GeneralIndiaNewsSambad Matamat

শাসনের শাসানি, উচ্চমেধার আর্তস্বর যাদবপুরে ছাত্রমেধে রাজনীতির “ইন্ট্রো”

দেবারুণ রায়

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নভঙ্গের কোর্স এই মুখ উজ্জ্বল করা শিক্ষা অঙ্গনের ইন্ট্রো হয়ে গেল। আর্তস্বর শোনা যাচ্ছে গর্ব করার মতো ঐশ্বর্যশালী অধ্যাপক আর ছাত্রছাত্রীদের। স্বপ্নের দীপ জ্বেলে ওঠার আগেই নিভে গেল।  এমন এক মর্মপীড়নের মৃত্যু, যাকে পরিকল্পিত খুন বলেই জোরালো অভিযোগে উত্তাল কলকাতা। সতের বছর এগার মাসের একটা বাচ্চা ছেলে, যে বাবা মায়ের স্বপ্নের দীপ হয়ে এসেছিল যাদবপুরে বাংলা পড়তে। পড়া তো অনেক দূরের পথ। ওকে বাঁচার পথটুকুও চিনতে দেওয়া হল না। ওর বাবা অপঘাতে মৃত সন্তানের জন্য তে রাত্তিরের তথাকথিত “অশৌচ” পালন করে ধর্মীয় আচারে পিণ্ডদান ও শ্রাদ্ধ সেরে উঠে বললেন, আর কাউকে যেন ছেলের শ্রাদ্ধ করতে না হয়, সেটা অন্তত সুনিশ্চিত করুন। সরকারের কাছে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে, সবার কাছে এটাই আমার আবেদন। যারা ফোন করেছেন সবার কাছে এটাই বলেছি। বুক ফাটা আর্তনাদ করে পুত্রহারা মানুষটা বলেছেন, আমি তো আমার ছেলেকে আর কখনও ফিরে পাব না। তাই, আর কোনও বাবা মাকে যেন আমাদের মতো দিন দেখতে না হয় সেটা তো সরকার এবং কর্তারা সুনিশ্চিত করতে পারেন। এজন্য যারা আমার ছেলেকে ওপর থেকে ছুড়ে ফেলল, তাদের সবচেয়ে কঠিন সাজা হোক। নির্দোষ কারও গায়ে যেন আঁচ না লাগে। কিন্তু দোষীরা যেন পার না পায়। 

নিহত ছেলেটি নাবালক। এবং যাদবপুরের অন্দর বাহির নানা মহল থেকে অভিযোগ, যৌন নিগ্রহ, ভীতি প্রদর্শন ও শারীরিক মানসিক অত্যাচার, হেনস্তার পর ধাক্কা মেরে বা ছুঁড়ে নীচে ফেলে দেওয়া হয়েছে। এজন্য, প্রথমেই পসকো আইন অনুযায়ী খুনের বা উপযুক্ত ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা। সেই মতো আসামীদের পরিকল্পিত অপরাধের বিচার দ্রুত ‘খুনী’দের কঠোরতম সাজার পথে এফ আই আর কী দাঁড়াল, প্রাথমিক তদন্তের আলো অপরাধের ধোঁয়াশা ফুঁড়ে অপরাধীর মুখে পড়ল কিনা, তা স্পষ্ট নয়। পসকো প্রয়োগের জন্য আদালতের কাছে পুলিশ আপিল করবে বলে জানিয়েছে। কারণ, প্রাথমিক ডায়রিতে নিহত ছাত্রটিকে নাবালক হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি বলে জানানো হচ্ছে। 

অভিযোগের তিরে সরাসরি বিদ্ধ তিন ছাত্রকে গ্রেপ্তার করে আদালতের নির্দেশে হেফাজতে নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। এরমধ্যে, সৌরভ চৌধুরি নামের পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি গাঁয়ের ছেলে সবচেয়ে সিনিয়র। হস্টেলের বস বলেই চিহ্নিত এই সৌরভের নাম নিহত নাবালকের বাবাই পুলিশকে বলেন। আরও যে দুজনের নাম তিনি বলেন, তারাও এখন ফাটকে। দীপশেখর দত্ত ও মনোতোষ ঘোষ। এরাও গ্রাম বাংলার ছেলে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারির অভিযোগ, সৌরভ চৌধুরি তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। যদিও তৃণমূল একথা অস্বীকার করে বলেছে, সরকারিভাবে তারা একথার জবাবই দিচ্ছেন না। বলছেন, তদন্তেই সত্য সামনে আসবে। তখন প্রমাণিত হবে শুভেন্দু ভিত্তিহীন কথা বলছেন। 

দেখা যাচ্ছে তদন্তের প্রক্রিয়ার পাশাপাশিই চলছে রাজনীতি। মুখ্যমন্ত্রীর পরশু সন্ধ্যার বেহালার সভায় বলা কথাগুলোই রাজনীতিতে ভাইরাল হয়ে গেছে। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে শানানো যাবতীয় জোরালো অভিযোগের পাশা উল্টে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কাঠগড়ায় তুলেছেন সিপিএমকে। বিজেপির বিরুদ্ধে তেমন কোনও তির না ছুঁড়ে তিনি তুলে দিয়েছেন মাদুলি ইস্যু। ফলে বিজেপিকে বোকা বানিয়ে তাদের ইস্যু হাতে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অফেন্সিভ হল, নিহত ছেলেটার হাতে একটা মাদুলি ছিল। কিন্তু ওকে মাদুলি খুলতে চাপ দেওয়া হয়। তাতে ছেলেটি আপত্ত জানায়। বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, নির্দিষ্ট কারণেই তিনি ধর্মীয় অ্যাঙ্গেল এনে মামলার মোড় অন্যদিকে ঘোরালেন। যাতে শাসকদলের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো ধামা চাপা পড়ে এবং বামেদের বিরুদ্ধে ঘুরে যায় অভিযোগের বর্ষামুখটি। মুখ্যমন্ত্রীর বলা কথায় আরও যা বিষয় রয়েছে, সেসব অবশ্য তৃণমূলের ছাত্র সংগঠনের ও পুলিশ প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায় : আমি সব জায়গায় গেলেও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনও যাই না। শুধু পড়াশোনায় ভাল হলেই হয় না। মানবিক হতে হয়। একথার জবাব দিলেন কংগ্রেস নেতা ও আইনজ্ঞ অরুণাভ ঘোষ। তাঁর কথায়, পড়াশোনায় ভাল না হলে তো চান্সই পাওয়া যায় না। তাছাড়া, দু তিনটে ছেলের জন্য গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে দায়ী করা যায় না। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী যাদবপুরের জনপ্রতিনিধি ছিলেন।তিনি বলেন, উনি তদন্ত চলাকালীন তদন্তকেই প্রভাবিত করতে এসব বলছেন। কারণ অপরাধীদের চিহ্নিত করে সঠিক রাস্তায় অভিযোগ সাব্যস্ত হলে উনি মুশকিলে পড়বেন। ওখানে এমন সব লোকের কুকীর্তির প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। সিপিএমের স্থানীয় সংগঠনের  পক্ষ থেকে ভিডিও প্রচার চলছে। একটিতে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, “যাদবপুরের যাদের আপনি সিপিএম বলছেন, তারা যে নন্দীগ্রামে মাওবাদী কিষেণজীর সঙ্গে তৃণমূলের যোগাযোগের সেতুবন্ধন ছিল, সেকথা লুকোতে চাইছেন ? পার্থ চ্যাটার্জিকে দিয়ে যাদবপুরের দুতরফের লিংক ম্যানদের নিয়ে কীভাবে ছত্রধরকে টানা হল ভুলে গেলেন ? বলব নাকি যাদবপুরের সেইসব অতিবামদের নামগুলো ? এখন তো ওদেরকেই বাঁচাতে সিপিএমকে জুড়তে চান, তাই না ? কাকে বাঁচাতে চান ? সবাই জানে যাদবপুরে অতিবামদের রুখতে সিপিএমকে কী করতে হয়েছে। তাই তো সঠিক তদন্তের মুখ ঘোরাতে চাইছেন। তাই তো ? ” উল্লেখ্য, কালেক্টিভ , ডব্লু টি আই, ফ্যাস এর মতো অতিবাম সংগঠনগুলোর তরফেও ভিডিও প্রচার চলছে। এই প্রচারে অবশ্য সামিল বা মধ্যস্থ হয়েছে মিডিয়ার শাসক ঘনিষ্ঠরা। তাদের সাংবাদিকরাই হাসান নামে এক ‘প্রত্যক্ষদর্শী’ হওয়ার দাবিদার  প্রাক্তনীর সাক্ষাতকার নিয়েছে। যিনি অভিযুক্ত সিনিয়রদের অত্যন্ত ভাল ও জুনিয়র দরদী বলে তুলে ধরছেন। কার্যত নিহত ছাত্রের বাবার মূল অভিযোগ খারিজ করে হস্টেলবাসী প্রাক্তন পড়ুয়ার দাবি , তিনি ওই ‘রাগান্বিত’ ছাত্রটিকে বারান্দা থেকে নীচে ঝাঁপ দিতে দেখেছেন। এবং দাবি, তিনি ও অন্য সিনিয়ররা সবাই ছেলেটিকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। এদিকে এখনও সিনিয়রদের কবলে থাকা হস্টেলে রুদ্ধদ্বার জিবি মিটিং হয়েই চলেছে। তদন্ত গুলিয়ে দিতে , ধৃতদের বেকসুর খালাস করতে নানা যুক্তিজ্বাল বোনা হচ্ছে। শাসকদল যাদবপুরের অতিবামদের  সঙ্গে দীর্ঘ যোগাযোগের অভিযোগ ও নানা ঘটনার উদাহরণ নস্যাৎ করতে মরিয়া। আইনি মতে যা করণীয় করা হচ্ছে । এবং মাওবাদীদের মার্ক্সবাদী বলে চিহ্নিত করে সিপিএমের দিকে আঙুল তুলে মুখ্যমন্ত্রী প্রমাণ করেছেন, বাংলায় কোনও ইন্ডিয়া জোট নেই।  

সাধারণ বাম মনস্ক ছাত্রদের মধ্যে শাসক ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে ও কালেক্টিভ ডব্লুটিআইয়ের মতো ‘স্বাধীন’ সংগঠনের সঙ্গে যাদের সম্পর্ক নেই তারা একটি ভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া গোষ্ঠীর মাধ্যমে রাগিংয়ের বিরূদ্ধে প্রচারে নেমেছে। তাদের ওয়ালে এই নিম্নোক্ত বয়ান সত্যসন্ধানী চোখ খুলে দেওয়ার মতো। 

“পুলিশি জেরায় গ্রেফতার হওয়া দীপশেখর স্বীকার করেছে যে স্বপ্নদীপের ডায়রিতে লেখা চিঠিটা আসলে ভুয়ো, দীপশেখরই লিখেছে সেটা। কী ছিল সেই চিঠিতে? ডিন অফ স্টুডেন্টসের উদ্দেশ্যে লেখা সেই চিঠিতে ছিল যে বাংলা বিভাগের সিনিয়র রুদ্র স্বপ্নদীপকে ভয় দেখিয়েছিল হোস্টেলে থাকা সম্পর্কে। বলেছিল সেখানে মারাত্মক র‍্যাগিং হয়, গাঁজা খাওয়া হয়, ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার ভয় দেখানো হয়। চিঠির উদ্দেশ্য ছিল এটা প্রমাণ করা যে স্বপ্নদীপ আসলে রুদ্রর কথায় ভয় পেয়ে গিয়ে, প্যারানয়ার শিকার হয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। এই রুদ্র কে? বাংলা বিভাগের এসএফআইয়ের ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ। চিঠিটা লেখা হয়েছে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর পরই। যারা এত অবধি পড়েছেন তাঁদের অনুরোধ করব যে একবার ঠান্ডা মাথায় একটু ভেবে দেখুন। যারা এই কাজটা করেছে তারা স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে বিহ্বল নয়, ভয়ার্ত নয়, বিবেকের তাড়নায় পাগল হয়ে যায়নি, বরং ঠান্ডা মাথায় মিথ্যে চিঠি লিখেছে। তবুও…… তবুও  চিঠিটা যদি শুধু  নিজেকে বাঁচাতে লেখা হত সেটার একটা ব্যাখ্যা থাকতো, যে ঘটনার আকস্মিকতা এবং ভয়াবহতা দেখে নিজেকে বাঁচাতে লিখেছে। কিন্তু সেটা নয়। চিঠিতে একটা মিথ্যে গল্প তৈরি করা হয়েছে  একজন ছাত্রের বিরুদ্ধে, তাকে ফাঁসাতে। মানে একজন সহপাঠীর মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এই চিঠি যারা লিখেছে তাদের মাথায় শুধু এটুকু চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে যে কী ভাবে মিথ্যে বলে বিরোধী মতাদর্শের কাউকে ফাঁসিয়ে দেব, এক ঢিলে দুই পাখি মারব।

ফের আরেক বার পড়ে দেখুন শেষ লাইনটা।”

“এটা শুধুই ক্রিমিনাল মাইন্ডসেটের প্রমাণ নয়, এটা সাইকোপ্যাথির প্রমাণ। আমি ভুল হলে মনস্তত্ববিদ কেউ আমার ভুল শুধরে দেবেন। আমি মনে করি না দীপশেখর নিজের বুদ্ধিতে এই কাজ করেছে। সে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র, নিজেই বলেছে পুলিশকে যে সে নিজেও গত বছর  র‍্যাগিঙের শিকার হয়ে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। এর পেছনে বড় মাথা আছে, কোনো এক বা একাধিক মানুষের মুখোশ পরে থাকা দানবের মাথা আছে। তারা কারা সেটা খুঁজে বের করতে হবে, কারা স্বপ্নদীপের মৃত্যুর পর হোস্টেলে জিবি ডেকে সবার মুখ বন্ধ রাখতে বলেছিল? কারা প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করেছিল? কারা আরো ৭ জন ফ্রেশার্সকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে বন্ধ করে রাখার নির্দেশ দিয়েছিল যাতে তারা মুখ না খোলে? এগুলো যারা করেছে তারা মানুষ নয়, তারা দানব। আজকেও অরবিন্দ ভবনে স্বপ্নদীপের মৃত্যুর ধিক্কার জানিয়ে জিবি ছিল, সেখানে WTI কে দোষ দেওয়ার জন্য এসএফআইয়ের বিজ্ঞান বিভাগের সম্পাদক শুভমকে মেরে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়েছে WTI এর ছাত্ররা। অথচ স্বপ্নদীপের মৃত্যুতে মূল অভিযুক্ত সৌরভ কিন্তু WTI এর নেতা। বোঝা যাচ্ছে তো যে কী ভাবে যাদবপুরের “স্বাধীন” ছাত্র সংগঠনগুলো তাদের সাইকোপ্যাথ নেতাদের আড়াল করতে মরিয়া? 

পরিশেষে, আরো একটি বিষয়ে বলা দরকার। মমতা বন্ধপাধ্যায় সুনির্দিষ্ট ভাবে স্বপ্নদীপের মাদুলি নিয়ে মন্তব্য করেছেন। তাকে নাকি মাদুলি খুলে ফেলবার জন্য জোরাজুরি করা হয়েছিল। মাদুলি খুলবার জন্য জোরাজুরি করতে শরীরে সিগারেটের  ছ্যাঁকা বা বেল্টের দাগ দিতে হয় বলে মনে হয় না। কাউকে জামা কাপড় খুলিয়ে উলঙ্গও করতে হয় না। যেটুকু ক্যাম্পাস মারফত জানা যাচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে যে স্বপ্নদীপের বিরুদ্ধে এইসব খুনিদের প্রধান অভিযোগ ছিল যে সে সমকামী, তাই জামা কাপড় খুলিয়ে তাকে “পরীক্ষা” দিতে বলা হয়েছিল যে সে সমকামী নয়।” 

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  বলেছেন, “ওখানে কিছু আগমার্কা সিপিএম আছে। তারা ছেলেটার জামাকাপড় পর্যন্ত খুলে নিয়েছে।” আরো বলেছে যে “যারা ছেলেটাকে উপর থেকে ফেলে দিয়েছে তারা মার্ক্সবাদী, এরাই কখনো কংগ্রেস কখনো বিজেপি করে” এবং “ছেলেটাকে মাদুলি খুলতে চাপ দিচ্ছিল এরা, ওটাকে লাল দুর্গ বানিয়ে রেখেছে 

 হয়ত অনেকের মনে থাকবে যে এক দু বছর আগে, নদিয়ার এক ব্লক সভাপতির ছেলে একজন নাবালিকাকে ধর্ষণ (statutory rape) করে গর্ভবতী করে দেওয়ার পর, জোর করে গর্ভপাত করাতে গেলে নাবালিকার মৃত্যু হয়। টিভিতে দেখায় যে  মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই, মঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে জেলার পুলিশের এসপিকে উদ্দেশ্য করে বলছেন “ধর্ষণ বলে লাফাচ্ছে, আমি তো শুনেছি ওদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, কী তাই ? এসপি মাথা নুইয়ে হ্যাঁ বলেন। তারপর সেই ঘটনায় দোষীদের কী শাস্তি হয়েছে জানা নেই। এটাই সমস্যা। সেই জন্যই কিছু কথা বলা দরকার এই মিথ্যের বেসাতি নিয়ে।

প্রথমত, স্বপ্নদীপকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, নাকি অত্যাচার আর অপমান সহ্য না করতে পেরে সে নিজে ঝাঁপ মেরেছে? এখনো অবধি যা জানা গেছে সেই অনুযায়ী অনুমান হলো দ্বিতীয়টা ঘটেছে। তাহলে “সিপিএম ছাদ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে” এটা এলো কোথা থেকে? এগুলো আসলে ধোঁয়াশা তৈরির চেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ে বহুদিন কোনো উপাচার্য নেই, রেজিস্ট্রার চার দিন ধরে নিখোঁজ, অরিজিনাল শিক্ষামন্ত্রী জেলে, তাই নিজেদের দায় এড়াতে সবকিছু গুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। তবে এটা ছোট পয়েন্ট, গুরুত্বপূর্ণ নয়, ফেলে দিক কি নিজে ঝাঁপ দিক আমার কাছে দুটোর ভেতর তেমন তফাৎ নেই। আসা যাক মূল অভিযোগে – মমতা বলেছে যে সিপিএম/মার্ক্সবাদীরা ফেলে দিয়েছে। 

আপাতত তিন জন গ্রেফতার হয়েছে। এই তিনজনের রাজনৈতিক পরিচয় কী? 

প্র: এরা কি সিপিএম বা তার ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের? 

উ: না।

প্র: সিপিএমের ছোট ভাই কোনো দলের? মানে নকশালপন্থী লিবারেশন বা সিপিআই? নিদেনপক্ষে এসইউসিআই?

উ: না।

প্র: তাহলে মাওবাদী?

উ: না।

তাহলে এরা কোন দলের? 

গ্রেফতার হওয়া তিনজনের ভেতর এক জন WTI, আর দুজন FAS। যাদবপুরে ছাত্র রাজনীতিতে যাদের প্রতিপত্তি সবচেয়ে বেশি তারা হলো “কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত নই, আমরা স্বাধীন”  গোষ্ঠীর। 

 তৃণমূলের সাথে যাদবপুরের “স্বাধীন”-দের একটা গভীর যোগ আছে যা এরা চট করে বাইরে বুঝতে দেয় না, প্রকাশ্যে স্বীকার করে না। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব “স্বাধীন” ছাত্র সংগঠনের ভেতরেও একটা “কোর গ্রূপ” আছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা কোর গ্রূপ প্রয়োজন কারণ ছাত্র ছাত্রীরা ক্রমাগত আসে-যায়, অন্যান্য ছাত্র সংগঠনগুলোর ওপর তো একটা রাজনৈতিক দল থাকে যারা কন্টিনুইটি বজায় রাখে, মতাদর্শ বা কাজকর্মের একটা ধারা বজায় রাখে। কিন্তু স্বাধীন ছাত্র সংগঠনের ক্ষেত্রে কী হবে? তাই একটা কোর গ্রূপ তৈরি হয়। আমরা যখন কলেজে পড়ি তখন এই কোর গ্রূপের নাম ছিল “প্রস্তুতি”। সাম্প্রতিক ঘটনার পর এই নামগুলো চর্চায় এসেছে, হয়ত শুনেছেন। এই প্রস্তুতির রাজনৈতিক অবস্থান কী? বাইরের লোকজন জানে না, আমিও জানি না, তবে এরা নিজেদের “প্রগতিশীল” বলে থাকে।  এই প্রস্তুতির নেতা কর্মীদের ২০০৬-এর নির্বাচনে অরূপ বিশ্বাসের হয়ে রাণীকুঠিতে সভা করতে দেখা গেছে। ২০০৯-তে যাদবপুরে কবির সুমনের হয়ে বাড়ি বাড়ি প্যামফলেট বিলি করতে দেখেছেন অনেকে। ২০১১-এর ভোটেতে ফের অরূপ বিশ্বাসের হয়ে পথনাটক করতে দেখা গেছে কয়েক বার। কোনদিনই কিন্তু এরা সরাসরি স্বীকার করেনি যে তারা তৃণমূল। হোক কলরবের সময় এই প্রস্তুতির তৃণমূল যোগ নিয়ে জলঘোলা হয়, অনেকে ছেড়ে যায়। “প্রস্তুতি” কার্যত উঠে যায়। তারপর দেখা যায় যে সেই দাদার বোতলে পুরোনো পিনকনের মতই Collective নাম দিয়ে এরা ফিরে এসেছে। ২০১৬-এর ভোটে এরাই সারদা/নারদা/বিবেকানন্দ রোডের ফ্লাইওভার ভেঙে পড়াকে ভুলিয়ে দিতে সিঙ্গুর আর নন্দীগ্রাম নিয়ে কাঁদুনি পারা শুরু করে ভোটের ঠিক আগে। তবে এদের মোমেন্ট অফ গ্লোরি  একটা  আক্রমণ করা, বৈজ্ঞানিক চেতনাকে আক্রমণ করা।” Pic courtesy: NBT 

Leave a Reply

Your email address will not be published.