NewsPoliticsSambad MatamatWorld

বাংলাদেশে ডান-বাম সবাই কমবেশি ভারত-বিরোধী?

নিউইয়র্ক।। ‘আপনি যদি এমন কোন বাংলাদেশী খুঁজে পান, যিনি ভারত বিরোধী কিন্তু অসাম্প্রদায়িক, তাহলে অনুগ্রহ করে আমায় জানালে খুশি হবো’। অতি সাধারণ একটি কথা, যার সাদামাটা অর্থ, বাংলাদেশী যাঁরা ভারত বিরোধী তাঁরা প্রায় সবাই সাম্প্রদায়িক। অথবা আপনি অসাম্প্রদায়িক হলে ভারত বিরোধী হতে পারেন না। এমন হাইপোথিসিস কি সত্য? অথবা এ রকম সামগ্রিক সরলরেখা কি টানা যায়? হয়তো যায় না, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আসলেই আপনি এমন কাউকে খুঁজে পাবেন না! সামাজিক মাধ্যমে জানতে চেয়েছিলাম, এমন কেউ আছেন কিনা, কেউ সন্ধান দেননি, এমনও তো হতে পারে কেউ নেই? তাহলেও এ থিওরি স্বত:সিদ্ধ হয়ে যায়না, তা ঠিক।

কেউ কেউ আমাদের দেশের চীনপন্থী বাম ঘরানার রাজনীতিকদের দিকে অঙ্গুলি হেলাতে চাইলেন। খতিয়ে দেখলাম, কেউ নেই? বরং এরা আরো উগ্র সাম্প্রদায়িক, তবে এঁরা ভদ্রবেশী সাম্প্রদায়িক। চীনপন্থী এদের লেবাস। এঁরা চায় চীন শক্তি প্রয়োগ করে ভারত দখল করুক বা চাপে রাখুক, যাতে হিন্দুরা ভীত থাকে। বাংলাদেশে কট্টর চীনাপন্থীরা কট্টর ভারতবিরোধী, অর্থাৎ কট্টর সাম্প্রদায়িক। ভাসানীপন্থী ন্যাপ যাঁরা নিজেদের ‘চীনপন্থী’ পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এঁরা মোটামুটি সবাই ভারত বিরোধী সাম্প্রদায়িক শক্তি। এমনিতে কেউ ভারত বিরোধী হলে কিচ্ছু আসে-যায়না, সমস্যা হচ্ছে, ভারত বিরোধিতা মানে হিন্দু বিরোধিতা। ভারত ও হিন্দু, এ দু’টো শব্দ এদের কাছে সমার্থক, অসুবিধাটা সেখানে।  

বাংলাদেশের বড় বড় দলগুলোর মধ্যে বিএনপি-জাতীয় পার্টি মূলতঃ ভারত বিরোধী শক্তি। এঁরা  সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসাবে চিহ্নিত। এদের দলীয় ভিত্তি সাম্প্রদায়িকতা। দু’চারজন ব্যতিক্রম আছেন, কিন্তু এদের খুঁজে পাওয়া দুস্কর। সম্ভবত: ব্রেজনেভ যখন ক্ষমতা দখল করেন, তখন পলিটব্যুরোর এক জনাকীর্ন সমাবেশে তিনি ক্রুশ্চেভের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছিলেন। পেছন থেকে তখন কেউ একজন বলে উঠেন, ‘আপনি তখন কোথায় ছিলেন’? ব্রেজনেভ রেগে বলেন, কে, কে বললেন কথাটা? কোন সাড়া পাওয়া গেলো না! ব্রেজনেভ তখন বললেন, ‘এখন আপনি যেখানে আছেন, আমিও তখন সেখানে ছিলাম’। গল্পটি হুবহু নেয়ার দরকার নেই, পাত্র বা সময় নির্ঘন্ট ভিন্ন হতে পারে, তবে মোদ্দা কথা হচ্ছে, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির মদমত্ততায় অসাম্প্রদায়িক শক্তি সাহস হারিয়ে ফেলেছে। 

আওয়ামী লীগের কথা বলে লাভ নেই? মাল্টিক্লাস এই দলে সাম্প্রদায়িক, অসাম্প্রদায়িক, কট্টর, নরম, গরম, প্রগতিশীল, প্রতিক্রিয়াশীল সবাই আছেন। তবে এর ভেতরকার অসাম্প্রদায়িক শক্তি এখন অনেকটা দুর্বল। আবার এই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠাও এই দলের পক্ষেই সম্ভব। মস্কোপন্থী বামরা বরং কিছুটা বেটার ইলিমেন্ট, তবে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ। এদেরকে ‘মেরুদন্ডহীন ভদ্রলোক’ বলা যায়। বাংলাদেশে ইসলামিক শক্তি যেমন ‘তিতুমীর’কে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের একজন ‘হিরো’ হিসাবে প্রজেক্ট করার চেষ্টা করেন; তেমনি অনেকে উগ্র বামপন্থীদের ‘প্রগতিশীল’ হিসাবে দেখানোর প্রয়াস নেন। আসলে তিতুমীর ছিলেন, ওই আমলে ‘বাংলাভাই’। চীনাপন্থী উগ্র বামপন্থীরা ততটা না হলেও ভদ্রবেশী, ছদ্ধবেশী, বামপন্থী মোড়কে ঢাকা সাম্প্রদায়িক। 
পাকিস্তান যখন জমিদারি প্রথা বাতিল করলো, শুনেছি, তখন আমাদের বামদের আনন্দের কোন সীমা ছিলোনা, কারণ তাঁরা ভেবেছেন, তাদের একটি বিরাট বিজয় হয়েছে। এরপর যখন দেখা গেলো, আইনটি শুধু পূর্ব-পাকিস্তানে কার্যকর হলো, হিন্দু জমিদারদের সম্পত্তি কেঁড়ে নিয়ে মুসলমানদের দেয়া হলো, বামেরা তখন বুঝতে চাইলো না যে, এটি কোন সমাজতান্ত্রিক পদক্ষেপ ছিলোনা, বরং তা ছিলো একটি সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপ। হয়তো বামরা বুঝেছিলো, কিন্তু হিন্দু’র জমিদারি গেছে, তাতে তাঁরা খুশি হয়েছিলো! পূর্ববঙ্গে বা বাংলাদেশে বামপন্থীরা প্রায় সবাই ‘ধর্মকর্ম সমাজতন্ত্রে’ বিশ্বাসী। যার ফলশ্রুতিতে এঁরা একুল-ওকূল দু’কূল হারিয়ে রিক্ত, নি:স্ব, দেয়ার কিছু নেই! মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ বাদ দিলে বাংলাদেশে ডান-বাম সবাই কমবেশি ভারত-বিরোধী, সুতরাং-?

Leave a Reply

Your email address will not be published.