সংখ্যালঘু না অ-মুসলমান?
বাংলাদেশে হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরা কি ধর্মীয় সংখ্যালঘু না অ–মুসলমান? কঠিন প্রশ্ন। উত্তর আরো কঠিন এবং ‘নানা মুনির নানা মত’ হবার কথা। কেন এই প্রশ্ন? শুনলাম, সরকার ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন করার চিন্তা–ভাবনা করছেন। শুরুতেই এরমধ্যে ঘাপলা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ‘সংখ্যালঘু নয়, শব্দটি হোক, ‘অ–মুসলমান’? অর্থাৎ ‘অ–মুসলমান সুরক্ষা আইন’? সংখ্যালঘু ও অ–মুসলমান শব্দ দু’টি সমার্থক নয়। একটি অপরটি’র পরিপূরকও নয়। সংখ্যালঘু শব্দটি উদার, অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল, এর শাব্দিক বা অভিধানিক অর্থ হচ্ছে, ‘সংখ্যায় কম’। পক্ষান্তরে অ–মুসলমান শব্দে সাম্প্রদায়ের গন্ধ আছে, শব্দটি অনুদার ও প্রতিক্রিয়াশীল। এর অর্থ, ‘যাহারা মুসলমান নন’। এই শব্দের ধর্মীয় ব্যাখ্যা সুখকর নহে। হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টানরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু। সীমান্ত পার হলে মায়ানমার বা ভারতে মুসলমানরা সংখ্যালঘু। অর্থাৎ ধর্ম নির্বিশেষে যেকেউ সংখ্যালঘু হতে পারেন। আবার দেশে মহিলারা সংখ্যায় পুরুষের চেয়ে কম, তাই লিঙ্গভেদে তাঁরা ‘সংখ্যালঘু’। মুক্তচিন্তা যারা করেন, বা প্রগতিশীল বা নাস্তিকরা সংখ্যালঘু। ভালোমানুষের সংখ্যা কম, তাঁরা সংখ্যালঘু। চোর–বাটপার বেশি, তাই সৎ রাজনৈতিক সংখ্যালঘু? আমাদের আলোচ্য, ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’। অ–মুসলমান বললে কিছু মানুষকে ‘বাক্সবন্ধী’ করে ফেলা হয়? অ–মুসলমান শব্দটি মুসলমান শব্দের সাথে সাংঘর্ষিক, প্রতিশব্দ ও প্রতিদ্ধন্ধী, দু’টি শব্দ একটি অপরটি’র মুখোমুখি। ‘অ–মুসলমান’ ‘কাফির’, এটি যারা ভাবেন, তাঁরা এতে সুযোগ পাবেন। মুসলিম দেশগুলোতে অ–মুসলমানদের অবস্থা দৃষ্টে বাংলাদেশে কেউ অ–মুসলমান হতে চাইবে না, এরচেয়ে সংখ্যালঘু ভালো।
বাংলাদেশে ইতিমধ্যে পাহাড়ীরা ‘আদিবাসী’র সন্মান হারিয়েছেন। ‘দিনের ভোট রাতের মত’ অন্ধকারেই কি হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টানরা ‘সংখ্যালঘু’র টাইটেল হারাবেন? ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ‘অ–মুসলমান’ হয়ে যাবেন? কেন একজন হিন্দু, বৌদ্ধ বা খৃষ্টান অ–মুসলমান হবেন? তাহলে ভারতে কি হিন্দু বাদে সবাই ‘অহিন্দু’ হিসাবে পরিচিত হবেন?
ক’দিন আগে শাহারিয়ার কবির নিউইয়র্কে এসেছিলেন। তাঁরসাথে এনিয়ে কথা হয়েছে। তিনি জানালেন, একটি মহল ‘সংখ্যালঘু সবটি বাদ দিয়ে ‘অ–মুসলমান’ শব্দটি বসাতে চাইছেন। ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এর তীব্র বিরোধিতা করেছে। হিন্দু–বৌদ্ধ–খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ ‘সংখ্যালঘু’ শব্দটি রাখার পক্ষে মত দিয়েছে। প্রগতিশীল শক্তির তাই করা উচিত।‘ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি’ জরুরী ভিত্তিতে হওয়া দরকার, ভোলার ঘটনা তাই বলছে। (the views expressed in the article is author’s own view)
সংখ্যালঘু সংজ্ঞার উৎপত্তি হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন সংস্থা।তাদের মতে জাতিগত- নৃতাত্ত্বিক – সাংস্কৃতিক- ধর্মীয়- ভাষাগত ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলা হয়।যেহেতু এই সজ্ঞাটি ইহুদি নাসারাদের দ্বারা সজ্ঞায়িত হয়েছে তাই এই শব্দটি বাদ দেয়ার একটি কারন হতে পারে।আর অমুসলিম বিধর্মী শব্দগুলো কোরানের ভাষা।যার সাথে কাফের অবিশ্বাসীদের মিল রয়েছে।সেই জন্য সংখ্যালঘুদের অমুসলিম বানানো প্রকারান্তরে ধর্মান্তকরনের সামিল।