Global WatchNewsPoliticsWorld

ক্যুমো না মামদানী? 

শিতাংশু গুহঃ নিউইয়র্ক

নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচন মঙ্গলবার ৪ঠা নভেম্বর ২০২৫। প্রার্থী ৩জন, নিউইয়র্ক ষ্টেটের সাবেক গভর্নর এন্ড্রু ক্যুমো, এসম্বলিম্যান জোহরান মামদানী ও কার্টিস স্লিওয়া। প্রথম দু’জন ডেমোক্রেট, স্লিওয়া রিপাবলিকান। ডেমক্রেটদের অফিসিয়াল প্রার্থী মামদানী, প্রাইমারীতে তিনি ক্যুমোকে পরাজিত করেছিলেন। এন্ড্রু ক্যুমো স্বতন্ত্র প্রার্থী। 

এমনিতে বাংলাদেশ কম্যুনিটিতে মেয়র নির্বাচন নিয়ে খুব একটা হৈচৈ থাকেনা, এবার ব্যতিক্রম, তোড়জোড় তুঙ্গে। কারণ মামদানী মুসলমান। শুধু মুসলিম হবার কারণে পুরো মুসলিম সম্প্রদায় মাঠে নেমে গেছে, একজন মুসলমানকে মেয়র নির্বাচিত করতে হবে। রিপাবলিকান মুসলমানরাও মামদানীর পক্ষে মাঠে নেমে গেছে। 

যেমন ডাঃ ওয়াদুদ ভূঁইয়া। তিনি নিজেই লিখেছেন, আমি রিপাবলিকান, কিন্তু এবার মামদানীর পক্ষে! ব্যতিক্রম শুধুমাত্র নাসির খান পল ও ইমাম কাজী কাইয়ুম, হয়তো আরো দু’চার জন আছেন। সামাজিক মাধ্যমে আমি একটি পোষ্ট দেই যে, বাঙ্গালী মুসলমানের অতি-উৎসাহ মামদানীর কি পরাজয় ডেকে আনছে? এতে বাঙ্গালী মুসলমানের তেমন মন্তব্য নেই, কিন্তু হিন্দুরা মামদানীর বিপক্ষে। 

আল-গোর যেবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ছিলেন, বাঙ্গালী মুসলমান সেবার তাকে ভোট দেয়নি, কারণ তাঁর ভাইস-প্রেসিডেন্ট জো-লিবারম্যান, ধর্মে তিনি ছিলেন ইহুদী। কমলা হ্যারিস হিন্দু, বাঙ্গালী মুসলমান এবার ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছে। আল-গোর বা কমলা হ্যারিসের পরাজয়ের আরো অনেক কারণ আছে, এখানে শুধু বাঙ্গালী মুসলমানের ভোটের প্যাটার্ন বোঝানো হচ্ছে।  

২০১৬-তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প-হিলারী প্রতিদ্ধন্ধী ছিলেন, বাঙ্গালী মুসলমান প্রায় সর্বাংশে হিলারীকে ভোট দেন্, কারণ হিলারী একদা সুহা আরাফাতকে গালে ‘চুমা’ দিয়েছিলেন। হিলারী যেমন মুসলমানের বন্ধু না, তেমনি ইয়াসির আরাফাত মারা যাবার পর সুহা সেই কবে টাকাপয়সা নিয়ে ফ্রান্সে বিলাসবহুল জীবন যাপন করছেন! ওবামা’র কথা বাদই দিলাম, তাঁর মিডল নাম ‘হুসাইন’ হওয়ায় সবাই খুশি! কংগ্রেসে মাইনরিটি নেতা হেকিম জেফরি এক সভায় এক বাঙ্গালীর মাধ্যমে জানান দিয়েছেন যে তিনি মুসলমান নন!  

রিপাবলিকান কংগ্রেসওমেন এলিজা স্টেফানিক মেয়র প্রার্থী মামদানীকে (ফক্স নিউজ) ‘জ্বিহাদী’ বলেছেন। মামদানী বলেছেন, ক্যুমো মেয়র হবার যোগ্য নন, কারণ ১০ বছরে তিনি কোন মসজিদে যাননি। মামদানীকে পাল্টা একজন প্রশ্ন করেছেন, আপনি ক’টি গীর্জায় গিয়েছেন? নিউইয়র্ক পোষ্ট ‘ফটোবোম্ব’ হেডিংএ মামাদানীর সাথে ১৯৯৩ সালে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বোমাবাজীর সাথে সংশ্লিষ্ট এক ইমামের ছবি ছেপেছে, এই ইমাম নিউইয়র্ক সিটিতে জ্বিহাদের ডাক দিয়েছিলেন। মামদানী মূলত: কংগ্রেসওমেন এওসি (আলেজান্ড্রিয়া অকসিও কার্টিজ) ও সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স-র বামঘেঁষা গ্রূপের সমর্থক। তাঁর উত্থানের পেছনে এওসি’র সমর্থন। বাংলাদেশিরা মামদানীকে ‘মুসলমান’ বানিয়ে দিয়ে ‘জ্বিহাদী’ তকমা পেতে সাহায্য করেছে। 

জোহরান মামদানী কতটা জ্বেহাদী, কতটা সুবিধাবাদী তা বলা শক্ত। মসজিদে গিয়ে তিনি ‘মুসলমান’ হয়ে যান, মন্দিরে তিনি ততটা সমাদৃত ছিলেন না, তবু ফ্লাশিং মন্দিরে গিয়ে তিনি হিন্দু হয়ে যান, এবং বলেন, আমি আমার হিন্দু হেরিটেজের জন্যে গর্বিত। একজন প্রার্থী যদি মসজিদে গিয়ে মুসলমান হয়ে যান, মন্দিরে গিয়ে হিন্দু হ’ন, তাহলে সেই প্রার্থী কতটা বিশ্বাসযোগ্য হতে পারেন?  

মামদানী তার জন্মস্থান উগান্ডায় এন্টি-এলজিবিটি, তথাকার এলজিবিটি বিরোধী নেতার সাথে তাঁর একটি ঘনিষ্ঠ ছবি মিডিয়ায় এসেছে। নিউইয়র্কে তিনি প্রো-এলজিবিটি। ভোটের জন্যে তিনি ‘ডবল-স্ট্যান্ডার্ড’? বাংলাদেশের হিন্দুরা ক্যুমোর সমর্থক। ব্যক্তিগত পর্যায়ে না হলেও নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটি হিন্দু-মুসলমান বিভক্ত, মুসলমান যেদিকে, হিন্দুরা উল্টো দিকে ভোট দেয়। 

মামদানী কি জিতবেন? জরিপ বলছে, জিতবেন। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, মামদানী অপ্রতিরোধ্য। তবু বলা যায়না, ক্যুমোর সাথে ব্যবধান কমছে। ডিবেটে ক্যুমো ভাল করেছেন। পরবর্তী ডিবেটে ভাল করলে ভোটে প্রভাব পড়বে। রিপাবলিকান প্রার্থী বসে যাওয়ার সম্ভবনা উজ্জ্বল। মামদানি পরাজিত হলে বাংলাদেশীরা বহুলাংশে দায়ী থাকবেন।  Pic courtesy: NDTV

Leave a Reply

Your email address will not be published.