GeneralNewsPoliticsSambad MatamatWorld

বাংলাদেশে হিন্দুদের সমস্যা ও সমাধান-১  

সিতাংশু গুহ 

ছবিটি দু’টি সাপ-এর। একটি বিশালাকায় অজগর এবং একটি কিং-কোবরা। এঁরা জীবন বাজি রেখে মারামারি করছে। কোবরা কামড় দিয়েছিলো অজগরকে। অজগর তাই চেপে ধরে কোবরা-কে। পরিণতি দু’জনের মৃত্যু। অজগর মরে কোবরার বিষে; আর কোবরা মরে অজগরের প্রচন্ড চাপে। অথচ এঁরা স্বজাতি। সমাজে প্রতিনিয়ত এমন ঘটনা ঘটছে। বন্ধু-বন্ধুতে, পরিবারে, ধর্মে, ভাইয়ে-ভাইয়ে, সর্বত্র। কারণ, ঈর্ষা, ইগো, কে কত বড়, নেতৃত্ব, রাজনীতি, সর্বত্র। কুৎসা, চরিত্রহনন, দালাল, চামচা আখ্যায়িত করা, টাকা মেরে দেয়া, গুজব, মিথ্যাচার- এসব চলতে থাকে। শেষমেষ উভয়পক্ষ হেরে যায়?

বাংলাদেশের হিন্দু কমিউনিটি’র দিকে তাঁকালে কথাটি পরিষ্কার বোঝা যায়। অন্য কমিউনিটি’র কথা বলবো না, এক্ষণে শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের কথা বলবো। দেশে ও প্রবাসে একই চিত্র। সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা নেই, শুধু চরিত্রহনন। প্রত্যেকটি মানুষের কিছু ভাল গুন্ থাকে, থাকে কিছু বদভ্যাস। ভালমন্দ নিয়েই মনুষ্য চরিত্র গঠিত হয়? যার মধ্যে শুধুই ভাল বিদ্যমান, তিনি মানুষ নন, দেবতা, বা সাধু-সন্ন্যাসী। সাধু-সন্ন্যাসীরা সমাজের কাজে লাগেনা, তাঁরা নিজেদের স্বর্গলাভের জন্যে কাজ করেন। এটি হিন্দু সমাজের দুর্ভাগ্য। 

ভারতে যত সাধু সন্ন্যাসী আছেন, এঁরা রাস্তায় নেমে এলে সব-সমস্যার সমাধান হয়ে যেতো। বাংলাদেশে হিন্দু’র ওপর এত অত্যাচার হচ্ছে, সাধু-সন্ন্যাসী-পুরোহিতরা কি মাঠে নামেন? তাঁরা নামেন না, মন্দিরগুলো ভক্তদের বোঝায় ওসব রাজনীতি, বাজে কাজ, সময় নষ্ট, ধর্মে মনোনিবেশ করা এর চেয়ে ঢের বেশি জরুরী! অথচ রাষ্ট্র না থাকলে ধর্ম টেকানো দায়। সৌদি আরবে গিয়ে আপনি ইচ্ছে করলেই পূজা করতে পারবেন না? ওআইসি দেশগুলোতে অন্য ধর্মের ক্ষেত্রে হাজারো বিধিনিষেধ। মক্কা-মদিনায় আপনার ঢোকার অনুমতি নেই! 

অথচ মধ্যপ্রাচ্যে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার অনুমতি পেলে আপনি ‘বিজয়’ অনুভব করেন। ইউরোপ-আমেরিকায় আপনি মহাসমারোহে ‘কীর্তন’ করেন, রাস্তায় বিশাল মিছিল করেন, এটুকু বুঝতে চাননা যে, প্রশাসন না চাইলে আপনি তা করতে পারবেন না? ঢাকা-চট্টগ্রামে জন্মাষ্টমীর মিছিলে যত মানুষ হয়, সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধে সেই মানুষগুলো রাস্তায় নামলে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হয়ে যাবে। ২০২১-র অক্টবরে কুমিল্লার ঘটনায় ‘ইসকন’ মাঠে নেমেছিল, কারণ তাঁদের ওপর হামলা হয়েছিলো। তখন যদি মতুয়া, অনুকূল ঠাকুর, রামকৃষ্ণ মিশন, বা অন্যরা মাঠে নামতো? না, তাঁরা নামেনি। 

নিজের ওপর হামলা না হলে কেউ মাঠে নামেনা। এক হিন্দুর বাড়ী পুড়লে অন্য হিন্দু ভাবে, আমার কি, আমারটা তো পুড়েনি। এক হিন্দুর মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে গেলে অন্য হিন্দু ওই মেয়ের দোষ খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পরে? নিজের মেয়েটা হারিয়ে গেলে কপাল চাপড়িয়ে মরে। গুরুকে খুশি করতে গিয়ে হিন্দু প্রতিবেশী হিন্দু’র সুখে-দু:খে সাথী হতে ভুলে যায়। ঘরে আগুন লাগলে প্রতিবেশীই যে প্রথম এগিয়ে আসবে তা বেমালুম ভুলে থাকে। হিন্দু চায়, তাঁর সমস্যা সমাধানে ভারত এগিয়ে আসুক। এতকাল পরেও হিন্দু বুঝলো না যে, ভারত এগিয়ে আসেনি, আসবে না, নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করতে হবে।  Pic courtesy: the Telegraph

Leave a Reply

Your email address will not be published.