BusinessGadgetsGeneralNewsPoliticsSambad MatamatWorld

বিদ্যানন্দ, জজ ও কবি 

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।

বাংলাদেশ নিয়ে লেখার সাব্জেক্টের কোন অভাব নেই, কিন্তু কেউ লেখেনা, যদি ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে (ডিএসএ) ‘আটকে’ যায়! অনেকদিন আগে জহুর হুসেন চৌধুরী লিখেছিলেন, ‘কার্টারের বিচি ফাঁটা বাঁশে আটকে গেছে’-আমাদের কলামিষ্টদের হয়তো একই অবস্থা। বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার দাস লিখেছেন, ‘মানুষ যাতে বলতে না পারে যে আমি আমার বংশধরের জন্যে টাকা জমাচ্ছি, তাই আমি ও আমার স্ত্রী কোন সন্তান জন্ম নেবোনা বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি’। কিশোর কুমার নিশ্চয় তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী’র কথা বলছেন, এই অক্ষমতার জন্যেই কি প্রথম স্ত্রী চলে গেছে, দাদা? তিনি নিজেকে হয়তো ‘লাটসাহেব’ ভাবেন, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেন নপুংশকের মত?   বাংলাদেশে ‘বিদ্যানন্দের মত আর কোন সংস্থা আছে কিনা আমার জানা নেই, হয়তো নেই! এত চমৎকার একটি সংস্থার মালিক হিন্দু, তাও ৯০% মুসলমানের দেশে, তৌহিদী জনতার এটি মানার কোন কারণ নেই? যেদেশে নদী ভাঙ্গা রোধে মিলাদ পড়িয়ে নদীতে খিচুড়ি ফেলা হয়; আগুন নিভাতে কোন দোয়া পড়তে হবে মিডিয়া তা বড় করে ছাপে, বা হুজুর দোয়া পড়ে বালু ছিটিয়ে আগুন নেভাতে চায়, সেইদেশে বিদ্যানন্দ ‘১টাকায় আহার’ খাইয়ে মোল্লাদের মন জয় করবেন, এতই সোজা? বর্তমান সরকার ও প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সবকিছু উজাড় করে দিয়েও মৌলবাদীদের ‘দিল’ পাচ্ছেন না, আর আপনি ‘মালাউন’ কিশোর গরু খাইয়ে সেই চেষ্টা করছেন।  

বিদ্যানন্দের ‘কিশোর’ এখনো সাবালক হননি, তাই অন্ধের দেশে ‘চশমা’ বিক্রী করছেন। বিদ্যানন্দ কোন ব্যক্তি নয়, একটি প্রতিষ্ঠান, মানুষের সেবায় নিয়োজিত, তাতে কি? এরচেয়ে ঢের বেশি করেও রণদা প্রসাদ সাহা’র শেষরক্ষা হয়নি। হিন্দু’র কথা বাদ দেই, শেরপুরের জেলা জজ ঈমান আলী, কবি অধ্যাপিকা সেলিনা শেলী’র কি শেষরক্ষা হচ্ছে? শেলী বা জজের জন্যে তবু ছোটখাট দু’একটা মানব-বন্ধন হচ্ছে, বিদ্যানন্দের জন্যে কিচ্ছু হবার কোন কারণ নেই? যাঁরা করবেন তাঁরা হয় সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসে আছেন, অথবা ডিএসএ’র ভয়ে কুঁকড়ে গেছেন, বা হুজুরদের প্রতি শ্রদ্ধায় তাদের মাথা নত হয়ে গেছে। কাজেই বিদ্যানন্দ, প্রথমেই নাম পাল্টান, অর্থাৎ নামে মঙ্গল শোভাযাত্রার মত ‘গন্ধ’ থাকতে পারবে না, যেমন জয়দেবপুর থেকে গাজীপুর, কোন গন্ধ নাই?
 
অনেকেই আফসোস করছেন সরকার কিছু বলছে না। সরকারের কি ঠেকা পড়েছে কথা বলার, সরকার ব্যস্ত ‘নির্বাচন’ নিয়ে। যতই মুর্ক্তি ভাঙ্গুক, হিন্দু এলাকা জ্বলুক, ধর্ম অবমাননার অজুহাতে আক্রমণ হউক, সরকার ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি’ নষ্ট হতে দেবেন না! কাজেই বিদ্যানন্দ লাঠে উঠলে, কবি সেলিনা শেলী ও জজ ঈমান আলী জেলে গেলে সরকারের কি? সামনে নির্বাচন, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ভোট না-দিয়ে যাবেন কই? কিন্তু তৌহিদী জনতার ভোট চাই, ভোটের রাজ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’ কিছুকালের জন্যে ‘বাক্সবন্ধী’ থাকুক! মানুষের সেবা করতে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকতে হবে, নইলে দেশ ‘আফগানিস্তান’ হয়ে যাবে। সুতরাং, এ সরকারকে আবারো ক্ষমতায় আনতে হবে, বড় প্রাপ্তির জন্যে ছোটখাট ‘ত্যাগ’ তো করতেই হবে। 

বিদ্যানন্দ, জজ ঈমান আলী, কবি সেলিনা শেলীর জন্যে হা-হুতাশ করে লাভ নেই? প্রফেসর রুমা সরকার গ্রেফতারে যখন সেলিনা শেলীরা মাঠে নামেনি, এবারো অন্য শিক্ষকরা মাঠে নামবে না, এটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের মানুষ বুঝে গেছে আপোষেই মুক্তি, জজ ও কবি’র আত্মীয়স্বজন তাদের জন্যে আপোষ ফর্মুলা বের করবেন, তাঁদের উচ্চপদস্থ আত্মীয়-স্বজন, সামরিক অফিসার আছেন; বিদ্যানন্দের কিশোর আপনার কোন আত্মীয় সামরিক অফিসার নেই, উচ্চপদে যদি কেউ থেকেও তাতেও খুব একটা কাজে আসবে না, কারণ তারাও সদা তটস্থ, কখন কোন বিপদ হয়? সুতরাং আপনি পালান। শামসুর রাহমান ‘সুধাংশু যাবেনা’ লিখলেও সুধাংশুর যেতে বাধ্য হচ্ছে! বিদ্যানন্দের কিশোর কুমার ‘ফাগুন হাওয়া’ ম্যুভিটি দেখতে পারেন, ছবিটি ১৯৫১ সালের পটভূমিকায় হলেও মনে হবে ২০২৩-র ঘটনা দেখছেন! সুযোগ থাকলে ইন্টারনেট থেকে ‘যোগেন্দ্র মন্ডল-এর রেজিগনেশন পত্রটিও পড়ে নেবেন। পূর্ব-পাকিস্তানকে পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত করতে তাঁর অবদান বিদ্যানন্দ থেকে অনেক বেশি, কিন্তু তাকেও কলকাতা পালিয়ে প্রাণ বাঁচাতে হয়েছিলো। আপনি কোন ‘হরিদাস পাল’? 

বিদ্যানন্দ ‘আয়নার ফেরিওয়ালা’ হতে চাচ্ছেন, অন্ধের কাছে আয়নার কোন মূল্য নেই, ‘চাচা আপন বাঁচা’। আপনি ভাবছেন ‘এহসান গ্রূপ’ ১৭হাজার কোটি টাকা মেরে দিয়ে বেঁচে গেছে, আপনি তো চোর না ভদ্রলোক, আপনার ভয় কি? বরগুনার দিলীপ সরকার-র জমিতে সরকার জোর করে ‘মডেল মসজিদ’ বানাচ্ছেন, এর প্রতিবাদে তিনি জাতীয় প্রেস-ক্লাবের সামনে অনশন করছিলেন। এক হুজুর এসে ব্যানার দেখে বলেন, এতো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত? দিলীপ সরকার বলেন, আমার জমিতে জোর করে মডেল মসজিদ তৈরিতে যদি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে, আমি প্রতিবাদ করলে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হয় কেমনে? হুজুর তখন বলেন, রমজান মাস, এখন অনেক মুসুল্লী আসবে, তারা তোমারে ‘পিটাইয়া মাইরা ফালাইবো’, এরপর হুজুর ‘অনশনের ব্যানার’টি টেনে ছিঁড়ে ফেলেন (ভিডিও সংযুক্ত)। নিউজ দেখলাম, ভারত নাকি ‘বিদ্যানন্দকে’ সাহায্য করতে চায়, সেটি হলে এযাত্রায় আপনি বেঁচে যাবেন। সামনে নির্বাচন, সরকার দিল্লির দ্বারস্থ, বিএনপি দূতাবাসে ডিনার খেয়ে ঢেঁকুর তুলছে। সুতরাং Pic courtesy Scroll.in

Leave a Reply

Your email address will not be published.