নির্বাচন শেষ!
শিতাংশু গুহ, নিউইয়র্ক।।
নির্বাচন ২০২৪-এ সবচেয়ে করুন ডায়লগ: ‘আমার বউ-বাচ্চা আগুনে মারা গেছে, আমি বের হবো না’! ঘটনা: বেনাপোল এক্সপ্রেসে আগুন। কোথাও একটি পোষ্টার দেখেছিলাম, ‘নেতার ছেলে বিদেশে পড়ে, ফিরে এসে আপনার নেতা হবে, আপনি নেতার জন্যে প্রাণ দেবেন কেন’? তবু নেতার জন্যে, গণতন্ত্রের জন্যে মানুষ জীবন দেয়! নূর হোসেন দিয়েছিলো, ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক, গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ গায়ে লিখে।
নির্বাচন শেষ। সার্বিক ফলাফল যেমনটা আশা করা হয়েছিলো, অনেকটা তাই। নির্বাচন কমিশন বলেছে, ৪০% ভোট পড়েছে। ২০১৪-তেও তাই পড়েছিলো। নুতন সরকার গঠিত হবে, শেখ হাসিনা টানা ৪বার, এবং মোট ৫বারের প্রধানমন্ত্রী হবেন। এটি রেকর্ড। শেখ হাসিনা ৩বারের বিরোধী দলীয় নেত্রী ছিলেন, এটিও রেকর্ড। জাতীয় পার্টি বিরোধী দল হচ্ছেনা, তা বলা যায়। স্বতন্ত্ররা প্রায় সবাই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, এঁরা জোট বেঁধে বিরোধী দল (স্বতন্ত্র) হোক?
নির্বাচনে সুন্দরী নায়িকা, গায়িকারা হেরেছেন। খেলোয়াড়রা জিতেছেন, নায়ক ফেরদৌস জিতেছেন। নির্বাচন কমিশন কিছুটা হলেও সফল। মে-মাসে ভারতে নির্বাচন, আমাদের পুরো নির্বাচন কমিশন ভারত গিয়ে মাস-জুড়ে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা ও মনোবল সঞ্চয় করে আসুন, যাতে নির্বাচন কমিশনকে পুরোপুরি কলংকমুক্ত করা যায়? দেশকে প্রশ্নবিদ্ধ না করতে, ভবিষ্যৎ সকল নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠূ করতে কাউকে না কাউকে তো দায়িত্ব নিতে হবে? আর কত?
কিছু কিছু পর্যবেক্ষক নির্বাচনের প্রশংসা করেছেন। এরমধ্যে ওআইসি এবং রাশিয়া আছে। রাশিয়ার নির্বাচন হয় নাম-কে-ওয়াস্তে; আর ওআইসি’র অনেক দেশ নির্বাচন কি জিনিস জানেই না? অধিকাংশ ওআইসি দেশের মানুষের কাছে, বিশেষত: হুজুররা তো প্রকাশ্যেই বলেন, গণতন্ত্র হচ্ছে, ‘কুফরী মতবাদ’! দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ৩রা জানুয়ারী একটি হেডিং ছিলো, ‘নারী নেতৃত্ব হারাম’ -বলে ঈগলে ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগ নেতা।
ডেইলী ষ্টার ৬ই জানুয়ারী হেডিং করেছে, ‘আগুন দেয়া হয়েছে যানবাহন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং মন্দিরে’। কথা কিন্তু সত্য। প্রশ্ন হলো, মন্দিরে কেন? মসজিদে তো কেউ আগুন দেয়না? ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয়া বন্ধ হোক। ‘আগুন নিয়ে খেলা’ বন্ধ হোক। কথায় বলে, ‘নগরে আগুন লাগলে দেবালয় রক্ষা পায়না’- দেশে আগুন লাগলে কারোই রক্ষা নাই, কাজেই আগুন থামান। যাঁরা মন্দিরে আগুন দেয়, তাদের সংখ্যা বেড়েছে, তাই এবার সংসদে হিন্দু এমপি’র সংখ্যা কমে গেছে।
এ নির্বাচন কি আসলেই ‘গণতন্ত্রের’ হাতছানি? গণতন্ত্র তো ‘সোনার হরিণ’, ধরা অতটা সহজ নয়! আমাদের এক বন্ধু লিখেছেন, নির্বাচন যাই হোক না কেন, এটি দেশের ইতিহাসে ‘রাজাকার মুক্ত’ নির্বাচন, এভাবেই দেশ রাজাকার-মৌলবাদ মুক্ত হোক। এতকাল জানতাম, ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’- মাহিয়া মাহীর জন্যে কথাটি সত্য হয়নি। কেজানে হয়তো এজন্যে রেগে ভোটের দিন মাশরাফি এক ভক্তকে ‘চড়’ মেরেছেন। প্রশ্ন হলো, নির্বাচন তো শেষ, এরপর কি?