FemaleGeneralIndiaNewsSambad Matamat

২৫ বছর আইনি লড়াইয়ের পর বহু কাঙ্খিত জয় পেলো “শবর” সমাজ

চন্দন সেনগুপ্ত

বুধন শবর, “শবর” জনজাতির এক অন্যতম নাম! দীর্ঘ ২৫ বছর একটা লড়াইয়ের নাম বুধন শবর। এই লড়াই এক দলিতের মর্যাদার লড়াই ছিলো। অবশেষে সেই দীর্ঘ লড়াই এবং অপেক্ষার অবসান হলো।

একটা পুরো ইতিহাস গড়লো এই লড়াই!

‘আকরবাইদ শবর গ্রাম’, পুরুলিয়া, সেখানে থাকতেন বুধন শবর। ১৯৯৮ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি, ২৮ বছর বয়সি হস্ত শিল্পী বুধন শবর তাঁর স্ত্রী শ্যামলীকে সাইকেলে করে নিয়ে আকরবাইদ থেকে বরাবাজার যাচ্ছিলেন। হঠাৎ রাস্তায় যাওয়ার পথে বুধন শবর কে গ্রেপ্তার করেন তৎকালীন বরাবাজার থানার অফিসার-ইন-চার্জ অশোক রায়। অভিযোগ, যে এক বছর আগে পুরুলিয়া-বান্দোয়ান গামী একটি বাস ডাকাতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বুধন শবর।

পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন বুধনকে প্রচণ্ড মারধর করা হয় চুরির দায়ে। এরপর ১৯৯৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বুধনের কুঠুরিতে দেখা যায় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। পুলিশের দাবি, গলায় নিজের গামছা জড়িয়ে বুধন শবর আত্মহত্যা করেছেন! পুলিশ আত্মহত্যা বলে ময়নাতদন্ত করে খুব শীঘ্রই দেহটি কবর দিয়ে দেয়। কিন্তু শেষ হল না বুধন। হাইকোর্ট থেকে দ্বিতীয় পোস্টমর্টেমের অর্ডার বেরোল এবং  দ্বিতীয় পোস্টমর্টেম প্রতিষ্ঠা করেছিল সত্য, পুলিশি প্রহারে মৃত্যু।

১৯৯৮-এর জুলাই মাসে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রুমা পাল পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যাণ সমিতি বনাম পশ্চিমবঙ্গ সরকার মামলায় এক সোজাসাপ্টা অন্তর্বর্তী রায় দেন।  সেই রায়ে বলা হয়, এটি যে পুলিশি নির্যাতনের ফলে হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই, অপরাধীদের ধরার জন্য পুরো ঘটনার তদন্ত করুক সি.বি.আই এবং এর সঙ্গে জড়িত পুলিশ ও জেলকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকার ব্যবস্থা নিক এবং তাঁদের পুরুলিয়া থেকে বদলি করা হোক। এর পাশাপাশি, বুধনের পরিবার, অর্থাৎ তাঁর স্ত্রী, মা-বাবা ও পুত্রকে রাজ্য সরকার ক্ষতিপূরণ দিক।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় আন্দোলন। বিশিষ্ট লেখিকা মহাস্বেতা দেবীও হস্তক্ষেপ করেন এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইর পরে অবশেষে ২০০১ সালে সি বি আই তৎকালীন ওসি অশোক রায় ও এ এস আই অজয় সেন এর বিরুদ্ধে মামলাটির চার্জশীট দাখিল করে। সোমবার ২০শে ফেব্রুয়ারী ২০২৩  দীর্ঘ ২৫ বছর বাদে পুরুলিয়া জেলা আদালত এ  মামলাটির রায় ঘোষণা করা হয়। বিচারক জাহাঙ্গীর কবীর অশোক রায় কে ৩০৬ ধারায় ৮ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা ও ৩৩০ ধারায় ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন। দুটি সাজাই এক সাথে চলবে।

বুধন শবরকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ ২৫ বছর আইনি লড়াইয়ের পর বহু কাঙ্খিত জয় পেলো “শবর” সমাজ! দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর পশ্চিমবঙ্গ খেড়িয়া শবর কল্যান সমিতি এই রায় কে স্বাগত জানিয়েছেন। বুধন শবর এর স্ত্রী শ্যামলী বিচারকের রায় শোনার পর আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.