NewsSambad MatamatWorld

মেজর নিহত, ওসি হিন্দু, তাই মাঠ গরম


মোহাম্মদ রাশেদ খান

৯ আগষ্ট ২০২০, নিউইয়র্ক।।

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় পুলিশের নগ্নরূপ প্রকাশ পেয়েছে। মিডিয়ার একাংশের বিকৃত চেহারা উন্মোচিত হয়েছে। এরপর সম্ভবত: পুলিশের ওপর তলায় সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের দেখা যাবে। যেহেতু সিন্হা সামরিক বাহিনীর লোক, তাই এ হত্যার বিচার হবে। অপরাধী শাস্তি পাবে। সেনাপ্রধান-পুলিশ প্রধান তাই কথা বলছেন।

অকুস্থল টেকনাফ। সেখানে সোনার খনি আছে। ভাগ্যবানরা টেকনাফের ওসি হ’ন। তবে এরা সবাই মহৎ তা বলা যাবেনা। মাদক ব্যবসা সেখানে জমজমাট। ওসি প্রদীপ দাশের ভাগ্য খারাপ, তিনি খুনের দায়ে অভিযুক্ত। দেশে বিনা বিচারে মানুষ হত্যা নুতন কিছু নয়? সমস্যা হলো, এবার মরেছেন একজন মেজর। ওসি হিন্দু! তাই মাঠ গরম। 

সাবেক মেজর সিনহাকে গাড়ি থামিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটি লজ্জাজনক, নিন্দনীয় ঘটনা। অভিযুক্ত ৯জন। ইন্সপেক্টর লিয়াকত গুলি করেছেন। অন্যরা হচ্ছেন, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই নন্দলাল রক্ষিত, এসআই টুটুল, এএসআই লিটন মিয়া, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও কনস্টেবল মোহান্মদ মোস্তফা। 

অভিযুক্ত মানেই দণ্ডিত অপরাধী নন, এদের কেউ কেউ নিরপরাধ হতে পারেন, আবার নাও পারেন। কিছু মিডিয়া ও সামাজিক মাধ্যম অভিযুক্তদের ফাঁসি দিয়ে দিচ্ছেন। এদের সবচেয়ে বেশি রাগ ওসি প্রদীপ দাশের ওপর! কেন? টিভিতে শুধু ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, তাও খুনি প্রদীপ? ঢাকার দৈনিক কাগজ, টিভি, অনলাইন মিডিয়া’র রিপোর্ট প্রপাগান্ডার মত!  

প্রদীপ দাশ দোষী বা নির্দোষ হতে পারেন। তাঁকে বিচারের আগেই ফাঁসি দিয়ে দেয়া হচ্ছে। ভালো অফিসার বলে তাঁকে নাকি মাদক নির্মূলের জন্যে টেকনাফ পাঠানো হয়েছিলো। এবার হয়তো তিনি নিজেই নির্মূল হয়ে যাবেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলের ‘কালো বিড়াল’ ধরতে গিয়ে নিজেই ‘কালো বিড়াল’ হয়ে গিয়েছিলেন? নিম ভৌমিক কলঙ্কিত হয়েছেন!  

শুনছি, প্রদীপ দাশ ভারতীয় নাগরিক। তাঁর ভারতীয় পাসপোর্ট আবিষ্কার হয়ে গেছে? তিনি র’এর এজেন্ট। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর নাকি তিনি ও তার পরিবার ভারত থেকে এসেছেন। চমৎকার স্টোরী! মিডিয়ার সাম্প্রদায়িক রিপোর্ট এসব স্টোরির জন্ম দেয়! আগে শুনেছি, মাফিয়া গ্রূপ প্রদীপ দাশকে টেকনাফ থেকে সরাতে চাচ্ছে। এবার তাঁরা হয়তো প্রদীপ দাশকে দুনিয়া থেকেই সরিয়ে দিতে পারবেন। 

প্রদীপ দাশ কি ষড়যন্ত্রের শিকার? এসি আকরামের কথা মানুষ কি ভুলে গেছে? সেই সাহসী অফিসারকে রুবেল হত্যার দায় নিতে হয়েছিলো। রটনা ছিলো প্রদীপ দাশ ভারতে পালিয়ে গেছেন। যেতেই পারেন, অনেক অপরাধী যায়! কিন্তু না, তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন, হয়তো তাঁর মনের জোর আছে! ধর্মান্ধ গোষ্ঠী ইস্কনের নাম টানতে চাইছেন? ইস্কন শান্তি বিলায়, আল-কায়দা না? 

প্রশ্ন হলো, হিন্দু হলেই সাম্প্রদায়িক রং দিতে হবে কেন? কারা যেন বলেন, ‘সন্ত্রাসীর কোন ধর্ম নেই’? তাই যদি হয়, হিন্দু হলেই ধর্ম টেনে আনছেন কেন? অপপ্রচার যখন শুরু হয়, তখন কাঁদা সবার গায়েই লাগে! এখন শুনছি মেজর সিনহা’র নাকি রোহিঙ্গা জঙ্গী গ্রূপের সাথে সম্পর্ক ছিলো। প্রশ্ন উঠছে, সেনাবাহিনী থেকে তিনি বরখাস্ত হয়েছিলেন কেন? 

আমরা কিছু জানিনা। তদন্তে হয়তো বের হবে। তবে মেজর সিনহা’র এ মৃত্যু কাম্য নয়। সিনহা’র খুনি যেই হোক, খুনির পরিচয় শুধু খুনি। খুনিকে খুনি হিসাবে দেখা উচিত, তাঁর ধর্মীয় পরিচয় নয়? দেশে মানুষ এখন চোরকে চোর হিসাবে দেখেনা, দেখে ধর্মীয় ভিত্তিতে বা বড়লোক বা নেতা হিসাবে! তাইতো, সবাই বিচার পায়না। 

প্রদীপ দাশের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ, তিনি ক্রসফায়ারে অনেক হত্যা করেছেন। ক্রসফায়ার দেশে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। মাদক ব্যবসায়ীদের ক্রসফায়ারে দেয়ার জন্যে দেশবাসী দাবি তুলেছিলো বটে? শুধু প্রদীপ দাশ কেন, এ অপরাধে হয়তো আরো অনেকে অপরাধী। প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রসফায়ারের নির্দেশ কি ওসি দেন? ক্রসফায়ার একটি জংলী, অসভ্য ব্যবস্থা। ‘ক্রসফায়ার’ বন্ধ হোক, এ দাবিটি ওঠা আবশ্যক। বাংলাদেশের মানুষ অদ্ভুত জীব। এরা ক্রসফায়ার বন্ধ চায়না, কিন্তু কেউ নিহত হলে কান্নাকাটি করে। দাবি তুলে মাদক ব্যবসায়ী, দুর্নীতিবাজদের ক্রসফায়ারে দিতে? আবার যিনি ক্রসফায়ার করেন তাঁর বিচার চায়! সত্যি সেল্যুকাস! এঁরা খুনির ধর্ম খুঁজে; নিজের ধর্মের হলে ‘সাত খুন মাফ’ অন্য ধর্ম হলে ‘ঝুলিয়ে দাও’!! ধর্মান্ধতা একেই বলে? সরকার ধর্মান্ধদের সাথে ‘কোলাকুলি’ করলে এটাই স্বাভাবিক!


Leave a Reply

Your email address will not be published.