GeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

পদ্মখেতাবের গোকুলে গুলাম, “আজাদ বুদ্ধ” তিরে বিঁধলেন জয়রাম

দেবারুণ রায়

কংগ্রেসের নেতা জয়রাম রমেশ পদ্মখেতাব বিতরণ নিয়ে বিতর্কের পর্বে এমন একটা মন্তব্য করেছেন যা এই পুরো এপিসোডের রাজনীতিতে প্রথম ও শেষ কথা।  এই কথার পরেই

রাজনৈতিক সমীকরণগুলো নিত্যনতুন রং ছড়াতে শুরু করেছে শীতের সকালে কুয়াশা ফুঁড়ে রোদ ওঠার মতোই। জয়রাম  বলেছেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আজাদই থাকতে চেয়েছেন ও আছেন।  গুলাম হতে চাননি। এক ঢিলে তিন চারটি পাখি মেরে এই কঠিন সময়ে সরল পথটি বাতলে দিলেন বিরোধীদের। অবিলম্বে ধর্মনিরপেক্ষ জোটের মানসিকতা নিয়ে কংগ্রেসের হাইকমান্ড বিরোধীদের সংকেত দিলেন, বিজেপির হাতে তামাক খেলে তাদেরই সর্বনাশ।  আর জোটবিরোধী  বিরোধীদলগুলোকে সমঝে দিলেন, কংগ্রেস বামেদের সঙ্গে আছে । এবং বিজেপিকে বোঝালেন শত ফাঁদ সত্ত্বেও বিরোধীদের মূলমঞ্চে ফাটল ধরবে না। আপাতত জাতীয় রাজনীতির এই পর্বে আঞ্চলিকদের কোনও সাড়া শব্দ নেই। রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে যাঁরা খেতাব ফিরিয়ে দিয়েছেন বা নেননি তাঁদের ব্যাপারে হিরণ্ময় নৈঃশব্দ্য।  শিল্পীদের প্রত্যাখ্যান নিয়ে সরব তৃণমূল নেতৃত্ব। তবে তৃণমূল সমর্থক জনতা কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে বাক্য-মাণিক্য বর্ষণে কার্পণ্য করেনি। কোনও কোনও শাসনপন্থী বিদ্বজ্জন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সম্পর্কে  প্রশংসা এড়িয়ে পাশাপাশি গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের প্রত্যাখ্যানে উচ্ছ্বাসে আবেগে মুখর উচ্চারণে বুঝিয়ে দিয়েছেন “আমরা ওরা” কাকে বলে। মোটের ওপর প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে জমাট শীতের মধ্যে রাজধানীর রাজনীতিতে উত্তাপের ওম এনে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদি।  নেতাজীর মূর্তি ইন্ডিয়া গেটের নেপথ্যে ক্যানোপিতে বসিয়ে বিরোধীদের জোট ভাঙার রণনীতিতে বিজেপির হিতে বিপরীত হয়েছে।সংশয় কেটে গিয়ে সংহত হতে শুরু করেছে বিরোধীশিবির। বুদ্ধদেব সম্পর্কে তৃণমূলের তির যে লক্ষ্যেই ছুটুক, বামেরা, বিশেষ করে সিপিএম কিন্তু মমতার নেতাজি ট্যাবলো দিল্লির খারিজ করার বিরুদ্ধে সরব। যদিও বাম জমানায় রাজ্যের ট্যাবলো বার বার প্রত্যাখ্যাত হলেও তৃণমূল কখনও সরব হয়নি।

এদিকে, গুলাম নবী আজাদ কিন্তু সেই খেতাবেই সম্মতি দিয়েছেন যে খেতাব (“পদ্মভূষণ”) ফিরিয়ে দিয়েছেন বুদ্ধদেব।  ২০০১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার ছ’মাস পর সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব বলেছিলেন ত্যাগের মধ্যে দিয়ে ভোগের দর্শনের কথা। বলেছিলেন, “বাবা বলতেন, তেন ত্যক্তেন ভুঞ্জিতা, মা গৃধঃ।” এই ইশোপনিষদের বাণী শুনিয়ে বুদ্ধদেব একুশ বছর আগে বলেছিলেন, কোনও কিছু পেয়ে তা ছেড়ে  দিতেই আমার বেশি ভাল লাগে।

তাঁর এই জীবন দর্শনের পরিচয় তিনি বারবার দিয়েছেন। প্রথম ঘটনা, মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা। পার্টির কথায় ফিরে আসতে হলেও পরে শরীরের কারণ দেখিয়ে পলিটব্যুরো ও কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব ছেড়েছেন।  এবং আর ফিরে তাকাননি কোনও পদ ও অলংকরণের  দিকে।  কিন্তু তাঁকে পুরস্কৃত করে দলকে সমস্যায় ফেলতে পারেনি শাসকদল। বরং খেতাব ফিরিয়ে পাদপ্রদীপের সবটুকু পাদপ্রদীপের আলো টেনে নিয়েছেন  বাম জমানার শেষ মুখ্যমন্ত্রী। সারা ভারতের সংবাদ মাধ্যমে বুদ্ধদেবের প্রত্যাখ্যান যে কভারেজ পেয়েছেন তা বিজেপির বিরোধী শিবিরকে উৎসাহ জুগিয়েছে। সরকারের হাওয়া ঘোরানোর প্রয়াসে জল ঢেলে দিয়েছে “খেতাব নিয়ে বাংলাকে অপমান করার” স্লোগান। সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের আচমকা অসুস্থতা কেন্দ্রীয় সরকারের গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়ে উঠেছে। অপমানিত হওয়ার কথাটি সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল সংবাদমাধ্যমে।সেটিই এখন ক্রমশ ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে উঠছে। বলা হচ্ছে সেদিন দিল্লির ফোন পাওয়ার পর থেকেই তিনি আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন মনোকষ্টে।

যদিও কংগ্রেসের গুলাম নবী খেতাব স্বীকার করে নেওয়ায় অনেকটাই জল পড়েছে বিজেপি সরকারের তৃষিত মরুতে। পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে সরকার ভাবছে এতে বিজেপির মঙ্গল হবে। কিন্তু মৃত রাজ্যপাল কল্যাণ সিংকে পুরস্কার দিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিজেপির কল্যাণের আশা দুরাশা। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা গুলাম নবীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও সেজন্য কি বিজেপির পাঁচ বছরের শাসন ভুলে যাবেন ? তাও কংগ্রেসের নেতৃত্বই গুলামকে কার্যত ত্যাজ্য করেছেন। সুতরাং কংগ্রেস ও গুলাম নবীর মধ্যে কেউ ই গুলামকে বেছে নেবেন না।  এই অবস্থায় আরেকটি মোক্ষম অস্ত্র শানাচ্ছে শাসকদল। কাশ্মীরের নব কলেবরে গুলামকে ঢাল করে এগোতে চায় তারা। পদ্মভূষণে ভূষিত হবেন শুনে  ফারুক আবদুল্লাহ গুলাম নবীকে অভিনন্দন জানিয়ে দিয়েছেন। কংগ্রেস হাইকমান্ড অবশ্যই খুশি হতে পারেনি। কারণ, তাদের মতে,  ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে যে সরকার তার দেওয়া খেতাব নিলেন কীকরে জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী ? এই রাজনীতি টুকু না বোঝার কথা নয় তাঁর। তার মানে কি কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধদের বিভীষণের ভূমিকায় পাশে পাচ্ছে বিজেপি ? আর ফারুক আবদুল্লাহর ন্যাশনাল কনফারেন্স যদি মৌন সমর্থনও দেয় তাহলেই তো কেল্লা ফতে। অতএব এবার কি কাশ্মীরের লাল চকে চব্বিশের লোকসভা ভোটের নয়াদৌড়ের বাঁশি বাজাবেন বিজেপির বাঁশিওয়ালা ? উনিশের ভোটের মোড় ঘুরিয়েছিল কাশ্মীরের পুলওয়ামার নারকীয় জঙ্গিহামলা। আর অদূরেই দৃশ্যমান রাজনীতির নবরঙ্গ ৩৭০ বিহীন শ্রীনগরে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.