GeneralNewsSambad MatamatWorld

মার্কিন কংগ্রেসে ‘১৯৭১ সালে গণহত্যা স্বীকৃতি’ বিল 

শিতাংশু গুহ, ১৭ই অক্টোবর ২০২২, নিউইয়র্ক।।

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশে পাকিস্তানী গণহত্যার বিষয়টি মার্কিন কংগ্রেসে বিল হিসাবে পেশ হয়েছে। শুক্রবার ১৪ই অক্টোবর ২০২২ এ ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। বিলটি তুলেছেন দু’জন কংগ্রেসম্যান ষ্টিভ শ্যাবট ও রোহিত খান্না। বিলের নাম, ‘১৯৭১ সালে বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি’ এবং প্রস্তাবনার নম্বর হচ্ছে, ‘কংগ্রেসীয় প্রস্তাব এইচআর ১৪৩০’। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ষ্টিভ শ্যাবট এবং ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান রোহিত খান্না যৌথ উদ্যোগে হাউস, অর্থাৎ প্রতিনিধি পরিষদে এ বিল উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা ৫১ বছর পর দীর্ঘ প্রতীক্ষিত একটি মহৎ কর্ম সম্পন্ন হলো। 

একই দিন, অর্থাৎ ১৪ই  অক্টোবর ষ্টিভ শ্যাবট এক টুইট বার্তায় লিখেছেন: “বাংলাদেশে ১৯৭১’র গণহত্যা ভুলে যাওয়া যায়না। আমার নির্বাচনী এলাকার (ওহাইও ডিষ্ট্রিক্ট-১) হিন্দুদের সমর্থনে, কংগ্রেসম্যান রোহিত খান্না এবং আমি বাঙ্গালী এবং বিশেষত: হিন্দুদের ওপর যে ব্যাপক নির্যাতন ও নৃশংসতা, যা মূলত: একটি  ‘গণহত্যা’ সেটি স্বীকৃতির জন্যে  কংগ্রেসে একটি আইনানুগ প্রস্তাব (বিল) উত্থাপন করেছি”। ষ্টিভ শ্যাবট ২০১১ থেকে কংগ্রেসম্যান, এবং আগেও তিনি ১৯৯৫-২০০৯ পর্যন্ত ওহাইও ডিষ্ট্রিক্ট-১’র প্রতিনিধিত্ব করেছেন। রোহিত খান্না ২০১৭ থেকে ক্যালিফোর্নিয়ার ১৭তম ডিষ্ট্রিক্ট প্রতিনিধিত্ব করছেন।  

অপর এক টুইটে ষ্টিভ শ্যাবট আরো লিখেছেন যে, “গণহত্যার শিকার লাখো মানুষের স্মৃতি বছরের পর বছর ভুলে থাকা যায়না। এই গণহত্যার স্বীকৃতি ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করবে এবং আমেরিকানদের সচেতন ও শিক্ষিত করে তুলবে। একই সাথে ভবিষ্যৎ অপরাধীরা বার্তা পাবে যে, এমনতর অপরাধের কথা মানুষ ভুলে যাবেনা, এবং তা সহ্যও করবে না”। ডেমোক্রেট কংগ্রেসম্যান রোহিত খান্না এক টুইট বলেছেন যে, “এই প্রথম উত্থাপিত এই প্রস্তাবে ষ্টিভ শ্যাবট-এর সাথে থাকতে পারে আমি গর্বিত। তিনি বলেন, আমাদের সময়ে ভুলে যাওয়া এ গণহত্যায় লাখো বাঙ্গালী ও হিন্দু নিহত বা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলো”। 

এই প্রস্তাব উত্থাপনের নেপথ্যে এইচআরসিবিএম, অর্থাৎ হিউম্যান রাইট্স কংগ্রেস ফর বাংলাদেশী মাইনরিটিজ। সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক প্রিয়া সাহা ১৪ই অক্টোবর ২০২২ এনিয়ে একটি প্রেস-রিলিজ দিয়েছেন। এতে বলা হয়েছে: বাংলাদেশ গণহত্যার স্বীকৃতি প্রস্তাব এইচআর ১৪৩০-এ পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং ইসলামী যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ৯ মাসে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায় ও স্যেকুলার গ্রূপকে টার্গেট করা হয়েছিলো। ষ্টিভ শ্যাবট কংগ্রেসে বাংলাদেশ ককাসের ভাইস-চেয়ার এবং ফরেন রিলেশন্স কমিটি’র এশিয়া ও প্যাসিফিক সাব-কমিট’র গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। 

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী ষ্টিভ শ্যাবট বিল উত্থাপন করে বলেছেন, ১৯৭১ সালে তদানীন্তন পূর্ব-পাকিস্তান, যা এখন বাংলাদেশ-এ লক্ষ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। যাঁরা নিহত হয়েছেন তাঁদের ৮০% হিন্দু। এবং, আমার মতে এটি অন্য যেকোন গণহত্যার মত, বা ‘হ্যালোকাস্ট’-র মত এটিও একটি ‘জেনোসাইড’। অথচ এটি গণহত্যা হিসাবে ঘোষিত বা স্বীকৃত নয়, এবং আমরা এখন এনিয়ে কাজ করছি। এতে বলা হয়, ত্রিশটি জাতীয় হিন্দু সংগঠন এবং স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে এই প্রস্তাব উত্থাপিত হওয়ায় দুই কংগ্রেসম্যানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। 

৮-পাতার ‘১৯৭১ বাংলাদেশ গণহত্যা স্বীকৃতি’ প্রস্তাবে পাকিস্তানকে ঘটনা স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকার ও জনগনের কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং অপরাধী যাঁরা এখনো জীবিত তাঁদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বিচারের আওতায় আনার আহবান জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাঙ্গালী ও হিন্দুদের ওপর নৃশংসতাকে ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্থদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানানো হয়, এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে ‘গণহত্যা’ ও ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়ার আহবান জানানো হয়েছে। 

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, মার্কিন কংগ্রেসে দেড়লক্ষ আর্মেনিয়ান গণহত্যার (২০১৫) স্বীকৃতি পায় ২৯ অক্টোবর ২০১৯। ১২ই ডিসেম্বর ২০১৯ সিনেটে তা সর্বসম্মতভাবে পাশ হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান এডাম শিফ ০৮ই এপ্রিল ২০১৯-এ বিলটি (এইচআর ২৯৬) উত্থাপন করেন। এরআগে বেশ ক’বার বিল এলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২২শে এপ্রিল ১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান সর্বপ্রথম হলোকাস্ট প্রসঙ্গে আর্মেনিয়ান জেনোসাইড’র কথা বলেছিলেন। গুগুল জানায় ১৮৯৫-৯৬ সালে অটোম্যান সৈন্যরা এবং তাঁদের লেলিয়ে দেয়া গুন্ডাবাহিনী আর্মেনিয়ায় প্রায় ১লক্ষ আর্মেনিয়ানকে হত্যা করে এবং গ্রামকে গ্রাম জোরপূর্বক ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। ২৪শে এপ্রিল ২০২১-এ আর্মেনিয়ান গণহত্যা স্মরণ দিবসে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হোয়াইট হাউসে এক বিবৃতিতে ‘গণহত্যা’র কথা উল্লেখ করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, বাংলাদেশ গণহত্যা বিল এইচআর ৪৩০’র ভবিষ্যৎ কি? Pic courtesy HRCBM

Leave a Reply

Your email address will not be published.