বাংলাদেশ মন্ত্রীর বক্তব্য এবং ভারতকে বার্তা দেয়া
শিতাংশু গুহ, নিউ ইয়র্ক : বাংলাদেশ পুলিশের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন যে পূজায় হামলা হতে পারে, বলেছিলেন সতর্ক থাকতে। পত্রিকায় তা বেরিয়েছিল। দৈনিক ভোরের কাগজে দেখলাম মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একই কথা বলেছেন। তাঁর বক্তব্যটি এরকম: ‘দশমী সামনে রেখে অশুভ চক্রের বিষয়ে জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে একটি অশুভ চক্র হিন্দুদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ভারত সরকারকে বার্তা দিতে চাইছে যে, কাজটা আওয়ামী লীগ করে। আওয়ামী লীগের হাতে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। এই অশুভ চক্রের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি’। ওবায়দুল কাদের একটু স্পষ্ট করে বিজয়ী দশমী’র দিন হামলার কথা বলেছেন। ধারণা করি দিনটি যখন জানা গেছে, কোথায় কোথায় হামলা হতে পারে পুলিশ প্রশাসন এবং সরকার তা জানে। সুতরাং পুলিশ হামলা ঠেকাবে এবং সরকার প্রশংসা কুঁড়াবে, এতে আমরা মানে, সবাই খুশি, পূজায় হামলা হউক তা কেউ চায়না। রবিবার ঢাকায় রামকৃষ্ণ মঠে মন্ত্রী আরো বলেছেন, ‘যারা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালান, তারা কোনো দলের নয়, তারা দুর্বৃত্ত। তিনি বলেন, ‘পূজা কমিটি আমাদের বলেছে, সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার হয় না। কেন বিচার হবে না’? মন্ত্রী চমৎকার বলেছেন, আমাদের দেশে মন্ত্রীরা প্রায় সবাই প্রায়শ: সত্যি সত্যি চমৎকার কথাবার্তা বলেন, তাঁদের প্রশংসা না করে উপায় নেই। আমার অনেকদিনের পরিচিত, শুভাকাঙ্খী মন্ত্রীর আমিও প্রশংসা করছি। মন্ত্রীর কাছে পূজা কমিটি যে অভিযোগ করেছেন, অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার হয়না, এটি তো একশ’ শতাংশ সত্য। এবার নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা’র সাথে সাক্ষাৎ করে ঐক্য পরিষদ একই কথা বলেছে। পুরো বাংলাদেশে হিন্দুদের একই কথা, সংখ্যালঘু’র ওপর হামলার বিচার হয়না, পুরো দেশবাসী জানে একথা। এ অভিযোগ কি সত্য? মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বা যে কোন মন্ত্রী, প্রশাসন, সরকার একথা মানতে রাজি নন, তাঁদের কথা মন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী ‘শেখ হাসিনা সবার বিচার করছেন, এমনকি দলের লোকও ছাড়া পাচ্ছেন না’? এটি সত্য এবং অভিনন্দনযোগ্য যে, শেখ হাসিনার সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স’। কিন্তু সংখ্যালঘু’র ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে সবাই ‘ভীষণ ধর্য্যশীল’? কানে কানে বলি, গতবছর দুর্গাপূজায় দেশব্যাপী যে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস হয়েছিলো, লোকে বলে এরসাথে জড়িতরা প্রায় সবাই এখন মুক্ত। আওয়ামী লীগ চৌদ্দ বছর ক্ষমতায় এখন পর্যন্ত ২০০১’র সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিচার করার সময় করে উঠতে পারেনি। মন্ত্রীরা সর্বক্ষণ বিএনপি’র বিরুদ্ধে কথা বলছেন, ২০০১’র সন্ত্রাসে বিএনপি নেতাকর্মীরা জড়িত ছিলেন, অথচ তাঁদের বিচার হচ্ছেনা, রহস্যটা কি? হয়তো, এ কারণে, হিন্দুরা বলে, সংখ্যালঘু নির্যাতনে আওয়ামী লীগ-বিএনপি এক কাতারে? ২০১২ সালে রামু’র ঘটনা থেকে ২০২১’এ কুমিল্লার সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের একটি’র-ও বিচার হয়নি, হয়েছে কি? হয়নি, হওয়ার সম্ভবনা খুবই ক্ষীণ? কারণ হিন্দুরা দাবার ঘুটি, কেউই চায়না হিন্দুরা দেশে থাকুক, যত দরদ সব মুখে, ভোট আসছে, এই দরদ সামনে আরো বাড়বে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভারতকে বার্তা দেয়ার প্রসঙ্গ টেনেছেন! ভারতকে বার্তা তো সবাই দিচ্ছেন, ক’দিন আগে বিদেশমন্ত্রী ড: মোমেন বার্তা দিয়ে বিপাকে পড়েছেন। বোধ করি আমাদের বার্তার ঠেলায় ভারত সরকারের অবস্থা কাহিল, কার বার্তা যে সঠিক, সেটি দিল্লি বোঝে কিনা কেজানে? মন্ত্রী বিএনপি’কে উদ্দেশ্য করে একটি চমৎকার কথা বলেছেন, ‘আমরা রাজনীতি করবো, কিন্তু দুর্গোৎসব নিয়ে কোন রাজনীতি নেই’। আসলে কি নেই? নিন্দুকেরা কিন্তু উল্টো কথা বলেন, তাদের বক্তব্য হচ্ছে, পুলিশ ও সরকার দুর্গাপূজায় হামলার যে আশংকা প্রকাশ করেছেন, এর পেছনেও ‘ভারতকে খুশি করা এবং আমরা পারি’ রাজনীতি আছে। মিডিয়া এবং লোকে বলে, সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু’র ওপর প্রায় প্রতিটি হামলায় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা আছে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জড়িত, এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শুধু দুর্গাপূজা নয়, হিন্দুদের নিয়ে সবাই খেলছেন। এ সময়ে পুরো দেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া ‘গাছের পাতা’ও নড়েনা, সুতরাং ঘটনা-দুর্ঘটনা যাই হোক, এর দায় আওয়ামী লীগের। গত অর্ধ-শতাব্দীতে আওয়ামী লীগকে সর্বাংশে সমর্থন দিয়ে হিন্দুদের অবস্থা এখন ‘ছেঁড়ে দে মা কাইন্দা বাঁচি’র মত? দোহাই আপনাদের বাংলাদেশের হিন্দুরা একটু শান্তিতে থাকতে চায়, লম্বা-চওড়া বক্তব্য দরকার নাই, এদের শান্তিতে বাঁচতে দিন। |