সারা দেশে বিজেপি তাড়াও, কৃষক বাঁচাও প্রচার শুরু সিংঘুর আন্দোলন মঞ্চের

একালের ইন্দ্রপ্রস্থের শাসনের সামনে সিংঘু সীমান্ত এক নয়া কুরুক্ষেত্র হয়ে উঠেছে বিগত চারমাসে। কৃষকের ডাকা নতুন ধর্মযুদ্ধ অভূতপূর্ব এক সম্মুখ সমর। সর্বোচ্চ ক্ষমতার সুউচ্চ শিখরের চোখে চোখ রেখে এই করোনা কবলিত অস্বাভাবিক সময়েও কৃষকরা যে নতুন আইডেনটিটির জন্ম দিয়েছেন তাতে শাসকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচী ছাড়াই রাজ্যে রাজ্যে “নো ভোট টু বিজেপি” স্লোগান দিয়ে টিকায়েত বা রাজবালের মতো কৃষক নেতারা বলছেন, এটা কোনও রাজনৈতিক দলের কর্মসূচির বা রাজনীতির বিষয় নয়। “একতরফাভাবে” তৈরি কেন্দ্রীয় তিন কৃষি আইন কৃষকের মৃত্যু পরোয়ানা। বিজেপি সরকারে থাকলে কৃষকের সর্বনাশ। তাই “বিজেপি তাড়াও , কৃষক বাঁচাও।” এটা কৃষকের বাঁচা মরার প্রশ্ন।
নয়া মহাভারতের নয়নের মণি হয়ে উঠেছেন আন্দোলনের প্রতীক আম কৃষিজীবী। কোনও একটি সংগঠন বা কোনও একক নেতা স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় ও ব্যাপক এই কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন না। মোট ৫০০টি ছোট বড় মাঝারি কৃষক সংগঠন এই আন্দোলনের সংঘবদ্ধ সারথী। সারাদেশে সর্বত্র ছড়িয়ে আছে এই আন্দোলনের বীজ আর রসদ আম জনতার মধ্যে। স্বাধীনতার সময় যেভাবে গান্ধীজীর ডাকে অহিংস আন্দোলনের জোয়ার এসেছিল তার মতোই চরিত্র এই অহিংস আন্দোলনের। সারা ভারত কিষাণ সভার সাধারণ সম্পাদক ও সিপিএম পলিটব্যুরোর প্রবীণ নেতা হান্নান মোল্লার কথায়, এই অভূতপূর্ব আন্দোলন অহিংস থাকলেই মোদি সরকারকে ঝুঁকতে হবে তিন কালাকানুন প্রত্যাহারের দাবির সামনে। আর আমরা যদি হিংসক আন্দোলনের পথে যাই তাহলে শাসক এক নিমেষে সর্বশক্তি দিয়ে তাকে পিষে দেবে। এই সত্যকে গ্রহণ করেই কৃষকরা এই চারমাসে সর্বোচ্চ সংযম দেখিয়েছেন। গাছের একটা পাতা পর্যন্ত ছেঁড়েননি।
মোল্লা এই আন্দোলনের পাঁচটি অভূতপূর্ব দিক তুলে ধরে বলেন, এই আন্দোলনকে ও কৃষকদের খাটো করে সরকার চরম ভুল করেছে। আজ হোক বা কাল, সরকারকে এই দাবির সামনে মাথা নোয়াতেই হবে। প্রধানমন্ত্রীর মতে কৃষকরা যদি “আন্দোলনজীবী” হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীকে বলব, তিনি “কর্পোরেটজীবী। হান্নান বলেন, পাঁচটি অভূতপূর্ব ফিচার হল, ১) এই আন্দোলন স্বাধীন ভারতে বৃহত্তম কৃষক আন্দোলন। ২) তেভাগা তেলেঙ্গানার মতো আঞ্চলিক নয়। সর্বভারতীয়। ৩) ৫০০ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ একসঙ্গে বসে চারমাস ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। এক মুহূর্তের জন্যও এই বিপুল সংখ্যক সংগঠনের মধ্যে কোনও মতভেদ হয়নি। ৪) এতবড় অহিংস কৃষক আন্দোলন ভারতে তো বটেই, সারা বিশ্বে কখনও হয়নি। এবং ৫) এই আন্দোলন এই প্রথম জাত পাত ধর্মের বা অঞ্চলের সব বিভেদ ভেঙে দিয়েছে। যে মজঃফরনগরে জাঠ ও মুসলিম রা একে অপরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরছিল, তারা আজ এক হয়ে বলছে আমরা ভুল করেছিলাম। পঞ্জাব-হরিয়ানার চিরন্তন বিবাদের সমাধান করে দিয়েছে এই আন্দোলন। এখন পঞ্জাবের কথায় হরিয়ানার কৃষক মুখ্যমন্ত্রীকে বিমান থেকে নামতে দিচ্ছেনা। এই আন্দোলনের মঞ্চ এক নতুন আইডেনটিটির জন্ম দিয়েছে। তা হল কিষাণ। সমস্ত বিভাজনের বীজকে নস্যাৎ করে সৃষ্টি হয়েছে গণতান্ত্রিক ধর্ম নিরপেক্ষ সত্তার। এই আন্দোলনই আগামী দিনে সর্বভারতীয় সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চের রূপরেখা।
সারা দেশের ২৯রাজ্যে ঘুরে ঘুরে কৃষক নেতারা কালাকানুন প্রত্যাহারের দাবি ও বিজেপি সরকারের একরোখা আচরণের জন্য তাদের ক্ষমতা থেকে সরানোর আপিল করছেন। এবং শুধু বিজেপি নয়, কর্পোরেট বিরোধীও বটে। কারণ, কর্পোরেটের কথা মতোই সরকার বিল এনেছে। ১১টি বৈঠকেও কৃষকদের সমস্যা মেটাতে পারেনি সরকার। পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচনী প্রচারের মধ্যেই কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা করতে এগিয়ে আসছেন সিংঘু আন্দোলনের নেতারা। সিঙ্গুরে প্রচারে গিয়েও কৃষক সংগঠনের নেতা হান্নান মোল্লার মতো প্রবীণ নেতা তুলে ধরছেন কৃষকদের এই আন্দোলনের অবশ্যম্ভাবী সাফল্যের কথা। বলছেন, “মাটি কামড়ে পড়ে আছে কৃষক। ৩০১জনের মৃত্যুর ঘটনাও এই সরকারের ঘুম ভাঙাতে পারেনি। উল্টে, আন্দোলন ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করছে। যা কোনওদিনই সফল হবেনা। হিটলার মুসোলিনীর ছায়া,আর কায়া আরএসএস যাদের আত্মা, তাদের কাছে আন্দোলনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছাড়া আ, কীই বা আশা করা যায় ? “