সাফল্য আর ব্যার্থতার দুরত্ব দু’কিলোমিটার নয়
আমার আপনার চোখে সাফল্য আর ব্যার্থতার দুরত্ব দু’কিলোমিটার। দু’কিলোমিটার আগে সিগনাল হারিয়ে যায় চন্দ্রযানের। আমরা ভাবলাম ফেল। ধ্যাৎ! ভাবুন না, ভারতের জন্য আগে চাঁদের দুরত্ব ছিল ৩৮৪৪০০ কিলোমিটার। এখন দুরত্ব মাত্র দুই।
বিজ্ঞানে ‘ব্যার্থতা’ বলে কিছু হয়না। বিজ্ঞানে প্রত্যেকটা প্রচেষ্টা একধাপ করে এগিয়ে দেয় সাফল্যের দিকে। গোটা পৃথিবীর এতোগুলো দেশের মধ্যে ভারত সেই দেশটা যারা একটা হলিউডের সিনেমার অর্ধেক খরচে এই চন্দ্রাভিযানটা করার সাহস দেখিয়েছিল।
ওই যে বিজ্ঞানীদের আজ হতাশ হতে দেখলেন তারা দীর্ঘ পাঁচ বছর এই প্রজেক্টের জন্য দিনরাত কাজ করে চলেছে। ক্রিকেট আর বলিউডের মতো ইসরো আজ গোটা দেশটাকে এক সুরে বেঁধে দিয়েছে। এটা কম সাফল্য?
মারুতি গাড়ির মতো Cost Efficient মঙ্গলযান বানিয়ে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলো এই দেশই। এটা ব্যার্থতা নয়।
তথ্যপ্রযুক্তির পরে সবচেয়ে লাভজনক প্রযুক্তি আগামীকালে হতে চলেছে মহাকাশ প্রযুক্তি। স্যাটেলাইট ভাড়া দেওয়া, তথ্য আদান প্রদান, বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছেড়েই দিলাম, এটি একটি লাভজনক ব্যবসা ও বটে। মাথায় রাখুন গোটা পৃথিবীর চতুর্থ দেশ ভারত যারা এই কাজটা করে দেখালো। চাঁদের অন্ধকার দিকে নামলে সেটা ও হতো এক বিরাট প্রাপ্তি। সারা বিশ্বের সব দেশ চায় মহাকাশ বা অন্য গ্রহে নিজের মাইলফলক। ভারত আজ গোটা বিশ্বে প্রমাণ করে দিয়েছে যে তারাই সবচেয়ে Low Cost Space বা Planetary Mission করতে সক্ষম৷ প্রথম ভারতীয় অভিযান, কোন বৈদেশিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়াই এগিয়েছে এতটা। এই ব্যবসাটা একচেটিয়া ছিল আমেরিকার। এখন চায়না, রাশিয়া আর ভারতের ও ভাগ রইলো।এটা ব্যার্থতা নয়।
পৃথিবীর সাড়ে চোদ্দ দিন চাঁদের একদিনের সমান। চারিদিকে যখন রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে পশ্চাদপদে চলার এক অদ্ভুত সার্কাস চলছে, এরা কিন্তু নিজের কাজটা ঠিক করে গেছে। দাঁতে দাঁত চেপে দেশকে এক নতুন স্পেস এজ এ নিয়ে ফেলেছে। মাথা উঁচু করে ভারত যেখানে বাঘা বাঘা দেশের সাথে গিয়ে বসে মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে আলোচনা করতে। এটা ব্যার্থতা নয়।
বিজ্ঞানে ‘ব্যার্থতা’ বলে কিছু হয়না। প্রত্যেকটা প্রচেষ্টা একধাপ করে এগিয়ে দেয় সাফল্যের দিকে। আমরা এগিয়ে গেলাম আর একধাপ। পৃথিবীর শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের দুই কিলোমিটার আগে অবধি আমরা পৌঁছাতে পেরেছি ৩৮৪৪০০ কিলোমিটার। পরেরবার দু’কিলোমিটার বুঝে নেবো। ১৩০ কোটি মানুষের আশীর্বাদ আর দোয়া ও আছে যে!
সাফল্য আর ব্যার্থতার দুরত্ব দু’কিলোমিটার নয়। সাফল্য আর ব্যার্থতার দুরত্ব পৃথিবীর ১৩০ কোটি মানুষের আনন্দোচ্ছ্বাস স্তব্ধতায় বদলে যাওয়ার মুহুর্তটুকু।
আমরা পারবো। জয় হো !
———————————————————————- ময়ূখ রঞ্জন ঘোষ