাইকেল কয়লা খনি থেকে কয়লা আমদানি শুরু করার সবুজ সংকেত পায় ২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে। তার আগে পরিবেশ আন্দোলনের চাপে দীর্ঘ চার বছর ধরে ওই খনি থেকে কয়লা তোলা যাচ্ছিল না। এই কয়লা উত্তোলনের বরাতের জন্য গৌতম আদানির কোম্পানিকে বিপুল টাকা ঋণ দিয়েছে SBI, অর্থাৎ মাছের তেলেই মাছ ভাজা। কয়লা তুলতে না পারলে হাজার কোটি টাকার লোকসান হতো SBI এর।(২) এই কয়লা আনার ব্যাপারে যাতে আদানিকে কোনও শুল্ক দিতে না হয়, তার জন্য ২ এপ্রিল ২০২২ ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল এবং অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য মন্ত্রী ডন তেহানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। FTA অর্থাৎ ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট। তাতে বলা হয়, আগে যে ২.৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক দিতে হতো, তা আর দিতে হবে না। অর্থাৎ আমদানি শুল্ক করা হল শূন্য। মানে আদানি গ্রুপকে এই কয়লা আমদানির জন্য ভারত সরকারকে কোনও টাকা শুল্ক দিতে হবে না। পুরোটাই ফ্রি। চুক্তি কার্যকর হয় ২৭ এপ্রিল থেকে।(৩) এই মাসে, ৩ জুন ২০২২ ভারত সরকার কোল ইণ্ডিয়াকে নির্দেশ দেয় অস্ট্রেলিয়া থেকে ১২ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানির জন্য জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কয়লা মন্ত্রী প্রলহাদ যোশী নিজেই এই নির্দেশ দেন। যাতে সেই কয়লা দেশের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহার করা যায়। আগামী ১৩ মাসে এই কয়লা আমদানি করা হবে। কারণ হিসেবে বলা হয়, যাতে কোনো ভাবেই কয়লার অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যহত না হয়, তাই এই সিদ্ধান্ত। জুলাই ২০২২ থেকে জুলাই ২০২৩ অব্দি বিদেশ থেকে এই কয়লা আমদানি করতে হবে।প্রশ্ন হচ্ছে, এর আগে কি কোনও দিন কোল ইণ্ডিয়া, যারা নিজেরাই বিপুল পরিমাণ কয়লা উৎপাদন করে তারা কোনও দিন বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করেছে? উত্তর হচ্ছে, না। করেনি।CIL অর্থাৎ কোল ইণ্ডিয়ার ইতিহাসে এই প্রথম তারা বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করছে। (৪) ৭ জুন , ২০২২ কোল ইণ্ডিয়া তাদের প্রথম টেন্ডারে জানায় তারা জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে ২.৪ মিলিয়ন টন কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করবে। এই টেন্ডারের টাকার পরিমাণ ৩১০০ কোটি টাকা। ঠিক তিন দিন পরে ১০ জুন কোল ইণ্ডিয়া থেকে পুনরায় একটি টেন্ডার জারি করা হয়। বলা হয়, তারা আরও ৬ মিলিয়ন টন কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করতে চায়। স্বাভাবিক ভাবেই টেন্ডারে অর্থের পরিমাণ যে ১০ হাজার কোটি ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট। এখন এই টেন্ডার যে আদনীই হস্তগত করবে, তা শুধু সময়ের অপেক্ষা। জুলাই থেকে টেন্ডার কার্যকর হবে।কোল ইণ্ডিয়া দেশের যে ২৬ টি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা সরবরাহ করে, তারমধ্যে সঞ্জীব গোয়ানকার CESC যেমন আছে, তেমনি জিন্দাল পাওয়ার ও আছে। আছে NTPC এর মত কেন্দ্রীয় সংস্থাও। সুতরাং সবাইকেই এই আমদানি করা কয়লা নিতে হবে। সে কথাও স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়।৫) কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রী রাজ কুমার সিং ৮ জুন ২০২২ এক নির্দেশ করি করে জানান, সকল বিদ্যুৎ উৎপাদক সংস্থা যেমন CESC, PDCL, টাটা পাওয়ার ইত্যাদি, দেশে উৎপাদিত কয়লার সঙ্গে এই বিদেশ থেকে আমদানি করা কয়লার মিশ্রণ বা ব্লেন্ডিং এই বছরের জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে করতে হবে। কোনও তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা যদি নির্দেশ অমান্য করে, তাহলে তাদের কয়লা সরবরাহ জুলাই মাস থেকে ৫ শতাংশ হারে কমিয়ে দেওয়া হবে। অর্থাৎ আদানির রফতানি করা কয়লা যে নিতেই হবে, ঘুরিয়ে তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়।৬) বেসরকারি সংস্থা একটু সময় নিতে পারে ভেবেই সাত তাড়াতাড়ি অর্থাৎ ৬ জুন ২০২২ NTPC বিদেশ থেকে কয়লা আমদানির জন্য আদানি এন্টারপ্রাইজকে ৮৩০৮ কোটি টাকার কয়লা আমদানির বরাত দেয়। কোনও টেন্ডার ছাড়াই। যা গর্হিত অপরাধ।অর্থাৎ কোল ইণ্ডিয়া এবং NTPC মিলিয়ে এই জুন মাসেই আদানি মোট ১৮০০০ কোটি টাকার কয়লা সরবরাহের বরাত পেয়ে গেল।এবার আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, কী করে কারা ইলেক্টোরাল বন্ড এর মাধ্যমে বিজেপিকে ১০০০ কোটি টাকা পর্যন্ত চাঁদা হাসতে হাসতে দিতে পারে। এ সবই হচ্ছে ২০২৪ সালের প্রস্তুতি।এত কিছুর পরেও না বুঝলে আপনি ভবিষ্যত অন্ধকার করে ধর্মীয় উন্মাদনা নিয়েই ব্যস্ত থাকুন। ওটাই আপনার জন্য সঠিক পথ।
C@ Prasun Acharya ফেসবুক পোষ্ট থেকে নেওয়া