সাংবাদিকদের সুরক্ষা আইন দ্রুত রূপায়ণের দাবিতে আন্দোলন
অরুণ কুমার
সারা দেশ জুড়ে সাম্প্রতিককালে সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ নির্যাতন এবং মিথ্যা মামলার অভিযোগে অভিযুক্ত করে দিনের পর দিন অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে এর পরিপ্রেক্ষিতে তীব্র অসন্তোষ প্রতিফলিত হয়েছে সম্প্রতি নতুন দিল্লিতে আয়োজিত সর্বভারতীয় মিডিয়া কনফারেন্সে। নতুন দিল্লির প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়াতে আয়োজিত ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ স্মল নিউজ পেপারস সহ প্রায় 12 টি মিডিয়া সংগঠন মিলিত হয়ে যৌথভাবে এই আশঙ্কা প্রকাশ করে দাবী করেছে দ্রুত দেশে সাংবাদিকদের জন্য পৃথক সুরক্ষা আইন, মিডিয়া কাউন্সিল এবং ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মাধ্যমে দ্রুত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ওঠা যে কোনো অভিযোগের নিষ্পত্তি করার পাশাপাশি সাংবাদিকদের পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, চিকিৎসা পরিষেবা,পেনশন আবাসস্থল যাতায়াত ও ব্যবস্থার নিশ্চিত করতে হবে।
সম্প্রতি ২১-২২ সেপ্টেম্বর নতুন দিল্লির প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়ার হল ঘরে আয়োজিত সর্বভারতীয় সম্মেলনে সমবেত হয়েছিলেন সারা দেশ থেকে প্রায় দেড় শতাধিক সাংবাদিকবৃন্দ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা। সারা দেশ জুড়ে বাড়ছে সাংবাদিকদের ওপর রাজনৈতিক প্রশাসনিক ও দুষ্কৃতিদের হস্তক্ষেপ এবং আক্রমণ যার ফলে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ কর্তৃত্ব ভাগ মাধ্যম কথিত সংবাদ মাধ্যম তা অধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে দিনের পর দিন। এ বিষয়ে দুশ্চিন্তা ও আশঙ্কা ব্যক্তকর হোসেন সারাদেশ থেকে ২৫ টি রাজ্য প্রতিনিধিরা সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের অধিবেশনে ধ্বনিত হল একে একে। দাবি উঠলো সাংবাদিক তা পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তাদের আইনগত সুরক্ষা। পতাকা সুরক্ষা আইন, সরোয়ার খেতে মিডিয়া কাউন্সিল, সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত যারা রয়েছেন তাদের সব ধরনের পেশাগত সুরক্ষা প্রদানের জন্য আন্দোলন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় পত্রকার মহাসংঘ বা কনফিডারেশন গঠন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাংবাদিক তার সঙ্গে যুক্ত সংগঠনগুলিকে এক ছাত্রই নিয়ে আসার প্রয়াস আরম্ভ হয়েছে বলে যৌথভাবে জানিয়েছেন পবিত্র মোহন সামন্ত রায়এবং কমল ঝুনঝুনওয়ালা অরুণ গোয়েল, শিবু খান সহ পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিনিধি তো করেন অরুন কুমার। তিনি সমবেত সর্বভারতীর সম্মেলনে প্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে কিছু তথ্য সহ প্রস্তাব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ভারতের মতো একটি গণতান্ত্রিক দেশে, প্রেস বা মিডিয়া জনগণের কণ্ঠস্বরকে প্রসারিত করতে এবং সরকারী কর্মকাণ্ডের উপর আলোকপাত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে, একটি গুরুত্বপূর্ণ নজরদারি হিসাবে কাজ করে , সরকারের কাজগুলি যাচাই করার এবং যে কোনও অনুভূত অন্যায় বা ত্রুটিগুলির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্ব প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স ভারতের জন্য একটি উদ্বেগজনক চিত্র উপস্থাপন করে তিনি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, সম্প্রতি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্স- এ ভারতের র্যাঙ্কিং 180-এর মধ্যে 159 তম , বিশেষ করে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র হিসাবে এর অবস্থান বিবেচনা করে উদ্বেগজনক। যদিও পদমর্যাদায় সামান্য উন্নতি হয়েছে, এটি অগ্রগতির কারণে নয় বরং অন্যান্য দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হ্রাসের কারণে। এ বিষয়ে আমাদেরকে আরো যত্ন নিতে হবে-এই কথাগুলি বলার সাথে সাথে তিনি দাবি রাখেন সারাদেশে বিভিন্ন স্থানে মিডিয়া সচেতনতা অভিযান নতুন প্রজন্মের মধ্যে সঞ্চরনের পাশাপাশি মিডিয়া হেল্পলাইন ও প্রশিক্ষণ কর্মকাণ্ড আরম্ভ করার কথা বলেন। ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ স্মল এন্ড মিডিয়াম নিউজ পেপার এর প্রতিষ্ঠাতা পুষ্পা পান্ডিয়া নির্দেশনা এবং আহবানে একত্র হয়েছিলেন সারাদেশের প্রায় দেড় শতাধিক সাংবাদিকবৃন্দ। তারাও তাদের বক্তব্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর জোর দিয়ে সেগুলিকে আরো সুরক্ষিত রাখার জন্য সরকারের কাছে নির্দিষ্টভাবে দাবি রাখার পক্ষে বক্তব্য রাখেন।
ন্যাশনাল চীফ কো-অর্ডিনেটর ডঃ পবিত্র মোহন সামন্ত রায়, কো-অর্ডিনেটর শিবু খান সহ বিশিষ্ট সাংবাদিক অরুণ গোয়েল, কমল ওয়ালা ঝুনঝুনওয়ালা,মনজু সুরানা , ওয়াই কে নারায়ণ পুরকার সহ আরো অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুারম্ভে উপস্থিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সংসদ জগন্নাথ সরকার ওড়িশা থেকে প্রদীপ পুরোহিত, সুপ্রিম কোর্টের অধিবক্তা মাইথুনে নেদুমপুরা, সাংবাদিক বিবেক শুক্লা, অর্থনীতিবিদ লেখক অধ্যাপক বিকে সাহু, সহ আরো অনেকে। এই অধিবেশনে প্রাক্তন বিচারপতি সাংসদ অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়েরও আসার কথা ছিল কিন্তু অন্যত্র ব্যস্ত তার কারনে তিনি হাজির হতে পারেননি। অধিবেশন শেষে ন্যাশনাল চীফ কো-অর্ডিনেটর ডঃ পবিত্র মোহন সামন্ত রায় জানিয়েছেন, সারাদেশে বিভিন্ন গ্রাম সংসদ পঞ্চায়েত ব্লক মহকুমা থেকে জেলার স্তর পর্যন্ত যে সমস্ত সাংবাদিকরা ছড়িয়ে-ছিটে আছেন তাদের জন্য পৃথক রেজিস্টেশন তালিকা তৈরি করার দাবীর সঙ্গে মিডিয়া কাউন্সিল, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রভৃতি দাবি তে সরকারের বিভিন্ন প্রতিনিধিদের কাছে স্মারকলিপিও পাঠানো হয়েছে।
মিডিয়া কনফারেন্স এর শেষ দিনে মঞ্জু সুরানা ও শিবু খানের যৌথ নেতৃত্বে প্রেসক্লাব অফ ইন্ডিয়া থেকে শাস্ত্রী ভবন পর্যন্ত ক্যান্ডেল প্রতিবাদ মিছিল বের করা হয় যা করোনা পরবর্তী সময়ে যে সমস্ত সাংবাদিকরা প্রয়াত হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি সাংবাদিক সুরক্ষা আইন, মিডিয়া কাউন্সিল গঠন ও ডিজিটাল মিডিয়ার জন্য দ্রুত আইন রূপায়ণের দাবিতে । যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা দেড় শতাধিক সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন।