EntertainmentGeneralIndiaNewsSambad Matamat

দুর্গাপূজা শেষ হলো, শুভ বিজয়া

শিতাংশু গুহ

দুর্গাপূজা শেষ হলো, শুভ বিজয়া। বাংলাদেশে এবার পূজা ছিলো শান্তিপূর্ণ। তেমন বড় কোন হাঙ্গামা হয়নি। প্রশাসন সতর্ক ছিলো। সরকার কঠোর ছিলো। অর্থাৎ সরকার চাইলে, প্রশাসন সক্রিয় থাকলে শান্তিপূর্ণ পূজা উদযাপন সম্ভব। ২০২১’র পূজাকে সামাজিক মাধ্যমে ‘রক্তাক্ত শারদ’ আখ্যা দিয়েছিলো; সেইমত এবারের পূজা’কে ‘শান্তি শারদ’ বলা যায়। সরকারকে এজন্যে ধন্যবাদ। বাংলাদেশে এবার চল্লিশ হাজারের বেশি পূজা হয়েছে। সর্বত্র একশ’ শতাংশ ‘শান্তিপূর্ণ’ থাকবে তা হয়তো নয়, প্রশাসন ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর সবকিছু নির্ভরশীল। গতবার কুমিল্লার ঘটনায় প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছিলো। এবার পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাই? এজন্যে বলা হয়, ‘পুলিশ চাইলে পারে’। 

সদ্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করতে পারবে না।  ঢাকেশ্বরী মন্দির প্রাঙ্গণে দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়কালে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি প্রধানমন্ত্রী আরো বলেছেন, কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এমন কিছু কেউ বলতে পারবে না। এটা যেকোনো ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য। প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যকে স্বাগত। দেশে ইসলাম ধর্ম অবমাননার মিথ্যা অজুহাতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বেশ কিছু হিন্দু-বৌদ্ধ নারীপুরুষ, বিশেষত: শিক্ষক-শিক্ষিকা আটক আছেন বা হচ্ছেন,  শাল্লার ঝুমন দাসের কথা না-ই-বা বললাম, আশা করাই যায়, এরপর এর অবসান হবে?  

২০২২’র দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ ছিলো এরমানে এই নয় যে, মূর্তি ভাঙ্গা হয়নি অথবা হাঙ্গামা সৃষ্টির চেষ্টা হয়নি?  সামাজিক মাধ্যমে দেখলাম শ্রীমঙ্গলে পূজার ঠিক আগের দিন্ শুক্রবার ৩০শে সেপ্টেম্বর ২০২২ সবুজবাগ সার্বজনীন পূজা মণ্ডপে সন্দেহজনক এক ব্যক্তিকে স্বেচ্ছাসেবকরা ধরে পুলিশে সোপর্দ করে। ওসি হুমায়ুন কবীর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘লোকটি মানসিক ভারসাম্যহীন’, তাঁকে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। এখানে স্বেচ্ছাসেবক ও পুলিশের ভূমিকা ইতিবাচক। আজকের পত্রিকা জানিয়েছে টাঙ্গুয়া কুমার পাড়ায় এবার দুর্গাপূজা হয়নি। তাঁরা প্যান্ডেলে কালো পতাকা উড়িয়ে পূজা বন্ধ রাখে। অভিযোগ কিছুদিন আগে (২৯শে জুলাই) সেখানে অপু রানী নাম্মী এক গৃহবধূকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, তাঁরা এখনো বিচার পায়নি, তাই পূজা বন্ধ। প্রশাসন পূজা করাতে চেষ্টা করেছে, কাজ হয়নি। 

ঢাকা প্রকাশ নামে একটি মিডিয়া জানাচ্ছে, পূজায় ছুটি চেয়ে চাকুরী হারিয়েছেন শ্যামা সাহা নামে এক মহিলা। শুধু তাই নয়, কর্তৃপক্ষ তাঁকে উপহাস করে বলেছে, আপনারা সংখ্যালঘু, সরকার যেহেতু আপনাদের ছুটি দেয়না, সেখানে আমরা কিভাবে ছুটি দেবো? অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ হিন্দু ধর্ম নিয়েও উপহাস করেছেন। দৈনিক ভোরের কাগজ ২১শে সেপ্টেম্বর ২০২২-এ জানিয়েছে, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার একটি গ্রামে গত সোমবার ১৯শে সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে মন্দিরে আগুন ও মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। তিন জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। রবিবার ১১ই সেপ্টেম্বর বগুড়ার শেরপুরের বিশ্বায় শ্মশানের কালী মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। 

কুষ্টিয়ার লাহীনি বটতলা মন্দি‌রের প্রতিমা ভাংচুর হয়েছে। বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দুর্গা মন্দিরে নির্মাণাধীন দুর্গাপ্রতিমা ভাংচুর করেছে দুর্বৃত্ত। ১৩ই সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জে তাড়াগ্রাম পোদ্দার হাউজে নির্মাণাধীন দূর্গা প্রতিমা ভাঙ্গা হয়েছে। ১১ই সেপ্টেম্বর কুষ্টিয়ার লাহিনী বাটালা মন্দিরে দূর্গা প্রতিমা ভেঙ্গেছে। সময় নিউজ ৯ সেপ্টেম্বর জানায়, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রীতম দাশ নামে এক যুবককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। একই দিন ভোরের কাগজ জানায়, বাউফলের নাজিরপুর-তাঁতেরকাঠি ইউনিয়ন পরিষদের উপনির্বাচনে তিনটি হিন্দু পরিবারের বসতঘর ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। তাঁদের এলাকা ছাড়ার হুমকি দেয়া হচ্ছে। 

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে হাজী ইয়াকুব আলী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অখিল দেবনাথের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার নবীনগরে ২৬শে সেপ্টেম্বর অভি চক্রবর্তী নামের ১৫ বছরের এক বালককে পুলিশ ধর্ম অবমাননার অজুহাতে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে গ্রেফতার করেছে। বরিশালে শ্রীশ্রী কালিমাতার মন্দিরে সোমবার ১২ সেপ্টেম্বর দরজা ভেঙ্গে দেড়শ’ বছরের পুরানো  শিবলিঙ্গ চুরি হয়েছে, পুলিশ কর্মকর্তা আজিমুল করিম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে জানা যায়, বিবাহিত হিন্দু ছাত্রী‌দের এসএসসি পরীক্ষার হলে প্রবেশের পূর্বে শাঁখা খুলতে ও সিঁদুর মুছে ফেলতে বাধ্য করেছেন নরসিংদী সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তাহমিনা ফেরদৌস, আকিকুন নাহার সহ আরো ক’জনা শিক্ষিকা! ১৬সেপ্টেম্বর বাংলা এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ইংরেজী পরীক্ষায় এ ঘটনা ঘটেছে। এ ক’টি ঘটনা উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে, প্রশাসন এগুলো খতিয়ে দেখতে পারেন, যেকোন ঘটনার বিচার চাওয়ার অধিকার সবার আছে। এবার শান্তিপূর্ণ পূজায় দেশে-প্রবাসে হিন্দুরা সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন। পূজার আগে সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং পুলিশ হামলার আশংকা ব্যক্ত করেছিলেন। ভালো যে, তা হয়নি, হয়তো সরকার সজাগ ছিলেন। কেউ কেউ এবারকার শান্তিপূর্ণ দুর্গাপূজা’র সাথে প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দিল্লী সফর এবং আগামী নির্বাচনের যোগসূত্র আছে মনে করছেন। তা থাকুক বা না থাকুক, প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। সরকার এবার যত্নের সাথে এই দায়িত্বটি পালন করেছেন। আগামী দিনেও তাই হোক, ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক।

Leave a Reply

Your email address will not be published.