IndiaNewsPoliticsSambad Matamat

ছিঃ শুভেন্দু ছিঃ

সুবীর পাল

শুভেন্দু অধিকারী। একদা সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়ের অন্যতম নায়ক ও তদানীন্তন নন্দীগ্রাম ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একটা আলাদা উচ্চতায় দাঁড় করিয়ে দেবার আপনিই যে নেপথ্যের নায়ক, তা এই বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাস কোনদিন ভুলতে পারে না। অন্যদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার পর বিধানসভায় বিরোধী নেতা হিসেবে আপনার উত্তরসূরীদের থেকে অনেক অনেক বেশি আপনি যে সফল তা রাজ্যবাসী এক বাক্যে এযাবৎ কালে মেনে নিয়েছে। এখানেই শেষ নয়। ভারতে সবচেয়ে বেশি অনুশাসিত রেজিমেন্ট ও ক্যাডার ভিত্তিক দল হলো বিজেপি। আজ পর্যন্ত তৃণমূল পরিত্যাগ করে যে কয়জন নেতা নেত্রী গেরুয়া শিবিরে যোগ দিয়েছেন এই বঙ্গে, তাঁদের মধ্যেও আপনি সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। এতটাই সফল যে বর্তমানে ভোটের ময়দানে বঙ্গ বিজেপির অলিখিত একমাত্র লড়াকু মুখ হয়ে উঠেছেন আপনিই। এমনকি জনপ্রিয়তার নিরিখে বাংলার অতীতের কোনও বা সাম্প্রতিক দলীয় সভাপতি আপনার ধারেপাশে জনমানসে এমন বিশ্বাসযোগ্য স্থান পাননি। আপনার সাফল্যের ফর্দ এখানেই কিন্তু শেষ হয়নি। বাংলার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইদানিং কালের অপরাজেয় ইমেজকে আপনিই প্রথম ও একমাত্র ধুলিসাৎ করে ছেড়েছেন নন্দীগ্রামে বিধানসভা ভোটের মাটিতে সিটিং সিএমকে হারিয়ে দিয়ে। আজ শাসকের বিরুদ্ধে বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেস, আইএসএফ দলগুলিতে অজস্র নেতার ভিড়। কিন্তু জনগণের দরবারে রাজ্যের মানুষের কাছে একটা সবচেয়ে আবেগময় জনজোয়ারে ভাসা বিরোধী মুখ রূপে আজ যে আপনিই মসিহা। শুনতে নিশ্চয় অবশ্যই পান, তৃণমূল সুপ্রিমো থেকে ব্লক স্তরের তস্য ঘাসফুল নেতা সবাইকে কিন্তু সমস্ত বিরোধী নেতাদের ছেড়ে আজ শুধু আপনার দিকে আক্রমনের তির শানাচ্ছে একচেটিয়া ভাবে লাগাতার। কেন? কারণ আপনি একাই দুর্নীতির অভিযোগে পরিপূর্ণ নিমজ্জিত গোটা তৃণমূল দলটার ভিতটা নাড়িয়ে দিয়েছেন আপনার ধারাবাহিক আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে সমগ্র রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে।

আপনার এই রাজনৈতিক প্লাস পয়েন্টগুলো কিন্তু কখনও কেউই আপনাকে সুস্বাদু খাবারের মতো সাজিয়ে কোনও উপহারের ডিস হাতে তুলে দেননি। এসবই আপনার অর্জিত নিজস্ব রাজনৈতিক ফসল। আপনার প্রতিবাদের নিষ্ঠা এসব। এছাড়া তৃণমূল বিরোধীতায় আপনি হাজার শতাংশ সৎ।

এহেন শুভেন্দু অধিকারী এখন আচমকাই এসব কি বলছেন? এতো পাগলের প্রলাপও লজ্জা পাবে। নর্দমার কীটও আনন্দ পাবে। আপনি কি সিপিএমের অনিল বসুর থেকে দীক্ষিত? আপনি কি তৃণমূলের অনুব্রত মণ্ডলের কাছে শিক্ষিত? হতেই পারে কংগ্রেসের শোকেস বয় রাহুল গাঁধীর সঙ্গে আপনার রাজনৈতিক অবস্থান একশো আশি ডিগ্রি। তো? তাই বলে শিষ্ঠাচারের সীমা লঙ্ঘন করে আপনি তাঁর উদ্দেশ্য যা নয় তাই কদর্য কথা বলবেন। যা বলেছেন তা সাংবাদিক হয়ে লিখতেও নিজেকে রুচিহীন মনে করি। আপনার বিরুদ্ধ প্রান্তে যাঁরা আছেন তাঁদের আপনি লক্ষ লক্ষবার রাজনৈতিক পর্যায়ে বিরোধিতা করুন। দেশের গণতন্ত্র সেই অধিকার আপনাকে দিয়েছে। কিন্তু কুকথা বলার পাসপোর্ট আপনাকে ভারতীয় সমাজ ইস্যু করেনি। তাছাড়া রাজ্য বা দেশকে নেতৃত্ব দিতে গেলে একজন নেতৃত্বের অন্যতম প্রয়োজনীয় আকর্ষণীয় গুন হলো ‘পরিশীলিত ভাষাজ্ঞান’। নিজের চোখেই তো দেখেছেন অনিল বসু বা অনুব্রত মন্ডলের এখনকার পরিণতি। তাঁদের স্বীয় স্বীয় ক্ষেত্রে কোন অংশে দাপট কম ছিল বলুন তো? জানেন তো রাজনৈতিক ময়দান আসলে হলো সাপলুডুর বোর্ড। জনপ্রিয়তার সিঁড়ি দিয়ে উঠুন আপত্তি নেই। কিন্তু একশোয় পৌঁছানোর আগে নিরানব্বইয়ে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে সর্ববৃহৎ পিচ্ছিল সর্বভুক সাপ। একটু বেপরোয়ার অনুকরণে বেসামাল মানেই একেবারে সিঙ্গল ডিজিটের কোলে আছড়ে পড়বেন। তাই আপনারই গড়া সাফল্যের একাধিক সিঁড়ি পেড়িয়ে বাক্য সংযমী হয়ে একশোকে অর্জুনের পাখির চোখ করবেন নাকি বসু, মন্ডলের পর সেই তালিকায় অধিকারীও যুক্ত করায় ধ্যান দেবেন। কি করবেন চয়েজটা কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে সম্পূর্ণ আপনার। Pic courtesy: The Statesman

Leave a Reply

Your email address will not be published.