বড় রদবদল সিপিএমে – রাজ্য সম্পাদক হচ্ছেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য
দেবারুণ রায়
শিগগিরই সিপিএমের রাজ্য রাজনীতিতে বিপ্লব ঘটতে চলেছে। এটা অবশ্যই গ্লোরিয়াস রেভলিউশন। দলের ঐক্য অটুট রাখতে, সংগঠনে নতুনের কেতন ওড়াতে এবং অ-কালবোশেখির ঝড় রুখতে রাজ্য সম্পাদকসহ সম্পাদকমন্ডলীতে তুমুল পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন শুধু আনুষ্ঠানিকতাটুকু বাকি। যা সেরে ফেলতে পার্টি কংগ্রেস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এই পর্বে পুরোটাই ” ধীরে বহে ডন।” নতুন রাজ্য সম্পাদকের আসনে বসানোর জন্য শ্রীদীপ ভট্টাচার্যর নামে সর্বসম্মতিতে পৌঁছনো গেছে। কাঁচি হয়েছেন মহঃ সেলিম , রবীন দেব এবং মৃদুল দে। ভাবমূর্তিতে এগিয়ে গেছেন শ্রীদীপ। তাছাড়া সবার সহযোগিতা নিশ্চিত করে চলতে ও চালাতে পারবেন তিনি। কিন্তু সংগঠনের পাশা তাঁর হাতে নেই। সুতরাং করিৎকর্মা কমরেডদের ওপর তাঁকে নির্ভর করতে হবে। যে কারণে শৈলেন দাশগুপ্ত হয়ে উঠেছিলেন সিপিএমের সংগঠনের জ্যোতি, সরোজ মুখার্জির প্রয়াণের পর। নিজেই আমাকে বলেছিলেন, আমি তো সাময়িকভাবে আছি। বিমানদের হাতেই তুলে দেব। সেই বিমানদের কে অনিল করে দিয়েছিলেন এই রাজ্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিক মহীরুহ জ্যোতি বসু। প্রণব মুখার্জির মতো তীক্ষ্ণধী চাণক্যের শ্রদ্ধেয় ছিলেন তিনি।যিনি তাঁর উত্তরসুরী বেছেছিলেন একেবারে বিপরীত ভাবমূর্তির বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে। যাঁর মধ্যে সংগঠনের ‘স’ ও ছিলনা। যা ছিল , তা আর কারও মধ্যে ছিলনা।
সেই তত্ত্বেই সিপিএম শ্রীদীপকে বেছেছে। দলে বেশ চিন্তা আছে নিচুতলার লড়াকু কমরেডদের মধ্যে। কিন্তু সূর্যকান্ত এমন কোনও তূর্যনিনাদ তো করেননি , যাতে তাঁকে দৃষ্টান্তের দৃষ্টিতে দেখা যায়। এমনকি নারায়ণ গড়ও তো গড়গড় করে বিরোধীদলের কোলে চলে গেল। তাহলে ? জেতা আর না জেতা তো সমান। ২০২১এ সর্বহারা সিপিএম। কেউ তার দায় নেবেনা ?
এবার বিমান বসু। বাংলায় সিপিএমের সমার্থক নাম। বড় বাড়ির ছোট ছেলে। পৈতে পুড়িয়ে কমরেড। গড়িয়াহাটের বাড়ি থেকে প্রমোদ দার কমিউনে। কিন্তু আর কত কমরেড ! শতাব্দী তো শেষ হয়ে গেছে একুশ বছর আগে। একুশ বছরে দশ বছর তৃণমূল। তার আগে অনিল বিশ্বাস। দলের ওপর বিশ্বাস ফেরেনি মানুষের। আপনার সংযুক্ত মোর্চাও মর্চে মেটাতে পারেনি মানুষের মনে। মহামান্য কমরেড, ১৯৪৬ এর পর কমিউনিস্ট পার্টির সব মত সব পথ শূন্য হয়ে গেছে একুশে। বিপ্লব হয়তো হয়েছে বামফ্রন্ট শরিক আরএসপি ফবর পোশাকে। কেরলে ইউডিএফ , বঙ্গে বামফ্রন্ট। এমন চতুর চাওয়া পাওয়া মানুষের মনে গেঁথে গেছে।
তবু যেহেতু বামফ্রন্টের প্রধান শরিক সিপিএম, তাই বামপন্থীরা সিপিএমকেই চায় নবকলেবরে। আরএসপি ফরওয়ার্ড ব্লক নিয়ে মানুষের মাথাব্যথা নেই। সবাই বোঝেন, আগামী দিনে অনেক অঙ্ক মেলানো বামদলের চেয়ে সিপিআইএমএল লিবারেশন যথেষ্ট গ্রহণীয় শক্তি। কিন্তু এবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তন হচ্ছে। বিমান বসু চেয়ারম্যান থাকছেন না। হতে পারে এখন দল ক্ষমতায় নেই বলে রাজ্য সিপিএমের সম্পাদকই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান হলেন। নতুবা, অন্য কোনও অপেক্ষাকৃত কমবয়সী নেতাকে চেয়ারম্যান করা হতে পারে।
তাহলে বিমান বসুর মতো বাংলার সিপিএমের সংগঠক হিসেবে আর কার কথা মনে হতে পারে ? সূর্যকান্ত ? তিনি মোটেই কট্টরপন্থী নন , কিন্তু তাঁর কোনও আগ্রহ নেই এই সাংগঠনিক দায়িত্বে । সুতরাং এই অসময়ে রাজ্যের নবনির্বাচিত সম্পাদককেই বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান করা হতে পারে।
তবে পুনর্বাসনের কথা ভেবেও বয়সের প্রশ্নে সমঝোতা করার সম্ভাবনা রয়ে যেতে পারে। কিন্তু বিমান বসুর বয়স নিয়ে সমঝোতার প্রশ্ন নেই সিপিএমে।
সেইসঙ্গে গত নির্বাচনে জোটের পক্ষে প্রচারে সিপিএম এর যতটা দ্বন্দ্ব ছিল তা দলের পক্ষে শুষে নেওয়া হয়েছে। ঠিক হয়েছে, বিমান পলিটব্যুরো থেকেও পদত্যাগ করবেন। রাজ্য কমিটিতে তাঁকে স্থায়ী আমন্ত্রিত হিসেবে রাখা হতে পারে। অন্যদের এমন এভাবেই রাখা হয়েছিল অতীতে। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে।
এমনদিনে তারে ভোলা যায় ? এবং বিদ্যাসাগর মেলা কমিটি সহ নানা কমিটির মাথায় রেখেই বিমানের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে।
আরও কিছু বলার থাকলে বলবেন।
ভালো।