ড্রাগনের নজরদারিতে বাড়ছে রহস্য – ধৃত চীনা নাগরিক “ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল” কে ঘিরে ক্রমশ: বাড়ছে রহস্যের জাল

অরুণ কুমার, শিলিগুড়ি
বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে চীনা নাগরিককে নিয়ে সন্দেহ বাড়ছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা আধিকারিকদের। এবিষয়ে চীনা নাগরিক হান জুনেইয়কে জেরা করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে বিএসফের হাতে। বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া মালদহের কালিয়াচকে থেকে ধৃত হান জানুইকে জিজ্ঞাসাবাদে মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিএসএফ সূত্রে খবর, ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে অফিসাররা এক প্রকার নিশ্চিত, হান জানুই চীনা গুপ্তচর। আজ ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে এনআইএ।অনুপ্রবেশের অভিযোগে মালদহের কালিয়াচক থেকে ধৃত চিনা নাগরিক হান জুন উই-কে জেরা করতে রাজ্যে চলে এসেছে উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাসদমন বাহিনীর বিশেষ দল।ধৃত হান জানুইকে নিয়ে ইতিমধ্যে একটি রিপোর্ট পেশ করেছে বিএসএফ। কলকাতায় বিএসএফ-এর দফতরে সেই রিপোর্ট পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্টে হান জানুই কে ‘ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে গত বৃহস্পতিবার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে মালদহের কালিয়াচকের মিলিক সুলতানপুর এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেফতার করে বিএসএফ। ধৃতের নাম হান জুনুই কে নিয়ে ইতিমধ্যেই আরম্ভ হয়েছে কেন্দ্র ও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দাদের মধ্যে তোলপাড়।বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, গত ২ জুন বিজনেস ভিসা নিয়ে ঢাকা পৌঁছন চীনের হুবেই প্রদেশের বাসিন্দা এই হান। সেখানে এক চিনা বন্ধুর সঙ্গে ছিলেন। তারপর গত ৮ জুন বাংলাদেশের চাপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ জেলার একটি হোটেল ভাড়া নেন। সেখানে দু’দিন কাটিয়ে ১০ জুন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে ঢোকার সময়েই গ্রেফতার হন। গোয়েন্দাদের জেরায় হান জানিয়েছেন, এর আগে ভারতে চার বার এসেছিলেন তিনি। ২০১০-এ হায়দরাবাদে এক বার, ২০১৯-এ দিল্লি এবং গুরুগ্রামে তিন বার এসেছিলেন।জেলায় বিভিন্ন বিষয় উঠেছে এসেছে সেগুলি হল ,গুরুগ্রামে ‘স্টার স্প্রিং’ নামে একটি হোটেল আছে তাঁর। সেখানে চীনের বেশি কিছু লোক এবং ভারতের কিছু লোক কাজ করেন। কয়েক দিন আগে দেশের বাড়িতে গিয়েছিলেন তিনি। সে সময় তাঁরই এক বন্ধু সান জুয়াং ভারতের ১০-১৫টি মোবাইল সিম তাঁকে পাঠান। তদন্তকারীদের হান জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগেই জানতে পারেন তাঁর সঙ্গী লখনউ এটিএসের হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। সেই সঙ্গীই হান এবং তাঁর স্ত্রীর কথা পুলিশের কাছে বলেছেন। এবং তার পরই দু’জনের বিরুদ্ধে লখনউ এটিএস মামলা দায়ের করে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে উত্তরপ্রদেশের এসটিএফ -র দল এই রাজ্যে এসে পৌঁছেছে হানকে জিজ্ঞাসাবাদের উদ্দেশ্যে। এদিকে তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসার মাধ্যমে যে সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে তা হল , লখনউয়ে হান এবং তাঁর স্ত্রীর নামে মামলা দায়ের হওয়ায় চীন তাঁকে ভারতের ভিসা দিতে অস্বীকার করে। তখন হান ঘুরপথে ভারতে ঢোকার চেষ্টা করেন। বাংলাদেশ এবং নেপালের ভিসা নেন, যাতে ওই দুই দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে সহজেই ভারতে ঢোকা যায়। বিএসএফ যে বিবৃতি প্রকাশ করেছে সেখানে বলা হয়েছে হান এক জন দাগি আসামী। তাঁর কাছ থেকে অ্যাপলের একটা ল্যাপটপ, আইফোন, বাংলাদেশ, ভারত এবং চিনের বেশ কয়েকটি সিমকার্ড, পেন ড্রাইভ, ব্যাটারি, ছোট টর্চ, টাকা লেনদেনের যন্ত্র, বেশ কয়েকটি এটিএম কার্ড, বাংলাদেশ এবং ভারতের টাকা উদ্ধার হয়েছে।আরও জানা গিয়েছে ধৃত হান জুনুই এর স্ত্রীও তার সঙ্গে জড়িত এই পুরো বিষয়টিতে। এমনটাই জানালেন কালিয়াচকে ধৃত চীনা নাগরিক হান জুনেই। জানা গিয়েছে, চিনা ওই ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীর নাম আগে থেকেই গোয়েন্দাদের ওয়ান্টেড তালিকায় ছিল। উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে লখনউ এসটিএফ এক চীনা নাগরিককে গ্রেফতার করেছিল। ধৃত সেই ব্যক্তি হান জুনেই-এর বন্ধু। তখন থেকেই লখনউ এসটিএফের খাতায় ওয়ান্টেড ছিল জুনেই ও তার স্ত্রী।পুলিশ সূত্রে খবর, চীনের হুবেই প্রদেশের এই বাসিন্দার নাম হান জুনেই। বৃহস্পতিবার সকালে ওই ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে বিএসএফের জওয়ানদের সন্দেহ হয়। এরপর তাকে কালিয়াচক পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।ওই ব্যক্তির কাছ থেকে বাংলাদেশ ও নেপালের ভিসা পাওয়া গিয়েছে।কিন্তু ভারতে আসার বৈধ কাগজপত্র তাঁর কাছে ছিল না। জানা গিয়েছে, ভারতে আসার আগে চিনা এই নাগরিক তাঁর এক সঙ্গীর সঙ্গে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনা মসজিদ এলাকায় থাকত। তার আগে ঢাকাতেও কিছুদিন ছিল সে। এখনও পর্যন্ত মহদিপুর ক্যাম্পে চীনা ওই নাগরিককে টানা জেরা করে চলেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁর কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ ও আরও অনেক নথি পাওয়া গিয়েছে, যা দেখে গোয়ান্দারা তাঁকে চীনা গুপ্তচর এজেন্ট বলেই সন্দেহ করছেন গোয়েন্দা বিভাগের কর্তাব্যক্তিরা। প্রাথমিকভাবে যদিও জানা গিয়েছেবৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ওই ব্যক্তি ভারতে প্রবেশ করে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ওই ব্যক্তির বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে পুলিশের হাতে।প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়, বড় কোনও অভিসন্ধি নিয়ে কোনও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারতে প্রবেশ করেছেন ওই নাগরিক। এখন পর্যন্ত ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও জানা গিয়েছে, এর আগেও বেশ কয়েকবার ভারতে এসেছিলেন হান। কখনও দিল্লি, কখনও গুরুগ্রাম আবার কথনও হায়দরাবাদে ছিল সে। কখনও তার স্ত্রী ও আবার কখনও বন্ধুকে নিয়ে ভারতে ঘুরে গিয়েছেন ওই ব্যক্তি। কোনও বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ঘোরাঘুরি করেছে সে। দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের পর বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স অনুপ্রবেশকারীকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেছে। এরপর আকাশ থেকে বাজেয়াপ্ত হওয়ার সামগ্রী যা পাওয়া যায় সেগুলি হল ঠিক এরকম।১০ শে জুন, ২০২১, দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তে সীমা সুরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা অবৈধভাবে ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করার সময় সীমান্ত চৌকি মালিক সুলতানপুরের এলাকা থেকে এক চীনা নাগরিককে সেই সময় গ্রেপ্তার করেছিল যখন সে অবৈধ ভাবে আন্তর্জাতিক সীমান্ত অতিক্রম করছিল। এই অনুপ্রবেশকারীকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সীমান্ত চৌকি মহাদীপুরে আনা হয়েছিল। মহাদিপুরে বিএসএফ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলির জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন, চীনা অনুপ্রবেশকারীর পরিচয় হান জুনবে (বয়স ৩৬ বছর) নামে জানা যায়, সে চীনের শহর হুবেইয়ের বাসিন্দা।এখানে আরেকটি বিষয় লক্ষণীয় হলো যে হানজুনবের ব্যবসায়িক অংশীদার সান জিয়াংকে বিভিন্ন অভিযোগে এটিএস লখনউ গ্রেপ্তার করেছিল। আরও জানা গিয়েছে যে এই ঘটনার পরপরই হান জুনবের বিরুদ্ধে ব্লু কর্নার নোটিশ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। এই অনুপ্রবেশকারীর তল্লাশি করলে তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সন্দেহজনক বৈদ্যুতিন ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। যার কারণে বিএসএফ এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি প্রতিনিয়ত তথ্য সংগ্রহে ব্যস্ত ছিল। গ্রেপ্তারকৃত হান জুনবেকে বাজেয়াপ্ত করা সামগ্রী সহ আরও আইনী কার্যক্রমের জন্য থানা গুলাবগঞ্জ, কালিয়াচকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।জানা গিয়েছে, বিএসএফ দক্ষিণ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের জারি করা বিবৃতি অনুসারে, *হান জুনবে* একজন কাঙ্ক্ষিত অপরাধী বা ‘ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল’এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ জিজ্ঞাসাবাদে, মর্মস্পর্শী তথ্য সামনে এসেছে যে হান জুনবে জাল দলিল ব্যবহার করে ভারত থেকে প্রায় ১৩০০ ভারতীয় সিম চীনে নিয়ে গেছে। হান জুনবে তার সহযোগীদের মাধ্যমে সিমগুলো আন্ডারগারমেন্ট এ লুকিয়ে চীনে পাঠাত। এই সিমগুলি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে এবং অন্যান্য অন্যায় কাজ করতে ব্যবহৃত করা হয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ওই সিম ব্যবহার করে অর্থ লেনদেনের মেশিন থেকে অর্থ বের করে লোকদের ঠকানো । তাকে ধরতে পারা সীমান্ত সুরক্ষা বাহিনীর একটি বড় উপলব্ধি।
ধৃতের কাছ থেকে মিলেছে চিন, বাংলাদেশ ও ভারতের একাধিক সিম কার্ড, টাকা পাঠানোর মেশিন, মার্কিন ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রা ও ভারতের টাকা। বাজেয়াপ্ত হয়েছে তার মোবাইল, ল্যাপটপ ও পাসপোর্ট। জানা গিয়েছে, ২ জুন বিজনেস ভিসা নিয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন চিনের হুবাই প্রদেশের বাসিন্দা হান জানুই। এরপর ভারতে অনুপ্রবেশ করেন।প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ২০১৯-এর পর থেকে তিনবার ভারতে এসেছিলেন তিনি। গুরুগ্রামের স্টার স্প্রিং হোটেলে ছিলেন তিনি। হান জানুইয়ে এক শাগরেদ সান জিইয়াংকে কিছুদিনের আগেই লখনউ থেকে গ্রেফতার করেছে এটিএস। তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ১০ থেকে ১৫টি সিমকার্ড। এর আগে যেটা জানতে পারা যাচ্ছে ঘটনার দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকালে কালিয়াচকের মিরিক সুলতানপুর এলাকায় এক ব্যক্তিকে ঘোরাঘুরি করতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সন্দেহ হওয়ায় বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তব্যরত বিএসএফ জওয়ানদের বিষয়টি জানান তাঁরা। এরপরই ওই চিনা নাগরিককে আটক করা হয়। খবর পৌঁছয় কালিয়াচক থানায়। শেষপর্যন্ত ধৃতকে পুলিসের হাতে তুলে দেয় বিএসএফ।এরপর থেকে মালদা জেলা মুখ্য বিচারবিভাগীয় আদালতের সামনে তোলা হলে তাকে পুলিশ হেফাজতে ছয়দিনের রাখা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় ধৃতকে দফায় দফায় জেরা করে চলেছে কেন্দ্র ও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দাদের কর্তাব্যক্তিরা এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে উত্তরপ্রদেশের বিশেষ অপরাধ দমন শাখার কর্তাব্যক্তিরাও।
এদিকে আরও একটি বিষয় উল্লেখ করার মতো যে, যে অঞ্চল থেকে এই চীনা নাগরিক ধরা পড়েছে সেই মিরিক সুলতানপুর এলাকাটি জাল নোটের করিডর হিসাবে পরিচিত। বিগতদিনে এই করিডর দিয়ে নানা অপরাধমূলক কাজের ঘটনা ঘটেছে। ফলে গোয়ান্দাকর্তাদের অনুমান এই চিনা নাগরিকের মিরিক সুলতানপুরে সন্দেহজনকভাবে ঘোরার পিছনে কোন অসৎ উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে। সেই কারণেই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে উত্তরপ্রদেশের সন্ত্রাস দমন বাহিনীর দল ৷ Pic courtesy: Indiatoday.in
স্তব্ধকর তথ্য। এইসব বেপরোয়া চীনেরা নিজেদের দেশের কুচক্র সফল করার জন্য মারাত্মক জীবাণুবাহী ও হতে পারে।
ভারতীয় আধিকারিকরা ঐসব বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি হয়ত খোলা হাতে যাচাই করতে গিয়ে নিজেদের ও পারিপার্শ্বিক জনেদের বিপদগ্রস্ত করছেন।