GeneralHealthIndiaNewsSambad Matamat

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ

প্রিয় সম্পাদক,
সংবাদ মতামত

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ অক্সিজেন, ওষুধ, ভেন্টিলেটর, ভ্যাকসিন, হাসপাতালে বেড ও পরিকাঠামোর অভাব এবং সর্বোপরি রুজি/রুটির আকাল মানুষের জীবন তছনছ তছনছ করে দিচ্ছে ।এই মহামারি সারা বিশ্বকেই কঠিন প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।জীবনের চেনা ছন্দের ছন্দপতন ঘটেছে বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরেই।সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষগুলো জীবিকা হারিয়েছেন।চাকুরিজীবী মানুষদের বেতন অনেকাংশেই অর্ধেক করে দিয়েছে বেসরকারী সংস্থাগুলি।গ্রামাঞ্চলের শিশুদের বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে।শহরের মতো ইনটারনেটের সু- ব্যবস্থা সেখানে না থাকায় অনলাইন ক্লাসের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা ফলে শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশই দ্রুতগতিতে।এদিকে কোরনাতে মৃত্যুর হার দিন দিন বেড়েই চলছে । ঘাড়ের ওপর নি:শ্বাস ফেলছে তৃতীয় ঢেউয়ের আতঙ্ক ।পরিস্থিতি বেশ কিছুটা হাতের বাড়িয়ে।কোরনার দ্বিতীয় ঢেউ যদি পরিকল্পিতভাবে না রোধ করা যায় তবে তা গোষ্টী সংক্রামক যে ভয়াবহ অবস্থা নিতে পারে তা রোম,ইতালির থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে ।
এরই মধ্যে দেশ তো বটেই রাজ্যব্যাপী অক্সিজেনের অভাব চোখে পরার মতো।এখন প্রশ্ন হলো অক্সিজেন কি রাতারাতি বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল, নাকি কিছুটা কালোবাজারী হচ্ছে ?
জীবন এমন কঠিন সময়ের মুখোমুখি সংঘর্ষে লড়াই করে জিততে চাইছে । এই লড়াই অনেক প্রাণকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে চোখের সামনেই।শুধু দূর থেকে দাড়িয়ে দেখা আর নিশব্দে আপনজনকে বিদায় জানাতে হয়েছে অনেক পরিবারকেই।আরোও মর্মান্তিক নিজের মানুষের দেহটিকেও দাহ কিংবা উপযুক্ত সন্মান তারা জানাতে পারেন নি।
রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি নিজের দলের নির্বাচনে জেতার বিজয় মিছিলকেও স্থগিত রেখেছেন করোনার মোকাবিলা কালে।এই সময় রাজনৈতিক রঙ বিচারকে সরিয়ে সকল দলেরই উচিত মানুষের জন্য অক্সিজেন,এম্বুলেন্স,দরকারি ওষুধ আর প্রয়োজনীয় সকল সেবা প্রদান করা।জীবনের জন্য রাজনীতি কিন্তু রাজনীতির জন্য জীবন কোনদিনই কাম্য নয়। বেচে থাকলে তবে তো রাজনীতি, সবাই এটা বোঝার সময় এখন।এখনো যদি না বুঝি আমরা অনেক দেরি হয়ে যাবে দূরত্ব বেড়ে যাবে বেচে থাকা আর না থাকার মধ্যে।
বিশ্ব রাজনীতির বিচারে প্রতিদেশই রাষ্ট্র প্রধানরা করোনা মোকবিলায় ব্যস্ত সেখানে আমাদের দেশ নিজেদের দলীয় রাজনীতির ময়দানে কে কার থেকে বেশি ভোটে এগিয়ে থাকবেন তাই নিয়ে প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত।তার ফলস্বরূপ যা হলো তা তো আমরা চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি ।যে করোনাকে অক্লান্ত পরিশ্রম করে জেতার চেষ্টা করে প্রাণ পর্যন্ত দিলেন ডাক্তার,নার্স ও অনান্য করোনা যোদ্ধারা তাদের হারিয়ে দিলেন রাজনৈতিক দল গুলি। এটা জাতীয় বিপর্যয় । দেশের জাতীয় রাজনীতির প্রধান যিনি সেই মোদি সরকার আজ সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হচ্ছেন করোনা মোকাবিলায়।কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণায় উঠে এলো আরোও নেতিবাচক মনোভাব।একবার কোভিড টেস্ট হয়ে গেলে আর করা যাবে না।তাই যদি হয় তবে মৃত্যুরহার বাড়বে বইকি কমবে না।কিন্তু রাজশক্তির উপরে তো আর কথা বলার উপায় নেই জনগণের।এর প্রভাব পরেছে উত্তরপ্রদেশের বানারসী ও অযোধ্যার পঞ্চায়েত ভোটে।সেখানেও বিজেপির হার হয় অখিলেশ যাদব এস পি দলের কাছে।মথুরাতেও বিজেপি মুখ থুবড়ে পরেছে আরোও শোচনীয় ভাবে।এর সাথে আছে কৃষক বিলের ব্যর্থতার ইস্যু আর কৃষকদের মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা।আগামী বাইশের উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনেও এর প্রভাব পরবে বলে মনে করা হচ্ছে।
রাজ্যেও করোনার মোকাবিলায় এক অসম্ভব কঠিন লড়াই হয়ে উঠছে দিন দিন।আমাদের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই,আর্থিক শক্তি দূর্বল তার সাথে জনসচেতনতার অভাব। সবার আগে আমাদের নিজেদের সচেতন হতে হবে আর সতর্ক থাকতে হবে এবং সরকারকে যে কোনো মূল্যে দায়িত্ব পালন করতে হবে । তবে যদি আমরা এই ভয়ঙ্কর অদৃশ্য দানব তথা অতিমারীর হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পায় ।

জিপসি বোস
নিউটাউন,কলকাতা (Pic courtesy India TV)

Leave a Reply

Your email address will not be published.