Sambad Matamat

শ্রীলঙ্কার পর কি মমতা’র কলকাতা?

।। নিউইয়র্ক থেকে শিতাংশু গুহ, ২৮শে এপ্রিল ২০১৯।।

শ্রীলঙ্কার ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে ইসলামী সন্ত্রাসীরা। চীন ও পাকিস্তান ঘেঁষা শ্রীলঙ্কা সরকার এর দায় এড়াতে পারেন না। ভারত-আমেরিকা বারবার সতর্ক করার পরও শ্রীলঙ্কা নির্বিকার ছিলো। শ্রীলঙ্কান সরকারের বিরুদ্ধে আরো একটি অভিযোগ, তাঁরা ‘তোষণকারী’। অনেকে তাদের ‘মুসলিম তোষণকারী’ বলে আখ্যায়িত করেন। এর নগর পরিকল্পনামন্ত্রী রউফ হাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রোহিঙ্গাদের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন? গত বছর ক্যান্ডিতে বৌদ্ধ-মুসলীম দাঙ্গা হলে সরকার বৌদ্ধদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, মুসলমানদের কিছু বলেনা?  

অনেকটা মমতা ব্যানার্জীর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মত মনে হচ্ছে?  এ জন্যেই হয়তো বিজেপি নেতা কৈলাশ বিজয়বর্গীয়া সদ্য বলেছেন, মমতাকে না সরালে পশ্চিমবঙ্গে আঘাত আসতে পারে। তারমতে মমতার ‘তোষণনীতি’ এবং মমতা এজন্যে দায়ী হবেন। উল্লেখ্য যে, আইএস-র নুতন পোষ্টার মিডিয়ায় এসেছে। তাতে বাংলায় লেখা, ‘শীঘ্রই আসছি’। কোথায় আসছেন, পূর্ব-ভারত না বাংলাদেশে? পোষ্টারের বক্তব্য কি ভয় দেখানো? তা যদি না হয় তাহলে পরবর্তী টাগেট পশ্চিমবঙ্গ বা পূর্ব-ভারতের অপেক্ষাকৃত দুর্বল এলাকা? ইসলামী সন্ত্রাসের বিশ্বায়ন হয়েছে, ঢাকায় আগে আঘাত হয়েছে, বাকি কলকাতা?  

শেখ হাসিনা সদ্য  সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে মানুষকে সজাগ থাকতে বলেছেন। মমতা কি ভাবছেন তিনি নিরাপদ? বাংলাদেশ জঙ্গী নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। মমতার নীতি ইসলামী মৌলবাদ উৎসাহিত করছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা মমতার বাংলায় ঠাঁই পাচ্ছে। বাংলাদেশ কিছুদিন আগে অভিযোগ করেছিলো যে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে সন্ত্রাসীরা বাংলাদেশে ঢুকছে। পশ্চিমবঙ্গে ইতোপূর্বে বেশ ক’টি বোমা বিস্ফোরণে বাংলাদেশী সন্ত্রাসীদের যোগসাজসের প্রমান মিলেছে। সেদিক থেকে আইএস-র পরবর্তী টার্গেট পশ্চিমবঙ্গ হওয়া বিচিত্র কিছু নয়?

ভারত সর্বদা ইসলামী সন্ত্রাসীদের টার্গেট। কর্ণাটক পুলিশ জানিয়েছে, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, কেরল, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গনা, গোয়া, মহারাষ্ট্র এবং কোন কোন কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে আইএস বাস, ট্রেন, মার্কেট বা অন্য ব্যস্ততম এলাকায় হামলা চালাতে পারে। তবে ভারতীয়রা একজন রমেশ রাজু-কে নিয়ে গর্ব করতে পারেন। উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ হয়তো এজন্যেই বলতে পারেন, ‘হিন্দু জঙ্গী হতে পারেনা’।  রমেশ জঙ্গীর ছোবল থেকে প্রায় ৬শ’ খৃষ্টানকে বাঁচিয়েছেন। শ্রীলঙ্কায় তিনি এখন জাতীয় বীর।

রমেশ থাকেন বাট্টিকোলায়, সেই শহর রমেশকে স্মরণ করছে শ্রদ্ধার সাথে। বিস্ফোরণের দিন তিনি শ্রীলঙ্কায় একটি চার্চে স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করছিলেন। এক আত্মঘাতী সন্ত্রাসী দু’টি ব্যাগ নিয়ে চার্চে ঢুকতে চাইলে তিনি বাঁধা দেন, ব্যাগ রেখে ঢোকার পরামর্শ দেন। জঙ্গী ব্যাগ নিয়েই ঢুকবেন, রমেশ দেবেন না? মানুষ জমে যায়। তাদের মধ্যে বচসা শুরু হয়, এক পর্যায়ে জঙ্গীর ব্যাগে থাকা বোমা বিস্ফোরন ঘটে। রমেশসহ ২৯জন সেখানে নিহত হন। এরমধ্যে রমেশের ছোটবোন, তার স্বামী, ভাগ্নে আছেন। তবে বেঁচে গেছে চার্চের ভিতরে ঠাসা ৬শ’ মানুষ।    

একজন রমেশ এবং একজন সন্ত্রাসীর মধ্যে তফাৎ এখানে। একজন মানুষ বাঁচাতে নিজে মরে; আর একজন বেহেশতে যেতে মানুষ মারে? শ্রীলঙ্কার বিস্ফোরণের পর তাইতো মার্কিন বিদেশমন্ত্রী মাইক পম্পিও’র বলেছেন, ‘যা আনন্দঘন ইস্টার সানডে হবার কথা ছিলো, তা ইসলামী সন্ত্রাসীরা ভয়ানক রক্তক্ষয়ী করেছে’। আবার দেখুন, নিউজিল্যান্ডের হত্যাকাণ্ডের পর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রতিশোধের হুমকী দিয়েছিলেন। শ্রীলঙ্কায় চার্চে খৃষ্টান হত্যাযজ্ঞ কি সেই প্রতিশোধ? মসজিদে মুসলমান মরেছে, সুতরাং গীর্জায় খৃষ্টান মারতে হবে?

আইএস শ্রীলঙ্কা হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। হতাহত হাজার খানেক। মানুষ মেরে আবার কৃতিত্ব জাহির করে এতটাই নির্লজ এরা? এই জন্যেই তারা শ্রেষ্ট? শ্রীলঙ্কা বলেছে, দু’টি স্থানীয় ইসলামী জ্বিহাদী সংগঠন ‘ন্যাশনাল তাওহীদ জামাত’ এবং ‘জামায়াতুল মিলাতু ইব্রাহীম’ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। আক্রমণ ছিলো সুপরিকল্পিত। আমেরিকা, ভারত, ইন্টারপোল গেছে তদন্ত করতে। ওয়াল ষ্ট্রীট জার্নাল বলেছে, শ্রীলঙ্কা সতর্কতা বার্তা পেয়েছিলো। শ্রীলংকা সরকার ব্যবস্থা নেয়নি কেন? কারণ সেখানে প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ‘টাগ অফ ওয়ার’ চলছে। সন্ত্রাসীরা সেই সুযোগ নিয়েছে।  

ইসলামী সন্ত্রাসের পর ভারত ও উন্নত দেশগুলো যথেষ্ট সংযমের পরিচয় দেয়, শ্রীলঙ্কা তা দেবে কি? জাফনাতে বিদ্রোহ দমনে শ্রীলঙ্কার নিষ্ঠূরতার কথা ভোলা ঠিক নয়? শ্রীলংকার প্রেসিডেন্ট ইতিমধ্যে বোরখা, নেকাবসহ মুখঢাকা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করেছেন। সেখানে মুসলমানরা শংকিত। তারা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। যদিও মুসলিম দেশগুলো নীরব। নিউজিল্যান্ডের ঘটনার পর তারা সরব ছিলেন। অন্তত: শ্রীলঙ্কার মুসলমানদের দিকে তাকিয়েও মুসলিমরা সোচ্চার হতে পারতেন? বিধর্মী মরলে শোক করা যাবেনা, এতটা নির্মমতা কি মানুষের শোভনীয়?

গত সপ্তাহান্তে শ্রীলঙ্কায় আবার নুতন করে সংষর্ষে ক’জন আত্মঘাতী সন্ত্রাসীসহ অনেক মানুষ মরছে। এক মসজিদের ইমামের খাটের নিচে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র মিলেছে। মসজিদ-মাদ্রাসায় তল্লাশী চলছে। বলা হচ্ছে, ঘরে ঘরে তল্লাশী হবে? যারা বলতে পছন্দ করেন যে, গরিব-অশিক্ষিতরা সন্ত্রাসী হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার ঘটনায় তা আবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। শ্রীলঙ্কার আত্মঘাতীদের মধ্যে বিদেশে পড়াশোনা করা দুই ভাই, তাদের একজনের বৌ রয়েছেন। এই মহিলা শুধু নিজে মরেননি, ছোট দুই পুত্র এবং পেটে এক বাচ্চা নিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। একজন মা কি করে পারেন? সন্তানের চেয়েও অলীক বেহেশত বড়? এরা শ্রীলঙ্কার বিত্তশালী ব্যবসায়ী পরিবার।

ইংরেজীতে একটি কথা আছে, ‘যখন কোন বিশ্বাসের ভাইরাস ইহকাল থেকে পরকালকে বেশি গুরুত্ব দেয়, তখন তা নির্মূলে শক্তি প্রয়োগ ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকেনা’? শ্রীলঙ্কা তাই করছে। আমেরিকা আগেই তা বুঝেছে। মোদীর ভারত বুঝতে শুরু করেছে। মমতার বাংলা বুঝবে কবে? মমতা দিদি নিশ্চয় জানেন, ‘নগরে আগুন লাগলে, দেবালয় রক্ষা পায়না’। # guhasb@gmail.com;

Leave a Reply

Your email address will not be published.