বিরোধীরা দু’টি ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে?
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক
উজরা জেয়া’র বডি ল্যাঙ্গুয়েজে আওয়ামী লীগ মহলে কিছুটা স্বস্তি নেমে এসেছে। বিএনপি তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা থেকে সরে আসছে, এবং নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকার চাইছে। এরমধ্যে হিরো আলম ‘মাইর’ খেলেন। বিজয়ী মোহাম্মদ আলী আরাফাত টুইটারে একটি সুন্দর ষ্টেটমেন্ট দিলেন। হিরো আলম ঘটনার অনেকদূর এগিয়েছে, ঢাকায় বসে এক ডজন রাষ্ট্রদূত বিবৃতি দিয়েছেন। বিদেশমন্ত্রী ড: মোমেন রেগেমেগে বলেছেন, এ বিবৃতি অগ্রহণযোগ্য। দু:খজনক হলেও সত্য, বিদেশিরা আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে হাসাহাসি করে! নিউইয়র্কে শামীম ওসমান ঘটনার প্রেক্ষিতে নোয়াখালীতে বাদল মির্জার বাড়ীঘরে আক্রমণের কোন মানে নেই; এটি বহুল প্রচার পাচ্ছে।
বিরোধীরা দু’টি ঘটনা সরকারের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। দেশে পুলিশ বলে তারাই সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে, তারা কেন সামান্য একজন হিরো আলমকে রক্ষা করতে পারলো না, এ প্রশ্ন স্বাভাবিক। এ প্রেক্ষিতে একটি কাহিনী মনে এলো: অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া মুক্ত করতে রামচন্দ্র যখন লব-কুশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুত, এবং উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হচ্ছে, তখন বাল্মীকি মুনি এসে উপস্থিত হ’ন, উভয়পক্ষ শান্ত হয়। বাল্মীকি রামচন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘বালহট’ মানায়, ‘রাজ্হট’ মানায় না’। এর অর্থ, বালকের হটকারিতা মানায়, কিন্তু রাজার হটকারিতা মানায় না! অর্থাৎ, অন্যরা উস্কানী দিলেও সরকার পক্ষকে শান্ত থাকতে হয় বটে?
উজরা জেয়া-ডোনাল্ড ল্যু’র সফরের পর বাংলাদেশ-আমেরিকার দুরুত্ব হয়তো কিছুটা কমেছে, তবে সমস্যার সমাধান হয়ে যায়নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি কানাডা যাওয়ার ভিসা পাননি। এ মাসের শেষে ঢাকা আসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ইমোন গিলমোর। প্রায় একই সময়ে বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার কথা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জোসে ডব্লিউ ফারনান্দেজ, যদিও তার সফর এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে আসা-যাওয়া চলবে। তাই বলা যায়, নির্বাচন নিয়ে চূড়ান্ত কথা বলার সময় এখনো আসেনি, এমুহুর্তে কারো খুশি হবারও তেমন কারণ নেই?
দিল্লি-কলকাতায় ভারতীয় বুদ্ধিজীবীরা আওয়ামী সরকারের পক্ষে সোচ্চার থাকলেও অন্যপক্ষ প্রশ্ন তুলছেন, ক্রমাগত একটি সরকারকে সমর্থন দিয়ে ভারত বাংলাদেশের জনগণের সমর্থন হারাচ্ছে কিনা? কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের জনগণ কখন ভারতের পক্ষে ছিলো? অনেক আগে লিখেছিলাম, ‘ভারত কাপড় খুলে দিলেও’ বাংলাদেশের মানুষের মন পাবেনা। এ সত্যও রাজনৈতিক দলগুলো অনুধাবন করছে যে, ভারতকে ডিঙ্গিয়ে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসা বেশ কষ্টকর হয়ে গেছে। চীনের সাথে প্রেম করে বাংলাদেশে ক্ষমতায় যাওয়া যাবেনা, বা ক্ষমতায় থাকা চলবে না! চীন হচ্ছে বিবাহ-বহির্ভুত বন্ধু, চীনের সাথে পরকীয়া চলে, সংসার নয়?
আওয়ামী লীগকে বুঝতে হবে তারা বিএনপি’র সাথে খেলছে না, বিপরীতে আমেরিকা এবং সভ্য দুনিয়া। ৱ্যাবের নিষেধাজ্ঞা গুরুত্ব না দিয়ে মন্ত্রীরা উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলেছেন, যার কুফল হচ্ছে, ভিসানীতি। পররাষ্ট্র দফতর দেশ ও সরকারের স্বার্থ রক্ষায় ভীষণভাবে ব্যর্থ। ভারতের ওপর ভরসা করে কতদিন চলবে? আমেরিকা সবসময় ভারতের কথা শুনবে, তা তো নয়! মোদী কতটা আলগে রাখবে? মোদীও চ্যালেঞ্জের মুখে, ভারতে নির্বাচন ২০২৪-এ, তাঁর বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠিত হয়েছে। কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ‘অপরাজিতা’ চ্যানেল-২৪-এ সংবাদ পাঠ করে নুতন যুগের সৃষ্টি করেছে; সরকার তেমনি, সুষ্ঠূ ও অবাধ নির্বাচনের একটি পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করলে, এসব সমস্যা থাকবে না!