BusinessGeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

কারেন্সি নোটে রাখা হচ্ছে রবীন্দ্রনাথ ও কালামকে

দেবারুণ রায়

সংঘের কোর কর্মসূচি রূপায়ণে খুব ধীরে এবং পরিকল্পিত পদ্ধতিতে এগোচ্ছে বিজেপি সরকার।  মোদি সরকার মানেই সংখ্যায় স্বনির্ভর। তিরিশ বছরের খরা কাটিয়ে ২০১৪ তে যখন একক শক্তিতে মোদি দলকে লোকসভায় ম্যাজিক সংখ্যার বৈতরণী পার করালেন তখনই ছ’কে নিয়ে পা ফেলেছেন । একের পর এক সিঁড়িতে পা রেখেছেন সাউথ ব্লকের স্থিতিকে প্রলম্বিত করতে। সাউথ ব্লকে বিজেপির উপস্থিতি যে ভারতে দক্ষিণপন্থার লজ্জাবতী লতাকে বটবৃক্ষে রূপান্তরের সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম নিয়ে তা প্রমাণ করতে। এবং এখনও দেশের হতদরিদ্র অদৃষ্টবাদী, শিক্ষা ও শ্রমের সম্মানে বঞ্চিত প্রায় আশি শতাংশ নাগরিকের উদ্দেশে আসলি অচ্ছে দিনের বার্তা দিতে। বিজেপিকে সরকারের মুখ দেখানোর প্রথম পুরুষ অটলবিহারী বাজপেয়ির স্লোগান ছিল, “ভুখ ভয় ভ্রষ্টাচার মিটায়েঙ্গে।” মোদি কিন্তু দুর্নীতি দূর করা নিয়ে কিছু টুকরো মন্তব্য করলেও অটলের মতো ওই প্যাকেজের গণ্ডিতে নিজেকে বাঁধেননি। এবং ক্রমাগত আরএসএসের কোর কর্মসূচির দিকে এগিয়েছেন। অটলজি জানতেন, সংবিধানের খোলনলচে বদলানো যাবে না। তবু সংঘকে খুশি করতে হবে। সুতরাং বিচারপতি বেঙ্কটচেলাইয়ার নেতৃত্বে সংবিধান সংশোধন কমিশন গড়ে হাত ধুয়ে ফেললেন। শুধু একটা ঘটনা স্পষ্ট হল। যে, এনডিএর শরিক দলগুলোর মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষরাও ট্যাঁ ফো করল না। ওঁদের খুড়োর কল দেখানোর ব্যবস্থা রেখেছিলেন আডবাণী।  সেটা হল, বিজেপির কোর কর্মসূচি সব মুলতুবি থাকবে।  রামমন্দির, অভিন্ন দেওয়ানি আইন ছাড়াও যে বিজেপির মৌলিক কোর অ্যাজেন্ডা আছে তা কি ওঁরা জানতেন না ? আলবাৎ জানতেন।  কিন্তু বিজেপির দেখানো খুড়োর কলটি শরিকরা তাদের ভোটারদের দেখিয়েছিলেন। 

এখন আর সেই ধোঁয়া নেই।  অচ্ছে দিনের পর পুলওয়ামার ইস্যুতে  বিরোধীদের ফুল বানিয়ে ঊনিশে যখন হাউসফুল হল বিজেপি তখন কুড়িতে হিন্দুত্ববাদী  রাজনীতির কুঁড়ি তো ধরবেই দিল্লির মোগল গার্ডেনসে। একটু একটু করে পা ছড়ানো শুরু তখন। প্রণব বাবুর পর তখন কোবিন্দজিও আসীন। ২০২০ তেই রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়াকে কংগ্রেস মুক্ত ভারতের রূপরেখা দেওয়া হয়েছে।  যা সব কী (Key) ডিপার্টমেন্টকেই দেওয়া হয়েছে।  যেমন পার্লামেন্টকে সরাতে নতুন কর্মযজ্ঞ থেকে গত ছাব্বিশে জানুয়ারির নেতাজিকে ইন্ডিয়া গেটে প্রতিষ্ঠার ঘটনা। ঘটনার ঘনঘটা।  নেতাজি মূর্তির অদৃশ্য হয়ে যাওয়ার নানা গল্প। যার মধ্যে একটি বার্তা স্পষ্ট।  তা হল, কংগ্রেসের গড়া ঐতিহ্য ও প্রথাই শেষকথা নয়। গান্ধীর শরীর হনন করে বা রাজনীতি অর্থনীতিকে নস্যাৎ করে যা করা যায়নি তা গণতান্ত্রিকতার কৌশলে সম্ভব।  ভারতের রাজনৈতিক সিস্টেমে গান্ধীজি ন হন্যতে। কংগ্রেসই তো গান্ধীর মত ও পথ , রাজনীতি ও অর্থনীতি থেকে সরে এসেছে তিরিশ বছর আগে চূড়ান্তভাবে।  সুতরাং বিজেপির আর কীসের চিন্তা।  যদিও বিজেপির গঠনতন্ত্র গান্ধীজিকে আইকনদের মধ্যেই মেনেছে । কিন্তু গান্ধীর পাশাপাশি গডসেকেও তো ফুল বেলপাতা দিচ্ছেন সাংবিধানিক পদাসীনরা। সংসদে দাঁড়িয়ে “গান্ধী না, গডসেই আরাধ্য ” এও তো শোনা গেছে।  প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, “এই কথা যিনি বলেছেন তাঁকে কোনওদিন  ক্ষমা করতে পারব না।” তাতে তো সেই বক্তার কেশাগ্রও কেউ স্পর্শ  করেনি। প্রমাণ হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী চাইলেও সব পারেন না। আরবের সাম্প্রতিক জেহাদেও সেটা প্রমাণিত। 

এবং এবার টাকার গল্পটা বেশ মনোহারি।  গান্ধীজির একাধিপত্যের দিন শেষ হতে চলল নোটেও। এতদিন ছিল শুধু ভোটে। বিভিন্ন অংকের টাকার নোটে আরও মনীষীর ছবি ছাপা হতে পারে। ২০২০ তেই রিজার্ভ ব্যাংকে ছবি এঁকে নোটের নতুন নকশার নির্দেশ এসেছে। এখন , জাতির জনকের একাধিপত্য নাকচ করার মতো ধার চাই ব্যক্তিত্বের। এবং তা দলীয় রাজনীতির উর্ধে থাকলেই ভাল। সুতরাং ভোটের সময় আমাদের প্রধানমন্ত্রী যাঁর সাজে সেজে বাংলার ভার্চুয়াল জনসভা করতেন সেই রবীন্দ্রনাথের মতো একজনকে চাই। যাঁকে গান্ধীজিও মানতেন। রবীন্দ্রনাথের জায়গায় হতে পারতেন দক্ষিণ ভারতের ঋষিপ্রতিম কবিথিরুভাল্লুভার। ভবিষ্যতে হয়তো তাঁর ছবিও আসব। তবে আপাতত আনা হয়েছে এপিজে আব্দুল কালামের নাম। রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জাতীয় সংগীত, এবং বাংলাসহ ভারতের ভেতরে বাইরে বিরাট জনসমষ্টির ভাবাবেগ জড়িয়ে।  এবং অরাজনৈতিক প্রযুক্তিবিদের পরিচিতিতে যুক্ত হয়ে আছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আইডেনটিটি। দক্ষিণ ভারতের মানুষ হিসেবে আছে বাড়তি ওজন এবং সর্বোপরি ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পরিচয়।  ইতিমধ্যেই যুক্তি দেখান হয়েছে, আমেরিকার ডলারে শুধু ওয়াশিংটনের নয় অনেক প্রাক্তন প্রেসিডেনটেরই ছবি আছে। সুতরাং আমরাই বা কম কীসে  ? এই উপায়ে গান্ধীজির ছবির পাশে কখনও রবি ঠাকুরের কখনও হালফিলের চেনামহলের কালামকে এনে বেশ ব্যালেন্সের খেলায় খেলায় বাজিমাত করার পর টাকার ওপর বহুত্ববাদ কায়েম হলে ধীরে ধীরে আরও সবার টাকার ওপর ছবি হতে বাধা কোথায় ? বিরোধীরা এনিয়ে জোরালো  বিরোধিতার মতো জায়গায় নেই। শুধু তাঁদের মতে, এটা হল শ্যামাপ্রসাদ আর দীনদয়ালের গৎ পর্বে যাওয়ার আগে আলাপ বিস্তার।  রবি ও কালাম । এক বিরোধী নেতা তো ইংরেজি ফ্রেজ আউড়ে গেলেন। ইফ উইন্টার কামস ক্যান স্প্রিং বি ফার বিহাইন্ড ?

Leave a Reply

Your email address will not be published.