BusinessFemaleGeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

রাম বাজেটে সীতার কি বনবাস

দেবারুণ রায়

“সবকা সাথ সবকা বিকাশ” কথাটা কী আর কোথায় দাঁড়াল ? মিথ আর মিথ্যা কতটা কাছাকাছি ? এটা দিল্লির সরকার বাহাদুর বোঝেন। কারণ তারাই তো জনগণকে বোঝান। মিষ্টি কথার মার্কেটিংয়ে বাজার মাত করা কাকে বলে, সেই জাদুটি তারাই জানেন।  2014 থেকে বাজেট-বোঝা একদম সোজা করে দিয়েছেন তিনি। রাজা এবং ঋষি বলে যাঁকে চেনান তাঁর পারিষদরা, এবং আমরা সুবোধ ভক্তজন চিনি। আমরা জানি তিনি বাজেটে চিনি জোগালেন। তিনি আমাদের স্বপ্ন দিলেন, আমরা বিশ্বে পাঁচ ট্রিলিয়ন ডলারের তৃতীয় অর্থশক্তি হলাম বলে একথা বললেন তিনি। তিনিই চিন্তামণি। আমরা কোন ছাড়। সারা বিশ্ব তাঁকে মাথায় করে রেখেছে। যখন পুটিন ভাবেন তিনিই মুশ্কিল  আসান, তখন বাইডেন আসেন ফোনে। যখন মাকরঁ তাঁকে মানেন তখন জিন পিংয়ের পড়ে মনে। সেই তিনি সবার জন্যে হন্যে হয়ে ঘুরেছেন সারা বিশ্ব। আর এদেশের যত হাঘরে মানুষ , যতই হোক না নিঃস্ব, তাদের মূল সম্পদ তো এই সরকারের নীতি।

নীতি আয়োগের আর্থ নীতি, প্রায় পরমার্থ নীতি। মনমোহন সিং ক’টা তির মেরেছেন ? উনি তো অতবড় অর্থশাস্ত্রী। পেরেছেন তিনি একহাতে এত উন্নত অর্থনীতির জন্ম দিতে ? পারেননি। হ্যাঁ। মনরেগার ফান্ড না হয় কমেছে। রিভাইজড এস্টিমেটে। কিন্তু তের ভাগের বেশি রাজস্ব বাড়াচ্ছে এই সরকার। কে বলেছে ভারত গরিব দেশ ? কর তো তবু বাড়ানোই হল না। বরং যারা দেবে তারা নেবেও। তাদের কিছু বাঁচাও হবে। কিন্তু কর্মসংস্থানের কী হবে হুজুর। এই সব বাজে কথা অপোজিশনের বুলি। যারা নিজেরাই চুলোচুলি করে মরছে। তাদের দিশা আছে মোদীর মতন ? কিন্তু চিদম্বরম নিজে যখন কীর্তি করেছেন তখন বোঝেননি। এখন তিনি আর কর্তা নন। শুধুই কার্তির বাবা। লেখাপড়াটা এতদিনে তাঁর বিবেকে উঁকি দিচ্ছে। অনেকটা সংস্কারের মানবিক মুখ দেখতে শুরু করেছেন। এও কখনও হতে পারে কংগ্রেস ঘটি না হারালে জানা হত না। চিদম্বরম অনেকটা এখন সীতারাম ইয়েচুরি স্টাইলেই বললেন, এই সরকালের একটা সংখ্যাতত্ত্বও ঠিক নয়। তাঁর ভয়ংকর অভিযোগ, সব ঝুট হ্যায়। জালি। যেসব দেখিয়ে মানুষের খালি পেট ভরা দেখাচ্ছে। অর্থনৈতিক সংস্কারটাও করতে পারেনি। ২০১৪ থেকে সংস্কার কাঠামো গড়ার মূল কাজ একটাও হয়নি। সব ভুল তথ্যের জাগলারি দিয়ে চলছে। চেন্নাইয়ের চেনা বামুন চিদম্বরম। এককালে দেশের দশজনে তাঁকে প্রণব মুখার্জির চেয়েও বড় অর্থমন্ত্রী বলে ভেবেছিলেন। মায় মনমোহনও মোহিত হতেন চিদুবাবুর চালে। কিন্তু কালে কালে কী হল ? সনিয়া ম্যাডাম তাঁকে সরালেন অর্থ থেকে অনর্থে। মানবিক মুখ চাই ইকনমিক রিফর্মসের। চাই ইন্দিরাজির পাইপখোর অর্থমন্ত্রী প্রণববাবুকে। তখন অর্থ ছেড়ে পুলিশে গিয়েও প্রণবকে বিস্তর জ্বালিয়েছেন চিদম্বরম। যদিও তাতে সনিয়াজির ডাল গলেনি।

মোদীর বাজেট নিয়ে সেই মানুষটা কেমন বেসুরে গাইলেন। ক্ষমতা এমনই আঠা। যা ভুলিয়ে দেয় কাণ্ডজ্ঞান। এই রাম রাম করা সরকারের অর্থমন্ত্রী সীতারামণ কিন্তু তেমনতর মালিকা নন। তিনি রাজ্যসভার এমপি। সংঘই তাঁর সমাজ সংস্কৃতি রাজনীতি অর্থনীতি। জেএনইউয়ের কৃতি হলেও তাঁর অর্থনীতিবিদ স্বামী ভালবেসে বলে থাকেন সীতার অর্থনীতি কী বিষম বস্তু ! এবং সীতারামণের এত খ্যাতি মোদীমহলে , এতদিনের স্থিতি নর্থব্লকের অর্থমন্ত্রালয়ে সেটা কেন তাঁর বাজেট বলে দেয়। মোদী সরকার আপাতত হাজার বছরের রামরাজ প্রতিষ্ঠার কাজে ব্যস্ত। এবার ফিরে এলে নর্থ ব্লক সাউথ ব্লক সরকারের পীঠ থাকবে কি না থাচবে অমূলক। কিন্তু রামরাজে সীতা কোথায় থাকবেন ? যদিও এত সফল আর্থিক বিকাশে বিকশিত সরকারের এত সুশীলা অর্থমন্ত্রী আর হবে না।

দেখা যাচ্ছে , এই বাজেটে জনগণের কাছ থেকে আদায় করা খাজনা বাড়ছে ১৩ শতাংশের বেশি। আর সরকারের খরচ কমছে অনেক বেশি। খরচ মাত্র ৭ শতাংশের মতো। যেটা জিডিপির চেয়েও কম। কিন্তু এসব বামেদের ছিদ্র দেখার স্বভাব। বন্ধুগণ, আমাদের রাষ্ট্রপতি চার স্তম্ভের বিকাশের কথা বলেছেন। যুব গরিব মহিলা কৃষক। আচ্ছা বুকে হাত দিয়ে ধর্মাত্মারা বলুন তো, এই চার স্তম্ভে বিভক্ত করা কি মার্কেটিং নয় ? যিনি যুবা তিনি গরিব তিনি মহিলা তিনিই কি কৃষক নন ? তাহলে কেন এই জাদুগরী প্রভু ? গরিব কিন্তু পেটের খিদে বোঝে। সেটাই পরম অর্থনীতি, চরম রাজনীতি। গরিব কোনো স্লোগান বোঝে না। খিদে পেলে ভীষণ রেগে যায়। বোঝে, ভোট ফের তাকে চোট দিয়েছে। একবার না। দশবছরে দু দু বার। আগেও যারা চোট দিয়েছে এরাও তাদের থেকে আলাদা নয়। মধ্যবিত্ত বোঝে, বিজেপি বলত আয়কর ছাড় এত দেবে যে আমরা সবাই বড়লোক হয়ে যাব। এখন দেখছি মিথ আর স্বপ্ন আর তার ফলাফল মিথ্যে মরিচিকা। মাত্র এককোটি মানুষের নাকি ভাল হবে। কী ভাল ? আয়কর যা ছাড় ছিল তার ওপর কিছু হবে না। তবে হ্যাঁ , তুমি যদি অত টাকা ইনভেস্ট কর তবে তত টাকা ছাড় পেয়ে যাবে। এটা কেমন ছাড় হল বস ? এতো এ আছাড়। কিন্তু যাদের বদৌলত সরকারে আছ প্রভু তাদের তুমি ভুলে যাবে কী করে ? হে ভারত ভুলিও না কর্পোরেট তোমার ঈশ্বর। কর্পোরেট বাঁচলে তুমি বাঁচবে। এটাই কংগ্রেসের কীর্তি, এটাই আঞ্চলিকদের আর্তি, এটাই ভারতের ইতিহাস, অতএব বিজেপিরও কর্পোরেট শক্তি । বামেরা বাম হাতে সেবা করে , ডানেরা ডানহাতে। অতএব কর্পোরেট ট্যাক্সের ছাড় আপাতত থেমে থাক। ভোটের আগে গরিবের এই চোট সহ্য হবে না। ভাইয়োঁ অর বহনোঁ, আমরা গণতন্ত্র মানি, গণতান্ত্রিক প্রথা জানি। ভোটের পরে বাকিটা হবে। এটা ভোট অন অ্যাকাউন্টে শুধু থাক সব ট্রেনেতেই বন্দে ভারত বগি। টিকিট কত হবে বলবে সেটা রেল কোম্পানি। তার মালিক কি হবে আদানি ? সেইটা কি কেউ জানি ? Pic Courtesy Indian Express

Leave a Reply

Your email address will not be published.