BusinessFoodGeneralHealthIndiaNewsPoliticsSambad Matamat

পুলিশ পাহারায় আদানি কোম্পানি কেটে দিল ফারাক্কার আম আর লিচু বাগান। চাষীদের স্বার্থ দেখল না তৃণমূল,পরোক্ষ সমর্থন অধীরেরও। ছি!! —-

প্রসূন আচার্য

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কোনো চূড়ান্ত আলোচনা, চুক্তি, ক্ষতিপূরণ ছাড়াই মুর্শিদাবাদের ফারাক্কায় পুলিশি পাহারায় আম আর লিচু বাগানের গাছ কেটে দিল গৌতম আদানির কোম্পানি। ২০১৫ সালের বিদ্যুৎ আইন বলছে, যেখান দিয়ে কোনও কোম্পানির হাইটেনশনের তার যাবে তার নিচে এবং দুই পাশে দশ ফুট করে জমি সেই কোম্পানিকে অধিগ্রহণ করে কৃষক বা জমি, বাড়ির মালিককে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। রাজ্য সরকার এই ব্যাপারে প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণ নীতি তৈরি করতে পারে। কিন্তু দুঃখের বিষয় আজ পর্যন্ত মমতা সরকার কোনও নীতি গ্রহণ করেনি। মমতা ব্যানার্জি যা মুখে বলছেন, তা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কোম্পানি জমির মালিকের সঙ্গে প্রয়োজনীয় চুক্তি করে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি নেবে। রাজ্য সরকার সিঙ্গুরের মত কোনও জমি অধিগ্রহণে যাবে না। কিন্তু এটা যে মুখের কথা, সরকারের কাজে, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের ভূমিকায় তা স্পষ্ট। না হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আগেই কী করে আম বাগান আর লিচু বাগানের গাছ গৌতম আদানির কোম্পানি লোক দিয়ে কাটলো? যে সব গ্রাম বাসীরা প্রতিবাদ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ দিয়েছে। সেইসঙ্গে বেধড়ক পিটিয়েছে পুলিশ। এই গাছ কাটার বিরুদ্ধে কৃষকরা আদালতে গিয়েছে। সেখানে কী রায় হয়, তার অপেক্ষাতে গৌতম আদানি থাকতে চাননি। এখন তিনি মমতার নয়নের মণি। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেই গায়ের জোরে গাছ কাটা হয়েছে। APDR এর ১২ জনের যে দল তথ্যানুসন্ধান করতে গিয়েছিল, তারা এই রিপোর্ট দিয়েছে। ঝাড়খণ্ড এর বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ বিক্রির জন্য টানা ৪ লাখ কেভির এই হাইটেনশনের লাইন চাষীরা ঘুরিয়ে দিতে অনুরোধ করেছিল, সেটা বুঝতে অর্থনীতির বিশারদ হওয়ার দরকার নেই। একটা আম গাছ বছরে প্রায় গড়ে ১৫-২০ হাজার টাকার ব্যবসা দেয়। অন্যদিকে একটা লিচু গাছ গড়ে ৩৫ হাজার টাকার ব্যবসা দেয়। মূলত সারা বছর এই আম আর লিচু বাগানের আয় থেকেই এলাকার মানুষের পেট চলে। চিকিৎসা ও পড়াশুনা খরচ চলে। কেউ বাড়তি রোজগারের জন্য বাইরে শ্রমিকের কাজ করেন। কিন্তু ফল পাড়ার সময় গ্রামে চলে আসেন।

আদানি কোম্পানি এক বারের জন্য গাছ পিছু ১০-১৫ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। বৈদ্যুতিক তার যাওয়ার জন্য সামান্য টাকা। যা কোনও ভাবেই কৃষকদের পক্ষে মানা সম্ভব ছিল না। তাই তাঁরা প্রতিবাদ করেছেন। এই বার এই সামান্য টাকা নিয়ে তাঁরা কী করবেন ? পরের বছর কী খাবেন ?এখন কথা হচ্ছে, মমতা সরকার তো এই ব্যাপারে সরাসরি পুলিশ নিয়ে আদানির পক্ষ নিয়েছে। কংগ্রেস কী করছিল ? ওই এলাকায় কংগ্রেসের জেলা পরিষদের সদস্য আসিফ নিজে গ্রামবাসীদের হয়ে বাধা দিয়ে গিয়ে পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। কিন্তু তাঁর দলের নেতা, তথা মুর্শিদাবাদের নেতা অধীর চৌধুরী ধরি মাছ, না ছুঁই পানি নীতি নিয়ে কার্যত আদানির পক্ষ নিয়েছেন। আমি অধীর চৌধুরীর প্রেস কনফারেন্সের ভিডিও দেখেছি, সেখানে অধীর বলেছেন, “এই ভাবেই হাই টেনশনের তার যায়। হাইটেনশনের তার গেলে কেন নিচে গাছ হবে না জানি না। আমাদের পড়শী বাংলাদেশে বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়, সেখানে বিদ্যুৎ যাবে, এটা একটা আন্তর্জাতিক ব্যাপার….” ইত্যাদি। এটা স্পষ্ট অধীর চৌধুরী যে কোনো কারণেই হোক, তা আগামী লোকসভা ভোটে তাঁর আসন সহ তিনটি আসন তৃণমূল ছেড়ে দিলে কংগ্রেস তৃণমূল জোটের স্বার্থে হোক, বা লোকসভার কংগ্রেসের দলনেতা হিসেবে আদানির পক্ষ নেওয়ার কারণেই হোক, কার্যত হাত গুটিয়ে বসে থাকার নীতি নিয়েছেন। দলকেও তিনি ব্যাক গিয়ারে পাঠিয়েছেন। কেন জেলায় তিনি একা হয়ে গেলেন, দল ধরে রাখতে পারলেন না, এই ঘটনায় তা স্পষ্ট। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম অবশ্য বুধবার আলিমুদ্দিনে বসে বলেছেন, চাষীদের সঙ্গে আলোচনা করে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ফারাক্কায় জমি নিতে হবে। কিন্তু তিনিও ভালই জানেন, আদানিকে বাধা দেওয়ার মত সাংগঠনিক ক্ষমতা আজ আর সিপিএমের নেই। তার উপরে সিপিএম এখনও বিশ্বাস করে, সিঙ্গুরের জমি নিয়ে টাটার কারখানা করার সিদ্ধান্ত বা নন্দীগ্রামে জমি নিয়ে কেমিকাল হাব গড়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। ফলে জমির প্রশ্নে তাদের পক্ষে অল আউট বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। তাহলে কি দাঁড়াবে ? মমতা সরকার এই ভাবে মুসলিম চাষীদের পথে বসিয়ে আদানি কোম্পানিকে আম আর লিচু বাগান কাটায় সাহায্য করবে, আর মুসলিমদের বিজেপি জুজু দেখিয়ে বছরের পর বছর তাদের ভোট নিয়ে যাবে? দেউচার কয়লার জন্য বীরভূমের মহম্মদ বাজারেও প্রায় একই ঘটনা ঘটতে চলেছে। এর হাত থেকে মুক্তির উপায় কী তা মুসলিমদেরই ভাবতে হবে। বুঝতে হবে আবু তাহের থেকে আরম্ভ করে ফারাক্কার তৃণমূল বিধায়ক মইনুল হক, মুর্শিদাবাদের তাবড় মুসলিম নেতারা আসলে নবান্নের দলদাস। এদের সঙ্গে গরিব মুসলিম চাষীদের স্বার্থের কোনও সম্পর্ক নেই। এরা শুধু চেনেন ভোটে জেতা, ক্ষমতা আর টাকা ! আর কলকাতার বাবু বিবিরা রাতে টিভির সামনে বসে সাজানো বিতর্ক শোনেন!ধিক!

C@ Prasun Acharya ফেসবুক থেকে সংগৃহীত ।

One thought on “পুলিশ পাহারায় আদানি কোম্পানি কেটে দিল ফারাক্কার আম আর লিচু বাগান। চাষীদের স্বার্থ দেখল না তৃণমূল,পরোক্ষ সমর্থন অধীরেরও। ছি!! —-

  • Mohua Paul Chowdhury

    Common people are malhandled in favour of power and monetary benefits. So we are just in a rare crisis moment of survival in society. Need a real out strike commonly to be in existence. Wake call in demand 🤞

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published.