BusinessGeneralIndiaNewsSambad Matamat

সবুজ বিনিয়োগের লক্ষ্যে আয়োজিত হল বিশ্ব পর্যটন দিবস 

অরুণ কুমার 

পর্যটন শিল্পে সবুজ বিনিয়োগের লক্ষ্যে
শিলিগুড়িতে আয়োজিত বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে চার দিনব্যাপী বিশ্ব পর্যটন উৎসব।
পর্যটন হলো আর্থসামাজিক বিকাশের অন্যতম সোপান। এ বছরের বিশ্ব পর্যটন দিবসের থিম ছিল গ্রীন ইনভেস্টমেন্ট অর্থাৎ সবুজ বিনিয়োগ। আর এই থিমকে সামনে রেখে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার সিটি সেন্টার প্রাঙ্গনে আয়োজিত হয়ে গেল চার দিনের বিশ্ব পর্যটন উৎসব আয়োজক ছিলেন পর্যটন সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজার্ভেশন এন্ড ট্যুরিজম। যেখানে গ্রীন ইনভেস্টমেন্ট অর্থাৎ সবুজ বিনিয়োগের ভাবনা এই বার্তা কে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে নানান কর্মসূচি নিয়েছিলন তারা।
এই উৎসবে পর্যটন শিল্পের প্রসার এবং প্রতিবেশী দেশ ভুটান, নেপাল, বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিনিধিরা রোগ দিয়েছিল চার দিনব্যাপী পর্যটন উৎসব। প্রতিবেশী দেশগুলোর পর্যটন কেন্দ্রগুলিকে পর্যটকদের সামনে তুলে ধরার পাশাপাশি সেখানে গিয়ে কোথায় থাকবেন এবং কোন কোন জায়গা ঘোরা যেতে পারে সেই সমস্ত বিষয় তুলে ধরা হয়েছিল এখানে।
জানা গিয়েছে,এই অষ্টম বর্ষ উৎসবের সূচনায় এদিন উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন রাজ্যের পাশাপাশি নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের পর্যটন ব্যবসায়ীরা। শুরুর প্রথম দিনই বেশ ভাল সাড়া ছিল  শিলিগুড়ির এই পর্যটন উৎসবে।বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষ্যে অ্যাসোসিয়েশন ফর কনজারভেশন অ্যান্ড টুরিজম (অ্যাক্ট) ছিল এই উৎসবের আয়োজক।
ভ্রমণ অর্থাৎ পর্যটন। একে ঘিরেই ভাবনা আরম্ভ হয়েছে এবছর ইউনাইটেড নেশনস ঘোষণা করেছেন পর্যটন উৎসবের থিম ট্যুরিজম অ্যান্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট। অর্থাৎ বাংলায় বলতে গেলে পর্যটন ভ্রমণ এবং সবুজ বিনিয়োগ। বিষয়টি অত্যন্ত গভীর বিস্তৃত সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশিষ্টদের তালিকায় ছিলেন ভুটানের সাংগে থিনলে, কালিম্পংয়ের সিদ্ধান্ত সুদ, জিটিএ’র দাওয়া শেরপা ছাড়াও শিল্পপতি সঞ্জিত সাহা, আইসিসির সদস্য দিলীপ দুগার প্রমুখ। প্রত্যেকেই পর্যটন নির্ভর উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরেন। তুলে ধরা হয় সম্ভাবনার দিকগুলিও।
আয়োজক সংগঠন অ্যাক্টের তরফে রাজ সুপ্রতিম বসুর মতে, গ্রামীণ পর্যটনকে মূলত ফোকাস করে এবার আমাদের উৎসব আয়োজন করা হয়েছে। তাই উৎসবে নেপাল, বাংলাদেশ ও ভুটানের তরফেও সেখানকার গ্রামীণ নানা সামগ্রী প্রর্দশিত হয়েছে।
রাজ বসুর কথায়, মূলত গ্রামে গঞ্জে যারা বসবাস করেন তাঁদের যে ন্যাচারাল হেরিটেজ এবং কালচারাল হেরিটেজ সেগুলিকে তাঁরা কীভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন, কীভাবে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের রাস্তা তৈরি হতে পারে সেটাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য। তিনি আরও বলেন, চারদিনব্যাপী আমাদের এই উৎসবকে আমরা নানান থিম অনুযায়ী সাজিয়েছি। তার মধ্যে রয়েছে মহিলারা কীভাবে গ্রিন ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত রয়েছে তার ছবি তুলে ধরা। লাল পান্ডা সংরক্ষণের বিষয় সম্পর্কে আলোচনা হবে বলেও তিনি জানান।
এবারের পর্যটন উৎসবে অন্যতম আকর্ষণ ছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ ঘোষিত থিম পর্যটন ও সবুজ বিনিয়োগ এ বিষয়ের উপর আলোচনা চক্র যেখানে বিভিন্ন
পেশার সঙ্গে যুক্ত মানুষ পর্যটন এর ক্ষেত্রে সবুজ বিনিয়োগের বিষয়টি তুলে ধরেন নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে। এই আলোচনা চক্রের সূচনা করেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান ড: শুভ্রজ্যোতি কুন্ডু , অতিথি বক্তা হিসেবে ছিলেন ইন্সপিরিয়া নলেজ ক্যাম্পাসের কলা বিভাগের ডিন ডঃ ফিরোজ মোহম্মদ, সমাজসেবী ফিলানথ্রপিস্ট রবীন্দ্র জৈন, ছিলেন ভুটানের প্রতিনিধি সাঙ্গে থিনলে ,অধ্যাপিকা ড: পম্পি পাল, পার্বত্য ভেষজ বিশেষজ্ঞ শংকর প্রসাদ মন্ডল, সাংবাদিক ববিতা মাডেন, শিক্ষাবিদ সংযুক্তা বসু, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ অমরেন্দ্র পান্ডে প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বক্তারা একে একে সবুজ বিনিয়োগের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন দর্শক শ্রোতাদের সামনে। উত্তর-পূর্ব ভারতসহ এই রাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পর্যটন একটি বড় আর্থ ও সামাজিক উন্নয়নের সোপানরূপে বিরাজ করলেও যতপ্রযুক্ত পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সামঞ্জস্য রক্ষার মাধ্যমে রূপায়ণ প্রয়োজন। সবুজ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখা জরুরি যে এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব কতটা সেই বিনিয়োগ এটা যেমন জরুরী সেই সঙ্গে সবুজায়ন পরিবেশের প্রতি সামাজিক দায়বদ্ধতা মানুষের যোগদান অংশগ্রহণ অত্যন্ত জরুরী বলে অধিকাংশ বক্তা আলোচনা সভায় এই কথাগুলি বলেন।
আলোচনা সভায় বক্তারা
আজকের গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর যুগে পর্যটনকে নানান চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে একথা উল্লেখ করার পাশাপাশি অপরদিকে
প্রকৃতি প্রেমিক ভ্রমণ প্রিয় মানুষ সময় পেলেই
বেরিয়ে পড়ে নানান জায়গায় সবুজ প্রকৃতিকে কাছে থেকে দেখতে। কিন্তু সেই প্রকৃতি ক্রমশ ধ্বংসের মুখোমুখি বিশ্বায়নের উষ্ণতা যেন গ্রাস করেছে প্রকৃতিকে একথাগুলি বলেন।

পর্যটন উৎসব গুলিতে বা যে সমস্ত জায়গায় প্রাকৃতিক বৈচিত্র রয়েছে সেই বৈচিত্র গুলোকে ফুটিয়ে তোলার ক্ষেত্রে পর্যটকদের আকর্ষণ করার ক্ষেত্রে নৃত্য ও সঙ্গীত মূলক অনুষ্ঠান আরো বেশি করে হওয়া প্রয়োজন এবং এক্ষেত্রেও বিনিয়োগ হওয়া প্রয়োজন যাতে এগুলো প্রদর্শিত হতে পারে যুক্ত হতে পারে ওড়িশার কোনারক কিংবা রাজস্থানের রন উৎসবের মত। অন্যান্য বক্তারাও
উত্তরের বন জঙ্গল ঘেরা এলাকায় যে সমস্ত আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে তাদের সংগীত ও নৃত্য প্রকৃতি নির্ভর। এই শিল্প ও শিল্পীগুলিকে আরও সমৃদ্ধ করা প্রয়োজন নানান পরিকল্পনা মাধ্যমে বিনিয়োগের মাধ্যমে। কারণ এরাও একটা বার্তা বহন করে থাকে একথা তুলে ধরেন।
সুদূর অতীতের ঐতিহ্য প্রকৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা পালন করে আসছে লোকসংস্কৃতির মাধ্যমে শিল্পীরা অর্থাৎ এই লোকসংস্কৃতির ক্ষেত্রেও বিনিয়োগের প্রয়োজন আছে এটাও অন্যতম সবুজ বিনিয়োগের অঙ্গ। বিভিন্ন পর্যটন সংস্থা, সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে যারা রয়েছেন পর্যটনের সঙ্গে সমস্ত স্টেক হোল্ডারদের কেউ এই বিষয়টি একটু গভীরভাবে চিন্তা করার প্রয়োজন আছে তবেই রাষ্ট্রসংঘ ঘোষিত ট্যুরিজম এন্ড গ্রিন ইনভেস্টমেন্ট এ বিষয়টি সার্থকতা লাভ করবে পাশাপাশি রোল অফ মিডিয়া এ কথাটি বলতে গেলে সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছেন তারাও এক্ষেত্রে নতুন নতুন দিক খুঁজে বের করে সেগুলোকে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করা
জরুরী আগামী দিনে।
বিভিন্ন ঋতুর বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগিয়ে আমরা কৃষি ক্ষেত্রে, গ্রাম উন্নয়নের ক্ষেত্রে এবং জীবন জীবিকা লাভের ক্ষেত্রে এই সবুজ বিনিয়োগের বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করার প্রয়োজন যেমন আছে তেমন অপরদিকে যারা আমরা সংগীত শিল্পী শিল্পচর্চা করছি তারাও এই প্রকৃতিকে নিয়ে গান লেখা হয়েছে নদীকে নিয়ে গান লেখা হয়েছে দূষণের বিরুদ্ধে আমরা সচেতন হয়ে মানুষকে জাগ্রত করছি, তাই আগামী দিনে নতুন প্রজন্মকে এ বিষয়ে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে সবুজকে বাঁচিয়ে সবুজকে পর্যটনের সঙ্গে যুক্ত করে জীবন উপযোগী প্রকৃতিবান্ধব বিনিয়োগ সম্পর্কে যারা বিনিয়োগকারী তাদের গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে বলে আমার মনে হয়েছে একজন শিল্পী হিসাবে।‌এই সমস্ত বিভিন্ন দিক এবারের পর্যটন উৎসবে আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা আলোকপাত করেন।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় উৎসবের দিন গুলিতে ছিল নানান ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রবীন্দ্র নজরুল সঙ্গীত নৃত্যের পাশাপাশি উত্তরের বিভিন্ন লোক সংগীত রাভা মারুনী নৃত্য,ভাওয়াইয়া , রাই,লিমবু সহ জনজাতিদের পোশাকে ফ্যাশন শো,ভারত ও নেপালের চিত্র শিল্পীদের আঁকা প্রদর্শনী।

Leave a Reply

Your email address will not be published.