FEATUREDPoliticsWorld

ইম্পিচমেন্ট ট্রায়াল সমাপ্ত।। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প


 ক্ষমতায় বহাল

শিতাংশু গুহ, বুধবার, ৫ই ফেব্রূয়ারি ২০২০, নিউইয়র্ক।। পার্টিজান লাইনে বিভক্ত সিনেট বুধবার (৫ফেব্রূয়ারি ২০২০) বিকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট ট্রায়াল শেষ করেছে। প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ঘোষণা করেছেন, প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে আনীত উভয় অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি, জুরী (সিনেটরগন) প্রেসিডেন্টের পক্ষে মতামত দিয়েছেন, বা প্রেসিডেন্টকে অপসারণে দুইতৃতীয়াংশ ভোট পাওয়া যায়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুক্তি, নির্দোষ, খালাস এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে বহাল আছেন। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার’, এতে ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পরে ৫২, বিপক্ষে ৪৮। দ্বিতীয় অভিযোগ, ‘কংগ্রেসের কাজে বিঘ্নসৃষ্টি’, এতে ভোট পরে ৫৩৪৭। একশসদস্যের সিনেটে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ট, তাদের আছে ৫৩টি ভোট। ডেমক্রেটদের ৪৭। প্রথম অভিযোগের ক্ষেত্রে একজন রিপাবলিকান পক্ষ ত্যাগ করে প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে ভোট দেন, তিনি হচ্ছেন উত্তাহ্হ সিনেটর মিট রামনি। দ্বিতীয় অভিযোগের ক্ষেত্রে ভোট হয় পুরোপুরি পার্টি লাইনে। বিচার শেষ। তবে নিয়ে কথাবার্তা চলবে নির্বাচন পর্যন্ত। ভবিষ্যতে আসবে রেফারেন্স হিসাবে। মার্কিন ইতিহাসে তিনজন প্রেসিডেন্ট অভিশংসিত হয়েছেন, এরা হলেন ১৮৬৮ সালে এন্ড্রু ইয়ং; ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন এবং ২০১৯ ডোনাল্ড ট্রাম্প। আজ পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা হারাননি। রিচার্ড নিস্কন কংগ্রেসে ইম্পিচ হওয়ার আগেই পদত্যাগ করেছেন।বারকার ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া ছিলো পুরোপুরি পার্টিজান, যা আগে দেখা যায়নি। এই প্রথম সিনেট সাক্ষী না ডেকেই বিচার কার্য শেষ করে। ট্রাম্প হচ্ছেন প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি অভিশংসিত হয়ে নির্বাচন করছেন। সেপ্টেম্বর ২০১৯-এ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রেসিডেন্টের

 বিরুদ্ধে ‘ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া’ শুরুর ঘোষণা দেন। ডিসেম্বরে কংগ্রেস পার্টি লাইনে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করেন। ফেব্রূয়ারিতে ট্রাম্প খালাস পান। ক্ষমতার অপব্যবহার প্রশ্নে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ভোট দিয়ে সিনেটর মিট রামনি বলেছেন, জানি আমার ভোট কাজে লাগবে না, তবে আমি  আমার দায়িত্ব পালন করেছি। তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ইজ গিল্টি’। ভ্যাটার্ন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম বলেন, রামনি ব্যক্তিগত আক্রোশ কাজে লাগিয়েছেন। জুনিয়র ট্রাম পরে বলেছেন, রামনিকে পার্টি থেকে বের করে দেয়া হোক?

সিনেটে ডেমোক্রেট প্রধান কৌঁসুলি কংগ্রেসম্যান এডাম শিফ শেষ মুহূর্তে  তার বক্তব্যে সিনেটরদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, তাতে দৃশ্যত কোন কাজ হয়নি। প্রেসিডেন্টের ডিফেন্স এটর্নীরা বলেছেন, ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়াকে এতটা নীচে নামানো হয়েছে যে, ভবিষ্যতে যে কোন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই ভীতসন্ত্রস্ত থাকবেন। এটর্নি জে স্যেকুলা ইতিপূর্বে  বলেছেন, ইম্পিচমেন্টের মাত্রা এতটা নীচে নামাটা বিপজ্জ্বনক। আলাস্কার রিপাবলিকান সিনেটর লিসা মারকোস্কি, যিনি সাক্ষী ডাকার পক্ষে ভোট দিয়েছেন, তিনি চূড়ান্তভাবে প্রেসিডেন্টের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। টেনেসির রিপাবলিকান সিনেটর ল্যামার আলেক্সজান্ডার, যিনি বছর রিটায়ার  করছেন, তিনি বলেছেন, পার্টিলাইনে ইম্পিচমেন্টর কার্যক্রম ট্রাম্পের কর্মকান্ডের চাইতেও বিপদজনক। ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মার্কো রুবিও বলেছেন যে, তিনি পার্টিলাইনে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়ার বিপদ নিয়ে শংকিত। ডেমোক্রেটরা ভাবছেন, এই প্রক্রিয়া দেশকে কোথায় নিয়ে যাবেএডাম শিফ যেমন বলেছেন, আমরা আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছি। বোস্টনের ডেমক্রেট সিনেটর, প্রেসিডেন্ট প্রার্থী এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, এই বিচারের পর স্বেচ্ছাচারিতার আর কোন জবাবদিহিতা থাকলো না। বিচার শেষে কিছু রিপাবলোকান বলেছেন, প্রেসিডেন্টের আচরণ হয়তো যথার্থ  ছিলোনা, কিন্ত ইম্পিচমেন্ট ঠিক হয়নি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি নিয়ে ওভাল হাউসে বিবৃতি দেবেন।  ষ্টেট অফ দি ইউনিয়ন

 ভাষণ, মঙ্গলবার ৪ঠা ফেব্রূয়ারি ২০২০:

স্পিকার ন্যান্সি  পেলোসির ভাষণ ছেঁড়া 

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মঙ্গলবার রাতে টানা ১ঘন্টা ১৭মিনিটষ্টেট

 অফ দি ইউনিয়নভাষণ দেন। নির্বাচনী বছরে যা হয়, ভাষণটি চমৎকার আবেদনপূর্ণ। শুরুতে সচারচর প্রেসিডেন্ট মঞ্চে উপবিষ্ট স্পিকার ভাইসপ্রেসিডেন্টের সাথে করমর্দন করে থাকেন, ট্রাম্প হ্যান্ডশেক করেননি।  প্রথা অনুযায়ী তিনি ভাষণের দুটি হার্ড কপি দুজনকে দেন। প্রেসিডেন্টের

 বক্তব্য শেষ হলে দেখা যায় স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি তাকে প্রদত্ত কপিটি দুভাগে ছিড়ে ফেলেন। ট্রাম্প তার ভাষণে ইম্পিচমেন্ট ভোট নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি। বরং তিনি বাইপার্টিজান কর্মকান্ডের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। কালো ভোটারদের জন্যে এবারকার ভাষণে যথেষ্ট উপঠৌকন  ছিলো। রেডিও হোষ্ট রাস লিম্বোকে তিনি সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করেন এবং ফার্ষ্ট লেডীকে দিয়ে মেডেলটি পরিয়ে দেন। আফগানিস্তানে পোস্টিং এক সেনা কর্মকর্তাকে সরাসরি হাউসে এনে তাঁর স্ত্রী সন্তানদের চমকে দেন! একশ বছর বয়সী বিশ্বযুদ্ধের হিরোকে ব্যাপকভাবে সম্মানিত  করেন। ইরানের জেনারেল কাসেম সুলেমানিকেশীর্ষ সন্ত্রাসীআখ্যায়িত করে তিনি বলেন, আমেরিকার গায়ে হাত দিলে মৃত্যু জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে। ইরানকে সংঘাতের পথ ছেড়ে শান্তির পথে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘চয়েস ইরানেরইসলামী সন্ত্রাসবাদেরবিরুদ্ধে  যুদ্ধ অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করে তিনি আল বাগদাদীর মৃত্যু দৃষ্টান্ত দেন। মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রসঙ্গে তাঁর আনীত প্রস্তাব, নাফটা চুক্তি, দক্ষিণের ওয়াল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বীমা, ওপিএড, ইমিগ্রেশন সবই ছিলো তার ভাষণে।ট্রাম্পের ভাষণ শেষ, ঠিক এই সময়ে দেখা যায়, তার পেছনে বসা স্পিকার

 ন্যান্সি পেলোসি তাকে প্রদত্ত ভাষণের কপিটি দু’ভাগে ছিড়ে টেবিলের ওপর রেখে দেন। ভাইস-প্রেসিডেন্ট আড়চোখে তা লক্ষ্য করেন, কিন্তু কোন কথা বলেননি। প্রেসিডেন্ট তা লক্ষ্য করেননি। এরপর তিনি নেমে বেরিয়ে যান। সাংবাদিকরা পেলোসি প্রশ্ন করেন, আপনি ভাষণের কপি ছিঁড়লেন কেন?  স্পিকার উত্তরে বলেন, এরচেয়ে ভালো কি করার ছিলো? ফক্স নিউজকে তিনি আরো বলেন, পাতার পর পাতা উল্টে কোন সত্য পাইনি, তাই ছিড়েছি। এদিকে ভাষণ ছেঁড়ার ভিডিও বেরিয়ে যেতে একটুও সময় নেয়নি। পুরো অনুষ্ঠানে স্পিকার রাগান্বিত ছিলেন, তা স্পষ্ট, তারই বহি:প্রকাশ ঘটেছে ভাষণ ছেঁড়ার  মধ্য দিয়ে। পুরো আমেরিকা এনিয়ে তোলপাড় হচ্ছে। পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্যের ছড়াছড়ি। সাবেক স্পিকার নিউট জিনরিচ বলেছেন, পেলোসি আমেরিকানদের অপমানিত করেছেন, আমি বিরক্ত, পেলোসিকে সেন্সর করা উচিত। ফক্স নিউজে জন হেনেটি বলেছেন, স্পিকারের পদত্যাগ করা উচিত। স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি’র একজন মুখপাত্র সিএনএনকে বলেছেন, ক’মাস যাবৎ ট্রাম্প-  পেলোসি কথা বন্ধ। গত ১৬-অক্টবর সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহার নিয়ে এক বৈঠকে ট্রাম্প পেলোসি-কে ‘থার্ড গ্রেড পলিটিশিয়ান’ বলার পর এই ঘটনা। সূত্র বলছে, দু’জনের মধ্যে যোগাযোগ না থাকাও ‘ইম্পিচমেন্টের অন্যতম কারণ। অন্যদিকে, গ্যালোপ জরিপ মতে ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে, ৪৯%, যা রেকর্ড। শুধুমাত্র রিপাবলিকানদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা ৯৪%। ভাইস-প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ফক্স নিউজকে বলেছেন, তিনি ভাষণ ছিড়েছেন নাকি সংবিধান ছিড়েছেন বোঝা যাচ্ছেনা। তিনি যোগ দেন, ধারণা করি এই স্পিকার বেশিদিন থাকছেন না? আইওয়া ককাস, সোমবার ৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২০ বুধবার রাত পর্যন্ত ৭৫% ভোট গণনায় দেখা যায়, মেয়র পিট্ বুটিগেগ এগিয়ে আছেন; তার ঠিক পেছনে আছেন সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স, তারপর সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন, এবং চতুর্থ স্থানে রয়েছেন, সাবেক ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সম্পূর্ণ ফলাফল পরে জানা যাবে। এরআগে ভোট গণনায় সমস্যা দেখা দিলে মেশিনের পরিবর্তে হাতে ভোট গণনা শুরু হয় এবং সেটি চলছে। ষ্টেট ডেমক্রেটিক পার্টি চেয়ার ট্রয় প্রাইস দু:খ প্রকাশ করেছেন। রিপাবলিকান শিবির বলছে, যেই জিতুক ওরা কারচুপি করবে। ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের জন্যে ককাস ও ডেমক্রেট পার্টির সমালোচনা হচ্ছে। সোমবার (৩রা ফেব্রুয়ারি ২০২০) আইওয়া ককাস দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ডেমোক্রেট প্রাইমারি শুরু হয়েছে। এরপর মঙ্গলবার ১১ই ফেব্রূয়ারি নিউ-হ্যাম্পশায়ার প্রাইমারী। পুরো আইওয়া জুড়ে ১৬৭৯ ভোটকেন্দ্রে ভোটার ভোট দিয়েছেন। ফলাফল অনেকটা ইলেক্টরাল কলেজ পদ্ধতিতে হয়ে থাকে। এই ককাসে ৪১জন ডেলিগেট আছেন। আইওয়া ককাস দিয়ে শুরু বলে হয়তো এর গুরুত্ব অনেক, যদিও এখানে যিনি জয়ী হ’ন তিনি পার্টির মনোনয়ন পাবেন তা নাও হতে পারে। ২০১৬-তে সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স আইওয়া ককাস জিতেছিলেন। হিলারি ক্লিন্টন থেকে তিনি প্রায় ৫% বেশ ভোট পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডেমক্রেট মনোনয়ন পান হিলারি। এদিকে রিপাবলিকান ককাসে আইওয়াতে ট্রাম্প ৯৭.১% ভোট পেয়েছেন। তার প্রতিদ্ধন্ধী ম্যাসাচুটেসের সাবেক গভর্নর বিল ওয়েল্ড; ইলিনয়েসের কংগ্রেসম্যান জো ওয়ালেস ব্যাপক প্রচারণা চালালেও পাত্তা পাননি। ২০১৬-এ ট্রাম্প আইওয়া জিতেছিলেন। তিনি পান ৫১.২% ভোট; হিলারি ৪১.৭%। ১৯৮০ সালে রোনাল্ড রিগানের পর কোন ডেমক্রেট এভাবে আইওয়া জেতেনি। এবার ৭জন ডেমোক্রেট প্রার্থী আইওয়া ককাসে অংশ নিয়েছেন,  এরা হচ্ছেন, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন; ভারমন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স; বোস্টনের সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন; সাবেক ইন্ডিয়ানার মেয়র পিট্ বুটিগেগ; সিনেটর এমি ক্লোবুচার; টম স্টেয়ার এবং এন্ড্রু ইয়াং। আরো ক’জন আছেন, তবে গণনায় নেই? নিউইয়র্ক সিটি’র সাবেক মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ অংশ নিতে পারেননি। 

Leave a Reply

Your email address will not be published.