ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসে অভিশংসিত হচ্ছেন?
ডেমোক্রেট নিয়ন্ত্রিত হাউস ইন্টিলিজেন্স কমিটি ৩০০ পাতার চূড়ান্ত ইম্পিচমেন্ট রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। পার্টিজান লাইনে ১৩–৯ ভোটে তা পাশ হয়। এটি এখন জুডিশিয়ারি কমিটিতে যাবে। তাঁরা সাক্ষী, প্রমান, বিচার–বিবেচনা করে চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে এবং সেটি সম্ভবত: আগামী সপ্তাহে–ই? এরপর ‘ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব’ কংগ্রেসে যাবে, সেখানে আলাপ–আলোচনা, বিতর্কের পর ভোট হবে। ডেমোক্রেট সংখ্যাধিক্যের জোরে ডিসেম্বরের মধ্যেই তা হাউসে তা পাশ হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ‘অভিশংসিত’ হবেন। এরপর সিনেটে ট্রায়াল, রিপাবলিকানরা সেখানে সংখ্যাগরিষ্ট। জানুয়ারিতে বিচার শুরু হবে কিনা তা নির্ভর করবে রিপাবলিকানদের ওপর। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অপসারিত করতে ৬৭টি ভোটের দরকার। ডেমোক্রেটদের আছে ৪৭টি ভোট। রিপাবলিকানদের ৫৩। পার্টি লাইনে ভোট হয়ে ট্রাম্প বেকসুর খালাস পাবেন। প্রকাশিত হাউস ইন্টিলিজেন্স কমিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যায় করেছেন। ট্রাম্প তার ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। কংগ্রেসের তদন্ত প্রক্রিয়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছেন। চেয়ারম্যান এডাম শিফ বলেছেন, ইম্পিচমেন্ট তদন্তে এটি পরিষ্কার যে, ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত লাভের জন্যে, নিজে বা অন্যকে দিয়ে একটি বিদেশী রাষ্ট্র, ইউক্রেনকে ব্যবহার করে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে সুবিধা নেয়া বা সামনের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এটি করে তিনি ব্যাক্তিস্বার্থকে জাতীয় স্বার্থের ওপর স্থান দিয়েছেন; মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের অখণ্ডতা খণ্ডন করেছেন; জাতীয় নিরাপত্তার সাথে আপোষ করেছেন; এবং জনগণের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। তবে রিপোর্টে ‘বড় ধরণের ক্রাইম বা মিস্ডমিনার’ প্রসঙ্গ আনা হয়নি; সম্ভবত: তা কংগ্রেসের জন্যে রেখে দেয়া হয়েছে। পাল্টা হিসাবে রিপাবলিকানরা ১২৩ পাতার একটি প্রত্যুত্তর রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। হোয়াইট হাউস প্রেস সেক্রেটারী স্টেফাইনি গ্রিশাম বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অন্যায় করেছেন তা প্রমান করতে চেয়ারম্যান এডাম শিফ এবং ডেমোক্রেটরা চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। রিপাবলিকানরা বলেছে, ট্রাম্প কখনো ইউক্রেনকে চাপ দেয়নি,শুধু ‘আনুকূল্য’ চেয়েছেন। লন্ডনে ন্যাটো সম্মেলনে বসে ট্রাম্প বলেছেন, ইম্পিচমেন্ট ধাক্কা ‘দেশপ্রেমিক’ নয় বরং ‘দেশের জন্যে ক্ষতিকর’। আর্টিক্যাল অফ ইম্পিচমেন্ট পার্টি লাইনে বিভক্ত কংগ্রেস এবং দেশকে দুই শিবিরে ঠেলে দেবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এটিকে ‘ননসেন্স’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘ওরা সময় নষ্ট করছে। ট্রাম্প তিনি বিদেশে থাকাকালে এই রিপোর্ট প্রকাশকে ‘অসৌজন্যমূলক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তিনি অনুমান করেন, রিপাবলিকানরা এই ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়ায় লাভবান হবেন। তিনি বলেন, রিপাবলিকানরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। বুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৯ জুডিশিয়ারি কমিটি এই রিপোর্ট নিয়ে কাজ শুরু করবে। ডেমোক্রেটরা এক সময় আশা করেছিলো যে, রিপাবলিকানরা হয়তো ট্রাম্পের অপসারণ চাইবেন। কিন্তু এখন দেখছেন তারা পুরোপুরি পার্টি লাইনে বিভক্ত। স্পীকার ন্যান্সি পেলোসি’র নেতৃত্বের জন্যে ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া একটি পরীক্ষা। এদিকে ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস ২০২০ প্রেসিডেন্ট রেস্ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। সমর্থকদের উদ্দেশ্যে এক ই–মেইল বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘যদিও আমি প্রেসিডেন্ট প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছি, কিন্তু ট্রাম্পকে পরাজিত করতে আমি সবকিছু করবো’। এদিকে আরো একজন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট রেস্ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, তিনি হচ্ছেন মন্টানার গভর্নর ষ্টিভ বুলক। অন্যদিকে নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ বেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। ‘থ্যাঙ্কস গিভিং’ সপ্তাহে প্রকাশ্য ‘ইম্পিচমেন্ট শুনানী’ কিছুটা শ্লথ হয়েছে। শুনানী আবার শুরু হচ্ছে, বুধবার ৪ঠা ডিসেম্বর ২০১৯। ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে শুনানীতে অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। হোয়াইট হাউস সেটি নাকচ করে বলেছে, ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া পার্টিজান এবং ‘হুইচহান্ট’। ট্রাম্পের উপদেষ্টা প্যাট সিপোলোন জানিয়েছেন, ট্রাম্প বা তার পক্ষে কোন এটর্নী শুনানীতে যাচ্ছেন না। এতকিছুর পরও ইম্পিচমেন্ট প্রক্রিয়া গতি পাচ্ছেনা। জনসমর্থন কমছে। মধ্য নভেম্বরে ‘মর্নিং কনসাল্ট’ জরীপ বলছে, ৪৮% মানুষ ট্রাম্পকে ইম্পিচমেন্টের পক্ষে। অক্টবরে এটি ছিলো ৫০%। এনপিয়ার/পিবিএস/মারিষ্ট জরিপ বলছে ৪৫%, অক্টবরে ছিলো ৪৯%। ফাইভথার্টিএইট এনালাইসিস বলছে, ৪৬%, যা পূর্ববর্তী মাসে ছিলো ৪৮.৮%। নিরপেক্ষ ভোটারদের মধ্যে ইম্পিচমেন্টের বিপক্ষে জনমত বাড়ছে। ইমারসন কলেজ নভেম্বর জরিপ বলছে, অক্টবরে ৪৮% ইম্পিচমেন্টের পক্ষে থাকলেও নভেম্বরে তা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৩৪%।রিপাবলিকানদের ১২৩ পাতার প্রত্যুত্তর দলিলে বলা হচ্ছে, ট্রাম্প ইউক্রেনের সাথে আলোচনায় ক্ষমতার অপব্যবহার করেননি। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোল্ডামায়ার জেলেনস্কি সোমবার ০২রা ডিসেম্বর টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্পের সাথে তাঁর ‘কুইড প্রো কিউ’ সংক্রান্ত বিষয়ে কথা হয়েছে বলে অস্বীকার করেছেন। ২০১৬–তে ট্রাম্পের নির্বাচনী ক্যাম্পেন নিয়ে এফবিআই’র তদন্ত যথার্থ ছিলো বলে ইন্সপেক্টর জেনারেলের দাবির সাথে এটর্নি জেনারেল ইউলিয়াম পি বার দ্বিমত পোষণ করেছেন। এরআগে মঙ্গলবার ১৯শে নভেম্বর ২০১৯, হাউসে ৪জন প্রকাশ্যে সাক্ষ্য দেন। এদের মধ্যে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল সদস্য লেঃ কর্নেল আলেক্সজান্ডার ভিন্ডম্যান সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ট্রাম্পের ২৫শে জুলাই ফোনকল সম্পর্কে দু’জনকে অবহিত করেছিলেন, এদের মধ্যে একজন ইন্টিলিজেন্স কর্মকর্তা। অন্য এক সাক্ষী রাষ্ট্রদূত কুর্ট ভলকার তার সাক্ষ্যে বলেছেন যে, দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে কথোপকথনে তিনি ‘তদন্ত’ শব্দটি শুনেছেন।(courtesy for pix to Image Fair)