স্বল্প ব্যয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে চিকিৎসার দিশারি ইরিম

ডাঃ দেবাশিস বক্সী
ব্যাধির বাড়বাড়ন্তে প্রাকৃতিক জীবনে জমাট বাঁধছে দুশ্চিন্তার কালো মেঘI পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সুচিকিৎসার জন্য হাহাকার। সন্ধান মিললেও অনেক সময় স্বস্তি মেলে নাI মোটা অঙ্কের প্যাকেজ কখনও চিকিৎসার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়। এমন দুর্দিনে স্বল্প ব্যয়ে, সুচিকিৎসার সুযোগ করে দিচ্ছে ইরিম (IRIIM)। কোনও বাজারি চমক নয়, সেবাই পরম ধর্ম – এই বিশ্বাসকে পাথেয় করে এগিয়ে চলেছে সংস্থাটি। পায়ে পায়ে ইরিম ৩৯ বছর পার করলোI খানিকটা নীরবে, নিস্তব্ধে বিপ্লব ঘটিয়ে চলেছে এই চিকিৎসা-সেবা গবেষণা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানI হোমিওপ্যাথি বা এলোপ্যাথি নয়, সমন্বিত প্রকৃতিমুখী চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীদের সুস্থ করে তোলা হচ্ছে। আকুপাংচার, যোগ-নেচারোপ্যাথি ও সঠিক খাদ্য পরামর্শ – এই সকল পদ্ধতির সমন্বয়ে চিকিৎসা করছেন একদল একনিষ্ঠ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী, নেতৃত্ব দিচ্ছেন সংস্থার পরিচালক তথা অবৈতনিক সম্পাদক ডাঃ দেবাশিস বক্সী।
হাওড়ার উপকন্ঠে মৌরিগ্রাম স্টেশন এর ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ‘রনজিত স্মৃতি হাসপাতাল ও আকুপাংচার যোগ-প্রাকৃতিক চিকিৎসা কলেজ অব রিসার্চ`এর দ্বিতল ভবনI এখানে ঢোকার সময় গেটের সামনে একটুকরো জমিতে হরেক কিসিমের সব্জি আর গাছগাছালি চোখে পড়বে। এখন আবার ছাতেও চাষ হচ্ছে, এ সবই রোগীদের জন্য। ইরিমের সুচিকিৎসার অন্যতম ভিত্তি হল প্রাকৃতিক উপায়ে রোগীদের সুস্থ করে তোলা।প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন জৈব খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে অনেক রোগ সরিয়ে তোলা যায়, বাড়ানো যায় রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা। ‘ইরিম’, রোগীদের প্রাকৃতিক খাদ্য গ্রহণ ও সুষ্ঠ জীবনশৈলীর উপর জোর দেয়I এর সঙ্গে রয়েছে যোগাসন। চিরাচরিত চিকিৎসার মাধ্যমে বহু রোগের নিরাময় হচ্ছে। বিশ্বে দ্বিতীয় সর্ববৃহৎভাবে প্রচলিত আকুপাংচার পদ্ধতির সফল প্রয়োগ ঘটাচ্ছে ইরিম।
ডাঃ দেবাশিস বক্সী জানাচ্ছেন, শরীরের সব ধরনের বাতের ব্যথা বা আর্থ্রারাইটিস, হাঁফানি, প্যারালিসিস, পেটের রোগ, মানসিক সমস্যা, ডায়াবেটিস, উচ্চ্ রক্তচাপ, অনিদ্রা সহ বহু ধরনের জটিল রোগ আকুপাংচার-এর মাধ্যমে সারিয়ে তোলা হচ্ছে। বহু অর্থব্যয় করে, কঠিন রোগের সুরাহা করতে না পেরে অনেকেই ইরিমের দ্বারস্থ হন, বলাই বাহুল্য তাঁরা সুফল পেয়েছেন। অহেতুক অপারেশন বা কাটাছেঁড়া নয়। সমন্বিত চিকিৎসায় রোগীরা সমস্যা মুক্ত হতে পারছেনI শুধু যোগ বা আকুপাংচারই নয়, মাটি মাখিয়ে চিকিৎসার (মাড থেরাপি) কিংবা জলের ভাপ (স্টীম থেরাপি) নিয়ে সারিয়ে তোলা হচ্ছে জটিল রোগে আক্রান্তদের। টাং (Tongue) থেরাপিতে জিভ দেখে নির্ণয় করা হচ্ছে রোগ। তারপর শুরু হচ্ছে উপযুক্ত চিকিৎসা এই অভিনব পদ্ধতিতে রোগীরা দারুন ভাবে সাড়া দিচ্ছেন। কেবল জটিল রোগের নিরাময় নয়, নেশা মুক্ত সমাজ গড়তে ব্রতী ইরিমI কোন প্রকার ওষুধ ছাড়াই আকুপাংচার, যোগ-প্রাকৃতিক চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্য অভ্যাসের মাধ্যমে নেশার আসক্তিও মুক্ত করা হচ্ছে।
চিকিৎসার বাইরে বেরিয়ে ইরিম-এ গবেষণার কাজ চলছে পুরোদমে। ১৯৯৬ সাল থেকে লাগাতর ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয় দ্বারা বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃতি পেয়ে আসছে ইরিম। জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প ও সেমিনার আয়োজন করে ইরিমI পূর্ব ভারতের সমন্বিত আকুপাংচার চিকিৎসার একমাত্র অন্তর্বিভাগের হাসপাতাল হিসাবে ইরিম-এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। রোগীর সেবার পাশাপাশি হবু চিকিৎসকদের শিক্ষার কাজে ব্রতী ইরিমের চিকিৎসকরা। পূর্ব ভারতের আকুপাংচার, যোগ-প্রাকৃতিক চিকিৎসার ইনস্টিটিউট-ইরিম যা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীন কাউন্সিল দ্বারা স্বীকৃতI বহুবিধ কার্যকলাপে লিপ্ত থাকার পরেও রোগীদের সেবায় এতটুকু ত্রুটি নেই।

বুধবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৭-১২টা ও বিকাল ৩-৭টা পর্যন্ত আউটডোরে টিকিট করা হয়। চিকিৎসার খরচ খুবই কম- প্রাইভেট ও সরকারের মাঝে। নামমাত্র ব্যয়ে বেডে থাকার সুবিধা আছে, দুঃস্থ, আর্থিক অসঙ্গতিপূর্ণ ব্যক্তিদের চিকিৎসায় বিশেষ ছাড় দিয়ে সেবার ধর্মকেই সামনে তুলে ধরছে ইরিম। ইরিম মূলতঃ মহৎপ্রাণ মানুষ ও সংগঠনের সাহায্যের উপর নির্ভরশীল। ইরিমে সব ধরণের সাহায্য আয়কর আইনের ‘৮০জি` ধারায় করমুক্ত। যোগাযোগ: ইরিম (IRIIM) মৌরিগ্রাম স্টেশনপাড়া, হাওড়া-৭১১৩০২, ৯৮৩১১১১৩১৭/ ৯৪৩৩০৪৭৯১৮