EntertainmentSambad Matamat

ফেসবুক বাউন্ডারিতে সবুজের অঙ্গীকারে নারীত্বের জয়গান

সুবীর পাল

রোহিত শর্মার ক্রিকেট টিম শোকের আবহে উৎকন্ঠিত। অন্যদিকে মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুকের আঞ্চলিক স্বঘোষিত টিম পরিবেশ সচেতনতার ব্লুপ্রিন্টে উদ্বুদ্ধ।
বিষয়টা কিরকম?
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলা চলছে আহমেদাবাদে। চক দে ইন্ডিয়ার কুশীলবেরা তখন ব্যাটিং ক্রিজে ব্যস্ত। তারই রেশ আছড়ে পড়েছে কলকাতার চুড়ান্ত ব্যস্ততম রাস্তা পার্কস্ট্রিটে। অথচ তখন কি অদ্ভুত প্রায় শুনশান রাস্তা। যদিও বা দু’চারজন অতি বাধ্য পথচারীর দেখা মিলছে, কিন্তু তাঁদের চোখ যে হামেশাই নিবদ্ধ নিজস্ব মোবাইল স্ক্রিণে। ওই যে খেলাটা সকলেই দেখছেন অনলাইনে। দুর্ভাগ্যের এটাই, দর্শকেরা যে হতাশ। ভারতের ব্যাটিংয়ের আকাশচুম্বী ইমারত অসি-বোলার গোলায় তখন যে তাসের ঘরের মতো ভেঙে চুরচুর হয়ে চলেছে।
কিন্তু ততক্ষণে সেই ক্রিকেটীয় জ্বর জোয়ারকে কার্যত দমিয়ে ঢিল ছোড়া দুরত্বে শুরু হয়ে গিয়েছে আরও এক মিলন মহাযজ্ঞ। অনেকটাই বহিঃনীরবে। অথচ আশ্চর্য রকমের গভীর অন্তর তর্জনে। কলকাতায় রয়েড স্ট্রিটে অবস্থিত সিএনকে টাওয়ার ইন্টারন্যাশানাল সেন্টারে। আয়োজনে ফেসবুক ফ্রেন্ডস ক্লাব। উদ্দেশ্য, সদস্য সদস্যার অংশগ্রহণ, কিঞ্চিত খাওয়াদাওয়া আর সঙ্গে সাংস্কৃতিক মতবিনিময়। হলোও তাই। তবে তার রূপ যে ততক্ষণে বম্ববাস্টিংয়ের বহিঃপ্রকাশ।
অর্থাৎ সামান্য উদ্দেশ্যের উদ্যোগ চেয়ে বিধেয়ের পরিচালন রাশ কখন যেন অভিব্যক্তিতে বড় হয়ে উঠলো এক লহমায়। সুদূর আমেরিকার ফ্লোড়িডা থেকে হাজির উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানের প্রাণপুরুষ সুকুমার রায়। আজকাল পত্রিকার দিল্লি ব্যুরোর প্রাক্তন প্রধান দেবারুণ রায় ও দ্য টেলিগ্রাফ পেপারের সাংবাদিক তথা পরিবেশকর্মী প্রসূন আচার্যও যথারীতি উপস্থিত। সভাপতির আসন অলংকৃত করেন প্রবীণ আন্তর্জাতিক শিল্পপতি ডঃ খুরশিদ বক্ত চৌধুরী। অল্টারনেটিভ মেডিসিনের প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ দেবাশিস বক্সি উপস্থিত সবাইকে শোনালেন ডায়বেটিস নিয়ন্ত্রণে যোগের উপকারিতার একাধিক উপকরণ বিধি। এমনকি সারাদিনের প্রায় ওষুধহীন জীবনযাপনের অপার সম্ভাবনাগুলিও তিনি ব্যাখ্যা করলেন প্রাঞ্জল ভাষায়। আসরের ফ্ল্যাশিং মিডোয় একঝাঁক ফোকাসের ছটা ঘুরপাক খাচ্ছে বই প্রকাশের কারীগর পার্থপ্রতিম রায়, শিলিগুড়ির রিপোর্টার অরুণ কুমার, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের সাংবাদিক মনিশঙ্কর দেবনাথ, জনসংযোগ কন্সালন্টেন্ট ইউনুস মোল্লা, চলচ্চিত্র শিল্পের দুই বাজিগর সৈকত গঙ্গোপাধ্যায় ও প্রবীর মল্লিককে কেন্দ্র করে। ইতিমধ্যেই আদার চায়ের কাপে চুমুক কিন্তু চলছে সকলের একযোগে। সঙ্গে ভিন্ন আবহে মাছরাঙার মাছ শিকারের অনুকরণ তাৎক্ষণিকতায় ক্রিকেটের স্কোরকার্ড মাঝেমধ্যেই পরখ করা যে যার মুঠোফোনে। দিল্লির মোদী সরকারের সঙ্গে রাজ্যে মমতা প্রশাসনের নানান না-শোনা পর্যালোচনা শোনালেন দেবারুণবাবু। অভিজ্ঞতার খবর-ঝুলি থেকে রকমারি রাজনৈতিক নিরপেক্ষ পসরা বের করে আনলেন কি না অনায়াস দক্ষতায়। প্রসূণবাবুর কালো ঘোড়া ছুটলো কিন্তু পরিবেশের কাঙ্ক্ষিত সবুজ মাঠেই। কাগজে কলমে পেশাগত সাংবাদিক হলেও মনের খাঁচায় তিনি এক আদ্যন্ত পোষ না মানা উড়ন্ত সবুজ পাখি। গ্রীণ নাগরিকের এই সম্পাদক সভা মধ্যেই রূপরেখা এঁকে দিলেন পরিবেশ সচেতনতার ক্যানভাসে নানা দিগন্তের সবুজ কর্ষণ। সেই আন্দোলনের উপকথা শুনেই ফার্স্ট স্লিপে আচমকা উঠে আসা লোপ্পা ক্যাচ তখনই তালুবন্দি করলেন মার্কিন প্রবাসী আপাদমস্তক ভারতীয় সুকুমার রায়। তৎক্ষণাৎ তিনি প্রস্তাব দিলেন, এই সবুজ আন্দোলনকে বহুমুখী করার লক্ষ্যে ফেসবুক ফ্রেন্ডস ক্লাবের সংযুক্তিকরণ অতি আবশ্যক। যেই বলা সেই কাজ। গঠিত হলো সংস্থারই নতুন কমিটি। ডঃ কে বি চৌধুরী সভাপতি ও সুকুমার রায় সচিব সহ যুগ্ম সচিব দেবারুণ রায় ও প্রসূন আচার্য্য এবং ডাঃ দেবাশিস বক্সি সহ-সভাপতি ও সুজাতা পাল কোষাধ্যক্ষ সহ ১৩ জনের কমিটি গঠিত হয় । পরিবেশ রক্ষার ঐক্যবদ্ধ অঙ্গীকারে।
সভায় মহিলা ব্রিগেডের কর্মচঞ্চলতাও কিন্তু যথেষ্ট নজরকাড়া। দুই গৃহবধূ মিলি রায় ও স্মিতা চৌধুরী এবং অমিত রায় জমিয়ে আলাপচারিতায় ব্যস্ত। মাঝে শিল্পপতি আশিস চৌধুরী ও তার মেয়ে যোগ দেয় । আয়োজক সংগঠনের হিসেব রক্ষক সুজাতা পাল ও অন্যতম সদস্যা চৈতালি গুহ পুরো অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটি সামলাচ্ছিলেন এক্কেবারে সিদ্ধ মুন্সিয়ানায়। তবে উপস্থিতির ফর্দ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। মধুরেণ সমাপয়েৎ ঘটেছিল আরও অনেকের উজ্জ্বলতম উপস্থিতির তুঙ্গ রকমারি উপস্থাপনায়।
আশায় বাঁচে চাষা। এমনই এক বহুল প্রচলিত প্রবাদ আচমকাই রামধনুর সাতরঙ হয়ে ছড়িয়ে পড়ল উপস্থিত সকলের চোখে মুখে। যখন সুকুমারবাবু শোনালেন এই আলোচ্য উপবনে এক অভিনব বার্তা। ইউনাইটেড নেশনসের তিনি প্রেস কার্ড হোল্ডার। কোনো এক অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে হঠাৎ দেখা হয়েছিল ফেসবুকের কর্ণধার মার্ক জুকারবার্গের। সময় ও সুযোগ নষ্ট না করেই তিনি স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে জানালেন এহেন ফেসবুক ফ্রেন্ডস ক্লাবের কথা। আমন্ত্রণও জানালেন সাংগঠনিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য। সব শুনে উচ্ছ্বসিত ফেসবুক কর্তা জুকারবার্গ সাহেব। তিনিও মৌখিক সম্মতি দিয়েছেন আগামীতে উপস্থিত হবার। যা সংস্থার মুকুটে ধবধবে শুভ্র পালকের মতো অনন্য শোভিত অধ্যায় তো বটেই।
চন্দ্রবিজয়ী ডিজিটাল ভারতের আজও এক অখন্ডিত আর্তনিনাদ, বেটি বাঁচাও। দ্রৌপদী মুর্মুরের এই দেশের তিলোত্তমা নগরীতে তারই তো জয়গান পুনরায় উচ্চারিত হলো রয়েড স্ট্রিটের এই সভাস্থল থেকে। যখন সভাপতি খুরশিদ বক্ত চৌধুরী উপস্থিত সদস্যাদের ইঙ্গিত করে তাই সেলাম জানিয়ে বললেন, মেয়ের মতো ধন হয় না…! তবে, শেষে বিশ্ব ক্রিকেটে ভারতের হার সবাইকে ব্যথিত করে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.