Sambad Matamat

বাজেটেই ঘাটতি, জৌলুস হারাচ্ছে দিল্লির পুজো ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠা

নোট বাতিল এবং জিএসটি কি প্রভাব ফেলছে দিল্লির দুর্গাপুজোগুলিতে? আর যে কারণে ক্রমাগত জৌলুস হারাচ্ছে পুজোর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলি? কয়েক বছর আগেও যেখানে কলকাতা, মুম্বইয়ের নামীদামি শিল্পীরা দিল্লির পুজোতে নাড়া বাঁধতেন, সেখানে বর্তমানে স্থানীয় শিল্পীদের দিয়েই জলসা করানোর চল বৃদ্ধি পেয়েছে রাজধানীতে। কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের কিছু রিয়েলিটি শোয়ের প্রতিযোগীদের দিল্লিতে নিয়ে আসার প্রবণতা বেড়েছে। একই কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কমেছে পুজোর বাজেট। যার সার্বিক প্রভাব পড়ছে পুজো পরিচালনার ক্ষেত্রে। যদিও দিল্লি-এনসিআরের পুজোর অন্যতম প্রধান আকর্ষণ আনন্দমেলার জৌলুস অবশ্য কমেনি একফোঁটাও। তার স্বকীয়তা বজায় রয়েছে আগের মতোই পুরোমাত্রায়।
দিল্লির প্রাচীনতম পুজোগুলির একটি ‘করোলবাগ পুজো সমিতি’র অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা দীপক ভৌমিক স্বীকার করেছেন, বাজেট তাঁদের পুজোয় প্রভাব ফেলছে যথেচ্ছভাবে। দীপকবাবু বলেন, ‘করোলবাগের এই পুজো মূলত এখানকার স্বর্ণশিল্পীদের পুজো। নোটবন্দি এবং জিএসটি’র কারণে স্বর্ণশিল্পের ব্যবসাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ভীষণভাবে। ফলে পুজোর চাঁদা আসছে কম পরিমাণে। তা প্রভাব ফেলছে পুজোতে।’ সংশ্লিষ্ট পুজোর উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগেও এখানে নিয়মিতভাবে অনুষ্ঠান করেছেন ঊষা উত্থুপ, মনোময় ভট্টাচার্য, জোজো, রূপঙ্করের মতো নামীদামি শিল্পীরা। কিন্তু বাজেটে ঘাটতির কারণে বর্তমানে তাঁদের আর নিয়ে আসা যাচ্ছে না। ভরসা রাখতে হচ্ছে স্থানীয় শিল্পী এবং বিভিন্ন রিয়েলিটি শোয়ের প্রতিযোগীদের উপরই। দিল্লি চিত্তরঞ্জন (সিআর) পার্কের মেলা গ্রাউন্ডের পুজোর সাধারণ সম্পাদক শেখর গুহও জানিয়েছেন, স্থানীয় শিল্পীরাই এবার তাঁদের পুজোর জলসার আসর জমাবেন। নোটবন্দি এবং জিএসটি’র কারণে তাঁদের বাজেট যে কমেছে, তা স্বীকার করেছে দিল্লি সংলগ্ন ইন্দিরাপুরমের একাধিক পুজো কমিটিও।
দীর্ঘদিন ধরে দিল্লির পুজোর সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের একটি বড় অংশ অবশ্য পুজোর জলসার জৌলুস কমার কারণ হিসেবে রাত ১০টার পর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের অনুমোদন না পাওয়াকেও দায়ী করছেন। জানা গিয়েছে, একটা সময় দিল্লির পুজোয় প্রায় সারা রাত জুড়ে জলসার আয়োজন করতেন উদ্যোক্তারা। এবং তা দেখার জন্য দিল্লি-এনসিআরের পুজো মণ্ডপগুলিতে দর্শনার্থীদের ভিড় একেবারে উপচে পড়ত। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে রাত ১০টার পর তা চালানোর অনুমতি দেয় না পুলিশ-প্রশাসন। নিয়মিতভাবে যার প্রভাব পড়ছে দিল্লির পুজোর জলসায়। নয়ডা সেক্টর-১৩৭ সর্বজনীন পুজো সমিতির অন্যতম উদ্যোক্তা কিংশুক গুপ্ত জানিয়েছেন, তাঁদের পুজোর বিশেষ আকর্ষণও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এই পুজোয় প্রতিমা এবার ১২ ফুটের। ফলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশিই ১২ ফুটের প্রতিমা ওই পুজোর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। পটপরগঞ্জ পূর্বাচল দুর্গোৎসব কমিটির পুজোও যেমন ভীষণ ছিমছামভাবে করেন উদ্যোক্তারা। দিল্লির ‘বঙ্গীয় ঐক্য সম্মিলনী’র পুজোরও একটি বড় আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এমনই জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা। পুজোর এবার ২৬ বছর। কলকাতার জিপিও (জেনারেল পোস্ট অফিস)-এর আদলে তৈরি হয়েছে মণ্ডপ। তবে বাজেট কম হলেও দিল্লিতে দুর্গাপুজোর সংখ্যা কিন্তু বেড়েছে। দিল্লির ‘জয়েন্ট দুর্গাপুজা প্রসেশন কমিটি’র শীর্ষ কর্তা স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘বর্তমানে এখানে অন্তত শ’পাঁচেক পুজো হয়। বিগত কয়েক বছরে দিল্লিতে দুর্গাপুজোর সংখ্যা অন্তত ৪ থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

– দিব্যেন্দু বিশ্বাস

 

Leave a Reply

Your email address will not be published.