GeneralIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

রাজভবনে বারোটার সংকেত, বোস কি বসতে চাইছেন ?

দেবারুণ রায়

পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল বদলের শেষ ঘটনায় দেবীলালের ভাঞ্জে জগদীপ ধনকরকে ধনে মানে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সাংবিধানিক পদে বসিয়েছিলেন বিজেপি সরকারের সর্বাধিনায়ক মোদী। সাধারণভাবে এ গদী তাঁর মতো নেতাদের কপালে জোটে কম। আসলে পশ্চিমবঙ্গে মহামহিমের যে দুরন্ত পারফরমেন্স সেটাই ছিল তাঁর প্রোমোশনের সিঁড়ি। বড় হতে কে না চায়। অতএব বাংলা বাওয়ালে হাত ভিজিয়ে রাজভবনকে খবরে খবরে খানখান করে দিচ্ছেন মান্যবর সিভি আনন্দ বোস। রোজ দিতে রাতে ফোঁস ফোঁস করে তাঁর সিভি এত প্রখর, যে অচিরেই উন্নতির সুউচ্চ  শিখর তাঁর পদচুম্বন করবে। সিভি আনন্দ বোসকে কে কবে বসতে দেখেছে চুপচাপ, কেউ মনে করতে পারবে না। সদ্যই বাংলা ইস্যুর জন্ম দিলেন তিনি। সব্যসাচীর স্টাইলে ডানহাতে রাজ্য বাঁহাতে কেন্দ্র সামলান তিনি নিমেষে। এই তো যাদবপুর থেকে নাগপুর কে না জানে উপাচার্য ব্যাপারটাকে কীভাবে ধরলেন। একেবারে রিচার্জ করে দিলেন পদটাকে। কে দশ বছর কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াল না বছর বছর  গড়াল সব মিলিয়ে টিলিয়ে একদম সব সমস্যার ছিদ্রপথ সিলিয়ে দিলেন লহমায়। তারপর আপন মহিমায় গঙ্গার পাড়ে গিয়ে আরতি করে, জলে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে বা ফেলে জয়ধ্বনি দিলেন জি টোয়েনটির। বললেন বেঙ্গলের জন্যে খুব ভাল হবে জি২০তে। তারই মধ্যে চুপচাপ না বসে টুকটাক তরজায় আছেন। রাজভবনে শান্তিঘর থেকে বঙ্গদিবস। বিজেপির বঙ্গপিতা শ্যামাবাবুর ক্যারিশমা বোঝালেন। ত্রিপুরার ব্র্যান্ড অ্যাম সৌরভের ফ্যান এখন বিজেপি। তাঁকে চা খাওয়ালেন। ডোনা গাঙ্গুলির নৃত্যের তালে তালে বঙ্গদিবসের উদযাপনে শ্যামাবাবুর পশ্চিমবঙ্গের পিতৃত্ব থেকে গণতন্ত্রের গুলজার, ইস্যুর পর ইস্যু। ফুরফুরে বাক্যে তুড়ে দিচ্ছেন নাট্যকার শিক্ষামন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে পেরে ওঠা চাট্টিখানি নয়  ! শনিবার রাতে বিরাট হুমকি দিয়ে বসলেন রাজ্যপাল। রাত বারোটার পর একটা চূড়ান্ত হেস্তনেস্ত করবেন। একটা চিঠি নবান্নে আরেকটা নর্থ ব্লকে পাঠাবেন সটান জানালেন। সারারাজ্যে একটা প্রচণ্ড সাসপেন্স কী হয় কী হয় দেখে মনে হতে পারে নাটকের নতুন কোনও প্লট। কুযুক্তি নয়। মন্ত্রী বললেন, ভ্যাম্পায়ার বেরচ্ছে ! জনগণ সাধু সাবধান ! আসলে বাংলা বাজার বেশ সরগরম তৃণমূলের পক্ষে। এই খেলাটাও হারল রাজভবন। বিজেপির রাজবংশীর বাঁশি আর মতুয়াভোটের রাশি দুইই উত্তরবঙ্গে বাসি। এই দুই জনগোষ্ঠীর টাটকা ভোটে জয়ী তৃণমূলের হাসি। সদ্য, সিভি আনন্দ বোসের থ্রো করা চ্যালেঞ্জের ষষ্ঠীপুজো করেছেন রাজ্যবাসী। বিজেপি বাম কং আইএসএফ বয়কট করলেও মুখ্যমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকের মতামত জেনে অবশেষে পয়লা বৈশাখকেই রাজ্য বাংলা দিবস ঘোষণা করেছে। সেইসঙ্গে রাজ্যগান বাংলার মাটি বাংলার জল। অর্থাৎ বিজেপি প্রস্তাবিত ও মহামহিম বোসের ঘোষণায় বাস্তবায়িত শ্যামাপ্রসাদের পশ্চিমবঙ্গ দিবস (২০ জুন ) খারিজ করে দিল রাজ্য সরকার। উপাচার্যদের নিয়োগ রাজ্য সরকারকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে। মুখ্যমন্ত্রীর প্রাসঙ্গিক তর্ক ছিল, নিয়োগের নীতি না মানলে ওরা মাইনে পাবেন কীকরে বা কেন ? রাজ্যপাল তাঁর নিয়োগকর্তা কেন্দ্রের বসকে মেনে চলবেন যেমন, তেমন উপাচার্যদেরও তো তাঁদের সরকারি সিস্টেমের মুখ্য মুখ মুখ্যমন্ত্রীর পদকে তো মানতে হবে । নাহলে বেতন কে দেবে ? হুড়মুড়িয়ে পদত্যাগের হিড়িক। দু দুটো আঘাটায় ভিড়ল বোস সাহেবের নাও। রাজ্যভবন বল, এবার আর কী চাও। শুভেন্দু বলে রেখেছেন, রাজ্যপালকে বলব পশ্চিমবঙ্গের পয়লা বৈশাখ দিবস আর বাংলার মাটি বাংলার জল গানের সিদ্ধান্তে সই না করতে। অনুরোধ করা নয়, যেন নির্দেশ। যেন মহামহিম রাজ্যপালের কাজ শুভেন্দুর নির্দেশ পালন করে চলা। রাজনীতির একটা শোভন অশোভনের ব্যাপারতো থাকবে। কই সেসব ? রাজ্যপাল কী করলেন ? এর পরই ভাষণ শেষ করলেন বাংলার মাটি বাংলার জল আর জয় হিন্দ বলে। বিরোধীনেতা কী বলবেন।

শেষ পর্যন্ত কি এবার বসতে চাইলেন  বোস সাহেব ?  মহামহিম বোস ? ঠাকুর বলেছেন ফোঁস করলেও অহিংস থাকতে। ছোবল কখনও নয়। তাছাড়া ছোবল দেওয়ার বল বা বিষ কোনওটাই নেই রাজ্যপালের ।  মনোনীত ও কেন্দ্রীয় সরকারের এজেন্ট বলে স্বীকৃত রাজ্যপাল পদটিকে রাজ্যে রাজ্যে ক্ষমতাসীন  জননেতা নেত্রীদের সমকক্ষ করেনি সংবিধান। রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষা আর উচ্চাশার ন্যায্য লক্ষ্যে রাজ্যপালরা তাঁদের কাজ করে যান। তাঁদের কর্মকাণ্ড সর্বদাই তাঁদের চাকরির শর্ত নিয়ন্ত্রিত। তাঁরা কর্ম করেন শাসকদলে যে যখন তার  ধর্ম মেনে। তাঁদের কর্মের কারক তাঁরা নন। কিন্তু তাঁরা কেন্দ্র-রাজ্য বিভক্তির কারণ সজ্ঞানেই। এই অমোঘ রাজনৈতিক নিয়তি বঙ্গে যে মেরুকরণের আয়োজন করেছে তাতে নিশ্চিত মুশকিল আসান  তৃণমূলের। যেমন পুরাকালে, সাড়ে চার দশক আগে, কংগ্রসের রাজ্যপালরা সিপিএমকে সাড়ে তিন দশক শাসনের চাবিকাঠি দিয়েছিলেন। অবশ্য, শেষে এক বিখ্যাত রাজ্যপালই পরিবর্তনের পালে হাওয়া দেন। সেকালে  প্রদেশ কংগ্রেসের নেতৃত্বকে ল্যাং মেরে রাজ্যপাল এপি শর্মা বলে গিয়েছিলেন, আমি রাজভবনে থেকে বিরোধীদের আসন একশোয় তুলে দিয়ে গেলাম।  সেই শর্মাদের সুদিন গিয়েছে। রাজ্যপাল যাই করুন ভোটের ভবি তাঁদের কথায় ভোলে না। তাই বাংলায় উত্তরবঙ্গের মতো উর্বর জমিতে শক্তিমান বিজেপির হাতে হেরিকেন। সিপিএম যেমন ছিল তেমনি সর্বহারা। ঝাড়খণ্ডে জেএমএমের হাতেই জয়পতাকা। উত্তরপ্রদেশের থাপ্পড় বুলডোজার আর দলবদলুর গালে। বিপুল ভোটে জয়জয়কার সপার। কেরলে সিপিএমের বিদায়ঘন্টা বাজিয়ে বিশাল জয় কংগ্লেসের। সব মিলিয়ে দু মাসের শিশুজোট ইন্ডিয়ার পালে হাওয়া কিছু কম কথা নয়। দাপট কমছে বিজেপির আর মেরুকরণে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবে ঘটি হারাচ্ছে বাম।  তৃতীয় শক্তি নেই অথবা নামমাত্র যেখানে সেখানে স্বরাজ ফিরে পাওয়ার সংকেত  কংগ্রসের জন্যে গ্রেস আর গ্রেসফুল। Pic Courtesy: The Hindustan Times

Leave a Reply

Your email address will not be published.