GeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

বেঙালুরু নিয়ে বলার আগে  বিজেপি দেখুক অধিকারীরা কোন দলে 

দেবারুণ রায় 

জয়ধ্বনি ওয়ালা কাগজগুলো পড়ে তো রাজনীতির দিকনির্ণয় করা যায় না। কারণ তাদের অস্তিত্বরক্ষার প্রতিনিয়ত পরীক্ষায় বসতে হয়। এতে কোনও কুণ্ঠা থাকার কথা নেই। অস্তিত্ব রক্ষার চেয়ে বড় মৌলিক অধিকার নেই। নীতিকথা বলা যায় ভরাপেটে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে। তাই এই ধরণের সংবাদপত্রে খবরের তলানিতেও আসল খবরের গন্ধ পাওয়া যায় না। সেটা পাওয়া যায় গুটিক কাগজে। সম্পাদকীয় কলমে তারা আপসহীন। মনে হবে নারদের আপ্তবাক্য। নারায়ণ নারায়ণ ! এতো হরিশচন্দ্র মুখুজ্যের ভায়রাভাই। এত বিপ্লবও বাঙালির কপালে জোটে এই ভূভারতে ! কিন্তু বিশেষ দিনে এরা শিল্পীর মতো ছড়িয়ে দেন দেনমোহর। সম্পাদকীয় কলমে নয়। কাঁচাপাকা খবরের শরীরে। কখনও রাম, কখনও লক্ষ্মণ কখনও হনুমানের সেবায়। লক্ষ্মণ শেঠের নতুন বৌয়ের ছবিও ছাপা হয়। আবার আজ ছোট্ট করে একটু গেরুয়া রঙ ছড়িয়ে দেওয়া হল নিরিহ এবং মোহন অঙ্গুলে।

কী সেই লাইন, কীই বা সেই খবর ? সনিয়ার নৈশভোজে মমতার উপস্থিতি। বলা হচ্ছে, এতে বাম কং শিবিরে বিস্তর বিড়ম্বনা বেঁধেছে। আমরা যারা চার দশকের বেশি বা কম খবরের সৎকার করে এসেছি বা করতে দেখেছি তারা ছাড়া এই শব্দরহস্যের কিনারা করা যাবে না। কথাটা হল “শিবির।” বাম কং দলে বলা হয়নি। সততার সঙ্গেই ” শিবির ” “মহল”  দিয়ে একটুখানি সেবা। কার চরণে কখন সেবা লাগে তা সেই শ্রীচরণ জানেন। এই লপ্তে জয় শ্রী রাম। তারপর বিস্তারে গিয়ে বিস্তর খবর। সেলিম আর অধীর কতটা বিপদে পড়েছেন বাম কংয়ের রাজনৈতিক সঙ সাজায়। ঈশ্বর মুচকি হাসছেন। বুদ্ধের স্মাইলের স্টাইলে। কেন ? কারণ, অধীর লোকসভায় বিরোধী দলনেতা। হাইকমান্ডের অন্যতম কমান্ডার। আর সেলিম আরও সরেস। খোদ পলিটব্যুরোর মেম্বার। অন্যদিকে মমতার পলিটিক্যাল পারসোনা অবশ্যই জাতীয় রাজনীতির জেড প্লাস। তাঁর যেটা সমস্যা সেটাই শক্তি। তিনিই দলের মুখ। দলে তিনিই ভারত ও তিনিই বাংলার অদ্বিতীয়া। এই আসনটিই তাঁর রাজনৈতিক অবস্থানকে অন্যদলের অন্য নেতাদের মধ্যে বিশেষ ফোকাস দিয়েছে। তিনি অত্যন্ত কুশলী নেতা বলেই নৈশভোজের সবটা আলো টেনে নিয়ে তহেলকা মচিয়ে দিলেন জোট রসায়নে রসিক মোদীসহ তাবৎ সুধীবৃন্দের মধ্যে। কারণ উনি কংগ্রেসের ইস্কুলে পড়ে রাজনীতিতে ডি লিট। জ্যোতি বাবুর সরকারের মৃত্যুঘন্টা বাজিয়েও দেবগৌড়া গুজরালের সরকারের সময় কংগ্রেসের প্রথম সারির নেত্রী। অচল লোকসভায় কংগ্রেসের যুবনেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী গৌড়া শলা পরামর্শ করছেন,তাঁদের মধ্যে মমতা, এ দৃশ্য চোখে দেখা।  তখন তো লালু আলম লাঠিকাণ্ড ঘটে গেছে। তখন মোদী দলীয় রাজনীতির পাদপ্রদীপের থেকে অনেক দূরে। অথচ মমতাই ওই বাক্যবন্ধের জননী। “বংগাল মে কুস্তি, দিল্লি মে দোস্তি।” এবং কং সিপিএমের বি টিম। বিজেপি ১৯৯৮ থেকে এই সংলাপটা মন্ত্রের মত আওড়ায়, আর নিজেরাও নানা রাজ্যে একই খেলা খেলে। এখন চিত্রনাট্যে শুভেন্দুর ডায়লগের পর্ব। কিন্তু তাঁর সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা,  মানে, শিশির অধিকারী জানেন জল মাপা কাকে বলে। তাই তিনি এখনও তৃণমূলের সাংসদ কীভাবে,  এই প্রশ্ন উঠলেই বলেন,আমি লোকসভার স্পিকারের প্রপার্টি।

অতঃপর বন্ধুগণ, বাম কং তৃণমূলের সঙ্গে বেঙালুরুতে কী করছে বলতে গেলে নিজের বাড়িটাকে মাথায় রাখতে হবে। এবং বুঝতে হবে ব্যবসা আর রাজনীতি এক নয়। আর কেউ না জানলেও নরেন্দ্রভাই জানেন। তাই শ্রী রাম কহিলেন, নিমিত্তমাত্র ভব অধিকারী। এবার সেই সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের কথায় ফিরি। সেলুকাস ছাড়া এই খবর পড়ে  কেউ বুঝতে পারবে না কী বিচিত্র এই দেশ। সম্ভবত ৯ জুলাই মূল শিরোনামের খবরে এক স্থানীয় সংবাদদাতাই হবেন, লিখছেন এক গৃহযুদ্ধের খবর। স্পেন বা আফগানিস্তানের বদলে ভাঙড়ের বধ্যভূমি থেকে।  সেখানে আক্রমণকারী হিসেবে রোমহর্ষক ছবি আইএসএফের। আর আরাবুলের মতো নিরিহ দুর্গত নেতারা টেবিলের তলায় ওই ধর্মনিষ্ঠ সাংবাদিকের পাশে। সংবাদদাতার নামটিও সংখ্যালঘু বলে পেন পিকচার মারকাটারি। (Pic courtesy: legaldesire.com)

Leave a Reply

Your email address will not be published.