BusinessGeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

কৃষক আন্দোলনের ছোঁয়া পশ্চিমবঙ্গেও

অরুণ কুমার :

কেন্দ্রীয় সরকারের তিন তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহার সহ কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যূনতম সমর্থন মূল্য সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবি সংযুক্ত কিষান মোর্চার যারা প্রায় তিনশো দিন ধরে আন্দোলন করছেন  জাতীয় রাজ্য রাজধানী দিল্লি উত্তর ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। ইতিমধ্যে উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরে আয়োজিত মহাপঞ্চায়েত সম্মেলনের পরবর্তীকালে এই দাবীতে আন্দোলন সংগঠিত হয়েছে। কৃষকদের আরো একটি দাবি সংযোজিত হয়েছে তা হলো কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যূনতম সমর্থন মূল্য সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন। এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল মোজাফফরনগরের মহা পঞ্চায়েত সম্মেলনে।এই কৃষক আন্দোলনের  ঢেউ এবার এসে পৌঁছেছে পশ্চিমবঙ্গেও।এই রাজ্যের রাজ্য  কৃষকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সরব হতে আরম্ভ করেছে বিভিন্ন কৃষক সংগঠন।এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে   রাজ্যের কৃষক নেতারা ঘোষণা করেছেন এই রাজ্যেও  কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের জন্য ন্যূনতম সমর্থনমূলক সংক্রান্ত আইন চালু করতে হবে। আগামী দিনে তারা এ বিষয়ে কৃষকদের সংগঠিত করে তাদের দাবি পূরণের লক্ষ্যে আন্দোলনকরবেন বলে জানিয়েছেন তারা।এই দাবিতে তারা ইতিমধ্যেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কে দাবি পত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন।অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষে বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবের আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে রাজ্যে সব কৃষকের সব কৃষিজাত উৎপাদনের জন্য গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যুন্যতম সহায়ক মূল্যের আইনী নিশ্চয়তার জোরাল দাবি জানিয়েছে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি। গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যুন্যতম সহায়ক মূল্যে (এম এস পি) নিশ্চয়কারী খসড়া আইন তৈরি করে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে অবিলম্বে তা চালু করার দাবি জানানো হয়েছে।অবিলম্বে আইন চালু না করলে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির নেতৃত্বে আন্দোলনের পথে নামতে বাধ্য হবে রাজ্যের কৃষকরা।


উক্ত সাংবাদিক সম্মেলনে,অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতি পশ্চিমবঙ্গ শাখার পক্ষে কৃষক নেতা অভিক সাহা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ কৃষি নির্ভর রাজ্য এবং কৃষিই রাজ্যের অর্থনীতির মূল ভিত্তি। প্রত্যক্ষ ও অপ্রত্যক্ষভাবে কৃষির ওপরেই অধিকাংশ মানুষ নির্ভরশীল। রাজ্যের প্রায় ৬৮% শতাংশ ভূমি কৃষি কাজে ব্যবহৃত হয় এবং ৬০% এর বেশি মানুষ কৃষির সাথে যুক্ত। রাজ্যের জি ডি পি’র ২৭% শতাংশই আসে কৃষিক্ষেত্র থেকে।  কিন্তু সারা দেশের মত পশ্চিমবঙ্গের কৃষকরা ভাল বিনিয়োগ ও ভালো ফলন সত্বেও পর্যাপ্ত আয় করতে পারছে না। তাই তাদের অবস্থা ক্রমাগত অবনতিশীল। কৃষক আন্দোলনের নেতা অভিক সাহার মতে, কৃষির খরচ ক্রমশ বেড়ে কৃষকদের স্বল্প সঙ্গতির বাইরে চলে যাচ্ছে। কৃষকরা তাদের কৃষিজাত উৎপাদনের জন্য যে দাম পাচ্ছে তার থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে পরিবারের মৌলিক চাহিদাগুলোও পূরন করতে পারছেনা। এই দুর্দশার জন্য রাজ্যের কৃষক এবং কৃষি শ্রমিকরা দেনার জালে জড়িয়ে পড়ে, কৃষি থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, ভিক্ষাবৃত্তি গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। তা থেকে সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং প্রশাসনিক সমস্যা সহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং কৃষক আত্মহত্যার পথে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে  অন্যান্য কৃষক নেতারা অভিযোগ করে বলেন,আমাদের দেশের সংবিধান মোতাবেক কৃষকদের ও কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষা করতে এবং কৃষিকাজকে যথাযথভাবে সুরক্ষিত করতে রাজ্য সরকার বাধ্য। জীবন যাপনের অধিকারকে বাস্তবায়ন ও জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নীতি নির্ধারণ এবং উপযুক্ত আইন প্রণয়ন ও লাগু করে কৃষকদের দুর্দশা রোধ করাও রাজ্য সরকারের সাংবিধানিক কর্তব্য।জাতীয় কৃষি কমিশন লাভজনক মূল্যের যে নীতি সুপারিশ করেছে যাতে পরিষ্কার বলা আছে যে সব খরচ ধরে উৎপাদন ব্যয়ের সাথে কমপক্ষে তার ৫০% শতাংশ যোগ করে ফসলের নুন্যতম দাম নির্ধারণ করতে হবে। 


এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত অন্যান্য কৃষক নেতৃবৃন্দরাও এই সমস্ত  দাবিতে সরব হন। এছাড়াও তারা জানিয়েছেন,কৃষিক্ষেত্রের এই দুরবস্থা দূর করতে ও সাংবিধানিক কর্তব্য পালন তথা জাতীয় কৃষি কমিশনের সুপারিশকে বাস্তবায়িত করতে পশ্চিমবঙ্গের *সমস্ত কৃষককের* (অর্থাৎ যারা নিজ মালিকানার জমিতে বা অন্যের জমিতে অর্থনৈতিক কারণে এবং জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি কার্যকলাপে নিযুক্ত এবং ফসল উৎপাদন বা অন্যান্য প্রাথমিক কৃষি উৎপাদন করেন এবং কৃষিকাজের যে কোন ধারায় কাজ করছে এমন ব্যাক্তি,  চাষী, কৃষি শ্রমিক, ভাগ চাষী, জমি লিজ নিয়ে চাষ করা ব্যাক্তি, হাঁস-মুরগি ও পশুপালনকারী, মৎস্যজীবী, মৌমাছি পালনকারী, পশু চারণকারী, অ-কর্পোরেট প্লানটার এবং প্লান্টেশন শ্রমিক, বনজ উৎপাদন সংগ্রাহক, মহিলা কৃষক, সম্মিলিতভাবে চাষ করছে এমন কৃষক গোষ্ঠী, উৎপাদনকারী সমবায়, স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী ইত্যাদি) *সমস্ত কৃষিজাত উৎপাদনের* (অর্থাৎ শস্য, সব মিলেট, সব ডাল, সব তেলবীজ, সব ফাইবার ফসল, ফল ও সবজি, সব বাগানজাত ফসল, সব মসলা ফসল, সব কন্দ ফসল, সব ওষধি গাছ, সব ধরনের দুধ, সব ক্ষুদ্র বনজ উৎপাদন, ফুলের চাষ, ঘাস, পশুখাদ্য ঘাস ও গাছের উৎপাদন, নার্সারি উৎপাদন, সমস্ত প্লান্টেশন উৎপাদন, সমস্ত গবাদি পশু এবং পশুজাত দ্রব্য যেমন মাংস, ডিম এবং পোলট্রি, গেঁড়ি-গুগলি ঝিনুক, সামুদ্রিক মাছ সহ সমস্ত মৎস্যজাত উৎপাদন, মিষ্টি জলের জলজ উৎপাদন, মধু, রেশম গুটিপোকা এবং অন্যান্য সমস্ত প্রাথমিক কৃষিজাত  উৎপাদন ও তার সহজাত সমস্ত উপাদানসমূহ) জন্য গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের আইনি অধিকার পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে দিতে হবে।অখিল ভারতীয় কিষান সংগ্রাম কমিটির এই সমস্ত বিভিন্ন দাবি নিয়ে আগামী দিনে তারা রাজ্যজুড়ে আন্দোলনে নামতে চলেছেন বলে এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে কৃষক নেতারা জানিয়েছেন।


কৃষক আন্দোলনের নেতা অভিক সাহা জানিয়েছেন,  কৃষকদের   এই দাবি জানিয়ে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির পক্ষ থেকে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেওয়া হয়েছে এবং  সেই সঙ্গে  গ্যারান্টিযুক্ত লাভজনক ন্যুন্যতম সহায়ক মূল্যে (এম এস পি) নিশ্চয়কারী আইনের খসড়া পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অবিলম্বে রাজ্যের সব কৃষকদের সব ফসলের জন্য ঐ আইন বিধানসভায় পাশ করিয়ে দ্রুত রাজ্যে চালু করার দাবি জানানো হয়েছে। অন্যথায়  রাজ্যে কৃষকরা জোরালো আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে, সে কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অখিল ভারতীয় কিষাণ সংঘর্ষ সমন্বয় সমিতির  সর্ব ভারতীয় সম্পাদক অভীক সাহা ছাড়াও  রাজ্য সম্পাদক কার্ত্তিক পাল, রাজ্য কার্যনির্বাহী গ্রুপের সদস্য সমীর পুততুণ্ড, তুষার ঘোষ, প্রদীপ সিং ঠাকুর, সুশান্ত ঝা, সুভাষ নস্কর, সঞ্জয় পুততুণ্ড প্রভৃতি নেতৃত্ব সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তব্য রাখেন।এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে এই রাজ্যের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রীর ন্যূনতম সমর্থন মূল্য সংক্রান্ত আইন প্রণয়নের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় সম্প্রতি জাতীয় রাজ্য রাজধানী দিল্লিতে যে কৃষকরা আন্দোলন করে চলেছেন তার ছোঁয়া এই রাজ্য এসে পৌঁছেছে লেগেছে। উল্লেখ করা যেতে পারে যে এ রাজ্যের ক্ষমতাসীন তৃণমূল দল দিল্লিতে আন্দোলনরত কৃষকদের প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়েছেন এবং কিছুদিন আগেও সংযুক্ত কিষান মোর্চার সর্বভারতীয় নেতা রাকেশ সিং টিকায়েত  ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে বৈঠক করে গিয়েছেন এবং বিগত বিধানসভা নির্বাচনে তারা রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের সমর্থনে সভাও করেছেন।এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে অখিল ভারতীয় কৃষক সংঘর্ষ সমিতির সমন্বয় সমিতির সঙ্গে যুক্ত কৃষক সংগঠনগুলির দ্বারা এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আগামী দিনে এই  রাজ্যের কৃষক আন্দোলন কোন পথে যায় এবং এ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল কি ভূমিকা গ্রহণ করে এখন সেটাই দেখার বিষয়। Pic courtesy: The Telegraph

Leave a Reply

Your email address will not be published.