উত্তরবঙ্গে চা শ্রমিকদের সংকট, প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে উঠলো জোরালো দাবি

অরুণকুমার, শিলিগুড়ি
উত্তর বঙ্গের অন্যতম শিল্প চা। এই চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ৫৫ হাজার চা বাগিচা শ্রমিক এনসিএলটি-র কাছে বকেয়া ১৫৩৯ কোটি টাকা পরিশোধের দাবি বেশ করেছে। জানা গিয়েছে ডুয়ার্সের ডানকানস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার ফলে ডানকান্সের মালিকানাধীন ১৭টি চা বাগিচা শ্রমিকদের ভবিষ্যত এখন অনিশ্চয়তার মুখে। হতাশ শ্রমিকরা তাঁদের বকেয়া বেতন, মজুরি, প্রাপ্য আর্থিক সুবিধা, গ্র্যাচুইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের জমা অর্থ ফেরত পাবেন কিনা তা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।
শ্রমিকদের মধ্যে তৈরি হওয়া অনিশ্চিয়তা ও উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে চা বাগান শ্রমিকদের অন্যতম সংগঠন, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি (পিবিকেএমএস) আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়িতে ডানকানস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নয়টি চা বাগিচার ৫৪ হাজার ২৫০ জন শ্রমিকের বকেয়া ও প্রাপ্য বাবদ ১৫৩৮কোটি ৭৬ লক্ষ ৯০ হাজার ২৪০ টাকা আদায়ের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্ষেতমজুর সমিতির দাবির মধ্যে বকেয়া বেতন, ওভার-টাইম, অতিরিক্ত পাতা তোলার জন্য প্রাপ্য অর্থ, রেশন, জ্বালানি কাঠ, গ্র্যাচুইটি এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডের মত শ্রমিকদের প্রাপ্য বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ বিষয়ে আরো জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি ইতিমধ্যে ২৯টি চা বাগিচা যার মধ্যে আগের পুরানো ৭টি বাগিচাও রয়েছে, সেই সব বাগিচার শ্রমিকদের বকেয়া প্রাপ্যের বিষয়টি নিয়ে তদন্তের দাবি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছে।
এ বিষয়ে সমিতির অন্যতম উপদেষ্টা অনুরাধা তলোয়ার এক লিখিত প্রেস বিবৃতিতে বলেছেন, এই রকম পরিস্থিতিতে সমিতি বিস্ময় ও উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছে যে, ডানকানস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড দেউলিয়া হয়ে গিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কর্পোরেট ইনসলভেন্সি রেজুলিউশন প্রক্রিয়া ‘জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইব্যুনাল’ (এনসিএলটি)-এ ৫ মার্চ, ২০২০ শুরু হয়েছিল। এর ফলে সংস্থার সমস্ত ঋণদাতারা তাদের দাবি দাখিল করতে পারবে এবং এনসিএলটি একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করবে যার মাধ্যমে তাদের ডানকানের সম্পত্তির বিনিময়ে বা অন্য কোণ মালিকের সন্ধান করে তা পরিশোধ করা সম্ভব হতে পারে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে ইতিমধ্যে, এই শ্রমিক সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ ক্ষেত মজুর সমিতি জরুরি ভিত্তিতে বিষয়টি সম্পর্কে ডানকানস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের বিরুদ্ধে রেজুলিউশন প্রক্রিয়া সম্পর্কে শ্রমিকদের সচেতন করেছে। তারপরে একজন সমিতির সদস্য এপ্রিল, ২০২১ এনসিএলটির পক্ষ থেকে নিযুক্ত রেজুলিউশন প্রফেশনাল (আরপি)-র কাছে ১২৪ জন শ্রমিকের পক্ষে বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়ে আবেদন পেশ করেছিলেন। আরপি দাবিটি খারিজ করে দেন এই কারণ দেখিয়ে যে শ্রমিকরা দাবি দাখিল করতে দেরি করেছে। তারপরে শ্রমিকরা এনসিএলটি কলকাতা বেঞ্চের কাছে আপিলে যান। শ্রমিকদের দাবি সম্মিলিত আবেদন কলকতা বেঞ্চ মেনে নিয়ে আরপি-কে ওই দাবি মেনে নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়। ১৫জুন,২০২১ আদালত কর্মীদের যথাযথ নথিপত্র সহ দাবিগুলি ৩০ জুন, ২০২১-এর মধ্যে রেজুলিউশন প্রফেশনালের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তালিকাবদ্ধ ৫৪ হাজার ২৫০ জন শ্রমিকের পাওনা অর্থ পরিশোধের দাবি জানিয়ে জলপাইগুড়ির প্রভিডেন্ট ফান্ড কমিশনার কার্যালয়ে সমিতির পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলার লঙ্কাপাড়া, গাইরগান্দা, হান্তাপাড়া, ডুমচিপাড়া, তুলসীপাড়া ও বীরপাড়া চাবাগিচাগুলির জন্য বকেয়া প্রাপ্যের জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জলপাইগুড়ি জেলার ক্ষেত্রে নাগেশ্বরী, কিলকোট এবং বাগরাকোট চা বাগিচা শ্রমিকদের বকেয়ার জন্য আবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। ডুয়ার্সের বন্ধ চা-বাগানের সমস্যার পাশাপাশি চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকদের বকেয়া অর্থ না মেলায় স্বাভাবিকভাবেই প্রায় ৫৫ হাজার শ্রমিক বর্তমানে অর্থাহারে দিন অতিবাহিত করছেন। অপরদিকে ডুয়ার্সের চা-শ্রমিকদের প্রাপ্য বকেয়া র এই দাবি প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শ্রমদপ্তরের কোন পদস্থ আধিকারিক মন্তব্য করতে চাননি সেইসঙ্গে চা মালিকদের সংগঠন এর তরফেও এ বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেন নি।