GeneralIndiaNewsSambad MatamatWorld

ইসকন নিয়ে কথা!

শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।

ইসকন নিয়ে আজকাল কিছু লোক কথাবার্তা বলছেন। এমনিতে একটি সংগঠন নিয়ে কথাবার্তা হতেই পারে, এর পক্ষে-বিপক্ষে মানুষ থাকতেই পারেন। কিন্তু যাঁরা বলছেন, ইসকন ‘সন্ত্রাসী’ সংগঠন তাঁরা একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বলছেন। কি তাদের উদ্দেশ্য? প্রথমে দেখা যাক ইসকন কি? ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কংসাছনেস বা কৃষ্ণ সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি। বিশ্বব্যাপী এঁরা ‘হরেকৃষ্ণ’ নাম প্রচার করে। এঁরা জীব হত্যার বিরুদ্ধে, তাই নিরামিষ ভোজী। সমগ্র বিশ্বের রাস্তায় রাস্তায় এঁরা ‘হরেকৃষ্ণ’ গেয়ে বেড়াচ্ছেন, “হরেকৃষ্ণ হরেকৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে/ হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে” -এই নাম-গানে ইসকন নুতন মাত্রা যোগ করেছে। যাঁরা জীব হত্যা করেনা, তাঁরা সন্ত্রাসী হয় কি করে? ইসকন বিশ্বব্যাপী একজন মানুষকে খুন করেনি। যাঁরা ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলেছেন, তাঁদের চেহারাটার দিকে তাকিয়ে দেখুন! যাঁরা ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন বলছেন, তাঁরা কিন্তু আইসিস, আল-কায়দা, বোকাহারাম, বা এমনকি ৯/১১’র সন্ত্রাসীদের নিন্দা করেনা, সন্ত্রাসী বিন-লাদেনকে নিন্দা করেনা। এঁরা ঢাকায় মিছিল করেছিলো, ‘আমরা সব তালেবান, বাংলা হবে আফগান’। বটম লাইন হচ্ছ, ইসকনকে যাঁরা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে তাঁরা সবাই ‘সাম্প্রদায়িক’। কোন ব্যতিক্রম নেই! সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে তা বলেন। প্রশ্ন হলো, কেন বলেন? 

বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে এর বেশ ক’টি কারণ আছে: সবাই জানেন, ১৯৪৭ সন থেকে বাংলাদেশে হিন্দু সম্পত্তি দখলের মহোৎসব চলছে। এতে প্রায় সবাই জড়িত। বর্তমানে অসহায় হিন্দু তাঁদের সম্পত্তি বা গৃহমন্দিরটি যখন রক্ষা করতে পারছেন না, বা বিক্রীও করতে পারছেন না, ভাল মূল্য পাচ্ছেন না, তখন তিনি ওটি ইসকনকে দান করে দিচ্ছেন, বা স্বল্পমূল্যে ছেড়ে দিচ্ছেন। গরিব একজন হিন্দুর কাছ থেকে তার সম্পত্তি দখল করা যতটা সহজ, একটি সংগঠন ‘ইসকন’ থেকে তা জবর-দখল বেশ কঠিন। কারণ তাঁরা সংঘবদ্ধ, তাঁদের ভক্ত আছে, টাকাপয়সা আছে, তাঁরা মামলা লড়তে পারেন। অর্থাৎ ভূমিদস্যুরা সহজে হিন্দু সম্পত্তি দখলে পৈতৃক অধিকার হারাচ্ছে! দোষ ইসকনের? রাগও তাই ইসকনের ওপর। ইসকন সত্যিকার শান্তির কথা বলে, কাজও করে সব শান্তির পক্ষে। তাই যারা অশান্তিতে বিশ্বাসী তারা ইসকনকে সহ্য করার কথা নয়, করেও না? ইসকন কিছু মানুষকে তাঁর স্বভাবজাত বা স্বধর্মে ফিরিয়ে আনছে, এটিও একটি ভয়, কি-জানি বাবা কি হয়? ইউরোপ-আমেরিকায় ইসকনের পতাকাতলে সাদা-কালোরা চলে আসছেন, এটাও ভয়? পাকিস্তানে, বা ইরাকে বা মস্কোয় ইসকন রাস্তায় রাস্তায় ‘হরেকৃষ্ণ’ গেয়ে বেড়াচ্ছে, এতে কিছু লোক তো ভয় পেতেই পারেন? তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, ভয় থেকেই এই প্রতিবাদ বা প্রতিরোধের ঘটনা। 

কিছুদিন আগে বাংলাদেশে স্কুলে ইসকনের প্রসাদ খাওয়ানো নিয়ে কিছু লোক ঝামেলা পাঁকাতে চেয়েছিলো। স্কুলের মুসলমান প্রিন্সিপাল নিজে বললেন, ওঁরা প্রসাদ শুধু হিন্দুদের খাইয়েছে। তারপরও কি থামে? আচ্ছা, মুসলমান ছাত্ররা প্রসাদ খেলেই কি হতো? লক্ষীপূজার নাড়ু-সন্দেশ, বা দুর্গাপূজার খিচুড়ি কি মুসলমানরা খান না? খেলে কি তিনি মুসলমান থেকে খারিজ হয়ে যান? ধর্ম কি এতই ঠুনকো? আমরা কি মিলাদের তবারুক, জিলাপি খাইনা? বা শবেবরাতের তবারুক? আমরা কি মুসলমান হয়ে গেছি? সুতরাং প্রসাদ খাওয়া নিয়ে ‘উদেশ্যমূলক’ শয়তানী করার একটি পাঁয়তারা হয়েছিলো, একজন ভালো মুসলমান প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় সেটা ভেস্তে গেছে। বইমেলায় ইসকনের একটি ষ্টল ছিলো, কিছু লোক দাবি করেন, ওটি বন্ধ করতে হবে? ওখানেও বদমাইশি। বইমেলায় ইসলামী ফাউন্ডেশনের ষ্টল থাকে, খৃষ্টানদের বাইবেল ষ্টল থাকে, শুধু ইসকন থাকতে পারবে না? বন্ধই যদি করতে হয়, সকল ধর্মের সবগুলো ষ্টল বন্ধ করার দাবি নেই কেন? 


একই গোষ্ঠী দাবি করছেন, ইসকন নিষিদ্ধ করতে হবে? এই গোষ্ঠী’র আহমদিয়াদের ‘অমুসলমান’ ঘোষণা করার দাবিও আছে! তাহলে বুঝুন এরা কারা? ইসকন কোন ধর্মগ্রন্থ পোড়ায় না, যাঁরা ইস্কন বন্ধের দাবি করেন, তাদের বিরুদ্ধে বায়তুল মোকাররমে ‘কোরান শরীফ’ পোড়ানোর অভিযোগ আছে। নিষিদ্ধ তো এদের করা উচিত। ইসকনের মহিলারা রাস্তায় রাস্তায় ‘হরেকৃষ্ণ’ গাইছে, যাঁরা ইসকন নিষিদ্ধ চাইছেন, তাঁরা মহিলাদের ঘরের ভেতরে আটকে রাখতে চান! ইসকন গরিব মুসলমানদের একমাস ইফতার করান, পারলে ফতোয়া দেন, ইস্কনের ইফতার হারাম, এবং এই গরিবদের খাওয়ান!  মূলত ধর্ম ব্যবসায়ীরা ইস্কনের বিরোধিতা করছেন, এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের বিরোধিতা করেছেন, একুশ, পহেলা বৈশাখ বা যেকোন ভালো কাজের বিরোধিতা করেন! এরা যখন ইস্কনের বিরোধিতা করছেন, তাহলে ইসকন নিশ্চয় ভালো কাজ করছে, সঠিক পথে আছে। আমি ইসকনের পক্ষেও না, বিপক্ষেও না, এরা দেশে দেশে সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে না, এঁরা ধর্মের নামে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার পাঁয়তারা করেনা, সবচেয়ে বড়কথা হচ্ছে, এঁরা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করেনা। সুতরাং।

Leave a Reply

Your email address will not be published.